মাধবীলতা । পর্ব - ০১
অপারেশনের নাম করে আমার স্ত্রীর ভেতরে থাকা বাচ্চাটা শেষ করে ফেলবেন।
যতো টাকা দরকার আমি দেবো আপনাকে।প্লিজ ম্যাম, এইটুকু সাহায্য করুন আমায়।
এই বলে লোকটা টাকার ব্রিফকেসটা আমার হাতে তুলে দিলো।
এতো টাকা জীবনে একসাথে দেখিনি আমি।এই হাসপাতালে জয়েন করেছি কিছুদিন আগে।
এতোগুলো টাকা একসাথে দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না আর।
লোকটা সম্পর্কে ভদ্রমহিলার স্বামী হয়।
কিন্তু এ নিজেদের ভেতরে ঝামেলার জন্য অনাগত সন্তানকে কেন শেষ করে দিতে
এভাবেও শেষ করে দিতে পারে কেউ সত্যি কল্পনার অতীত আমার।
তবে আমিও কম কিসে।একজন ডাক্তার হয়ে কাউকে খুন করতে যাচ্ছি।
আর সেটা জেনে বুঝেই।ডাক্তারদের ধর্মই মানুষের প্রান বাঁচানো সেখানে আমি কারো প্রান
নিতে চলেছি যার কিনা পৃথিবীর মুখ দেখার সৌভাগ্যটুকু হয় নি।একজন মাকে সন্তানহারা করছি আমি।ভেবেই বুকটা কেঁপে উঠছে বারবার।কিন্তু এটাও ঠিক আমায় এখন এতকিছু ভাবলে চলবে না,
লোকটাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।যেকরেই হোক সেটা পূরণ করবোই আমি।
একটু পরে রেডি হয়ে অপারেশন থিয়েটারে গেলাম।
ভেতরে ভদ্রমহিলা বেশ বিমর্ষ হয়ে শুয়ে আছেন।
আমাকে দেখেই হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিলেন।
ম্যাম,আমি জানি আমার পেটের ভেতরে একটা টিউমার হয়েছে সেটা বের করতে এখন।
কিন্তু দেখবেন আমার সন্তানের যেন কোন ক্ষতি না হয়।ওর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচবো না।
---আচ্ছা আপনি এতো চিন্তা করবেন না।আমি কথা দিচ্ছি আপনার সন্তান সেফ থাকবে।
---একটা অনুরোধ করবো ম্যাম,কথা দিন আমার অনুরোধ টা রাখবেন আপনি?
---অনুরোধ,কিসের অনুরোধ বলুন!
যদি অপারেশন করতে গিয়ে আমার সন্তানের কিছু হয়ে যায় প্লিজ আপনি আমাকেও মেরে ফেলবেন।
আমি জানি ওর আসার সময় হয়নি কখনো পৃথিবীতে।
কিন্তু ওর কোনো ক্ষতি করে আমি বেঁচে থাকতে চাই না।
লক্ষ্য করলাম ভদ্রমহিলার বুক ফাঁটা শুনে আমার এসিসট্যান্টদের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
সত্যি বলতে আমি নিজেও কখনো দেখিনি একজন মায়ের সন্তানের জন্য
আকুতি কতোটা বেদনাদায়ক হতে পারে।
বেচারী কিকরে জানবে একটু পরে ঠিক কতো বড়ো সর্বনাশ হতে চলেছে তার সাথে!
এরপর তার অপারেশন শুরু হলো।এক অদ্ভুত দোলাচলের সৃষ্টি হয় আমার মনে।
কখনো মনে হচ্ছিলো ভদ্রমহিলার মাতৃত্বের কাছে নিজেই নিজেকে হারিয়ে দেই আবার কখনো সেই ভদ্রলোককে দেয়া কথার পালন করি।
নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে আমার স্বার্থের কাছে বিবেক হেরে যায়।
শেষ করে দিলাম ভদ্রমহিলার অনাগত সন্তানটাকে।
অবশ্য এই সময়ে তাতে কোনোরকম ক্ষতি হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আর কয়েকমাস পরে হলে কাজটা এতো ঝুঁকিহীন ভাবে করা যেতো না।
আমার সহকারী হিসেবে যারা ছিলো তাদেরকে ম্যানেজ করে নিলাম।
তাই আর এই ঘটনা স্পয়েল হবার কোনো ভয় রইলো না।
জানিনা ভদ্রমহিলা যখন জানতে পারবে তার সন্তানটা আর বেঁচে নেই কিকরে সবাই সামাল দেবে তাকে।
হয়তো সন্তানের শোকে মরেই যাবে সে,
নয়তো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।সে স্বাভাবিক থাকবে না এইটুকু আমি নিশ্চিত।
আমি আর ওনাকে ফেইস করার সাহস পেলাম না।
সেদিনের অপারেশনের পরে হাসপাতালে যাইনি কয়েকদিন।
ও হ্যাঁ,এতোক্ষনে নিজের নামটাই বলতে ভুলে গেছি।আমার নাম মাধবী রহমান।
সামনের মাসের সতেরো তারিখে নিজের মনের মানুষের সাথে বিয়ে পাঁকা হয়ে আছে।
আমার হবু স্বামীর নাম অনুরোধ জামান।
দুবছরের বেশী সময় ধরে দুজনের প্রেম।
কয়েকদিন পরেই আমাদের সম্পর্ক একটা পরিণতি পেতে চলছে।
নিজের ঘরের বারান্দায় বসে একটা গল্পের বই নিয়ে বসে আছি।
বেশ কয়েকদিন অতিবাহিত হয়ে গেলো,অথচ এখনো সেই মহিলার কথা ভুলতে পারছি না কিছুতেই।
অনেক চেষ্টা করেছি মন থেকে ঐ দিনের ঘটনাগুলো মুছে ফেলতে কিন্তু কিছুতেই
যেন মুছে ফেলতে পারছি না সেগুলো।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অদ্ভুত রকম ভাবে মাথাটা ঘুরে গেলো আমার।প্রচন্ড বমি বমিও পাচ্ছেও।
বেসিনে যেতেই পেটের সবকিছু মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো।ভীষণ অস্বস্তি অনুভব করছি।
ধীরে ধীরে গিয়ে বিছানায় ওপরে শুয়ে পড়লাম।হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে।
অনুরোধের ফোনকল।ইচ্ছে করেই ইগনোর করলাম।
এই সময়ে কারো সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই আমার।
বিছানার শুয়ে নিজেই নিজেকে যতোটা সম্ভব চেক করতে থাকি।পালস,চোখ,জিহ্বা।
ইত্যাদি ইত্যাদি।এরপর যা বুঝতে পারলাম আমার হাত পা ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
শীতের ভেতরেই ঘেমে শরীর একাকার হয়ে যাচ্ছে।
ধরফর করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম।নিজের নিশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে লাগলো।
আতংকে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে লাগলো আমার।
কারণ আমি নিজের ভেতরে প্রেগনেন্সির সমস্ত লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি!!!
কেউ বাসা বেঁধেছে আমার গর্ভের ভেতরে,তার স্পন্দন অনুভব করতে পারছি আমি।
কিন্তু এই সময়ে সেটা কিকরে সম্ভব?নিজের পেটে হাত দিয়ে আঁতকে উঠলাম,
এই স্পর্শ ঠিক সেইদিনের ভদ্রমহিলার গর্ভে যখন প্রথম হাত রেখেছিলাম তার অনুরূপ!!তবে কি......????
চলবে.....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com