বিরহ মিছিল । পর্ব - ১৩
বিকালের দিকে বাড়িতে ফিরেছে আদিল। মুগ্ধতা বাজার থেকে ফিরে খবরটা পেয়েছে৷ চকিত সে জেঠিমার বাড়িতে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমেনা আটঘাট বেঁধেই বসে ছিলেন। মুগ্ধতা শত চেয়েও আমেনা কে টপকাতে পারে না।
সন্ধ্যা আটটা বাজছে। নিয়ম মাফিক মুগ্ধতা পড়তে বসেছিল। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ভাবছিল কি করে জেঠিমার বাড়িতে যাওয়া যায়৷ অনেক সময় পর একটি সুন্দর অজুহাত খুঁজে গেল। মুগ্ধতা পড়ার টেবিল পেরিয়ে রান্না ঘরে গেল। আমেনা রাতের খাবার বসিয়েছেন চুলায়। মুগ্ধতা মায়ের পিছনে রয়েই বলল,
" আম্মু আমার ভোকাবুলারির বইটা জেঠিমার বাসায় রয়ে গেছে। এখন আমার বইটা লাগবে। গিয়ে নিয়ে আসি?"
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন আমেনা। মেয়ে কি সুন্দর মিথ্যা কথা বলতে শিখেছে,না দেখলে বোঝার উপায় নেই। তিনি রুক্ষ গলায় আওড়ালেন,
" আমি ভাত চুলায় চড়িয়ে তোর জেঠিমার বাড়ি যাচ্ছি, ততক্ষণে তুই অন্য সাবজেক্ট পড়৷"
মুগ্ধতা মিনতি করে একবার আওড়াল,
"আমি যাই না আম্মু? "
আমেনা ক্ষেপা ষাঁড়ের মতো করে বললেন,
" বড্ড অবাধ্য হচ্ছিস দেখি। তোর বাবা আসুক আজকে।"
এই কথায় কাজ হলো। মুগ্ধতা সুড়সুড় করে নিজের ঘরে গেল। মাকে টুপি পড়ানো এতোটাও সহজ নয় মুগ্ধতা হাড়েহাড়ে বুঝলো।
রাতের বারোটা বাজতে চলেছে। আদিল ঘুমিয়ে। ঘুমিয়েছে ঘন্টা খানেক হয়েছে। ভেবেছিল মুগ্ধতা আজ একবার হলেও দেখা করতে এই বাড়িতে আসবে। অপেক্ষারত ছিল, আসে নি।
চুপিচুপি আজকেও মায়ের ঘর থেকে ফোন হাতিয়ে এনেছে মুগ্ধতা। উদ্দেশ্য আদিল কে কল করবে, দেখা করবে। রাতের একটা ছুঁইছুঁই। কান্ড জ্ঞান সব যেন গি লে খেয়ে ফেলেছে এই মেয়ে।
আদিল কে সত্যি সত্যি কল করলো মুগ্ধতা। একবার রিং হতে হতে কল কেটে গেল। মুগ্ধতা বিরক্ত হলো। বিরক্ত চোখমুখে দৃশ্যমান। এন্ড্রয়েড ফোন এমন ভাবে চালাচ্ছে এটা বুঝি বাটন ফোন। হাতের আঙ্গুল ঠেসে ঠেসে স্কিন ছোঁয়াচ্ছে। কাচঁ পাচ্ছে না মুগ্ধতার অত্যাচারে গুড়িয়ে যেতে।
মুগ্ধতা দাঁত কিড়মিড় করে পূর্নবার আদিলের নাম্বার ডায়াল করলো। রিং হচ্ছে আবারো। ফোনের ভাইব্রেশনে লহমায় আদিলের ঘুম ভেঙে গেল। আদিল শুয়ে থেকেই বিছানা হাতড়ে ফোন টা নিজের হাতের আঁজলায় নিল। আদিলের ফোনের স্কিনে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে। সবে ঘুম থেকে উঠায়। কোন রকমে কলটা রিসিভ করে কানে ধরলো। ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,
"হ্যালো?"
মুগ্ধতার সংক্ষিপ্ত উত্তর, "হু।"
আদিল ঘুমের চোটে চোখ মুদে গেল। রাতবিরেতে কে কল করেছে বুঝতে পারছে না। মস্তিষ্ক খাটাতে ইচ্ছে করছে না। সে সোজা প্রশ্ন করলো, "কে বলছেন?"
মুগ্ধতার মিনমিন কন্ঠ, " আমি মুগ্ধতা।"
বজ্রপাত কন্ঠ আদিলের,
" এতো রাতে জেগে তুমি। ঘুম নেই?"
আদিল চোখে হাত রেখে বলল। দোনোমোনো না করে মুগ্ধতা আসল কথায় এলো। বলল,
" ছাঁদে আসো আমি অপেক্ষা করছি।"
আদিল ক্লান্ত নিঃশ্বাস নির্গত করলো। বলতে ইচ্ছে করলো। "কেন?" তবে কথাটি কন্ঠেই থেকে গেল। ঠোঁটে এলো না। জীবনে ভীষণ পরিবর্তন এসেছে, আদিল প্রতিটি মুহূর্তে উপলব্ধি করছে। অপ্রয়োজনীয় কথা তার মুখ দিয়ে আগে বেরোতো না৷ কথা ছেঁকে বলা অভ্যাস। কিন্তু এখন সে বাঁচাল উপাধি পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলছে।
মুগ্ধতার কথার পিঠে কোন জবাব না করে, আদিল ফোনটা কেটে জিন্সের পকেটে ঢুকালো। তৎপর বিছানা থেকে নামলো।
রাতের আঁধারে ছাঁদের ফুলের গাছের ছায়াগুলো কে ভুতুড়ে ভুতুড়ে দেখাচ্ছে।অর্ধ চন্দ্র। আকাশে লক্ষ লক্ষ উজ্জ্বল নক্ষত্র। আদিল ছাঁদে এলো মিনিট সাতেক পর। ঘর হতে আসতে যতটুকু সময় লাগে। মুগ্ধতা উপস্থিত আগেভাগেই। ছাঁদে কার্ণিশে তন্ময়ে। আদিলের পায়ের ধ্বনি শুনে মুগ্ধতা এগিয়ে এলো৷ চমৎকার হেসে বলল, " কেমন আছো?"
দীর্ঘ একটি শ্বাস নিংড়ে আদিল বলল,
" এই তো যেমন দেখছো। তুমি?"
মুগ্ধতা আদিলের কথা নকল করার ন্যায় বলল,
" তুমি আমায় যেমন দেখছো।"
আদিল মৃদু হাসলো।বলল,
" এতো রাতে জরুরি তলব কেন শুনি?"
"এতদিন পর তুমি এলে, আর আমি তোমার সঙ্গে দেখা করবো না।"
"এটাই কি শুধু কারণ?"
মুগ্ধতা ঠোঁট চিকন করে বলল, "উঁহু।"
আদিল মনকে স্থির করে বলল,
" মাঝরাতে এইটুকু কারণে তুমি আমায় নিশ্চয়ই
ডাকবে না, আমি এটা জানি। কি মতলবে ডেকেছো?"
মুগ্ধতা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল, " এই আদিল,মাত্র কিছু মাস, আমি ইন্টার দিবো। তোমায় মনে আছে তো? তোমার কথা রাখার সময় ঘনিয়ে আসছে।"
প্রায় ডের বছরকার ঘটনা আদিলের স্মরণে এসেছে বহুবার। আজ কে আরেকবার পূর্ণবৃত্তি হলো। শীতার্ত দ্বিপ্রহর। হানকাটা ব্রিজের সামনে, নদীতে ভাসমান রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি বসে মুগ্ধতা, সে। নিজের হাতের আঁজলায় মুগ্ধতার হাত মুঠোবন্দি করে আশ্বাস সহিত শুধাচ্ছে,
" আমরা না হয় সবার থেকে একটু ব্যতিক্রম হলাম। আরো অনেক পরে রিলেশনে গেলাম। সমস্যা নেই তো। আমি সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করবো। "
মিষ্টি একটি মুহূর্ত। এটা আদৌও ভোলা যায়!
আদিল অন্ধকারের মধ্যেই মুগ্ধতার দিকে চাইল।
মুগ্ধতা কে আশ্বস্ত করে বলল,
" আমার সব মনে আছে মুগ্ধ।"
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com