মনের মানুষ । পর্ব - ০২
মিমকে এতো রেগে যেতে দেখে শিমুল তাকে উদ্দেশ্য করে ধীর গলায় বললো,
এই ধরনের বখে যাওয়া ছেলে-পেলেদে'র সাথে তর্কে জড়িয়ে কি হবে?
তুমি চুপ করে যাও, ওনা'র হাব-ভাব একদম ভালো ঠেকছে না আমার কাছে।"
মিম হাসতে হাসতে বলল,
- "তা ঠেকবে না কেন?
বাপের হোটেলে খেয়ে একটা উশৃংখল তৈরি হ'য়েছে।
বাপের আছে পাওয়ার,সেটা কে হাতিয়ার করে এখন এলাকায় নেতা-গিরি দেখাবে আর সুযোগ পেলে'ই আবার আমজনতার সামনে ফুটানি মা*রবে।"
মিমের কথা শুনে,,,,,,, ভদ্রলোক হঠাৎ করে'ই খুব উত্তেজিত হ'য়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "আপনি কি বুঝতে পারছেননা? যে এই বিষয় টি কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি হ'য়ে যাচ্ছে?"
- "এই যে শুনুন, আপনার বাবা-মা কিন্তু একা বাচ্চা পয়দা করে নাই। ঠিক আছে? খবর রাখেন? জানেন কিছু?
এই রোড ব্লক করে রাখা'র জন্য একজন গর্ভবতী মায়ের বাচ্চা ডেলিভারি শত শত রিস্ক উপেক্ষা করে মাঝরাস্তায় করাতে হ'য়েছে।
বাপে'র আছে টাকা ফুটানি মা*রাবেন ভালো কথা। তবে দয়া করে কারো সমস্যার কারণ হবেন না। ঠিক আছে?
আর হ্যাঁ নেতা গিরি করবেন ভালো কথা, এ সব দয়া করে আমাকে দেখাতে আসবেন না। ওক্কে? আমি আপনাদের দু'ই পয়সার ও দাম দেই না। আপনাদের দাম দেওয়া ছাড়াও আমার অনেক কাজ আছে।"
মিমে'র কথা শেষ হতে না হতে'ই শিমুল এসে তাকে টেনে অন্য ঘরে নিয়ে গেলো। অতঃপর, ফিরে এসে সে মিমে'র হ'য়ে ক্ষমা চাইলো ভদ্রলোকে'র কাছে। তবে সেই ভদ্রলোক একদম নাছোড়বান্দা প্রকৃতি'র তিনি কাওকে ডেকে বললো,
- "মেয়েটির ব্যাপারে খোঁজ নাও। দশ মিনিটের মধ্যে সব তথ্য জানাও আমাকে।"
তখন অপর দিকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টি বললো,
- "আপনি একদম ভাববেন না, ইমান স্যার।।। নিচে চলুন, আমরা সামলে নিবো, সব। ইট'স ওকে।" কিন্তু তিনি ধূর্ত হেসে বললেন,
- "না ওকে না রওনাক।
কারণ আমি নিজে'ই ডিল করতে চাই,,,,,, এই বিষয় গুলোর সাথে আর তাছাড়া আমি একটু সময় নিয়ে দেখতে চাই। তার কত সহ্য ক্ষমতা আছে?" তখন আইভার এসে বললো,
- "ভাইয়া বাদদেও না, খেতে চলো। সকালে তোমার জন্য ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।।।।।" সে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে গেলো।
এদিকে, মিম লাইভ করছে। লাইভে মেহেরিশ একটা কমেন্ট করে বললেন,
- "আম্মু তোমাকে শাড়ি টায় খুব মানিয়েছে। অনেক বেশি সুন্দর দেখতে লাগছে।" মিম তখন মজা করে বললো,
- "একটা কিনে দিলেও তো পারো? দেখতে'ই পাচ্ছ লাইভ করার সাথে সাথে স্টক আউট হয়ে যাচ্ছে।"
মেয়ের কথা শুনে,,,,,,,,, মুচকি হাসলেন তিনি। তখন হাসনাত সাহেব হাসতে হাসতে বললেন,
- "ম্যাডাম, মামণি দেখছি একদম আপনার মতো'ই ধৈর্য্যশালী এবং পরিশ্রমী হয়েছে???" তিনি কফির মগ টা হাতে তুলে নিতে নিতে ল বললেন,
- "হুমম,
আমার কন্যা আমার মতো'ই, তবে তার মধ্যে অনেক
স্পেশাল কোয়ালিটি আছে। যাগগে, এখন আমাকে উঠতে হবে।
সারাক্ষণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। একটু সময় দেওয়া হ'য় না বাচ্চাটাকে।"
- "তা ঠিক, তবে শুনালাম মেয়ে নাকি এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে?"
- "জ্বি, ভাই সামনে' ই তার বার কাউন্সিল এক্সাম।
এক্সাম আর বিজনেস নিয়ে মেয়ে টা কিছুটা টেনশনে আছে।"
তখন ধ্রুব সাহেব এসে মেহেরিশ কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- "চলুন! আমি ওই পথ দিয়েই যাবো। বাড়িতে ছেড়ে দেবো আপনাকে।"
তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
- "তার কোনো প্রয়োজন নেই।মেয়ে'র কিছু জিনিস নিতে আমাকে গাউছিয়া মার্কেট হ'য়ে যেতে হবে।"
তখন মায়রা এসে তাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
- "চলে আন্নি এটাই বেষ্ট,
বেষ্টি'র জিনিস কিনতে আমি ও হেলপ করবো তোমাকে।" ধ্রুব সাহেব তখন মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- "তোমার কি কথা হ'য়েছিল মিমে'র সাথে?"
- "জ্বি, সে এখন লাইভে ব্যস্ত। জানো বাবা, লাইভে কিছু ছেলেপেলে প্রপোজ করেছে তাকে।"
মায়রা'র কথা শুনে,,, হেসে ফেললেন দু'জনে কারণ তারা সবাই জানে এক্ষেত্রে মিমের উত্তর কি হবে?"
মিম আধ ঘন্টা'র লাইফ শেষে ঢাকার সকল পার্সেল শিমুল কে সঙ্গে নিয়ে রেডি করলো।
তারপর বিকেলে সে বেড়িয়ে পরলো পার্সেল গুলো নিজে থেকে পৌঁছে দিতে।
আর কিছু পার্সেল ডেলিভারি বয়ে'র মাধ্যমে সে মিরপুর চৌদ্দতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো কারণ গত লাইভে সবচেয়ে বেশি অডার ওখান থেকেই এসেছে।
যাগগে সেসব কথা মিম কাছাকাছি এলাকার পার্সেল গুলো পৌঁছে দিয়ে সাতটা'র দিকে এসে পৌঁছেগেলো নিজের এলাকাতে।
বাসার কাছাকাছি একটা পার্কে এসে মিম থামলো তারপর পরিচিত
দোকানদারের কে গিয়ে বললো,
- "মামা একটা ওয়ান টাইম কাপে আদা চা দাও তো গলা ব্যাথা করছে।"
তিনি ঝটপট মিম কে এক কাপ
চা দিলেন, মিম চা খেতে খেতে বললো,
- "আজ চায়ে'র স্বাদ এরকম পানসে পানসে কেন লাগছে?"
তিনি ইশারা করে মিম কে কিছু এক টা বোঝানোর চেষ্টা করলেন,
মিম তখন বিল মিটিয়ে খেয়াল করে দেখলো।
সেই ভদ্রলোক পার্কের মধ্যে হকিস্টিক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিম পুরোপুরি তাকে ইগনোর করলো তারপর আপন মনে ধীর গতিতে সাইকেল চালাতে লাগলো পার্কে ঢুকে। ইমান তখন তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "কিছুকিছু মানুষের জন্মের ঠিক নেই তারা আবার অন্যে'র সাথে লাগতে আসে।"
মিমের সে সকল কথা কর্ণ গোচর হতে'ই সে মুচকি হেসে বললো,
- "কিছু কিছু মানুষের খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই এরা অযথাই সকলকে নিজেদের মতো দূর্বল ভাবে।
আর তাছাড়া আমি যাকে জন্ম থেকে'ই চিনিনা,
যার অস্তিত্ব আমার জীবনে নেই তাকে নিয়ে ভেবে কি হবে?
যে আমাকে কখনো নিজে'র সন্তান হিসেবে'ই স্বীকার করেনি।
আমার মা কে তার প্রাপ্য সম্মান টুকুনি দেয়নি আমার মনে হয় না তার প্রতি
আমার কোন দায়-দায়িত্ব কিংবা ফিলিংস আছে।
সে গোল্লায় যাক বা তার কোনো কিছু হলো আমার সিকিভাগ ও যায় আসে না তাতে।
তাকে নিয়ে অযথা ভাবার আমার কোনো প্রয়োজন নেই আল্লাহ তায়ালা আমাকে অনেক দিয়েছে।"
কথা টা শুনে'ই যেন ভ্যাবা-চ্যাকা গেলো ইমান,
সে কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলো না মিমে'র চোখে মুখে।
মিম তার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো, মনে মনে সে হেসে উঠে বললো,
- "আপনি বোধ হ'য় জানেনা,
মিস্টার এই সকল তুচ্ছ জিনিস কখনো আঘাত করতে পারেনি আমাকে।"
ইমান মনে মনে বলে উঠলো,
- "সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করার পরেও আজ প্রথমআমার কাওকে বুঝতে কিংবা অনুধাবন করতে সমস্যা হচ্ছে।
মনে মনে কি চলছে ওই মেয়ে টার? ও এই মুহুর্তে কি ভাবছে?
না আসলে আমি তাকে এই সব কথা গুলো ভ্যাবা-চ্যাকা খাইয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু
মেয়ে টা উল্টো আমাকেই চমকে দিচ্ছে?" ইমানে'র চেহারা'র হাব-ভাব দেখে মিম মুচকি
হেসে নিজে'ই নিজে'র খুব প্রশংসা করে বললো,
- "ইসস,,,,,, মিমো! সত্যি'ই তোর বুদ্ধির খুব প্রশংসা করতে হচ্ছে।
কি বুদ্ধিমতী তুই? যে শেষমেষ একজন মনোবিজ্ঞানী কেই ফাঁসিয়ে চলে এলি তার'ই পাতা ফাঁদে?
যাগগে সেসব কথা! ভবিষ্যতে তুই এক জন ভালো ল'ইয়ার হবি, সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই তাতে।শুভকামনা রইলো জান, তোমাকে যে পারতেই হবে।"
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com