তুমি আমার এক অন্যরকম শান্তি । পর্ব - ০৭
মেহেরাব পরেরদিন কোচিং এ যাওয়ার আগে তামান্নাদের বাসার দিকে গেলো। রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ভাবছে কি সমস্যা মেয়েটার কে জানে? নোট টা দেওয়ার পর না আসলে কে খুজতো। রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে রাজিবকে দেখতে পেলো। মেহেরাব রাজিবের পাশ কাটিয়ে যেতে যেয়ে রাজিব বললো
-মেহেরাব।
মেহেরাব থেমে যায়। রাজিব বললো
- কই যাচ্ছো।
- একজনের বাসায় নোট আনতে।
- সেদিনের জন্য সরি। তোমাকে জানতে না পেরে অনেক কথা বলে ফেলছি।
- আরে না। আমি একটু বেশি করে ফেলছি। মাফ করে দিবেন।
- না না তোমার জায়গায় আমি থাকলে এমনটাই করতাম। আমার বন্ধুকে আমার সামনে কেউ কিছু বললে আমি এমনটাই করতাম।
- আচ্ছা আমি যায় এখন। বাসাটা খুজে বের করে নোট টা নিয়ে কোচিং এ যেতে হবে।
- কেন তুমি বাসা চিনো না?
- না। ঠিকানা নিয়েছি।
- দেখি তো।
মেহেরাব ঠিকানাটা দেখালো। রাজিব বললো
- আরে এই বাসা তো আমার বাড়ির পাশের ফ্লাট। নতুন এসেছে। ফ্লাট টা কিনছে। বছর খানেক হচ্ছে। সোজা যেয়ে ডানে যে বাড়িটা দেখবা ঐটাই। তবে একটু সাবধানে যেয়ো।
মেহেরাব অবাক হয়ে
- কেন?
- বাড়ির মালিকের বউ একটু ডেঞ্জার বেশি। নিবা আর চলে আসবা৷ বেশি কথা বলো না।
- ঠিক আছে।
মেহেরাব চলে গেলো৷
মিথিলা ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরের দিলে গেলো। রান্না ঘরে শাশুড়ীকে দেখে এক চিৎকার। চিৎকার শুনে মেহেরাবের মা লাফিয়ে উঠে। সাথে সাথে মিহু বের হয়ে এসে
- ভাবি কি হয়েছে?
মিথিলা রান্না ঘরে ঢুকতে ঢুকতে
- দেখো দেখো মায়ের অবস্থা। যেই সুযোগ পেয়েছে সেই রান্না ঘরে ঢুকে পড়ছে।
মা মিথিলার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে
- এতো জোরে চিৎকার করে কেউ বলে হ্যা। আমি ভয় পেয়ে গেছি।
মিহু সামনের দিকে এগিয়ে এসে
- না না মা আপনি কাজ টা একদম ঠিক করেননি। সুযোগ পেলেই কেন রান্না ঘরে আসবেন। ভাবি তো ঠিক কাজ করছে।
মিথিলা বললো
- আপনি আসবেন কেন রান্না ঘরে। কি এতো রান্না ঘরে?
- আমার ইচ্ছা হইছে আসছি। তোমাদের কি সমস্যা?
- আমাদের অনেক সমস্যা। আপনাকে না বারণ করা হয়েছে।
- আমার কি কোন শখ নেই?
মিহু মিথিলার দিকে তাকিয়ে পড়লো। তারপর দুজনে মায়ের দিকে তাকিয়ে পড়ে কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুজে মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো।
মেহেরাব রাজিবের কথা মতো ঠিকানায় পৌঁছে গেলো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপলো। কয়েকবার কলিংবেল চাপার পর দরজা খুলে তামান্নার মা বলতে লাগলো
- আমাদের কি একটু ও শান্তিতে থাকতে দিবা না। তোমাকে তো তোমার টাকা দিয়ে দিছি৷ যা চাইছো তাই দিয়েছি। তোমার জন্য ঐ জায়গা ছেড়ে এখানে চলে এসেছি। তা ও কি শান্তিতে থাকতে দিবা না। কেন আমাদের অশান্তি করতাছো। চলে যাও। মাফ করো আমাদের।
তামান্নার মায়ের কথা শুনে মেহেরাব পুরো থ হয়ে গেলো। তামান্নার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তামান্নার মা মেহেরাবকে খেয়াল করে
- তোমাকে ঐ ছেলেটা পাঠাইছে টাকা নেওয়ার জন্য। আমাদের কি শান্তিতে থাকতে দিবে না৷ তুমি যেয়ে বলো আমরা আর কোনো টাকা দিতে পারবো না।
বলেই দরজা বন্ধ করে দিলো। মেহেরাব দরজার কলিং বেল আবার চিপলো দরজাটা খুলে
- আবার কি? কথা কানে যায় নি।
- আপনার কোথা ও ভূল হচ্ছে। আমি এসেছি তামান্নার থেকে আমার নোট বুক টা নিতে। ও আমার নোট বুক নিছিলো।
তামান্নার মা মেহেরাবকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো
- তুমি এখানে দাঁড়াও আসছি আমি।
তামান্নার মা চলে গেলো। মেহেরাব মনে মনে বলছে কি আজব মানুষ ভেতরে বসতে ও বললো না।
মিহু মিথিলা এগিয়ে যেয়ে মা কে সরিয়ে দিয়ে
- আমরা তো মরে গেছি তাই আমাদের বলা যায় না। আমরা কি আর আপনার মেয়ে যে শখের কথা বলবেন।
মা বুঝতে পারছে কি হতে যাচ্ছে এখন। কি বলতে কি বলে ফেলছে। মা বললো
- আরে তোমরা ঘুমাচ্ছিলা তাই আর ডাকেনি। তোমরা সারাদিন কত কাজ করো তাই তোমাদের রেস্ট নেওয়ার ও দরকার আছে।
- তাই বলে আপনি আসবেন এই বয়সে রান্না ঘরে।
- কি হয়েছে? আমি তো কাজ করতে পারি৷ যদি বসে থাকি তাহলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বো। কাজের ভেতর থাকলে সুস্থ থাকবো।
- আপনাকে বলছে রান্না ঘরে আসলে শরীর সুস্থ থাকবে। আপনাকে তো কাজ দিয়েছি। রান্না ঘরে আসবেন না বলছি না। যখন যা লাগে আমাদের বললে তো আমরা করে দি।
মিহু মিথিলার চোখে পানি জল জল করছে। মা এটা দেখে
- আচ্ছা আমি আর এসব করবো না। আসবো না রান্না ঘরে। তোমাদের বলবো।
মিথিলা মাথা নিচু করে
- আপনার কিছু হলে আমরা সহ্য করতে পারি না। কষ্ট ও সহ্য হয় না।
মিহু মিথিলার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। মা দুজনকে বুকে টেনে নিয়ে
- আরে পাগলি মেয়েগুলো তোরা যদি এমন করিস আমি কই যাবো বল। তোদের দুজনকে পেয়ে আমি স্বার্থক রে। আমার দু টো মেয়ে পেয়েছি।
মায়ের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
মেহেরাব অনেকক্ষণ দাড়িয়ে আছে কিন্তু কারো আসার নাম নেই। হঠাৎ ভেতর থেকে শব্দ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে কেউ কাউকে মারছে। মেহেরাব ভেতরে ঢুকে পড়লো। দেখলো তামান্নার মা তামান্নাকে মারছে আর বলছে
- তোকে আমি বারণ করেছিলাম কোনো ছেলে মানুষের সাথে মিশবি না। তুই সেই কাজ করেছিস৷ নোট নিয়েছিস কেন? আমাদের কি একটু শান্তিতে থাকতে দিবি না। আর কতো জ্বালাবি আমাদের।
মেহেরাব পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলো। তামান্না কান্না করছে। মেহেরাবকে তামান্নার মা দেখে
- এই তুই ভেতরে এসেছিস কেন? তোকে বারণ করেছিলাম না।
তামান্নার মা খুব রেগে আছে। মেহেরাব আমতা আমতা করে
- না না মা মা মানে কুকুরে তাড়া দিছে ঢুকে পড়লাম। সরি।
- কুকুরে তাড়া দিছে নাকি ইচ্ছা করেই।
- বাইরে তো কুকুর।
মেহেরাব খাবার টেবিলে পানির গ্লাস দেখতে পেলো। পানির গ্লাসটা নিয়ে তামান্নার মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে
- আন্টি পানি টুকু খেয়ে একটু শান্ত হোন। মাথা ঠান্ডা করেন।
মেহেরাবের হাত থেকে পানির গ্লাস টা ফেলে দিলো। মেহেরাব অবাক হয়ে গেলো। তামান্নার মা বললো
- আমাদের বলদ পেয়েছিস তুই। তোর নজর ও খারাপ।
তামান্না মাকে এসে জরিয়ে ধরে কান্না করে
- ও ছেলেটা ভালো মা। তুমি ভূল বুঝছো।
- তোর কাছে কোন ছেলেটা খারাপ। তোর জন্যই আজ এই অবস্থা। শান্তি পাচ্ছি না তোকে নিয়ে।
তামান্নার মা ফ্লোরে বসে পড়ে কান্না করে দিলো। মেহেরাব পুরো হা হয়ে আছে। কি হয়েছে তাদের? কেন এমনটা করছে তারা। কিছুই বুঝতে পারছে না......
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com