অপরিচিতা । পর্ব - ০৩
আমি ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম, কে এই বাচ্চার বাবা?কে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার এত বড় ক্ষতি করলো মা?
বলোনা মা,কে করলো আমার এত বড় সর্বনাশ?
-কি হয়েছে রে মা?তুই এভাবে কেন কাঁদছিস?
-ইহান আমাকে আর এক্সেপ্ট করবেনা আম্মু।
ও আমাকে ওর সাথে যোগাযোগ করতে না করে দিয়েছে।
-কেন বলেছিস ওকে এগুলো?
-আমি চাইনা ওকে ঠকাতে আম্মু।তাই সত্য টা বলে দিয়েছি।
আর আমি চাইনা একটা মিথ্যে দিয়ে আমাদের জীবন টা শুরু হোক।
কিন্তু এখন দেখছি জীবন টা শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেলো।
-কাঁদিস না মা আমার।
-সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
আম্মু আমাকে বুঝাতে লাগলেন।
আয় নাস্তা করবি চল।
নাস্তা করে আমরা হসপিটালে গিয়ে একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো।
-আজ না আম্মু,শরীর টা ভালো লাগছেনা।
আজ কোথাও যাবোনা আমি।তুমি যাও এখান থেকে।আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
সেদিনের মত দিনটা কেঁদে কেঁদেই কেটে যায়।
রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়তেই স্বপ্নে দেখি একটা ছোট্ট বাচ্চা
আমার ওড়না ধরে কাঁদছে আর বলছে,
আমাকে মেরোনা আম্মু,আমাকে মেরোনা।
আমার কি দোষ বলো?আমি তোমার কোলে আসতে চাই।
আমাকে একটু কোলে নাও না আম্মু।নাওনা একটু আমাকে কোলে।
হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায়।
সকালে আম্মু এসে বলে,
চল উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে।তারপর হসপিটালে যাবো।
-আমি যাবোনা আম্মু হসপিটালে।
-কেন যাবিনা?
-আমি কিছু করবোনা।
-মানে কি?
-মানে হলো আমি বাচ্চাটাকে জন্ম দিবো।
-কি বলছিস তুই এগুলো?
তুই কি বলছিস ভেবে বলছিস তো?
-হ্যাঁ।
-তুই জানিস না কে এই সন্তানের বাবা,আর যে তোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এত বড় ক্ষতি করেছে তার বাচ্চা তুই জন্ম দিবি?
মাথা ঠিক আছে তোর?
-আমার মাথা ঠিকই আছে মা।
যে বাচ্চার জন্য আজ আমি অবহেলিত,
সেই বাচ্চাকে আমি দুনিয়ার আলো দেখাবো।মানুষের মত মানুষ করে তুলবো।
কারণ ওর তো কোন দোষ নেই।
ও তো নিষ্পাপ।ওকে কেন শাস্তি দেবো আমি?
-দেখ জীবন টা এতো সোজা না,তুই যত টা সোজা ভাবছিস।
সমাজে আমরা মুখ দেখাবো কি করে?
একটা বার ভেবে দেখেছিস?
লোকে কি বলবে?
একজন কুমারী মেয়ে বাচ্চা প্রসব করেছে।
তুই এক্ষুণি চল আমার সাথে।আমি এই বাচ্চা তোকে রাখতে দিবোনা।
-আমার তো সব ই হারিয়ে গেলো মা।
হারানোর মত কিছুই আর নেই যে আমার।
তুমি চাইলে আমি অনেক দূরে চলে যাবো।
তবুও এ বাচ্চা আমি নষ্ট করবোনা।
আর তুমি যদি এই বাচ্চাটাকে নষ্ট করতে বলো তাহলে আমি এ বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যাবো।
আর কোন দিন তোমরা আমায় খুঁজে পাবেনা।
আম্মু আব্বুকে ফোন করে সব জানায়।
আব্বুও আমাকে খুব বুঝায় বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেলার জন্য।
কিন্তু আমি যে এই বাচ্চা নষ্ট করবো না।
আম্মু আব্বু বলেন,তাহলে যেন বিয়ে করে নেই।
আমি তাতেও না করে দিলাম।
কিছু দিন পর হঠাৎ একদিন ইহান আমাকে ফোন দিয়ে বলে ও আমাকে খুব মিস করছে।আমার জন্য নাকি ওর খুব খারাপ লাগে।
-আচ্ছা,আমরা কি বন্ধু হয়ে থাকতে পারিনা সারাজীবন?
-না পারিনা।
-প্লিজ এতটা পাষাণ হইওনা।বন্ধু হয়ে থাকি আমরা।
আমি ফোন টা রেখে দেই।
কষ্টে বুকটা যেন ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু ইহানকে একটুও বুঝতে দেইনি।
এর মাঝে আমি আর বাসার বাইরেই বের হইনি।
আজ আম্মু এসে আমাকে বলছে,
-চল আজ তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।
চেকাপ করা দরকার।
-চলো।
আমি আর আম্মু রিক্সায় করে হসপিটালে যাচ্ছি।
হঠাৎ করে কোত্থেকে যেন একটা ছেলে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকছে,
অপরিচিতা,এই অপরিচিতা।
অপরিচিতা..
আমি আর আম্মু আর তাকাই নি।
রিক্সাও থামাইনি।
কোন পাগলে এই ভাবে চিল্লাচ্ছে কে জানে।
অপরিচিতা আবার কারো নাম হয় নাকি।
কিজানি হতেও পারে কারো নাম।
যাকে ছেলেটা এই ভাবে ডাকছে।
আমরা রিক্সায় করে হসপিটালে চলে আসলাম।
ফোন করে সিরিয়াল লিখিয়ে রেখেছিলাম বলে আসার সাথে সাথেই ডাক্তার দেখাতে পারলাম।
ডাক্তার বললেন,
-বাচ্চা সুস্থ আছে।
কোন রকম সমস্যা নেই।
মেয়েকে কি সেই পাত্রের সাথে বিয়ে দিয়েছেন?যে এই অবস্থা করেছে ওর?
-না মানে আসলে।
-থাক কিছু বলতে হবেনা।
যত দ্রুত পারেন বিয়ে দিয়ে দিন মেয়েকে।
আম্মু আস্তে করে হুম বল্লো।
বাইরে বেরুতেই আমি আর আম্মু চমকে যাই।প্রতিবেশী কাকীকে দেখে।
আর তখন তো আরো ঘাবড়ে যাই,যখন দেখি আমাদের প্রতিবেশী কাকী টা শুনে নিয়েছে আমি যে প্রেগন্যান্ট।
-ভাবী,আদ্রিজা প্রেগন্যান্ট?
এত্ত বড় একটা কথা আপনারা গোপন করেছেন?
ছিঃ লজ্জা নেই তোমার?বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট কিভাবে হলে?
কার পাপ পেটে ধরেছো?
-জাস্ট স্যাটাপ।
ও কোন পাপ পেটে ধরেনি।
ও আমাদের দুজনের সন্তানকে পেটে ধারণ করেছে।
আর ওই সন্তানের বাবা আমি।
আমি আর আম্মু কথা গুলো শুনে আঁতকে উঠলাম।
আমি আর আম্মু যেন ২য় বারের মত বড় রকমের এক ধাক্কা খেলাম।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com