বিরহ মিছিল । পর্ব - ০৫
মেলার সেই ঘটনার পর আদিল এক প্রকার মুগ্ধতা কে এগিয়ে চলতে শুরু করে৷ মুগ্ধতা বুঝতে পারে না সেই কারণ। মাঝেমধ্যে কেঁদে রাত সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় মুগ্ধতা। ষোলো বছরের মুগ্ধতার যে ছোট মন দুমড়েমুচড়ে যায় আদিল কী সেই খবর রাখে?
এক সপ্তাহ হতে চললো মুগ্ধতার এসএসসি পরিক্ষার। পড়াশোনায় মন নেই বললেই চলে। এই রেজাল্টের প্রভাব তার ক্যারিয়ারে পড়বে সেটা বুঝেও অবুঝের মতো করে সে। পরিক্ষার রাতেও কাঁদে, পাগলামি করে তিন তলায় যেতে নেয়। দ্বারপ্রান্তে গিয়েও আবার নিজের ঘরে ফিরে আসে।
চার টি পরিক্ষা অতিক্রম হয়েছে। আজ মুগ্ধতার বিজ্ঞান পরিক্ষা। রাতে নিজের মনকে বোঝাতে চেষ্টা করেছে৷ পড়তে হবে, ভালো করে পরিক্ষা দিতে হবে। তবুও মনকে বুঝাতে সক্ষম হলো না।
নিজের মতো করে পরিক্ষা দিয়ে পরিক্ষার হল থেকে বের হলো মুগ্ধতা। বদন শুকনো। চোখ জোড়ার নিচে কালো দাগ পড়েছে। গেটের বাহিরে বের হতেই পরিচিত মুখের দর্শন পেল মুগ্ধতা। গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আদিল। বোঝা গেল মুখের ভাবে কারো জন্য অনেকক্ষণ থেকে অপেক্ষায় ছিল৷ মুগ্ধতা চোখ সরিয়ে নিল। এই মানুষ টাকে দেখলে তার দুনিয়া উলটপালট হয়। সব গুলিয়ে ফেলে। জেনেও এখানে কেন? মনে মনে আওড়ায় মুগ্ধতা।
আদিল মুগ্ধতার দিকে এগিয়ে এলো। বুঝতে পারলো না সে, আদিল কখন তার পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। যখন বুঝলো বিস্মিত চোখ, বদন দেখা গেল। আদিল নম্ন স্বরে বলল,
" তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। সময় হবে তোমার? "
চৈত্রের খরা চোখ যুগলে বৃষ্টি প্লাবিত হলো। মুগ্ধতার মন হৃদপিণ্ড প্রতিবাদ করতে চাইলো। কন্ঠনালি বলতে চাইলো,
" না আমার সময় নেই।"
মুগ্ধতা প্রতিবাদ করতে পারলো না। সে নিজের মাঝে নেই। আদিল বুঝি তাকে সম্মোহিত করেছে। সে আওড়াল,
" হ্যা সময় আছে। তোমার জন্য সব সময়।
কোথায় কথা বলবে এখানে দাঁড়িয়ে?"
নিজের কন্ঠস্বরে বলা কথা গুলো নিজের কর্ণে শ্রবণ হতে মুগ্ধতা মুখ চেপে ধরলো। ওষ্ঠদ্বয়ে দু হাত চেপে রেখে আদিলের দিকে চোখ রাখল। আদিলের ওষ্ঠে ম্লান হাসি। মুগ্ধতা ইচ্ছে হলো কথাগুলো ফিরিয়ে নিতে। সে এটা বলতে চায়নি। তাহলে? হৃদপিণ্ড কেন অন্য এক ছেলের জন্য তার সাথে বেই।মানি করছে। ধাপিত হচ্ছে।
আদিল চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
" এখানে কথা বলা ঠিক হবে না। আমার সাথে চলো।"
আদিল গেট ছেড়ে বড় সড়কে এলো। মুগ্ধতা আদিলের পিছু এলো। মুগ্ধতা নিজেকে শাসালো। তার পা ও তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। মন ধমকালো,
" আদিল তোকে ইগ্নোর করেছে মুগ্ধতা। তোর উচিত আদিলকে ইগ্নোর করা। তা না করে ধেইধেই করে সঙ্গ নিচ্ছিস।"
মুগ্ধতা কানে তুললো না সে সব। আদিল অটো রিকশা দাঁড় করালো। রিকশার এক পাশে বসে মুগ্ধতা কে ইশারায় রিকশার খালি বসার জায়গা দেখিয়ে বলল,
" বসো।"
মুগ্ধতা চড়ে বসলো। আদিল রিকশা চালকে বলল,
" মামা হানকাটা ব্রিজে চলো।"
সকাল থেকেই অম্বর কুয়াশাচ্ছন্ন। হানকানা ব্রিজে কোলাহল বেশি নেই। দু' তিনটে রিকশা,সিয়েনজি, বাইক আনাগোনা করছে। রাস্তার পাশে নদী গুলো পানিতে ভর্তি প্রায়। সবুজ গাছগাছালি তে সবুজ রাস্তাঘাট। ব্রিজ থেকে একটু হাঁটলেই নদীর উপরে বাঁশের তৈরি রেস্টুরেন্ট দেখা যায়।
নদীতে ভাসমান রেস্টুরেন্টের একটি টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো আদিল৷ চোখের ইশারায় মুগ্ধতা কে পূর্ণবার বলল তার পাশের চেয়ারে বসতে। মুগ্ধতা চুপ করে বসলো।
আদিল টেবিলে হাত রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে আওড়াল,
" কি খাবে?"
মুগ্ধতার মুখে খই ফুটল না। আদিল হাঁক ছেড়ে ওয়েটার কে ডাকলো। ত্বরিতগতিতে ওয়েটারের আগমন ঘটলো। আদিল বলল,
" এক বোতল পানি, দুটি চিকেন বার্গার দিয়ে যান।"
ওয়েটার মাথা নাড়িয়ে আশ্বস্ত করলো। শুধালো,
" স্যার কয়েক মিনিট সময় দিন। আমি পানির বোতল পাঠাচ্ছি।"
আদিল ছোট করে বলল,
" আচ্ছা।"
ওয়েটার চলে গেল। আদিল মুখ ঘুরিয়ে পিঠ টান টান করে সোজা হয়ে বসলো। বলল,
" পরিক্ষা কেমন হলো আজকের?"
মুগ্ধতা সময় নিয়ে বলল,
" ভালো।"
"শুধু ভালো?"
ভ্রুদ্বয় কুঁচকে বলল আদিল। মুগ্ধতার মুখে বিরক্ত ফুটে উঠলো। কন্ঠনালি তে রাগ ঢেলে বলল,
" ভালো, ভালো, খারাপ ভালো, মন্দ ভালো। "
আদিলের গম্ভীর মুখেও হাসির ঝলকানি দেখা গেল। দীর্ঘক্ষণ সেটা রইলো না। সে বলল,
" জীবনে প্রেম করার সুযোগ অনেক পাবে তুমি, কিন্তু তোমার এই পরিক্ষা গুলো দিতে পারবে না। ক্যারিয়ার গড়তে তখন আর সুযোগ পাবে না। প্রত্যেকটা জিনিসের একটি নিদিষ্ট সময় থাকে মুগ্ধতা, আমি তোমাকে বোঝাতে পারছি?"
মুগ্ধতা হেয়ালি কন্ঠে বলল,
"আমায় এ সব বলার কারণ?"
আদিল কঠোর কন্ঠে শুধালো,
" তুমি সেটা জানো।"
মুগ্ধতা চুপ করে গেল। আদিল মুগ্ধতার এক হাত নিজের আঁজলায় রেখে উদ্বিগ ভঙ্গিতে বলল,
" সময়টাকে কাজে লাগাও মুগ্ধ। তোমার জন্য না হলেও আমার জন্য। আমাদের জন্য।"
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com