মনের মানুষ । পর্ব - ০৩
ব্যাস, এত টুকু ব'লেই সে বাড়ির গেইটে থামলো।
অতঃপর ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে সে দরজ খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো,,,
মেহেরিশ এখনো ফেরেননি বাড়িতে ও ঝটপট গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে ঢুকে পরলো।
মিম তার মায়ে'র পছন্দে'র ভেজ-বিরিয়ানি বসিয়ে দিলো গ্যাসে।
তারপর চট করে চিলি চিকেন টা রেধে ফেললো।
মনে মনে সে আজ মা কে সারপ্রাইজ করে দেবে বলে
প্ল্যান করেছে। সে খুব সুন্দর করে ডাইনিং টেবিল টা রেস্টুরেন্ট স্টাইলে সাজিয়ে ফেললল।
রাত আটটা'য় মেহেরিশ বাড়িতে ফিরে এসে সকল আয়োজন দেখে
মেয়েকে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন,
- "মামণি, আজ কি বিশেষ কিছু আছে?" মিম মুচকি হেসে বললো,
- "যাও, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর সবটা খুলে বলছি তোমাকে।"
তিনি মেয়ের কথা শুনে মৃদু হাসলে
-ন কিছু শপিং ব্যাগ মেয়ের হাতে দিয়ে বললেন,
- "লিস্ট মিলিয়ে নেও মা। দেখ,,,,,, সব জিনিস গুলো কি ঠিক আছে?"
- "সে দেখবো মা,,,,,,, তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।
যাও, কত ক্লান্ত মনে হচ্ছে তোমাকে দেখে?" তিনি মেয়ের কথা শুনে হাসলেন, বললেন,
- "আচ্ছা যাচ্ছি মা,আর বকা দিতে হবে না আমাকে।
এমন ভাব করছে যেন উনি আমার পেটে হয়নি বরং আমি হয়েছি ওনার পেটে।"
মায়ের কথা শুনে হাসতে লাগলো মিম।
সে চট করে'ই টেবিল টা সরিয়ে আনলো বারান্দার কাছে।
মেহেরিশ ফ্রেশ হয়ে জামা-কাপড় ছেলে নিচে এলেন।
চিন্তিত মুখে গেইটে'র দারোয়ান গুফরান কে ডেকে বললেন,
- "ভাই! আপনি না গেটেই ছিলেন? বলতে পারেন আমার মেয়ে টা কোথায় গেছে?"
মিম তখন পেছন থেকে এসে তার চোখ চেপে ধরলো, বললো,
- "ডোন্ট ওয়ারি মা! আমি বাড়িতেই ছিলাম। চুপচাপ চলো তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।"
মেয়ের কথা শুনে তিনি কিছুটা স্বস্তি পেলেন।তারপর কিঞ্চিৎ অভিমান করে'ই বললেন,
- "মামণি,তুমি বোধহয় আমাকে কোনো একদিন হার্ট অ্যাটাক করিয়ে মারবে।"
মিম তার গালে চুমু খেয়ে বললো,
- "এটা কেমন কথা মা? মজা করার ও একটা লিমিট আছে।"
- "তাহলে তুমি আমাকে না বলে এতো রাতে বাহিরে এসেছ কেন?
আমার পাঁচটা কিংবা দশটা বাচ্চা না, একটাই আছে।
তুমি কেন বোঝো না মামণি? একটু বলে এলে'ই পার
তে।" মিম তখন হাসতে হাসতে বললো,
- "আচ্ছা মা আমি দুঃখিত! আমার ভুল হ'য়ে গেছে।আমি কখনো তোমার কথার অবাধ্য হবো না। এবার প্লিজ রাগে থেকো না, ঠিক আছে?" তিনি তখন মৃদু হেসে বললেন,
- "আচ্ছা থাকলাম না৷ এবার বলুন ম্যাম,,,,, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?"
- "বলবো কেন? আশ্চর্য মা! বললে কি সারপ্রাইজ কখনো সারপ্রাইজ থাকে?"
- "তুমি রান্না ঘরে কেন ঢুকেছ মা? আমাকে বলতে পারতে কিংবা বিজলী মাসীকে ডেকে বলতে পারতে তোমার কি খেতে ইচ্ছে করছে?"
- "তুমি চুপ করবে মা একটু?" মিম তারপর হাত টা সরিয়ে নিলো তার মায়ের চোখের ওপর থেকে" তিনি বারান্দায় এতো আয়োজন দেখে বেশ চমকে গেলেন, আরও চমকে গেলেন নিজ পছন্দে'র ভেজ-বিরিয়ানি
,চিলি চিকেন আর চিকেন ক্যাসোনাট সালাদ দেখে।
মিম উচ্ছ্বসিত হ'য়ে মায়ে'র মুখে'র দিকে তাকিয়ে রইলো। মেহেরিশ এগিয়ে এসে মেয়ে'র কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
- "বাহ!
আমার লক্ষী মেয়ে টা দেখছি কত বড় হয়ে গেছে?"
মিম একটু ভয়ে ভয়ে বললো,
- "খেয়ে দেখ না মা, বলো না কেমন হয়েছে?" তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,
- "মানে কি? তুমি এখনো মুখে দিয়ে দেখনি? সারা দিন না খেয়ে বসে আছো এভাবে?" মিম তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,
- "আরে না ধুরর, তুমি খেয়ে বলো না মাম্মাহ কেমন হ'য়ছে?" তিনি মেয়ে'র কথা শুনে,,,,,, চুপচাপ খেতে লাগলেন।
মিম মুখ কাচুমাচু করে জিজ্ঞেস করলো,
- "আম্মু,,,,, ভালো লাগছে?" তিনি তখন হাসি-মুখে মেয়ের মুখে গ্রাস তুলে দিতে দিতে বললেন,
- "আমার মেয়ে রান্না করেছে আর সেই খাবার খেতে
ভালো লাগবে না এটা কে বলেছে?
আমি কখনো ভাবতে পারিনি মা তুমি আমার জন্য এতো সুন্দর করে হাত পুড়িয়ে রান্না করবে?" মিম মা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
- "তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে?" তিনি মেয়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললেন,
- "শোনো মেয়ের কথা? নাও, সব টুকু খেয়ে ফেলো মা। কখনো খাবার অপচয় করবে না সোনামণি।"
- "ঠিক আছে।"
মিম তারপর চুপচাপ খাবার খেয়ে টেবিল থেকে উঠে গেলো। খেয়াল করে দেখলো ইমান তিন তলা থেকে ওর দিকে শান্ত ভাবে তাকিয়ে আছে।
তখন মন্ত্রী মশাই এসে দাঁড়ালেন ছেলের পাশে। ইমান বললো,
- "বাবা আমি হাসপাতালে দেখা করতে যেতে চাই মায়ের সাথে।" তিনি বললেন,
- "কাল দেখা করতে যেও বাবা ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে গেছে।"
- "তাতে কি??
আমার একটু ও ভালো লাগছে না বাসায় আসার পর থেকে।" আহনাফ সাহেব ছেলে'র কথায় চুপ করে গেলেন, একটু থেমে বললেন,
- "দুঃশ্চিন্তা করো না বাবা...! তোমার মা খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে।"
- "কবে সুস্থ হবে বাবা? গত দশ বছর ধরে ওই মানুষ টা বিছানায় সজ্জা সায়ী হ'য়ে আছে আর তুমি। তুমি
এটা-সেটা বলে, আমাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসেছ বিদেশ থেকে।
আমি ওখানে কাজ করে খাই বাবা! এখানে আমার করার মতো কি আছে?" তিনি ছেলের কথায় কিছুটা
কষ্ট পেয়ে বললেন,
- "কেন? আমি কি নেই? আমি যে একা-একা পড়ে আছি এই দেশে? শুধু'ই কি তোমার মা তোমার সব?
আমি কি এগজিস্ট করি না তোমার দুনিয়াতে?"
বাবা'র কোনো প্রশ্নে'র উওর না দিয়ে ইমান চুপ-চাপ ছাঁদে চলে এলো।
মিম এসে বিছানায় হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পর, মেহেরিশ এসে মেয়ে'র পাশে বসলেন।
খুব যত্ন করে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পারলেন তার পাশে।
সকালে,,,,,,,,,, ইমান কাছের একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছিল। মিম এসে কিছু ইন্সট্যান্ট নুডল'স আর চক-
লেট কিনে নিলো সেই দোকান থেকে। তখনই পেছন থেকে কেউ একজন মিম কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
- "কি রে ছয় বাচ্চার মা? তোর বাচ্চা-কাচ্চা কেমন আছে?" মিম তাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
- "আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তা হঠাৎ কি মনে করে?
কোনো কাজ আছে?" সে তখন এগিয়ে এসে মিমের গাল টেনে বললো,
- "কাজ মানে? কাজ ছাড়া কি আমি আসতে পারি -না তোর কাছে?" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "অবশ্যই, বড় মামা বুঝি তোকে আমার কাছে উড়া ধুরা ক্যা*লানি খেতে পাঠিয়েছে?"
- "ডেফিনিটলি!
তুমি যে বাড়ির স্টার কিড,তার ওপরে ল' নিয়ে লেখা
পড়া করেছ এখন আর কে পায় তোমাকে? রাত দিন তোমার পা ধোঁয়া পানি খাওয়া'র ডায়লগ শোনার থেকে বেস্ট চলে এলাম তোমার কাছে।" মিন দ্বীনে'র
কথা শুনে বললো,
- "তাহলে বেশ ভালোই, চকলেট-ফকলেট নিয়ে নে। নয়তো আবার তাকানো যাবে না তাদের মুখের দিকে
।" মিমের কথা শুনে ইমান যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খোলো,
সে ধীর গলায় বললো,
- "ছয় বাচ্চা'র মা হওয়ার পরেও মানুষে'র ফিগার এতো টা ঠিক থাকে কিভাবে?"
পাশ দাঁড়িয়ে মিম তার কথা শুনে,,,,,,,,, আরও কিছু চকলেট কিনে দ্বীনের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো।
ইমান উঠে মিমের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
- "আপনার শরীরে বুঝি ডাইনি ভর করেছে?" মিম সে মজা করছে বুঝতে বললো,
- "হ্যাঁ তাতে আপনার কি? আপনার কাঁধে ভর না করলেই হবে।" বাসা'র গেইটে'র সামনে এসে ইমান কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
মিম তখন "বেবিজ" বলে হাঁক পারলো কি ভেবে?
সঙ্গে সঙ্গে তিনটি বিড়াল আর তিনটি কুকুর এসে হাজির হলো।
মিম তখন পিছনে ফিরে মুচকি হেসে তার কুকুর এবং বেড়ালদে'র উদ্দেশ্য করে বললো,
- "বেবিজ হাই ফাইভ দাও ওনাকে।" তখন মিমে'র বড় কুকুর 'ব্লসম' এগিয়ে ইমানকে হাই ফাইভ দিলো।
ইমান হাসতে হাসতে তার সাথে হাই ফাইভ করে তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললো,
- "লক্ষী মেয়ে।" মিম মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলো,,,,,,,,
- "আপনার ও কি কুকুর আছে?"
ইমান তখন ওর বিড়াল ক্যানডি, চেরি কে কোলে তুলে নিয়ে মিম কে হাতে'র ইশারায় বুঝিয়ে বললো দুটো।
মিম তারপর বাচ্চাদের নিয়ে ঢুকে গেলো বাড়ির মধ্যে আইভার তখন দোতালায় দাঁড়িয়ে বললো,
- "কেমন ব্রাদার?"
- "করল্লা'র মতোন" এই বার দুই ভাইয়ে'র হাসি কে দেখে?" ইমান এক টি বিষয় জেনে মনে-মনে খুব খুশি হলো। কারন সে কখনো ভাবতে পারেনি যে এই মেয়েটি পশু প্রেমি হবে।
কিন্তু সে এটা ভেবেও কিঞ্চিৎ অবাক, এর জন্য ছয় বাচ্চা মা বলে সম্মোধন করে লোকে?" মিম বিকেলে এলাকার ক্লাবে যাওয়ার জন্য রেডি হলো। কিন্তু সে বেড়িয়ে দেখতে পেলো ইমানের পাঞ্জাবির সাথে তার শাড়ির রঙ টা কিভাবে যেন মিলে গেছে?
সে চুপচাপ রিকশা ধরে ক্লাবের উদ্দেশ্য রওনা হলো। তবে এমন না যে এই পুরো বিষয় টি ইমানের নজর এড়িয়েছে। মিম,,,,,,,যথা সময়ে ক্লাবে পৌঁছে গেলো।
সে এসে সাধারণ সম্পাদকের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
- "সানভি ভাইয়া,,, এই শর্ট নোটিশে আবার কাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে?" সানভি বললো,
- "তেমন কিছু না, গেস্ট চলে এলে তুমি শুধু তার হাতে ফুলেরতোড়া টা তুলে দেবে।" মিম এবার কিছু টা রিলাক্স হ'য়ে বসলো।
গেস্ট আসি আসি করতে করতে এলো তখন সাড়ে সাত টা বাজে। মিম ফুলে'রতোড়া দিতে গিয়ে তার মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো। কারণ সামনে ইমান দাঁড়িয়ে আছে।
ও তাকে সালাম দিয়ে ফুলেরতোড়া টা তার হাতে তুলে দিলো। ইমান তখন সালামের উওর দিয়ে মিটি মিটি হাসতে লাগলো তার মুখ খানা দেখে। মিম যত সম্ভব নিরাপদ দূরত্বে সরে দাঁড়ালো, ইমান এক বার
আড়চোখে চেয়ে মিমকে উত্যক্ত করতে বললো,
- "ডাইনি ম্যাডাম বুঝি আবারও আপনার কাঁধে ভর করেছে?"
মিম ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো, সে মুচকি হেসে বললো,
- "লোকে বলবে যে আপনি বড় লোকে'র ছেলেকে ফাঁসানো'র জন্য ম্যাচিং ড্রেস আপ করেছেন তার সাথে।" মিম নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
- "যে না চেহারা না রাখছে তার পেয়ারা! মশাই,,,,,,
আমার একটু ও রুচি আসে না আপনাকে দেখে।"
- "কেন? আমি কি মাকালফল? মনে হ'য় আপনাকে একটু সম্মান বেশি দেয়া হয়ে যাচ্ছে?
দয়া করে আমাকে আমার লিমিট ক্রস করতে বাধ্য করবেন না।
ঠিক আছে?"
চলবে,,,
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com