যদি দেখা না হতো । পর্ব - ০৭
শুভ্রঃ তানিশা
তানিশাঃ আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি
শুভ্রঃ কিন্তু একসাথে থাকতে চায়না
তানিশাঃ মানে,,কি বলছো এগুলো(অবাকের দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
শুভ্রঃ এখন কোন কিছুই বলতে পারবোনা।দুপুরে তোমার আম্মু,আব্বু আসবে তোমাকে নিতে,,আমাকে যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে তুমি চলে যাবে
শুভ্র যেতে লাগলো এমন সময় তানিশা শুভ্রের পেছন থেকে শক্ত করে চেপে ধরে বলতে লাগলো,,,
তানিশাঃ আমার অন্যায় কি শুভ্র,,কি দোষে তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছো
শুভ্রঃ আমি বলতে পারবোনা
নিজের থেকে তানিশাকে ছেড়ে রুমে চলে গেলো,,,তানিশা ফ্লোরে বসে কান্না করতে লাগলো,,,,কি এমন অপরাধের জন্য শুভ্র এমন করছে তার সাথে,,কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।
দুপুরে,,,
তানিশার আব্বু আম্মু আসলো তানিশাকে নিতে। তানিশা শুধু শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,,"এই বলে উঠবে এগুলো মজা ছিলো কিন্তু তা আর হলো না লাগেজ নিয়ে গাড়িতে উঠলাম কোন কথাও বললো না আমার সাথে।
জানলার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি চুলগুলো আপন ইচ্ছায় উড়ছে,,মনে হাজারো প্রশ্নের তোলপাড়,,, এই না আমাদের সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেলো তারপর আবার এগুলো কি হচ্ছে।
বাড়িতে পৌছে এক মিনিট ও না দাড়িয়ে নিজের রুমে এসে রুম লক করে দিলাম,,,দরজার পাশে থাকা লাঠি দিয়ে ভাঙচুর করতে থাকলাম।আজ কষ্ট,, আবেগ,ভালোবাসা,জেদকে শান্ত করার উপায় রাগ কমানো,, যা আর ঠান্ডা হবেনা।
আম্মু আর আব্বু দরজা ধাক্কিয়েই যাচ্ছে,, কিন্তু আমি আর আমার ধ্যান এ নেই,,,ছোটবেলা থেকেই যেমন জেদ ছিলো সেইরকম রাগ ও ছিলো,,কিন্তু রাগটা কন্ট্রোল করতাম প্রিয়জন হারানোর ভয়ে। কিন্তু যাকে এতো ভালোবাসলাম সেই চলে গেলো।
সন্ধ্যায় রুম থেকে বের হলাম আম্মু আব্বু রুমের সামনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে,,আমাকে দেখতেই ছুটে আসলো।
তানিশা আম্মুঃ তানিশা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস,,,ওগো ডাক্তারকে ডাকো ওর মাথা থেকে রক্ত পরছে(দু-বাহু ধরে)
আব্বুও তারাতারি ডাক্তারকে ফোন দিলো,,তারা জানে আমার রুম নাজে-হাল অবস্থা তাই আমাকে নিয়েই বিজি হয়ে পরলো।ডাক্তার এসে বেন্ডেজ করে দিয়ে গেলেন আম্মু জোর করে খাবার খাইয়ে তার কোলে মাথা রেখে ঘুম পারিয়ে দিলো।
এরই মাঝে বেশ কিছুদিন চলে গেলো অনেক ফোন করেছি কিন্তু শুভ্র ধরেনি আর ফোন করা তো দূরের কথা।এমনি একদিন পলাশ ভাইয়া আসলো আমাদের বাসায়,, পলাশ আমার ফুপির বড় ছেলে,
আমি জানলার পাশে হেলান দিয়ে বসে বসে কি যে ভাবছি নিজেও জানিনা।হঠাৎ,,
পলাশঃ আসবো তানিশা
তানিশাঃ হুম আসো
পলাশঃ কেমন আছিস তুই
তানিশাঃ আমার কথা বাদ দাও তোমার কি অবস্থা
পলাশঃ ভালোই,,,শুনলাম শুভ্রের সামনে বিয়ে
তানিশাঃ মানে??
পলাশঃ কেন তুই জানিস না,,বাড়ি সাজাচ্ছে,, নতুন বউ আসবে বলে
তানিশাঃ নিশ্চুপ
ভাইয়াকে আম্মু ডাকলো তাই বেশি কথা বলতে পারলো না,,,আমার বুকে তোড়পাড়ের ঝড় উঠে গেছে কি শুনলাম আমি,,না ওর সামনা-সামনি হতেই হবে আমাকে,,বিয়ে করবে মানে তাহলে আমি কে?
বিকেলে,,
আম্মুকে ভুলভাল বুঝিয়ে শশুড় বাড়িতে চলে আসি,, ভাইয়ার কথাটা সত্যি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়ে গেছে বাড়িটা,,,আমি সোজা গিয়ে দরজায় নক করলাম শুভ্র এসে দরজা খুলে দিলো
শুভ্রঃ তুমি এখানে কেনো??
তানিশাঃ তুমি বিয়ে করছো
শুভ্রঃ হুম,,আমি আমার জীবন নতুন করে শুরু করতে চায়
তানিশাঃ ওও তাই নাকি তাহলে আমি কে??
শুভ্রঃ তুমি আমার পাস্ট,,ওই বিয়েটা Just an accident
তানিশাঃ মানে এতো কিছুর পরও এগুলো বলছো তুমি? কেন শুভ্র এগুলো করছো(কলার ধরে) কেনো বলো?? কি এমন অন্যায় করেছি আমি
শুভ্র এক ঝটকায় নিজের থেকে আমাকে ছাড়িয়ে বলতে লাগলো,,,
শুভ্রঃ আমি তোমাকে ভালোবাসিনা বুঝলা,,আমাকে বাঁচতে দাও শান্তিতে,,আর আমার বিয়ের দিনে আমার আশেপাশেও যেন তোমাকে না দেখি
এই বলে শুভ্র আমার হাত ধরে দরজার বাইরে বের করে দরজা অফ করে দিলো,,,,,,
তানিশাঃ শুভ্র,,প্লিজ শুভ্র গেট খোল।আমি কোন অন্যায় করবো না প্রমিজ, প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা( কাঁদতে কাঁদতে)
সন্ধ্যার আজান দিয়ে দিলো তবুও ওও গেট খুললো না।আমি চলে আসলাম বাড়িতে,, ভাবছিলাম সুইসাইড করবো কিন্তু আম্মু আমার কাছ থেকে নড়তেই চায়না।যখন আম্মুর কাজ থাকে তখন আব্বু আমার কাছে থাকে।নিজেকে দিন দিন শেষ করে ফেলছি আমি।
এমনি একদিন শুনলাম শুভ্র বিয়ে করে নিয়েছে,,নিজের মৃত্যু যেন নিজেই দেখতে পারছি,,শুধু সময়ের অপেক্ষা।শুভ্র এখন সংসার নিয়ে বিজি এটাই বলেছিলো শেষ কলে।
শুক্রবারে,,
সবাই ফ্যামিলি পিকনিক এ আসে,,আমাকেও জোর করে নিয়ে যায়।ফ্যামিলি পিকনিক বললেও বাড়িটা ছিলো বিয়ের।একজন লোক এসে বললো,,
লোকটিঃ আরে পাএী চলে এসেছে,,আপনারা তারাতারি ওনাকে সাজানোর ব্যবস্তা করেন
তানিশাঃ আচ্ছা এটা তো বিয়ে বাড়ি,,আমরা এখানে কেনো??
বড় আম্মুঃ আজ তোর বিয়ে তাই
তানিশাঃ মানে,,আমার বিয়ে এসব কি বলছো??
আব্বুঃ ছেলে অনেক ভালো মা,,তোর মানসিক অবস্থা ভালো না তাই তোকে কিছু বলিনি,, আমরা চায় তুই ভালো থাক তাই তোকে না বলেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি
তানিশাঃ আমাকে একবারের জন্য বলার প্রয়োজন করলেনা,,,আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত কি না,,আর আমি এ বিয়ে করবোনা
আম্মু এসে আমার হাত তার মাথায় রেখে বলতে লাগলেন,,
আম্মুঃ তুই যদি এই বিয়ে না করিস আমার মরা মুখ দেখবি
তানিশাঃ আম্মুওওও
আম্মুঃ ঠিকি বলেছি,,আমার মরা মুখ দেখবি নাকি বিয়ে করবে বল
আমি বাধ্য হয়েই রাজি হয়ে গেলাম,,,আমাকে কতো সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে,, আগের বিয়েটা আবার এই বিয়েটায় ও আমার মতামত ছিলোনা কি আশ্চর্য বিষয়,,আচ্ছা শুভ্র যদি বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে তাহলে আমি কেন পারবোনা??
বরের পাশে বসানো হলো আমাকে,,চারিদিকে শুধু ক্যামেরা,,সবাই এসে গিপ্ট দিচ্ছে আর পিক তুলে নিয়ে যাচ্ছে এসবের ভিরে নিজেকে পুতুল পুতুল লাগছে।
কিন্তু নিজের খুশিটায় হারিয়ে ফেলেছি,,,কবুল বলানো হলো সাথে রেজিস্ট্রি করে বিয়েও হলো,,শুধু পেলামনা মনের মতো মানুষ,,খুব ক্লান্ত লাগছে।
খাবারের সময় একটু একলা ছিলাম কারণ আমি মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলাম না,,তাই আর বর বউ একে অপরে খাওয়াই দেয় এটা হলোনা।
বিদায়ের সময় সবাই আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো কিন্তু আমার চোখ থেকে একফোঁটাও পানি পরছে না।সব জল হয়তো শুকিয়ে গেছে আর নাহলে আমি নিজেই জীবন্ত লাশ হয়ে গেছি।
গাড়িতে উঠে নতুন গতিতে যাচ্ছি,,,নতুন পরিবেশ,,নতুন সংসার কিন্তু আমি শুভ্রের জায়গাটা কিভাবে অন্য কাউকে দেব এসব ভাবছিলাম। আসলেই "যে যাবে সে যাবেই, চাইলেও তাকে আটকানো যাবেনা।আর যে আসবে সে সকল বাধা বিপত্তি আছে যেনেও আসবে" ইসসস যদি দেখা না হতো আমাদের তাহলে দুজনের জীবনটা আজ আলাদা থাকতো,,নিজের লাইফকে নিজের মন মতো সাজানো যেত।
শশুর বাড়িতে এসে সব ছোট ছোট ছেলে মেয়ে এসে সেলফি উঠছে,,সবাই অপরিচিত আজ।
তানিশাঃ আসলে কোন ব্যক্তি আমার সম্পর্কে এতোকিছু জেনেও আমাকে বিয়ে করলো??(মনে মনে)
আমার বয়সী কিছু আপু এসে আমাকে একটা ফুলে দিয়ে সাজানো বেডে বসিয়ে দিলো,,চারিদিকে ফুল দিয়ে সাজানো,,,অনেক সুন্দর। আমার প্রথম বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য এসব কিছুই হয়েছিলো না.....
ঠিক রাত ১২ঃ২০ এ গেট নাড়ার শব্দ পেলাম,,
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com