মনের মানুষ । পর্ব - ০৫
কথা গুলো বলে মিম ঝটপট নিজের ঘরে চলে এলো, ফ্রেশ হয়ে লেগে পরলো তার নতুন কাজে।
মায়রা এসে তখন মিম কে বললো,
- "হুমম!
বিশ্বকাপ উপলক্ষে মেয়েদে'র কিছু স্টাইলিশ কুরতি এসেছে সেগুলো'র ছবি তুলে পোস্ট করতে হবে।"
মেয়ের কথা শুনে হাসলেন মেহেরিশ। তিনি বললেন,
- "বাহ!
আমি তোমার সাথে সময় কাটানো'র জন্যে ছুটি নিলাম আর তুমি এখন ব্যস্ত হ'য়ে পরেছ৷
তোমার কত কাজ আছে।"
মিম তার কথা শুনে বললো,
- "সব আজকে'ই ম্যানেজ করে ফেলবো মা,
পরবর্তী শিপ মেন্ট আগামী মাসে'র দশ তারিখে আসবে।"
কথা গুলো বলে নিজে'র কাজে লেগে পরলো মিম।
সমস্ত পার্সেল আন-প্যাক করতে করতে তার বেশ খানিক টা সময় লেগে গেছে।
দুপুরে সে সমস্ত কাজকর্ম গুছিয়ে ফটো শুটে'র জন্য তৈরি হ'য়ে গেলো।
মিমে'র ক্লাসমেট দেবব্রত চলে এলো ফটোশুট করতে।
দেবব্রত, মিমের অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দিতে লাগলো।
ইমান ফোনে কথা বলতে বলতে ছাঁদে এসে দেখতে পেলো,,,,
মিম সুন্দর করে সেজে-গুজে ফটো শুট করছে।
পরনে তার নীল সাদা মিশেলে শাড়ি হালকা সাজে তাকে বেশ মানিয়েছে।
তখন মেহেরিশ এসে দু'জন কে বললেন,
- "অনেক হয়েছে বাবা...!
দু'জনে কিছু খেয়ে নাও। কত বেলা গড়িয়ে গেছে??"
মিম তখন মুচকি হেসে বললো,
- "দেবব্রত, তুই বরং খেয়েনে আমি শাড়ি টা চেঞ্জ করে অন্য আরেকটি শাড়ি পরে আসছি।"
- "ঠিক আছে।"
মিম তারপর ঝটপট নিজের রুমে চলে এলো, এবার সে একটু ভারি সাজ দিয়ে তার সাথে খয়েরী রঙে'র
একটি জামদানী শাড়ি পরে এসেছে।"
ততক্ষণে,,,,,,,,, দেবব্রত ও নিজের খাওয়া শেষ করে ফেললো। সে মিমকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
- "তোকে দেখছি একদম নতুন বউয়ের মতো দেখতে লাগছে।" মিম তার কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
- "হ'য়েছে তোর?
শোন,,,,,,,,, চিড়ে ভিজবে না কিন্তু এতো সহজে। ফ্লার্ট করতে হলে অন্য করো সাথে কর। তোর কি মনে হ'য়
এতো কাজকর্ম ফেলে আমার এইসব করে বেড়ানোর মতো সময় আছে?"
- "হায় মে'রি মা মাফ করে দে!
আর জীবনে ও তোর সাথে ফাজলামো করবো না।
আমার উচিত শিক্ষা হ'য়ে গেছে।"
- "দ্যাট'স লাইক এ গুড বয়। যাগগে,,,,,,,
আজকের কাজ গুলো একটু তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।।।"
দেবব্রত ও মিমে'র কথা মতো ছবি তোলার কাহ টা
তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেললো।
তারপর বিদায় নিয়ে চলে এলো সেখান থেকে। তার-
পর মিম মেহেরিশ কে হাতেনাতে সব কাজ গুছিয়ে দিলো।
তিনি মেয়েকে বললেন,
- "আম্মু তুমি স্টাটার গুলো বানিয়ে ফেলো।
আমি গরুর গোস্তো, খাসির মাংস আর মুরগী'র ঝাল মাংস
করে রাখবো ঠিক আছে?"
মিম হাসতে হাসতে বলল,
- "আচ্ছা, তুমি তো জানো'ই যে আমার রান্নাবান্না করতে কতো ভালো লাগে।
শোনো মা,আমি ফ্রাইয়ের জন্যে সকালে'ই চিকেন ম্যারিনেট করে রেখেছিলাম।
তুমি শিমুল কে ডেকে জিজ্ঞেস করো তো সে ওটা কোথায় রেখেছে?"
শিমুল এসে ঝটপট মিমে'র হাতে হাতে এগিয়ে দিতে লাগলো।
মিম সব রান্না করে ফেললো সন্ধা সাতটা'র
মধ্যে। ওদিকে,,,,,, মেহেরিশে'র সকল রান্নাবান্না শেষ হয়ে এলো।
মিম হঠাৎ করে ভাবলো ডিম পিঠা বানাবে। ঠিক যেই ভাবা শেষ কাজ।
সব গোছগাছ শেষে সে ডিম পিঠা বানিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো প্লেটে'র মধ্যে।
তারপর,,, সে সালাদ কেটে টেবিল টা গুছিয়ে ঘরে চলে এলো ফ্রেশ হতে।
রাত ঠিক আটটার সময় সকল নিমন্ত্রিত গেস্ট বাড়িতে এসে পৌঁছে হলো।
ইমান এসে গল্প করতে লাগলো সবার সাথে। মায়রা এসে দ্বীনের পাশে বসলো।
মেহেরিশ নাস্তা খেতে দিলেন সকল কে।।।।।।।।
ইমান খাওয়ার সময় এদিক-সেদিকে মিম কে খুঁজতে শুরু করল।
মেহেরিশ মুচকি হেসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
- "আব্বু তোমার কি আর কিছু লাগবে? একটু ফ্রাই দেই?
একদম লজ্জা করবে না, যা লাগবে সেটা চেয়ে নেবে।"
ও মুচকি হেসে বললো,
- "আমি খাবারে'র ব্যাপারে একদম নির্লজ্জ আন্টি, এই নিয়ে একদম ভাবতে হবে না আপনাকে। কিন্তু, মিম কে দেখতে পাচ্ছি না।
ও কি বাসায় নেই? বাহিরে বেড়িয়েছে?" তখন তিনি একটু মলিন হাসি দিয়ে বললেন,
- "মেয়ে টা সারা দিন একদম সুস্থ ছিলো৷ কিছুক্ষণ আগে'ই মাথাব্যথায় অতিষ্ঠ হয়ে এখন ঔষধ খেয়ে
ঘুমচ্ছে।" ইমান কিঞ্চিৎ চিন্তিত হ'য়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
- "আন্টি মাইগ্রেন আছে না কি ওর?" তিনি বললেন,
- "না বাবা ওর সাইনোসাইটিসে'র প্রবলেম আছে। হঠাৎ জ্বর উঠেছে মেয়ে টার, মাথা ব্যাথা, নাক বন্ধ
শরীর দূর্বল আর এদিকে ফোনে পাচ্ছিনা আমাদের ফ্যাম-লি ফিজিশিয়ানকে।"
ইমান তখন নাস্তা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।। মেহেরিশ তাকে চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- "কি ব্যপার বাবা? কি হয়েছে?" ইমান বললো,
- "আমার একজন ডক্টর বন্ধু আছে আন্টি আমি ওকে ডেকে নিচ্ছি এসে দেখে যাবে মিমকে।" তিনি মৃদু হেসে বললেন,
- "তার কোনো প্রয়োজন নেই বাবা।
আমি অলরেডি কনসাল্ট করেছি একজন ডক্টরে'র সাথে আর মিম এখন ভালো আছে।
ও চেয়েছিল আজ তোমাদের সাথে এনজয় করতে।"
তার কথা শেষ হতে না হতে'ই মিম এসে হাজির।
দ্বীন বোন এর গাল টেনে বললো,
- "একে'ই তোর শরীর ভালো না। কিছু প্রয়োজন পরলে ডেকে নিতে পারতিস আমাদের কে।"
মিম মুখ ভেংচে বললো,
- "তোরা যে কত কাজের সে আমার জানাই আছে।"
তারপর মিম ইমানের প্লেটে চিকেন ফ্রাই আর টমেটো সস তুলে দিলো।
ইমান হাসতে হাসতে বললো,
- "অনেক বেশি বেশি দেওয়া হ'য়ে যাচ্ছে।।" মিম তখন বললো,
- "এটা কোনো কথা?
জানেন, মিস্টার? এখনো মেইন কোর্স বাকি আছে।"
- "না মানে স্টাটারে এতো খেলে মেইন কোর্স কি করে শেষ করবো ম্যাম?
সেটা একটু আপনাকে ও বিবেচনা করে দেখতে হবে।" মিম বললো,
- "বিবেচনা করা আমার কাজ না।
আমি আপনার প্লেটে যা যা তুলে দেবো তা তা আপনাকে সোনা মুখ করে খেতে হবে।"
- "আমি মানতে পারলাম না। আমার কাছে এই সব চর্চার বলে মনে হচ্ছে।"
- "আচ্ছা, ছেড়ে দিলাম। এর জন্য'ই বেশি আহ্লাদ দিতে নেই কাওকে।" মেহেরিশ মেয়ে'র কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন,
- "হুমম বুঝলাম, এবার তুমি একটু শান্তি হ'য়ে বসো মা। চিকেন ফ্রাই দিবো তোমাকে?"
- "দাও, ওয়েজেস নেই? না কি এই সব খাদকের দল অলরেডি সব খাবার সাবাড় করে ফেলেছে।"
শিমুল তখন ঝটপট গিয়ে মিমের জন্য আলাদা করে তুলে রাখা খাবার গুলো নিয়ে এলো।
মেহেরিশ মেয়েকে বললেন,
- "তোমার জন্যে খাবার না রেখে খাবে কার ঘাড়ে ক'টা মাথা আছে?"
মায়ের কথা শুনে সসে ডুবিয়ে লেগ পিস টা খেতে লাগলো মিম। সে মুচকি হেসে মা কে বললো,
- "ওনাকে আর একটু দেও মা! চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে চেয়ে খেতে লজ্জা পাচ্ছে।"
ইমান থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলো।
সে অনুধাবন করা'র চেষ্টা করছে এখানে আসল সাইকোলজিস্ট টা আসলে কে?
মনে মনে সে বলে উঠলো,
- " মেয়ে টা আসলে''ই অনেক চালাক। কথায় পারা যাবে না তার সাথে।"
মিম তখন তার হাতে চিমটি কেটে বললো,
- "আর একটু দেই?
দেখে তো এক যুগের অনাহারী মনে হচ্ছে?" ইমান হাসতে হাসতে বললো,
- "এতকিছু সব আপনার চোখে'ই পরছে? ও দু'টো
চোখ না কি সার্চ ইঞ্জিন, ম্যাডাম???? আমার যে খুব জানতে ইচ্ছে করছে।"
- "এত কিছু জেনে-বুঝে কাজ নেই আপনার দয়া করে নিজের চরকায় তৈল মালিশ করুণ ঠিক আছে?"
- "আপনি না আসলে'ই একটা বাচ্চা,,,,,, খুব মজার মানুষ। কাজে'ই এক মাএ আন্টি ছাড়া কেউ কখনো সঠিক সংজ্ঞা দিতে পারবেনা আপনার সম্পর্কে।
আপনি একটা ছেলেমানুষ!
আমাদের প্রথম দেখা হওয়া থেকে আজ অব্ধি আমি শুধু একটা বাচ্চা মেয়ে বলে মনে করেছি আপনাকে।
আর সেভাবে'ই কথা বলেছি। কারণ, আমি জানি তর্কে জড়াতে নেই অবুঝ মেয়েদে'র সাথে।" মিম চোখ গরম করে তাকিয়ে রইলো। মেহেরিশ মুচকি হেসে ইমানে'র পক্ষ নিয়ে বললেন,
- "সেটাই তো!
বাবা তুমি স্বচ-ক্ষে দেখতে পাচ্ছ আমি কখনো তর্কে জড়াই না ওর সাথে।" মিম হুট করে খাবার ছেড়েই উঠে গেলো। মায়রা ও মিমে'র পিছন পিছন যেতে বললো,
- "আমি একদম এক মত নই আন্নি তোমার সাথে।"
ইমান মুচকি হেসে বললো,
- "আন্টি আপনি ওনাকে শুধুশুধু আমার পক্ষ নিয়ে রাগিয়ে দিলেন। আমার এই খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যাওয়াটা বেশ খারাপ লাগছে।" মেহেরিশ তখন হাসতে হাসতে বললেন,
- "তুমি আমার মেয়েকে চেনোনা বাবা!
আমি ওর থেকে বেশি করে কাও কে আদর করলে তাকানো যায় না তার মুখে'র দিকে আর এর জন্য'ই মেয়ে এসে থেকে তোমাকে জ্বালাতন করছে কারণ ও সহ্য করতে পারছেনা তোমাকে।" ইমান হাসতে হাসতে বললো,
- "জ্বি আন্টি আমি বুঝতে পেরেছি, প্রথম থেকে'ই তার ছেলে-মানুষী দেখে,,, আমি কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে পরিনি তার সাথে।"
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com