বিরহ মিছিল । পর্ব - ২৫
ঘরে ঢুকে মুগ্ধতা দেখলো তার শ্বাশুড়ি মা এসেছেন। এক সময় যাকে বিনা কারণে সে সবচেয়ে বেশিই অপছন্দ করতো। পারভিনের সঙ্গে খেজুরে আলাপ জুড়েছেন কোহিনূর বসার ঘরে। মুগ্ধতা ক্লান্ত শরীরে সেখানে গিয়ে কুশল বিনিময় করলো।
কৃত্রিম বাতাস ঘরের চারধারে প্রবাহিত হচ্ছে। মুগ্ধতা ভেজা চুলে তোয়ালে পেচিয়ে রান্না ঘরের দিকে চললো। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীর ম্যাচম্যাচ করছে।
একটু চা হলে এখন মন্দ হবে না। মুগ্ধতা সর্বপাশ সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে চুপিচুপি রান্না ঘরে ঢুকলো।
আদিল বাড়িতে এখন না থাকলেও পারভিন আছেন।
এটাই যেন বড় ভীতি। আদিল চা খাওয়া একদম পছন্দ করে না৷ তার কাছে এটা বাজে অভ্যাস।
চা নিয়ে বহুত নিষেধাজ্ঞা আদিল দিয়েছে তাকে। মুগ্ধতা জানার পরও সময়ে-অসময়ে সেটা লঙ্ঘন করে।
এই যেমন এখন করছে।
আদিল বাড়িতে থাকলে নির্ঘাত রামধমক ললাটে জুটতো। কড়া গলায় বলতো,
" চা খাওয়া বেড হ্যাবিট মুগ্ধ। তোমাকে এ কথা কতবার স্মরণ করিয়ে দিবো।"
মুগ্ধতা একখানা কাঁচের পিরিচে, চায়ে ভরা কাঁচের কাপ রাখলো। পিরিচের মধ্যে বিস্কিটের ভয়াম থেকে দুটো টোস্ট নিয়ে রাখলো। চায়ের কাপ মুগ্ধতা দু'হাতে আগলে নিজের ঘরে পারি দিলো নিঃশব্দে। মুগ্ধতা ঘরে অভ্যন্তরে ঢুকে; প্রবেশ দ্বার চাপিয়ে; আরামদায়ক চিত্তে বিছানায় পিরিচ টা সাবধানে ধীর গতিতে রেখে; সেথায় বসলো।
ডোর বেলের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। অতিরিক্ত মাথা সেখানে মুগ্ধতা না ঘামিয়ে, চায়ের কাপে চুমুক বসালো। বাড়িতে তারা ছাড়াও ছ' মাস হচ্ছে, সাম্মি নামের তেরো বছরের একটি মেয়ে এই বাড়িতে থাকে। ঘরের টুকিটাকি কাজ সে করে। এবং তিন বেলা খাওয়া সহ ভরণপোষণ দায়িত্ব রফিক আজম পালন করেন। সে হয়ত খুলে দিবে দরজা। তাছাড়া আদিল অবশ্যই এখন আসবে না। মুগ্ধতা নিশ্চিন্তে পরপর চায়ে কাপে ফু দিয়ে চুমুক দিচ্ছে।
চা খাওয়া প্রায় মুগ্ধতার শেষ। চাপিয়ে রাখা দরজা কখন যে খুলে গেছে মুগ্ধতার হদিস নেই।
দরজার দিকে মুগ্ধতার পিঠ। অন্যপাশ ঘুরে চা পানে ব্যস্থ। আদিল মুগ্ধতার একদম কাছ ঘেঁষে এলো।
দূরত্ব অতি সামান্য। অতি সাবধানতা অবলম্বন করে করে মুগ্ধতার দিকে অত্যল্প ঝুঁকল আদিল।
এমন করে সে ঝুঁকল যাতে মুগ্ধতা টের না পায়। মুগ্ধতার কানের দিকে আদিল মুখ এনে থামলো।
মুগ্ধতার বদনে বিরক্ত করা বেবি চুল গুলো কানের গুঁজে দিলো আদিল।
অতঃপর মুগ্ধতার উদরে ঠান্ডা দু'হাত রেখে মুগ্ধতা কে নিজের সঙ্গে চেপে ধরে শুধালো,
" চা খাওয়া হচ্ছে সোনা?"
মুগ্ধতা উজবুক মুখে ঘাড় ঘুরে মানুষ টাকে দেখলো। বোকাসোকা দৃষ্টিতে চেয়ে অস্পষ্ট গলায়
আওড়াল,
"ক-ক-খন এসেছ? "
গলদেশে ওষ্ঠ ছুঁয়ে মুগ্ধতাকে ছেড়ে, লাফ দিয়ে বিছানায় শায়িত হলো আদিল।
চোখে কিংবা মুখে রাগের ছায়া নেই। মুগ্ধতার ভীত-সন্ত্রস্ত মুখবিবরে ভয় উধাও হলো।
কপট রেগে আওড়াল,
" বাহিরে থেকে এসে হাতপা না ধুয়ে বিছানায় চড়েছ তুমি।
এখনি বিছানা থেকে নামো বলছি।"
মুগ্ধতা আদিলের দিকে ধাপিত হয়ে আদিলের এক হাত টানতে টানতে বলল।
আদিল অলস কন্ঠে বলল,
"আরেকটু থাকি না।"
আরেকটু মানেই হচ্ছে আজকে জন্য আদিলের সাওয়ার নেওয়া মাফ। অলস ভঙ্গিতে শুয়ে থাকতে থাকতে একসময় ঘুমিয়ে বিছানায় সন্ধ্যা পার করবে।
মুগ্ধতা আরেকটু কন্ঠে রাগ ঢেলে কইল,
" একটুকু ও না৷ তুমি এখন উঠে সাওয়ার নিবে। তারপর খেয়ে শুবে।"
আদিল রাগ করার মতো কন্ঠে বলল,
"নট ফেয়ার মুগ্ধ। তুমি আমার কথার অবাধ্য হওয়া সত্ত্বেও আমি আজ কিছু বলিনি। তোমার ও উচিত আমার প্রতি এখন দয়ালু হওয়া।"
মুগ্ধতা বাচ্চাদের কন্ঠে আওড়াল,
"তোমায় বলেছি আমার প্রতি দয়ালু হতে? হচ্ছো কেন। না হলেই হয়।"
আদিল আধ শোয়া হয়ে, মাধুর্যময় চাহনি মুগ্ধতার দিকে স্থির রেখে আওড়াল,
" তুমি এতো আদুরে। তোমায় বকতে আমার একটুও ইচ্ছে করে না । শুধু আদর করতে ইচ্ছে করে। এটা কি আমার দোষ। বলো?"
নিজেকে ধাতস্থ করল মুগ্ধতা। মানুষটা তাকে পায়ে পায়ে লজ্জা দেয়। মুগ্ধতা কথা ঘুরিয়ে
আদিলকে শাসানো স্বরে বলল,
" দশ মিনিটের মধ্যে তুমি সাওয়ার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে আসবে।"
সন্ধ্যায় মুগ্ধতা কে নিয়ে বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আদিল বাড়ি থেকে বের হলো।
বাহিরে ঠান্ডা পরিবেশ। রাস্তা গুলো নিয়ন লাইটের আলোতে উজ্জ্বল।
ব্যস্থ বাজারের প্রতিটি কোণা। আদিলের হাত ধরে মুগ্ধতা সামনে এগোচ্ছে।
সমান কদমে দুজন এগোচ্ছে। রেলগাড়ী এখন গমন করায় বড় রাস্তাতে যানজট।
ফুটপাতে অতিরিক্ত ভিড় হওয়ায় পিচঢালা রাস্তায় নামলো আদিল ও মুগ্ধতা।
সেই পথ ধরে দুজনে সামনে ধাপিত হচ্ছে।
মানিক বস্ত্রালয়ে চলন রোধ হলো আদিলের। আদিলের থেমে যাওয়ার কারণে মুগ্ধতাও থেমে গেল। মুগ্ধতা কৌতুহল স্বরে আওড়াল,
" এখানে থামলে যে।"
আদিল এক ধাপ গ্লাস ডোরের দিকে এগিয়ে শুধালো,
"চলো, জানতেই পারবে।"
মুগ্ধতার হাত না ছেড়ে অন্যহাতে আদিল গ্লাস ডোর খুলল।
মুগ্ধতা আগে প্রবেশ করলো। এবং
আদিল পিছুপিছু।
দোকানের ছড়িয়ে রাখা টুল গুলোর মধ্যে আদিল একটাতে বসে মুগ্ধতা কে চোখের ইশারায় পাশের টুলে বসতে বললো। মুগ্ধতা তৎক্ষনাৎ বসলো।
দোকানটিতে বিয়ের শাড়ি থেকে শুরু করে ছেলেদের পাঞ্জাবি,
শার্ট, কনের হলুদের সাজসজ্জার প্রয়োজনীয় সকল বস্তু দোকানে সাজানো-গোছানো।
দোকানদার উসখুস স্বরে বলল,
" কি দেখাবো ভাই?"
আদিল সামান্য চোখে হেসে বলল,
" শাড়ি দেখান।"
দোকানদার প্রসঙ্গ টেনে বলল,
" কি রঙের শাড়ি দেখাবো?"
"যা যা আছে সব দেখান।"
দোকানদার শাড়ির গাইট হাতের নাগালে আনলো। মুগ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে আওড়াল,
" শাড়ি দিয়ে কি করবে তুমি?"
আদিল শাড়ি দেখতে দেখতে বলল,
"আমার বউ পরবে।"
মুগ্ধতা মাথায় হাত রেখে বলল ,
"আমি শাড়ি পড়ি না তো।"
আদিল এবারে জবাব না দিয়ে শাড়ি দেখতে মনোযোগী হলো।
দোকানদার শাড়ি মেলে দেখাচ্ছে এক এক করে।
প্রথমে ভারী নকশা করা নীল রঙের শাড়ি দেখো। তারপর এক এক করে বিভিন্ন রঙের শাড়ি।
আদিলের চোখ গেল গাঢ় লাল রঙের খুবই সিম্পল নকশা করা একটি শাড়ির উপর।
হাতে তুলে নিলো তখনি সেই লাল শাড়ি।
ভরা দোকানের মধ্যেই শাড়িটা মুগ্ধতার মাথায় আদিল জড়িয়ে দিলো। আওড়াল, " আমার বউ।"
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com