হাজতবাস । পর্ব - ০১
কিরে শালী রেট কত এক রাতের? ফিগার তো ভালোই বানাইছোস এইসব ছোট পোলাপান দিয়া কি আর তোর সুখ হইবো? আইজ রাইতে আয় আমার কাছে সব দিক দিয়াই তোরে ভরাই দিম যাহ! যদি আইজ আহোস তাইলে তোরে মামলা ও দিমু না যাহ! "
রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশের মুখে উপরোক্ত কথাটি শুনে শাহরিনের শরীর কিড়মিড় করে উঠলো,
তার এক ঘুষিতে সেই পুলিশ কর্মকর্তার নাক থেকে রক্তের বন্যা বইতে লাগলো।
ঘুষির তোড়ে তিনি নিচে পরে গেলে রাস্তায় থাকা বাকি ডিউটিরত অফিসাররা দ্রুত ছুটে এলো,
-" শালা বেজন্মার জাত তোর সাহস কি করে হয় আমাকে এসব বলার?
শাহরিন পুলিশটির কলার ধরে তাকে ইচ্ছেমত থাপড়াচ্ছে, রাস্তায় সবাই উৎসুক চোখে দৃশ্য উপভোগ
করছে আর কেউ কেউ ভিডিও করছে।
বাকি অফিসারগুলো এসে শাহরিন কে ধরতে গেলেই সে হিংস্র বাঘিনীর মত খেঁকিয়ে উঠলো,
-" খবরদার আমাকে কেউ স্পর্শ করবিনা! আমি নিজেই যাব থানায়! "
শাহরিন এবং তার সাথে থাকা তিনজন ছেলেকে থানায় নেওয়া হলো,
সাথে জব্দ করা হলো তার সাদা মার্সিডিজ গাড়িটিকে ও।
গুলশান - ২ এর এএসপি, তুর্জয় হোসাইন চেয়ারে বসে বুকে হাত বেঁধে একবার
শাহরিন আরেকবার অফিসার মাহমুদ এর দিকে তাকালেন।
অফিসার মাহমুদের নাক বেয়ে রক্ত পরছে, ঠোঁটের কোনাও রক্তাক্ত হয়ে আছে।
দুই গালে পাঁচ আঙুলের দাগ দেখেই চড়ের তীব্রতা আন্দাজ করা যাচ্ছে!
এবার তুর্জয় শাহরিনের দিকে তাকালো...অপূর্ব সুন্দরী সে! পরনে জিন্স আর ব্ল্যাক টি-শার্ট পরা।
হাতে ঘড়ি, গলায় সানগ্লাস ঝুলছে আর চুলগুলো খোলা।
তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে কোনও রিচ ফ্যামিলির বখে যাওয়া রিচ কিড সে।
পাশ থেকে থানার ওসি পরেশ কুমার বললেন,
-" দেখেন স্যার কি কান্ড ছেলেমেয়েদের।
গাড়ির কাগজ ঠিক নেই বলে উল্টো অফিসার মাহমুদ কে মেরে কি করেছে!"
তুর্জয় হাত দিয়ে ইশারা করে তাকে থামিয়ে দিয়ে শাহরিন কে জিজ্ঞাসা করলো,
-" রাস্তায় ডিউটিরত পুলিশ অফিসার কে মেরে রক্তাক্ত করেছো, কারণটা কি শুনি? "
শাহরিন কিছু বলার আগেই শাহরিনের সাথে থাকা তিন জনের মধ্য থেকে বোকা চেহারার
একটি গলুমলু ছেলে বোকা বোকা হাসিমুখ করে উত্তর দিলো,
-" স্যার স্যার শাহরিন আপু কেন মারছে আমি ভিডিও করেছি এই দেখুন। "
ছেলেটি ফোন এগিয়ে দিতে গেলে সাইফ তার হাত চেপে ধরলো,
-" কি করছিস কি তুই! "
-" আরে স্যারই তো জানতে চাইলো...."
-" ফোনটা দাও! "
তুর্জয় এর গম্ভীর কন্ঠ শুনে ভয়ে সাইফ ফোনটা এগিয়ে দিলো তার কাছে।
তারপর ভিডিওটি অন করলো তুর্জয়...
তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শাহরিনের গাড়ির সব কাগজ ঠিক থাকার পরও অফিসার মাহমুদ গাড়িতে
উঁকি মেরে কি যেন দেখে তারপর সেই নোংরা কথাগুলো তাকে বলে
আর তারপরই শাহরিন রেগে তার ওপর এটাক করে।
-" এই তোমরা ওর কি হও? "
-" আমি অভ্র ওর বন্ধু স্যার আর এই দুইজন আমার ক্লাসমেট। "
-" এক গাড়িতে কি করছিলে? "
-" স্যার এত গরমে রাস্তায় অপেক্ষা করছিলাম বাসের জন্য পরে দেখি শাহু যাচ্ছিলো তাই আমি বলেছিলাম আমাদের কে একটু নামিয়ে দিতে। "
-" কে কোথায় পড়ো? "
-" আমরা স্ট্যামফোর্ডে পড়ি আর শাহু ঢাকা ইউনিভার্সিটি তে। "
-" থাকো কোথায়? "
-" পিংক সিটি মার্কেটের পাশেই। "
-" হুমম। ভিডিওটা ডিলিট করে দাও এখনই। "
তুর্জয়ের কথা শুনে শাহরিন খেঁকিয়ে উঠলো,
-" কেনও ভিডিও ডিলিট করবে কেনও? "
-" আমি বলেছি তাই! "
-" মিন্টু তুই যদি ভিডিও ডিলিট করিস তাহলে আমি তোর হাত ভেঙে ফেলবো! "
ছেলেটি ভয়ে কুঁকড়ে গেলো,
-" না আপু ডিলিট করব না প্রমিজ। "
পাশে থাকা অভ্র শাহরিন কে বললো,
-" শাহু কেনও ভেজাল বাড়াচ্ছিস বলতো? বাদ দেনা ভাই প্লিজ। "
-" আমি ভেজাল বাড়াচ্ছি? ওই থার্ড ক্লাস বস্তিমার্কা পুলিশ কি বললো সেটা কিছুনা তোদের কাছে? "
এবার শাহরিন তুর্জয়ের দিকে তাকালো,
-" আমি উনার নামে আমাকে কুপ্রস্তাব দেওয়া আর অশালীন মন্তব্যের জন্য কেস করবো। "
-" আমরা কেউ কেস নিবো না! "
-" আপনাকে কেস নিতে হবে নাহলে পুরো ক্যাম্পাস এখানে তুলে আনবো আমি! "
তুর্জয় এবার রেগে টেবিলে খুব জোরে বারি মেরে উঠে দাঁড়ালো,
-" মেয়ে তুমি জানো পুলিশের গায়ে হাত দেওয়ার জন্য আমি তোমাকে হাজতে ভরতে পারি? "
শাহরিন বললো,
-" আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড কি? "
-" মানে? "
-" মানে অনার্সে আপনার প্রোগ্রাম কি ছিলো? "
-"এনভাইরনমেন্টাল সাইন্স। "
শাহরিন হাসলো,
-" এই দেখ তোরা এনভাইরনমেন্টাল সাইন্সের স্টুডেন্ট কোনওরকম মুখস্থ বিদ্যায় বিসিএস ক্যাডার হয়ে এএসপির চেয়ারে বসে রয়েছে যে আইনের অ টাও জানেনা! "
শাহরিনের কথা শুনে তুর্জয় থতমত খেলো। এই মেয়েটা তো অনেক ফাজিল! চারপাশে চাপা হাসির শব্দ পেয়ে তুর্জয় রেগে গেলো,
-" তোমাকে থাপ্পড় মারবো বেয়াদব মেয়ে একটা! "
-" আজ যদি মুখস্থ বিদ্যায় ক্যাডার না হয়ে ল এর স্টুডেন্ট হতেন তাহলে আমার এত কথা বলতে হতো না। "
এর মধ্যে শাহরিনের বাবা আর মা আসলো থানায়, তুর্জয় দেখলো শাহরিনের বয়স বাইশ/তেইশ হলেও তার বাবা মা বলতে গেলে অনেকটাই বয়স্ক!
-" স্যার প্লিজ আমার মেয়ে কে মাফ করে দিন ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি। "
-" মেয়েকে এই শিক্ষা দিয়েছেন আপনারা? "
শাহরিন খেঁকিয়ে উঠলো আবারও,
-" ওহ আর আপনার বাবা মা কি শিক্ষা দিয়েছে? আপনি যে কেস লিখতে রাজি হচ্ছেন না সেটা দেখেই তো বুঝা যাচ্ছে আপনার বাবা মা কি শিক্ষা দিয়েছে আপনাকে। "
-" এক থাপ্পড়ে বেয়াদবি ছুটিয়ে দিবো বেয়াদব! "
-" ওসি সাহেব আপনি কেস লিখুন! "
-" স্যরি ম্যাডাম স্যার এর মানা করার পর আমরা কিছুই করতে পারবো না। "
-" আপনি কেইস নিবেন কিনা ফর দ্যা লাস্ট টাইম আই এম আস্কিং? "
-" দেখেছেন আপনার মেয়ের সাহস কত? ভালোই ভালোই বলছি একে নিয়ে যান নাহলে আমার অফিসারের গায়ে হাত তোলার জন্য চৌদ্দ শিকের খাঁচায় ভরে রাখবো আমি তাকে! শুধু মেয়ে মানুষ বলে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। "
-" আপনার মা বা বোনের সাথে এমন করলেও আপনি ছেড়ে দিতেন তাইনা? "
-" শাহরিন আর একটা কথা বললে তোকে এখানেই মেরে ফেলবো আমি! চল তুই বাসায়! "
শাহরিনের মায়ের ধমকে আর তার বাবার জোরাজুরিতে সে থেমে গেলো!
-" আজকে আপনি যেটা করলেন সেটার ডাবল রেজাল্ট আপনি পাবেন! ওপর ওয়ালা ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয়না মাইন্ড ইট!"
এবার শাহরিন অফিসার মাহমুদের দিকে তাকালো,
-" আর তুই মাদার***দের বাচ্চা আজকে তো বেঁচে গেলি নেক্সট টাইম যদি তুই আমার সামনে পড়িস তোর কলিজা টেনে বের করে রাস্তার কুত্তাদের খাওয়াবো আমি কসম! "
শাহরিন তুর্জয়ের দিকে তাকিয়ে রাগে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করতে করতে চলে গেলো, কিছুক্ষণ পর ছেলেগুলোকে ও ছেড়ে দিলো তুর্জয়।
-" তারপর সাব ইন্সপেক্টর মাহমুদ! বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি? "
-" স্যার বিশ্বাস করুন আমি আসলে...."
-" এক কাজ করুন আপনি বাসায় গিয়ে সুন্দর একটা ঘুম দিন। আর রেজিগনেশন লেটার কাল কমিশনার আপনার বাসায় নিজ দায়িত্বে পাঠিয়ে দিবে। "
-" স্যার প্লিজ আমি আপনার পায়ে পড়ি আমার বউ বাচ্চা না খেয়ে থাকবে তাহলে..."
শেষ কথাটি শুনে তুর্জয় কষিয়ে এক চড় মারলো মাহমুদ কে,
-" তাহলে কিভাবে নিজের হাঁটুর সমান মেয়ে কে বিছানায় যাওয়ার প্রস্তাব দিলি বাসায় বউ থাকার পরও? আই সেইড গেট লস্ট! "
মাহমুদ চলে গেলো, তুর্জয় বসে ঠান্ডা পানি খেলো এক গ্লাস। এমনিতেই এত গরম তার মধ্যে সামান্য এক পুঁচকে মেয়ে এসে তাকে কিভাবে অপমান করে গেলো, কিভাবে তার সাথে ঝগড়া করে গেলো আর সে কিছুই বলতে পারলো না? কিছুই করতে পারলো না? তুর্জয়ের ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটার সাদা গাল দুটো লাল করে দিতে তাহলে আর কোনওদিন বেয়াদবি করার সুযোগ পেতো না সে!
-“ দেখলি মেয়েটাকে ? কি তেজ আর কত বেয়াদব। “
-“ তবে যত যাই বলিস মেয়েটার বুদ্ধি আছে অনেক। “
-“ আমার তো ভয় হচ্ছিলো তুর্জয় স্যার কে নিয়ে। “
-“ আরে স্যার এসব পিচ্ছিদের কিছু করবেনা। “
-“ এই মেয়ে তোর কাছে পিচ্চি? “
-“ আরে ওই একিই। “
পাশের রুম থেকে কথাগুলো শুনে তুর্জয় এর খুবই বিরক্ত লাগছে।
রাগে তার কিছুই ভালো লাগছেনা তাই সে ফেসবুকে একটু ঢুঁ মারলো।
ফেসবুকে ঢুকেই তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো, সেই ভিডিওটি অলরেডি ভাইরাল!
শাহরিন সেই ভিডিওটি আপলোড দিয়েছে, আর ক্যাপশনে লিখেছে তার সাথে আজ কি কি হয়েছে।
শাহরিন তার কথাও লিখেছে যে তার কেস নেওয়া হয়নি, কিন্তু তার নাম উল্লেখ করেনি শাহরিন।
তুর্জয় কপালে হাত দিয়ে বসে রইলো....সে যে ভয়টা পেয়েছিলো সেটাই হয়েছে,
এই মেয়ে তার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দিয়েছে একদম!
সে দুই ঘন্টা আগে ভিডিওটি আপলোড দিয়েছে এবং ইতোমধ্যে এক হাজার শেয়ার ও হয়ে
গিয়েছে আর মানুষের কমেন্ট তো আছেই পুলিশদের নিয়ে।
হুট করে এক জায়গায় চোখ আটকে গেলো,
তার ছোট বোন ও ভিডিওটি শেয়ার দিয়েছে মেয়েটি কে সাপোর্ট করে!
তুর্জয়ের আর ভালো লাগলো না। সে বাসায় চলে গেলো দাঁত কিড়মিড় করতে করতে.......
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com