অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম । পর্ব - ০৩
শরীফ মেয়েটার দিকে আবার ও ভালো করে তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর, আল্লাহ পাক যেন নিজ হাতে একে তৈরি করেছেন,,,,
শরীফ ভাইয়া বলে তুমি তো আছ, তুমি মাকে হেল্প করবে,কি পারবে না?
কিন্তু ভাইয়া আন্টি তো আমাকে কোন কাজ করতেই দেয় না।
আচ্ছা তুমি আমাকে ভাইয়া বলছো কেন?
আমি তোমার কোন জন্মের ভাইয়া?
আমি শরীফ ভাইয়ার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। নিজেকে সামলিয়ে বললাম আন্টি আর আংকেলের ছেলে তো সম্পর্কে ভাইয়া হয় তাই না?
হুম হয়। কিন্তু তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডাকবে না।
আমি অবাক হয়ে বললাম তাহলে কি বলে ডাকবো?
জানি না তবে ভাইয়া বলে ডাকবে না।
আমি মনে মনে বলি আজব লোক তো! ভাইয়া বলে ডাকতে পারবো না আবার কি বলে ডাকবো তাও বলছে না।
শরীফ কেন এরকম বলল নিজেও জানে না। তবে শরীফার ভাইয়া ডাক টা মেনে নিতে পারলো না।
আচ্ছা শরীফা তোমার আর আমার কতো মিল তাইনা?
আমি অবাক হয়ে বললাম কোথায় কতো মিল? এই যে আমাদের নামে মিল শরীফ/ শরীফা।
জ্বি,আমি তো প্রথমে বিশ্বাস ই করতে পারিনি। হা.হা.হা... সে জন্যই বলেছিলে আমি নাকি তোমার নাম শুনে আমার নাম বলেছি?
জ্বি, হঠাৎ করে শুনে তাই মনে হয়েছিল।
আচ্ছা শরীফা তোমার বাসায় কে কে আছেন? আমরা তিন বোন এক ভাই।আর আম্মু
আব্বু বলেই ডুকরে কেঁদে দেই। শরীফ ভাইয়া অনেক থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু আমি কিছুতেই কান্না থামাতে পারছিনা।
তাই শরীফ ভাইয়া ব্যার্থ হয়ে আমার দু'গাল ওনার দু'হাতে জড়িয়ে নেন। ওনার এমন কান্ড দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই আর কান্নাও অটোমেটিক থেমে যায়।
শরীফ ভাইয়া আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেন। শরীফা কাঁদে না, আমরা সবাই আছি তোমার পাশে।যারা তোমার আব্বুর সাথে এরকম করেছে তারা তাদের শাস্তি একদিন না একদিন ঠিক পাবে। এটা ঠিক তুমি তোমার আব্বু কে আর ফিরে পাবে না।আর আমি হাজার বললেও তুমি তোমার কষ্ট গুলো ভুলতে পারবে না। কিন্তু তোমার অতিতে খারাপ হয়েছে বলে তো আর তোমার ভবিষ্যৎ খারাপ হবে এমন তো কোন কথা নেই তাই না?
কিন্তু ওরা যে আমায় হন্যে হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছে।কারা তোমাকে খুঁজছে?যারা আমার আব্বু কে খুন করেছে তারা।
আমি আর আমার পরিবার তোমার কিছু হতে দিব না কথা দিচ্ছি।
আমি শরীফ ভাইয়ার কথায় কিছুটা ভরসা পেলাম।
আচ্ছা এবার চলো পিঠা খাবে।
আমি খাবো না আপনি গিয়ে খান।
তুমি না খেলে আমিও খাব না।
শরীফ ভাইয়ার কথায় বাধ্য হয়ে খেতে গেলাম।
সবাই পিঠা খেয়ে খুব প্রশংসা করলো। আংকেল তো বলেই বসলো বুঝলে
শরীফা আমি একজন অকর্মার ঢেকি বিয়ে করে এনেছি যে পিঠাই তৈরি করতে পারে না।
এদিকে আন্টি তো রেগেমেগে আগুন।
আমি বললাম মোটেও না আন্টি খুব ভালো আংকেল।কত্ত মজা করে রান্না করে।
আপনার ভাগ্য ভালো আন্টির মতো স্ত্রী পেয়েছেন।
আংকেল বলে তাই নাকি? আমার চোখে তো পরলো না।
আন্টি রেগে বলল তোমার চোখে পরবে কিভাবে সারাদিন বইয়ে মুখ গুজে থাকলে।
শরীফ ভাইয়া বলে উঠে ঠিকই তো বাবা তোমার ভাগ্য ভালো যে মাকে পেয়েছো।
না হলে তোমাকে কেউ বিয়েই করতো না।
শরীফ ভাইয়ার কথা শুনে আমারা সবাই হাসতে হাসতে শেষ।
হঠাৎ শরীফ ভাইয়া বলে শরীফা তুমি সবসময় এভাবেই হাসবে,
তোমাকে হাসলে কতো সুন্দর লাগে, তুমি নিজেও জানো না।
আমি মনে মনে বললাম সবার সামনে এভাবে বলতে হয়,আমি তো লজ্জায় শেষ।
শরীফ ভাইয়ার কথায় আংকেল ও বলে উঠে শরীফ ঠিকই বলেছে।
তুমি হাসলে যে আমার প্রাণ টা জুরিয়ে যায় মা। সবসময় এভাবেই হাসি খুশি থাকবা।
আন্টি ও বললো তুই এভাবে মনমরা হয়ে থাকলে আমাদের ভালো লাগে বল?
আমি কিছুই বললাম না মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
শরীফ ভাইয়া বললেন বাবা আমরা সবাই আগামীকাল শীতাকুন্ড যাচ্ছি।
সাইফ শুনে লাফাতে শুরু করলো।
শরীফ ভাইয়া বাসায় আসলেই নাকি সবাই কে নিয়ে ঘুরতে যান,
তার মতে কাজের বাহিরে একটু ঘুরাঘুরি করলে শরীল মন দুটোই ভালো থাকে।
আন্টি বলে শরীফা তুই কিন্তু আমাদের সাথে যাচ্ছিস।
আমি বাড়ির বাহিরে বের হবো এটা শুনেই ভয়ে আৎকে উঠি।
আন্টি আ,,,,আ,,, আমি যাবো না,তোমরা যাও ঘুরে এসো।
আংকেল বলেন অসম্ভব তোমাকে ছাড়া আমরা কিছুতেই যাব না।
তুমি না গেলে যাওয়া ক্যানসেল। তখন শরীফ ভাইয়া বলেন তুমি যাবে না কেন? তোমাকে যেতেই হবে।
আমি কিছুটা চিৎকার করে বললাম না কিছুতেই না।
আমি বাহিরে বের হলেই ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাবে।
আমি আন্টি কে জড়িয়ে ধরে পাগলামি শুরু করলাম আর অনবরত কাঁপছি ভয়ে।
আন্টি আমাকে শান্তনা দিতে দিতে বললেন এই বোকা মেয়ে আমরা আছি না
আমরা থাকতে তোকে কাউকে নিয়ে যেতে দিব না দেখিস।
আমি কিছুক্ষণ পর স্থির হতে আন্টি সাইফ কে বললেন সাইফ শরীফা কে নিয়ে
তোর রুমে যা আর তোর জন্য ভাইয়া যে খেলনা গুলো আনছে ঐ গুলো দেখা গিয়ে।
সাইফ ও তাই করলো আমাকে নিয়ে গেল।
এদিকে আন্টি বলে_বাবাই শরীফাকে বাহিরে নেওয়া কি ঠিক হবে?
মা কিছু হবে না। আমি দেশকে রক্ষা করার শ্বপথ নিয়েছি,আর সেখানে কিনা
একটা মেয়েকে রক্ষা করতে পারবো না? আমার উপর ভরসা করতে পারো মা।
সবার কথায় আমি যেতে রাজি হলাম ঠিকই কিন্তু আমি জানি আমার কি পরিমান ভয় হচ্ছে।
যারা আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর স্নেহ দিচ্ছে তাদের কথা কি করে না শুনি আমি।
আমি ছাড়া সবাই তৈরি হয়ে নিলো। আমি অপেক্ষা করছি শরীফ ভাইয়ার জন্য।
ভাইয়া মার্কেটে গিয়েছে আমার জন্য বোরকা আর হিজাব আনার জন্য যাতে কারো সামনে
পড়লেও আমাকে কেউ চিনতে না পারে।
ঘন্টা খানেক পর শরীফ ভাইয়া আসলেন এবং আমার হাতে শপিং ব্যাগ দরিয়ে দিয়ে
বললেন তৈরি হয়ে আসার জন্য। আমিও পনেরো মিনিট সময় নিয়ে তৈরি হয়ে আসলাম।
আমি খুবই আশ্চার্য হলাম বোরকা টা আমার একদম পারফেক্ট হয়েছে।হিজাব পরে নেকাব করে নিয়েছি।
আমি আসতেই শরীফ ভাইয়া আমার দিকে তাকায় আর আমি তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।
আমি অস্বস্তিতে পরে গেলাম ওনার তাকানো তে। তখনি সাইফ এসে বলে ভাইয়া গাড়ি চলে আসছে।
শরীফ ভাইয়া বলে আচ্ছা এবার সবাই চলো। আমি মনে মনে আয়াতুল কুরসি আর
দূরদ শরীফ পড়ে নিলাম এবং ঘরকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
শরীফ ভাইয়া ড্রাইভারের সাথে, আমি আর সাইফ মাঝখানে আর পিছনের
সিটে আন্টি আর আংকেল বসলেন। আমি জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি।
কতোদিন পর আমি বাহিরের পরিবেশ দেখতে পাচ্ছি!
অথচ এই আমি বিকেল বেলা ভাইকে নিয়ে নদীতে নৌকা করে ঘুরে বেড়াতাম।
হঠাৎ খেয়াল করলাম শরীফ ভাইয়া গাড়িতে থাকা গ্লাসে তাকিয়ে আছে
আমি তাকাতেই চোখে চোখ পরে গেল দুজনের আমি তো লজ্জায় শেষ।
তাই সাথে সাথে চোখ সরিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।
এরপরেই দেখতে পেলাম কিছু দূর গাড়ি থামিয়ে, কিছু লোক গাড়ি চেক করছে।
আমার ভয়ে, কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার বুঝতে বাকী নেই যে এরা আমাকেই খুজছে!
শরীফ ভাইয়া হয়তো বুঝতে পেরেছেন বিষয় টা। শরীফ ভাইয়া বললেন শরীফা তুমি নেকাব টা লাগিয়ে ফেল,আর একদম ভয় পাবে না আমি আছি তো।
আমিও ওনার কথা মতো নেকাব লাগিয়ে নিলাম।কারণ গাড়িতে নেকাব খুলে ফেলছি।
তাদের কাছে গাড়ি আসার পর আমি তবুও মাথা নিচু করে লুকিয়ে থাকি আর রিতিমত আল্লাহ তা'আলা কে ডেকে চলেছি।
যারা চেক করছে তাদের সাথে পুলিশ ও আছে। শুনেছি পুলিশ রা নাকি ঘুষখোর তার প্রমাণ আজকে পেলাম।
তো যাই হোক তারা গাড়ি থামাতেই শরীফ ভাইয়া ওনার কার্ড দেখান এবং পুলিশ গুলি বলে স্যরি স্যার অহেতুক ডিস্টার্ব করার জন্য, তারপর আমাদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হলো। বুঝতে পারলাম শরীফ ভাইয়া আর্মি অফিসার হওয়াতে তারা আর গাড়ি চেক করলেন না,,,,,,
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com