বিরহ মিছিল । পর্ব - ০৯
মুগ্ধতা কুলবড়ই গুলো যত্নে কাঁধের ব্যাগে ভরে ফেলল। চঞ্চল পায়ে ধপাস করে সামনের একটি বেঞ্চে ব্যাগটি সশব্দে রাখলো। বাতাসের প্রকোপে মৃদু নড়ছে পাশে থাকা দোলনা। মুগ্ধতা ছুটে দোলনার কাছে গেল৷ দুইটি দোলনার মধ্যে একটি দোলনায় নিজের সব ভার ছেড়ে আয়েশ করে বসলো। দু পা ঠেলে দোলনা ঠেলার চেষ্টা করল। মনের মতো হচ্ছে না৷ দোলনা বেশি দূর এগোচ্ছে না। মুগ্ধতা ভাবুক হলো। আকস্মিক আদিলকে তাড়া দিয়ে বলল,
" এই আদিল এদিকে আসো।"
আদিলের দৃষ্টি সিমানায় মুগ্ধতা। মাঝির সঙ্গে দাঁড়িয়ে। টুকিটাকি কথা হচ্ছিল দুজনের মধ্যে। সে কথায় মুগ্ধতার ভাঁটা পড়ল। আদিল দ্রুত পায়ে মুগ্ধতার কাছে গেল। শশব্যস্থ কন্ঠে বলল,
" এনি প্রবলেম? "
"বহুত প্রবলেম।"
কিছুটা ভঙ্গিমায় বলল মুগ্ধতা। তারপর এক প্রকার অধিকার দেখিয়ে বলল,
" পিছন থেকে দোলনায় ধাক্কা দাও। "
এক বিন্দু চমকপ্রদ দেখা গেল না আদিলের মাঝে। মুগ্ধতা স্বভাব সম্পর্কে অবগত অনেক দিন ধরেই।
আদিল মুগ্ধতার পিছনে গিয়ে দোলনায় হালকা ধাক্কা দিল। দোলনা অল্প দূরে গেল। মুগ্ধতা অভিযোগ সুরে বলল,
" হচ্ছে না আদিল। তোমার শরীরে শ ক্তি নেই? বাসায় কি ঠিক মতো খা ও না নাকি! এতো আস্তে ধাক্কা দেয় কেউ। আরো জো রে দোলনায় ধাক্কা দাও।"
আদিল প্রতিবাদ করার ন্যায় শুধালো,
" আমার কি বোন আছে? এর আগে দোলনায় ধাক্কা দিয়েছি কি? বা আমি কখনো এগুলো করেছি? বুঝবো কিভাবে এগুলো?"
মুগ্ধতা বলল,
" তাই বলে শিখতে হবে না? সব শিখতে হবে। পিছন থেকে এখন তুমি ধাক্কা দিবে,যতক্ষণ না তুমি পাস করছো।"
আদিলের কথা বলতে বা প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হলো না। বরং ভালো লাগছে, বিষয়টি উপভোগ্য।
নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন কিছু।
পূর্নবার আদিল দোলনায় ধাক্কা দিলো। এক বার, দুই বার এভাবে বেশ কিছুক্ষণ সময় পেরুলো। এক সময় ক্লান্ত দেখাচ্ছে আদিল কে। শরীরে স্বেদজল ছুটে গেছে। আদিল আরেকবার দোলনায় ধাক্কা দিতে উদ্যত হলে মুগ্ধতা তাকে থামিয়ে খোশমেজাজে বলল,
" পাস করেছ, কিছুক্ষণ আগেই। আর ধাক্কা দিতে হবে না।"
আদিল ক্লান্ত ভঙ্গিতে ধপ করে সিমেন্টের বসার আসনে বসলো। বলল,
" এতক্ষণ তাহলে বলোনি কেন?"
সরল সগতোক্তি মুগ্ধতার,
" ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছিলাম বলতে পারো।"
" হঠাৎ? "
"দেখছিলাম আমার জ্বালাতন কতটুকু সময় সহ্য করতে পারো।"
আদিল কৌতুহলী গলায় বলল,
" কি বুঝলে?"
" বলবো না।"
দোলনা থেকে নেমে স্লিপারের কাছে গেল মুগ্ধতা। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। স্লিপারের দু দিক ধরে দাঁড়িয়ে আদিল কে ডাকল,
" এই আদিল।"
আদিল পাশেই বসা ছিল৷ মুগ্ধতার বদনে চাইল আদিল। মুগ্ধতা সঙ্গে সঙ্গে হাত উঁচিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারলো। অধোবদনে আওড়াল,
" এটা শুধু তোমার জন্য।"
.
বাড়িতে ফিরল আদিল দ্বিপ্রহরে। মুগ্ধতা কে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে অবশেষে বাড়িতে ঢুকল। বাড়িতে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। সম্ভবত মায়ের ঘর থেকে শব্দ ভাসছে। কন্ঠ অতি পরিচিত। আদিল মায়ের ঘরে দিকে এগোলো। বয়স চল্লিশের একজন মহিলা বিছানায় বসে। আদিলের ওষ্ঠের দু'প্রান্ত প্রসারিত হলো। খপ করে মহিলাটি কে জড়িয়ে ধরে মৃদু স্বরে বলল,
" আম্মু!"
মহিলা আদিলকে নিজের বুকে জাপ্টে নিলেন। চুল হাতিয়ে শুধালেন,
" কখন এলি বাবা?"
মহিলার পাশে বসা পারভিন সবটা অবলোকন করলেন। না চাইতেও বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারছেন। ছেলেকে হারানোর ভীতি শরীরের র ক্ত হিম হয়ে আসছে।
.
ইদানিং মুগ্ধতার মতিগতি ঠিক ঠেকছে না আমেনার। বলা যায় মেয়েকে নিয়ে তিনি ভীষণ টেনশনে। অকারণে নিজের ঘরে বসে একলাই হাসে মুগ্ধতা। লক্ষণ বুঝতে পারছেন না।
দুপুরে কলেজ ফিরে নিজের ঘরে ঢুকে মুগ্ধতা। অতঃপর ব্যাগ টেবিলে রেখে গলা উঁচিয়ে গান গায়, "ভালোবেসে যদি হাত টা ধরো, আমি হবো না আর কারো।"
এইটুকু বলেই হাসে মুগ্ধতা। লজ্জায় অধোবদন। এই দৃশ্য নিজ চেখে দেখে ঘরে পায়চারি করছেন আমেনা। ভাবছেন আদিলের ভুত কি নামে নি মেয়ের মাথা থেকে! চিন্তা করেন, যদি এই ভুত মেয়ের মাথায় জেঁকে বসে। মগজ দপদপ করছে ওনার। আর নিতে পারছেন না টেনশন। সকল টেনশন ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলেন। তৎপর
মনে মনে ভয়ংকর সিদ্ধান্ত আঁটলেন,
" দুঃস্বপ্নেও আদিল কে মানবেন না তিনি। তাছাড়া ছেলের ক্যারিয়ার গড়তে গড়তে নাতিনাতনি পাবেন তিনি। সব মুগ্ধতার বয়সের দোষ। "
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com