Breaking News

অপরিচিতা । পর্ব - ০৬



আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।ভাবতে লাগলাম,কি করবো আমি এখন?কাকে মেনে নেবো?কাকে জড়িয়ে নেবো নিজের জীবনের সাথে?

রীনানকে নাকি ইহানকে?
আমি ভেবেছি আম্মু আমারি মত রীনানের উপর রেগে যাবে।
কিন্তু আম্মু দেখছি বরং খুশিই হলো রীনানকে পেয়ে।
হয়তো তার মেয়ের আর মেয়ের সন্তানটার একটা গতি হবে এই ভেবে আম্মু খুশি।
-বাবা তুমি জানোনা,আমাকে কতটা নিশ্চিন্ত করলে তুমি।
-আম্মু আপনি অনুমতি দিলে আমি আমার স্ত্রীকে বাসায় নিয়ে যেতে চাই।
-ওই কে আপনার স্ত্রী?খবরদার কোন রকম অধিকার ফলাতে আসবেন না আমার উপর।
-আদ্রিজা,কি বলছিস তুই এসব?
-আমি ঠিকই বলছি আম্মু।আমি পারবোনা এই মানুষটাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে।
-কেন পারবিনা?ও তোর স্বামী।
-হোক সে যা কিছু তাই।আমি তাকে মানিনা।
কারণ সে আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছে।
-এমনই যদি হতো তাহলে ও কি তোকে এইভাবে খুঁজতে আসতো?
প্লিজ তুই এমন করিস না মা।
-বাবা তুমি আমার সাথে আমাদের বাসায় চলো।
-মানে কি আম্মু?এই লোকটা আমাদের বাসায় যাবে কেন?
আর তুমি তার কথা গুলোই বা এত সহজে বিশ্বাস করে নিলে কিভাবে?
এমনও তো হতে পারে সে মিথ্যে বলছে।
প্রমাণ কি তার কথার?সে যে সত্যি বলছে তার প্রমাণ কি?

রীনান এবার ওর মোবাইল বের করলো,
আর মোবাইল ঘেটে ঘেটে ওর আর আমার যত ছবি ছিলো সব আমাদের দেখালো।
-এবার তো বিশ্বাস হয়েছে?
আমি ছবি গুলো দেখে চুপ হয়ে গেলাম।
আম্মু আমাকে অনেক মিনতি করে বললেন,
প্লিজ তুই এমন করিস না।আমি ওকে আমাদের সাথে বাসায় নিয়ে যেতে চাই।
তারপর না হয় তুই ভেবে একটা ডিসিশন নিস।
আমি আর কিছু বললাম না।
আম্মু রীনানকে আমাদের সাথে বাসায় নিয়ে এলো।
আমি পড়ে গেলাম যেন বিপদে।না পারছি কিছু বলতে না পারছি সইতে।
রীনান খুশি মনে বাসায় ফিরেছে।ওর মুখে স্পষ্ট খুশির ছাপ দেখা যাচ্ছে।
এদিকে বাসায় ফেরার পরই আবারো ইহানের ফোন।
আমি আর রিসিভই করিনি ইহানের ফোন।
আম্মু রীনানকে ফ্রেশ হতে বল্লেন।
রীনান ফ্রেশ হয়ে এলো।
আম্মু রীনানকে খেতে দিলো।
আম্মু তো যেন রীনানকে যেন জামাই আদর করছে।
এদিকে রাগে আমার গা ঝমঝম করছে।
আমি ইহানের ফোন রিসিভ করিনি বলে সন্ধ্যায় ইহান সোজা বাসায় চলে এলো।
গেইট খুলতেই দেখি ইহান।

-তুমি এখানে?যাও এখন।বাসায় মেহমান আছে।
-থাকুক মেহমান,তাতে আমার কি?
আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।
-কি উত্তর?
-তুমি তোমার পেটের বাচ্চাটাকে নষ্ট করবে কিনা?
আর তখনই রীনান এসে হাজির,
-না ও ওর পেটের বাচ্চাটাকে নষ্ট করবেনা।
-আদ্রিজা,কে উনি?
উনি কেন জবাব দিচ্ছেন?
এই যে মিঃ আপনি কেন উত্তর দিচ্ছেন?আমি তো আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি।
-আমি উত্তর দিয়েছি কারণ ওর পেটে থাকা সন্তান টা আমার।
আর আমি চাই আমার সন্তান এই পৃথিবীর আলো বাতাস দেখুক।
-ওহ হো,আপনিই তাহলে সেই লোক যে কিনা,ওর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওকে ভোগ করেছেন।
-মুখ সামলে কথা বলুন,
ও আমার বিবাহিতা স্ত্রী।আর কি আপনি ভোগ টোগ শুরু করেছেন?
-মানে?কি বলছে এই লোক আদ্রিজা?
-তুমি আমার কথা শোনো প্লিজ
আমার যখন স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গিয়েছিলো তখন আমি উনাদের বাসায় ছিলাম।
আর যা হবার তখনই হয়,বিয়ে বাচ্চা এসব।বিশ্বাস করো আমার এসবের কছুই মনে নেই।

-বাহ্ এত কিছু হয়ে গেছে তাহলে।
-তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা ইহান। আমি ওকে না,আমি তোমাকেই ভালবাসি।
-তাহলে এই মুহূর্তে তুমি ওর বাচ্চা নষ্ট করবে,চলো আমার সাথে।
তারপর ওকে ডিভোর্স দিয়ে আমরা দুজন বিয়ে করে নেবো।
-এক মিনিট এক মিনিট,
অপরিচিতা,কে এই ছেলে?
-ও ইহান।আমার ভালবাসা।আমি ওকে ভালবাসি।
-ওহ।কিন্তু তুমি যে আমার স্ত্রী।আমিও তো তোমাকে ভালবাসি।
-কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালবাসিনা।আর কোন দিন বাসবো বলেও মনে হয়না।
-তাহলে তুমি কি চাও?
-কি আর চাইবে?আমাকে চায়।আর তাই আপ্নি ওকে ভালোয় ভালোয় তালাক দিয়ে দিবেন।
নইলে জোর করে বিয়ে এবং সংসার করার অপরাধে আমি আপনাকে পুলিশে দেবো।
-সব বুঝলাম,অপরিচিতা যদি চায় আপনার সাথে জীবন কাটাতে,তবে আমি তাই করবো।কারণ আমি ওকে ভালবাসি।
আর আমার কাছে ওর সুখে থাকাটাই মেইন।
-তাহলে আর কি,চলো আদ্রিজা আম্রা এখনি হসপিটালে গিয়ে কাজ সেরে আসি।
-আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
-কি কথা?

-আমি ওকে ওর সুখের জন্য ছাড়তে পারি তবে আমার সন্তান ছাড়তে পারবোনা।
-মানে?
-মানে হচ্ছে,ও আমাকে ছেড়ে আপনাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে।
কিন্তু আমি কি করবো?
আমার তো এক্টা বেচে থাকার অবলম্বন লাগবে।কারণ আমি তো আর বিয়ে করবোনা।তাই আমি আমার সন্তান টাকে নিয়েই আমার জীবন কাটিয়ে দিবো।
তাই আমি আমার সন্তান টাকে চাই।
ওকে আমাকে দিয়ে দিলেই আমি অপরিচিতাকে ছেড়ে দেবো।
যদি অপরিচিতা চায়।
আর যদি আমার সন্তানের কিছু হয় তাহলে আমি না অপরিচিতাকে ছাড়বো।
আর না আপনাকে।
-আপনি যা বলছেন ভেবে বলছেন তো?
এটা কিভাবে সম্ভব?
-আমি জানিনা আপ্নারা কি করবেন,কিন্তু আমি আমার বাচ্চা চাই।
ইহান অনেক্টা রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
পারে তো আমার গায়ে হাত তুলে।
রীনান আমার চোখের দিকে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভেতরে চলে যায়।
আমি পড়ে যাই বাশের হোলে।
কি করবো মাথা কাজ করছেনা।

একদিকে ইহান অন্য দিকে রীনান।
আর আমার পেটে অবুঝ এক প্রাণ।।ও তো কোন দোষ করেনি।
তাহলে আমি কেন ওকে শাস্তি দেবো?
কিন্তু আমি তো রীনানকে ভালবাসিনা।
আমি ইহানকে ভালবাসি।আর ইহান আমাকে এই বাচ্চা সহ এক্সেপ্ট করবেনা।
ওদিকে রীনান ওর বাচ্চাকে চায়।
উফ কিছুই ভাবতে পারছিনা আমি।
কি করবো আমি এখন।
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে রীনান আমার রুমে শুতে আসে।
-আপনি?আপনি এখানে কেন?যান বেড়িয়ে যান।
এক্ষুণি বেড়িয়ে যাবেন।
সাহস কত বড় আমার রুমে শুতে এসেছে।
-আম্মুই তো আমাকে বল্লেন তোমার রুমে শুতে।
তাছাড়া আমরা তো স্বামী স্ত্রীই।
সমস্যা কি?
-চুপ একদম চুপ।আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানিনা।
কত বার বলবো?
-তাহলে আমি এখন কি করবো?
-গিয়ে আপনার আম্মুর সাথে শোওন।
-কি যে বলোনা,আমি এখন বড় হয়েছিনা।
এখন কি আম্মুর সাথে শোয়া যায় বউ ছেড়ে?

-হুয়াট?
-আম্মুউউ দেখেন অপরিচিতা আমাকে রুম থেকে বের করে দিচ্ছে।
আমি লাফ দিয়ে গিয়ে খপ করে রীনানের মুখ চেপে ধরলাম।
-ফাজিল ছেলে,এত জোরে চিল্লায়?
মানুষ শুনলে কি বলবে?
রীনান চুপ করে আমার কথা শুনছে।
একবার আমার ঠোঁটের দিকে তাকায়।
একবার আমার চোখের দিকে তাকায়।
উফ কি যে জ্বালায় পড়লাম আমি।
কালই একটা ডিসিশন নিতে হবে আমার।
আচ্ছা আজকের মত চুপচাপ সোফায় শুয়ে পড়ুন।
কোন সাউন্ড যেন না শুনি।

আর ভুলেও আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।
নইলে কি তা টের পাবেন।
-কি করবে?জড়িয়ে ধরবে?
-উফফ।
রীনানকে আমি ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিলাম।
-এখানেই থাকুন।।
আর আমি একটা ছুড়ি নিয়ে আমার খাটে শুয়ে পড়লাম।
ছুড়িটা বালিশের নিচে রাখলাম।
যাতে ও না দেখে।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি প্রায় এক ঘন্টা।
কিছুতেই ঘুম আসছেনা।
হঠাৎ অনুভব করি রীনান ধীরগতিতে আমার কাছে আসছে।
আর আমিও ধীরেধীরে আমার এক হাত বালিশের কাছে নিলাম।
কিন্তু রীনান এসেই আমাকে অবাক করে দিয়ে ওর বাম হাত

চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com