মনের মানুষ । পর্ব - ০১
যত্ন এবং পরিচর্যা না করলে পৃথিবীর সকল সম্পর্ক তার রঙ বদলায়, নিজস্বতা হারায়।
আচ্ছা, আমি কি দুঃখ পাচ্ছি?
অতীতের কথা ভেবে প্রতি মুহূর্তে কষ্ট পাচ্ছি? না, তা তো নয়...! আমার একটা সন্তান আছে।
আমার আর কি চাই?
তাকে মানুষে'র মতো মানুষ করে গড়ে তোলা'ই এক মাএ লক্ষ আমার এখন
যে পিছনে ফিরে তাকানো'র কোনো অবকাশ নাই। আমি আমার একমাত্র
সন্তান কে নিয়ে সুখে থাকতে চাই। "
এতটুকু পড়ে ডায়েরি টা পড়ে বন্ধ করে রাখলো মিম,
- "হ্যাঁ,,,,,,,, মা। সত্যি'ই সুখে তোমাকে নিয়ে সুখে
থাকতে চাই!
তবে যারা তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে আমি তাদের একটি বারের জন্য হলে ও উচিত শিক্ষা দিতে চাই।"
ও এতটুকু বলে থামার পরে। হঠাৎ,,,,,
মেহেরিশ এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
- "কি ব্যাপার মামণি? এতো রাত হয়ে গেছে অথচ তোমার চোখে দেখছি কোনো ঘুমে'র
খোঁজ নাই?"
মিম কোনো মতে মায়ে'র ডায়েরি টা লুকিয়ে রেখে বললো,
- "কালকে'ই আমার শেষ এক্সাম মা।
আমি এখন কি করে ঘুমাই? তাহলে যে কাল সকালে এক্সাম হলে আমার বারো টা বেজে যাবে।"
সে তখন মেয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
- "এতো রাত জেগে তো আমি নিজেও কখনো পড়া- শোনা করি নাই।
যাগগে, বেশি রাত জাগবে না৷ একটু পরে'ই ঘুমিয়ে যেও ঠিক আছে?"
সে লক্ষী মেয়ে'র মতো মায়ের কথায় সম্মতি জানাল,
মেহেরিশের মনে হতে লাগলো যেন তার মেয়ে হয়তো তার কাছ থেকে কোনো কিছু একটা লুকচ্ছে?
সে কিঞ্চিৎ সন্দেহ করে হাসি মুখে মেয়ের ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।
মিম তারপর একটা বিয়ের ছবি খুঁজে
পেলো ডায়েরি থেকে।
সে সেই ছবি টা ভালো করে দেখে নিলো, এরপর চুপি
-চুপি গিয়ে ডায়েরি টা নিয়ে রেখে দিলো লকারে'র মধ্যে।"
মেহেরিশ দ্বিতীয় বার মেয়েকে দেখতে আসার পূর্বে'ই মিম ঘুমিয়ে গেলো।
তিনি অফিসিয়াল সমস্ত কাজ কর্ম সে'রে এসে বসলেন মেয়ের কাছে।
তারপর তার কপালে চুমু খেয়ে গায়ে পাতলা কম্বল জড়িয়ে দিলেন কারণ বেশ ক'দিন ধরে বেশ শীত শীত পরছে।
রাত গড়িয়ে সকাল হ'য়ে এলো সূর্যে'র স্নিগ্ধ আলো এসে পরলো তার মুখে। মিম ঝটপট বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে।
রেডি হ'য়ে উদ- ভ্রান্তে'র ন্যায় বাড়ি ময় ছোটাছুটি করতে লাগলো।
তিনি হাসতে হাসতে মেয়ে বললেন,
- "এর মধ্যে'ই তোমাকে পাগলে পেয়েছে?" মিম চুল বাঁধতে বাঁধতে ব্রেড মুখে নিয়ে মায়ের দিকে তাকলো
মেহেররিশ হাসতে হাসতে বললেন,
- "মাথা ঠান্ডা রাখো মা...!
সব-সময় এতো কৈ মাছে'র মতোন ছটফট করলে হবে?" মিম মুখ কালো করে বললো,
- "ওরা সকলে'ই এক্সামের জন্য ভোরবেলায় বেড়িয়ে গেছে মা।
আমি সময় মতো ইউনিভার্সিটিতে না গিয়ে পৌঁছাতে না পারলে তখন কি হবে? তুমি তো জানো'ই ঢাকা শহরের জ্যাম।
আমার ভয়ে অস্থির অস্থির লাগছে।" মেয়ে'র কথা শুনে হাসলেন মেহেরিশ। তারপর মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিলন মেয়েকে।
অতঃপর তাকে সঙ্গে নিয়ে ইউনিভার্সিটি'র উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। তখন ড্রাইভার মন্টু মিয়া তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
- "শুনলাম খালাম্মা কোনো এক মন্ত্রীর ছেলে আজ দেশে ফিরছে বলে আপামণি'র ইউনিভার্সিটি'র রোড টা তারা ব্লক করে রেখেছে?" মিম উত্তেজিত হ'য়ে বললো,
- "মগের মুল্লুক না কি? শা*লা চশমখোরের দল, জন
-গনের টাকা মে*রে খেয়ে ভুঁড়ি বাড়াচ্ছে।
এদের ছেলে-পেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে কি লাভ? সেই তো মেয়াদোত্তীর্ন হওয়ার আগেই একএক জন বৃদ্ধা আশ্রম দেখিয়ে দিচ্ছে।
আচ্ছা এ সব না হয় বাদ দিলাম, নিজে কিছু'ই করে না। বাপ-মায়ের কষ্টে'র উপার্জন দিয়ে ফুটানি মা*রা চ্ছে।
এখন আবার এই যে মন্ত্রী রোড ব্লক করে রাখলেন। উনি কি জনেন না? যে ওনা'র এই অবোধ বালক সাজা'র জন্য দেশে'র সাধারণ জনগণ কত দুর্ভোগ পোহাচ্ছ?"
মেহেরিশ হাসতে হাসতে মেয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
- "মাথা ঠাণ্ডা রাখো মা!
এমন করলে যা পড়াশোনা করেছ সব ভুলে যাবে।"
মিম মন্টু কে জিজ্ঞাস করলো,
- "আশ্চর্য!
ভাই তুমি গাড়ি থামিয়ে দিলো কেন? আমি কি যাবো না পরীক্ষা দিতে? না মানে, বাড়ির গলিতে কি সমস্যা এখানে কেন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে?"
- "আসলে খাদ্য মন্ত্রী'র ছেলে কি না??? এখানে'ই আজ ফিরছে নিজ বাপে'র ভিটিতে।" কথা টা শুনে
আগুন হ'য়ে গেলো মিম।
সে রাগে ফুঁসছে,,,, ট্রাফিক পুলিশ এসে ওদের গাড়ি চেক করতে লাগলো। মিম দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
- "ভালো চেক করুণ, বো*মা নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছি পরীক্ষা দিতে।"
মিমের এই একটা কথায় হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে গেলো। মেহেরিশ চমকে তাকিয়ে রইলেন মেয়ে'র দিকে। মহিলা কনস্টেবল এসে মিম কে ভালো করে চেক করলো, গাড়ি চেক করে কোনো কিছু না পেয়ে খবর দিলো মন্ত্রী মশাইয়ে'র কাছে।
তিনি,,,,,,,,, এই খবরে চমকে গিয়ে মিমের সাথে দেখা করতে চলে এলেন গার্ডসদে'র সাথে।। মিম তাকে দেখে বললো,
- "পেট মোটা একটা কাজের সাথে চেহারায় ও বেশ মিল আছে।"
তিনি চমকে মা মেয়ে দু'জনের দিকে তাকিয়ে রইলেন
। মিমে'র কথা কর্ন গোচর হতে'ই সে মুচকি হেসে বললেন,
- "আমি কি জানতে পারি মা তোমার কি অসুবিধে হচ্ছে?"
- "জনগণে'র কাছ থেকে পাওয়া ভোটে মন্ত্রী হ'য়ে লজ্জা করে না আপনার তাদের ভোগান্তি'র কারন হতে?
মানলাম,,,,,, আজ আপনার আলালের ঘরের দুলাল ফিরছে। তাই বলে আমার মতো পরিক্ষার্থীদের কে কেন অযথা দূর্ভোগ পোহাতে হবে?
মাথা কিনে নিয়েছেন না কি আপনারা? কি সমস্যা কি হচ্ছে?" তিনি তখন মিম কে শান্ত করতে বললেন,
- "দুশ্চিন্তা করো না মামণি! কোনো দূর্ভোগ পোহাতে হবে না তোমাদের কে। কিন্তু বো*মা?"
- "একটু ঢপ মা*রলাম, যদিও! এসব শেখা আপনা দের কাছ থেকে।" মিমে'র কথা শুনে তিনি চমকে তাকিয়ে রইলেন।"
মিম হনহন করে গিয়ে বসলো গাড়িতে। মন্ত্রী মশাই মেহেরিশের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলেন,
কিন্তু মেহেরিশ মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন তার
ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
এদিকে, মন্ত্রী পুএের বাড়িতে ফিরে সব কাহিনী শুনে যেন চক্ষু চড়কগাছ। সে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে সব কিছু শুনছে। অতঃপর সে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "মেয়ে টা কে একবার দেখতে হচ্ছে? না মানে খুব সাহস আছে যা বুঝলাম, বাবা সে কি একটু ও ভয় পায়নি তোমাকে দেখে?"
তখন তিনি মুচকি হেসে বললেন,
- "না সে বিরক্ত হয়ে ছিল খুব! পারলে বোধ হ'য় গন ধোলাই দিতো এমন একটা এক্সপ্রেশন ছিলো তার মুখে।" সে বাবার কথা শুনে মেয়েটি'র ওপরে কিছু ক্ষণ ক্ষোভ ঝেড়ে নিজের ঘরে চলে এলো।
দুপুরে এক্সাম শেষে নাচতে মিম বাড়ির ফিরে এসে দেখলো, এখনো চেকপোস্ট বসানো আছে। ও এবার সে সব গায়ে না মেখে ফ্রেশ হয়ে চুপ-চাপ নিজের কাজে লেগে পারলো।
কারণ,,,,,,, আজ ওর কিছু শাড়ি নিয়ে লাইভ আছে। লাইভের পূর্বে একটা সাদা সবুজ অরগ্যাঞ্জা শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজে নিলো সে।
অতঃপর শর্ট ভিডিও করতে বারান্দায় এসে এদিক থেকে ওদিকে হেঁটে কিছু পোজ দিয়ে দাঁড়ালো, তখন খেয়াল করে দেখলো।
অপজিটের বিল্ডিংয়ের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কেউ এক জন সিগারেট টানছে। সে এ সব পাত্তা দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো। কিন্তু,,,,, তার অসহ্য লাগছে ভদ্র লোকের হাবভাব দেখে। সে যতসম্ভব তাকে এড়িয়ে গেলো। তখন ভদ্রলোক তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "আমার মনে হয় না,
অযথা কাওকে কথা শোনানোর কোনো প্রয়োজন আছ? সব বাবা-মা তাদের সন্তান কে নিয়ে একটু ওয়ারিড হয়ে থাকে।" মিম তখন তার হেলপিং হ্যান্ড শিমুল কে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "বুঝলে? যারা বাপের হোটেলে ফ্রী তে খায় আর তার কষ্টে অর্জিত টাকা ফুর্তি করে উড়িয়ে বেড়ায় তারা এই সবের কি বোঝে?
বাপের হোটেলে আছে না? যতদিন আছে এভাবেই চলে যাবে আর তোমার আমার মতো সাধারণ মানুষকে যত রাজ্যে'র ঝামেলা পোহাতে হবে।"
মিমের কথা শুনে,,,,,,,,, যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো ভদ্রলোক। মিম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে
। সে মনেমনে বলে উঠলো,
- "এই যে এতো দুঃসাহস দেখাচ্ছেন না আপনি? আপনাকে ভুগতে হবে।"+
চলবে,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com