বিরহ মিছিল । পর্ব - ০৬
" দুর্বল করার জন্য এসব বলছো আমায়?"
মুগ্ধতার একরোখা উত্তর,
" তাহলে?"
আদিল তর্কে না গিয়ে মূল কথায় এলো,
" রাতে কান্নাকাটি না করে, তোমার বাকি এক্সাম গুলো ভালো করে শেষ করা চাই।"
মুগ্ধতা বুঝেও এবারো রাগী গলায় বলল,
" আমি মোটেও কান্নাকাটি করি না।"
আদিল হেয়ালি করে শুধালো,
" হুম। শুধু রাতে আমার বাসার দরজায় আসো। চোখ দুটো লাল, লাল করে।"
মুগ্ধতার রা বন্ধ হলো। আদিল পূর্নবার আওড়াল,
" মানুষ ইগ্নোর কখন কাউকে করে জানো, যখন কারো থেকে প্রচন্ড আঘাত পায়, বা কারো প্রতি দুর্বল হওয়ার ভয়ে,প্রেমে পরার ভয়ে ও স্বার্থসিদ্ধ হাসিল হওয়ায় তাকে আর প্রয়োজন মনে করে না।
আমার দ্বিতীয় টায় পা পিছলে গেছে। তোমার প্রতি দুর্বল হওয়ার ভয়ে এতদিন চুপ করে ছিলাম। তাই তোমায় ইগ্নোর করেছি প্রতি মুহূর্তে। আর তুমি কি ভাবলে? তুমি কুৎসিত তাই?"
আদিল টেবিলে শব্দ করে ঘুষি মারলো। মুগ্ধতা অবাক চোখে বলল,
" তুমি এসব জানো কি করে?"
রাগের মাঝেও অল্প মাত্রায় হাসলো আদিল। ঠাট্টা সুরে বলল,
" তুমি আমার ওয়াশরুমে যাওয়ার হিসেব রাখো। আমি এটা রাখবো না।"
একটু থামলো আদিল। বোতলের পানি একটু খেয়ে আবার বলল,
" কাউকে ভালোবাসার জন্য কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না। এখনো তুমি বাচ্চা। সময় হোক তুমি ও ফুল পাবে।"
লজ্জায় অধোবদন মুগ্ধতা। চিবুক এসে ঠেকেছে বুক বরাবর। কিছুদিন আগেই ভালোবাসা দিবস গত হয়েছে। প্রগতিকে তার বফ একগুচ্ছ গোলাপ দেয়। বন্ধুমহলে এ নিয়ে কত ঠাট্টা-তামাশা। মুগ্ধতার সে সবে পরোয়া না থাকলেও গোলাপে ছিল। নিজেকে কুৎসিত দাবি করে। ভাবে আহামরি কিছুই নয় সে। এইজন্য আদিল তাকে পাত্তা দেয় না। সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি মাথা ঠান্ডা করার জন্য ভিজে, ঠান্ডা লাগিয়ে ফেলে।
মুগ্ধতা সলজ্জে বলল,
" এটাও জানো?"
আদিল প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে,
" এখন পড়াশোনা করো। বাচ্চা মেয়ে। বড় হও তখন আমরা রিলেশন করবো। তোমায় ফুলও দিবো। "
মুগ্ধতা লজ্জা পাওয়ার কথা থাকলেও পেল না। আদিল সব জানে আগেই, লজ্জা পেয়ে কি হবে। লাজলজ্জার মাথা খেয়ে বলল,
" তোমার চোখে কবে বড় হবো?"
"ইন্টার পাশ করো তখনই বুঝবো বড় হয়েছো।"
মুগ্ধতা উৎকন্ঠা স্বরে বলল,
" মাত্র এসএসসি দিলাম। ইন্টার পাশ করতে প্রায় তিন বছর দেরি।"
" হুম জানি। "
দু পক্ষ নিরব হলো। ওয়েটার অর্ডারকৃত বার্গার টেবিলে দিয়ে গেল। মুগ্ধতা মৌনতা ভেঙে বলল,
" যেখানে আমার বান্ধবীদের বিয়ে হচ্ছে, রিলেশনে যাচ্ছে, বাচ্চা হচ্ছে, সেখানে আমরা রিলেশনে যাবো প্রায় তিন বছর পর? "
আদিল মুগ্ধতার হাত নিজের আঁজলায় নিয়ে আশ্বাস দিয়ে বলল,
"আমরা না হয় সবার থেকে একটু ব্যতিক্রম হলাম। আরো অনেক পড়ে রিলেশনে গেলাম। সমস্যা নেই তো। আমি সেই সময়টার জন্য অপেক্ষা করবো।"
মুগ্ধতার মুখশ্রী উজ্জ্বল হলো। শুকনো মুখ ঠোঁটের হাসিতে সতেজতা ফিরে পেল।
মুগ্ধতা এই কঠিন শর্ত বা চুক্তি যেটাই হোক সেটা নিয়ে ভাবলো। কিছু সময় বাদে বলল,
"ওকে ফাইন। মেনে নিলাম এই করল্লার শর্ত। আমিও সেই সময়টার অপেক্ষা করবো।"
বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো মুগ্ধতা। পরিক্ষা শেষ দুদিন হলো। সেই সুবাদে আয়েশ করে দুটো দিন কেটে গেল।
আমেনা মেয়ের ঘরে ফুচকি দিলেন। মুগ্ধতা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছিল। তিনি মেয়ের ঘরে ঢুকেই বললেন,
" তোর বান্ধবী কল করেছিল।"
মুগ্ধতা এক ভ্রু কিঞ্চিৎ কুঁচকে বলল,
" কোন বান্ধবী মা?"
বিরসবদনে বললেন,
" খিমা।"
মুগ্ধতা তোয়ালা বারান্দায় রেখে এসে কিছুক্ষণ ভাবলো। আমেনা তখনো মেয়ের ঘরে উপস্থিত। মুগ্ধতা মাথায় হাত রেখে বলল,
" যা ভুলে গেলাম! এত গুরুত্বপূর্ণ কথা।"
আমেনা প্রশ্ন করলেন,
" কি ভুলে গেছিস? "
"খিমা চলে যাবে আম্মু কালকে। অনেক টানাপোড়েনে সংসার চলছে তাদের। খিমার বাবা বেঁচে নেই অনেকদিন হলো। এতোদিন এখানে ছিল, খিমার এখানকার স্কুলে বোর্ড পরিক্ষার রেজিষ্ট্রেশন হয়ে যাওয়ায়। এখন পরিক্ষা শেষ তাই চলে যাবে নিজেদের বাড়িতে।"
মুগ্ধতা মন খারাপ করে বলল। আমেনা মেয়ের মন খারাপ উপলব্ধি করতে সক্ষম হলেন। বললেন,
" দেখা করে আয়। বা থাকতেও পারিস সারাদিন। সন্ধ্যায় তোর বাবা নিয়ে আসবে নি। "
" আচ্ছা আম্মু।"
বারোটায় বাড়ি থেকে বের হলো মুগ্ধতা। খিমার বাড়ি ভুরুলিয়ায়। তার বাড়ি থেকে ত্রিশ মিনিটের পথ। মুগ্ধতা রিকশা ডেকে উঠে বসলো। রিকশা তার গতিতে চলছে। মুগ্ধতা চারপাশ দেখছে।
অর্ধেক পথ চলতে বিরাট জ্যামের সম্মুখ হলো। রাজবাড়ীর ঢাল থেকে রেল গেইট জ্যামে আটকা শত শত যানবাহন।
.
মুগ্ধতার ধারণা এই জ্যাম ছুটতে কমপক্ষে ঘন্টা দুয়েক লাগবেই। মুগ্ধতা রিকশা থেকে নেমে টাকা পরিশোধ করে ফুটপাতের পথ ধরল। ডান পাশের ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে মুগ্ধতার আকস্মিক রাজ দিঘির রাস্তায় চোখ আটকে গেল। আদিল সেই পথ অনুসরণ করে এদিকে আসছে। কফি রঙের শার্ট, কালো জিন্স পরিহিত আদিল। অনেক দূরে থাকা সত্ত্বেও মুগ্ধতা এক ঝলকে চিনতে অসুবিধা হলো না। মুগ্ধতা দ্রুত গতিতে ফুটপাত ছেড়ে রাজ দিঘির পিচঢালা রাস্তার পথে গেল। আদিল এখানে ইংলিশ পড়ে। মুগ্ধতা সেটা জানে।
রাজ দিঘির পথ দিয়ে হাঁটতে চোখে দেখা মিলল
দূরে ভাওয়াল রাজবাড়ীর পুকুর ঘাট, মন্দির, বড় বড় দালান। লোক মুখে শোনা যায় এক সময় এই নদীর পানি ছিল স্বচ্ছের ন্যায় পরিষ্কার। কালের ঘুর্নায়মানে আজ সেই পানি অপরিষ্কার,নোংরা।
আদিল মুগ্ধতা কে দেখতে পেল। মুগ্ধতা হাঁপিয়ে বলল, " ইংলিশ প্রাইভেট পড়তে এসেছিলে?"
আদিল স্বাভাবিক স্বরে বলল,
" হুম। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?"
"বান্ধবীর বাড়িতে যাচ্ছিলাম।"
আদিল ভ্রু কুঁচকে আওড়াল,
" এখানে বুঝি বান্ধবীর বাড়ি?"
মুগ্ধতা দোনোমোনো করে বলল,
" না, ভুরুলিয়া। তোমায় দেখতে পেয়ে কথা বলতে এলাম।"
"চলো তবে।"
"কোথায়?"
"তোমাকে এগিয়ে দেই। "
মুগ্ধতা খুশি হলো প্রচুর। সেই দিনের পর থেকে আদিল মুগ্ধতার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে। কম কথা মানুষ টাও তার বাঁচাল সায় দেয়। মুগ্ধতা কিছু একটা ভেবে বলল,
" অনেক পথ। রাস্তায় জ্যাম বেঁধে আছে। পুরো পথ হেঁটে যেতে হবে বোধহয়৷ তার চেয়ে তুমি বাসায় যাও। কষ্ট করে যেতে হবে না। "
আদিল প্রসঙ্গটি বেশিদূর বাড়ালো না। সোজাসাপটা বলল,
"জায়গা টা সেফ নয়। অধিক নিরিবিলি। তাই
আমি যাচ্ছি। "
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com