যদি দেখা না হতো । পর্ব - ০৮
গলার ভয়েজ শুনে আমি মুখের দিকে তাকিয়ে শকড এতো শুভ্র,,,বর বেশে কি সুন্দর করে দাড়িয়ে আছে।
শুভ্রঃ তো সারপ্রাইজ কেমন লাগলো জানু
আমি বেড থেকে উঠে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলাম,,,আর অবাধ্য চোখের জল পরতে লাগলো,,,
শুভ্রঃ এই পাগলি কাঁদছো কেন হু,,তোমার কি মনে হয় আমি অন্যজনকে বিয়ে করতে পারি
তানিশাঃ কেন করলে এমন
শুভ্রঃ প্রথম বিয়েতে কোন কিছু নিয়ম মেনে করা হয়েছিলো না,,তাই এবার নিয়ম মেনে বিয়েটা করলাম।বাট আপনি যে একবারও আমার মুখের দিকে তাকালেন না তাহলে এতো কষ্ট হতো না।
তানিশাঃ আমাকে কেন কষ্ট দিলে??
শুভ্রঃ তোমাকে একটু কষ্ট দিলাম যাতে তুমি আমাকে ছেড়ে না যাও।এবার কান্না থামাও তো(চোখ মুছে দিয়ে) আহহ কি মিষ্টি লাগছে,,, লেপ্টে থাকা কাজলে দুচোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে,,,নিজেকে কি আর কন্ট্রোল করা যায়
শুভ্রের কথা শুনে তানিশা অনেক লজ্জা পেলো এবং মাথা নিচু করে ফেললো,,,,,,,,,,,,,,
শুভ্রঃ লজ্জা মুখে আরও বেশি সুন্দর লাগছে তোমাকে,,, এই পাগলি তুই কি আমার হবি রে??
তানিশাঃ হুম(মাথা নিচু করে) আচ্ছা আমি এখন ঘুমাবো
শুভ্রঃ এই এই(কোমড় চেপে ধরে) ঘুমাবা মানে,, আজ তোমার জন্য ঘুম হারাম বুঝলা।আজ না আমাদের বাসররাত,,কতো স্বপ্ন থাকে যানো,,,ঘুম নাই বুঝলা,,ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি
এই বলে তানিশাকে শক্ত করে চেপে ধরে পেটে স্লাইড করতে লাগলো,,,তানিশা শুভ্রের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে।তারপর তানিশার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো আজ আর তানিশা কোন বাধা দিলো না।একসময় দুজন ভেসে গেলো ভালোবাসার চাদরে......
সকালে,,,
দুটি চোখ তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ থেকে,,তানিশার কেমন জানি অস্বস্তি হতে লাগলো তাই ঘুম থেকে উঠে দেখলো শুভ্র তাকিয়ে আছে,,
শুভ্রঃ শুভ সকাল,, মহা রানী
তানিশাঃ শুভ সকাল
শুভ্রঃ তো ঘুম কেমন হলো??
তানিশা চোখ ছোট ছোট করে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে,,
শুভ্রঃ কি হলো বউ আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছো কেন??
তানিশাঃ ঘুমাতে দিছেন আমাকে আপনি??
শুভ্রঃ
তানিশাঃ ছাড়ুন আমি উঠবো
শুভ্রঃ আরেকটু পর
তানিশাঃ নাহহ উঠবো ছাড়ুন তো
শুভ্রঃ আচ্ছা বুঝিনা,, এবার তুমি একবার আপনি,, যে কেনো একটা বলা যায়না
তানিশাঃ হি হি,,আপনিই বলুন কোনটা বলবো
শুভ্রঃ তুমি করে বলবা বুঝলা
তানিশাঃ আচ্ছা,, এবার ছাড়ো
শুভ্রঃ ওয়েট
শুভ্র তানিশার মুখ হাত দিয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।
শুভ্রঃ এবার যাও (মুচকি হেসে)
তানিশা শুভ্রের গালে একটা কিস করে উঠে পরে,,শুভ্র হয়তো এটা আশা করেনি।তানিশা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
শাওয়ার করে বেরিয়ে এসে দেখে শুভ্র এখনো ঘুমিয়ে আছে।তানিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভ্রের কাছে গিয়ে ডাকতে থাকে,,আর শুভ্র এক ঝটকায় নিজের উপর ফেলে দেয়,,এবং তানিশার মুখ দেয়
তানিশাঃ এই এই তোমার জন্য বারেবার শাওয়ার নিতে পারবোনা এই শীতে
তানিশার কথা শুনে এবার শুভ্র হাসতে থাকে আর তানিশা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে
তানিশাঃ যাও শাওয়ার নিয়ে আসো,,আমি নিচে গেলাম।
শুভ্রঃ আচ্ছা
আমি নিচে গেলাম আমার শাশুড়ী আমার দিকে তাকিয়েই আছেন,,,,
শাশুড়িঃ মাশাল্লাহ আমার বৌমাকে অনেক সুন্দর লাগছে
তার কথায় আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকলাম
তানিশাঃ মা আপনি কি এখানেই থাকবেন
শাশুড়িঃ যদি শুভ্র রাজি তাকে তাহলে থাকবো,,,তা শুভ্র কোথায়
তানিশাঃ ও শাওয়ার নিতে গেছে,, এখনি চলে আসবে
শাশুড়িঃ আচ্ছা,, ও আসলে ব্রেকফাস্ট করে নিও,,আমি তনয়ার(শুভ্রের বোন) বাড়িতে যাচ্ছি
তানিশাঃ আজকেই
শাশুড়িঃ হুম মা,,আসি
এই বলে তিনি চলে গেলেন,, কারণ শুভ্র তার মাকে দেখলেই রেগে যায়।
তানিশাঃ নাহহ,, এদের পরিবারকে যে করেই হোক ঠিক করতে হবে,, সব যেন এলোমেলো
শুভ্রঃ তানিশা কি ভাবছো
পাশে তাকিয়ে দেখে একদফা ক্রাস খাইলাম নীল কালারের পাঞ্জাবী,ব্লক পেন্ট,,কালারটা তার গায়ের রঙয়ের সাথে খুব সুন্দর মানিয়েছে,,কালো কালারের ওয়াচ পুরাই হিরো,,,আহহ আমার বরকে আমিই নজর দিচ্ছি কেন,, কিছু হলে
শুভ্রঃ কি ভাবছো এতো(আমাকে একটু ঝাকিয়ে)
তানিশাঃ আপনি কি কোথাও যাবেন??
শুভ্রঃ নাহহ,,আজ সারাদিন তোমার সাথে চিপায় থাকবো(চোখ মেরে)
আমি আর কোন কথা বললাম না তার হাত ধরে ডাইনিং টেবিলে বসে কাবার বেড়ে দিলাম,,
শুভ্রঃ এতো খাবার কেন আর তুমি খাবা না
তানিশাঃ কে বলেছে আমি খাব না,,তুমি খাইয়ে দিবে আমাকে
শুভ্রঃ আচ্ছা,, হা করো
তিনি এক লোকমা আমার মুখে তুলে দিলো,, এইভাবেই দুজনে খেয়ে রুমে আসলাম।তিনি মোবাইল ঘাটতে লাগলেন আর আমি কখন থেকে তার দিকে তাকিয়েই আছি,,,
শুভ্রঃ আচ্ছা আমাকে কি বেশি সুন্দর লাগছে??
তানিশাঃ নাহহ তো একদম বান্দরের মতো লাগছে
শুভ্রঃ তাহলে ওইরকম রসগোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছো কেনো??
এবার একটু বেশিই লজ্জা পেলাম,,, ইসস দেখলো কেমনে,,শুভ্র ফোন রেখে আমার দিকে এগিয়ে আসছে,, আমি কয়েকটা ঢোক গিললাম।
তানিশাঃ এই তুমি এগিয়ে আসছো কেন
শুভ্রঃ আমি এখন রোম্যান্টিক মুডে আছে
তানিশাঃ ওই দেখ আম্মু
শুভ্র যেই দরজার পানে তাকিয়েছে আমি এক দৌড়ে ছাদে চলে আসলাম...
বিকেলে,,
আমার আর ভালো লাগছে না বোরিং ফিল হচ্ছে তাই নিচে গিয়ে বরকে একটু জ্বালাবো এই পরিকল্পনা করেই রুমে গেলাম।রুমে গিয়ে দেখি সে হোপ ফুলে আছে আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছে
শুভ্রঃ লাইফ অফ করে দিয়ে যাও
বুঝলাম মুড ভালো নাই ঘুমাবে,,,বেডের কাছে সুইচ যেই বন্ধ করতে গেলাম তিনি এক টানে নিজের উপর ফেলে দিলো
তানিশাঃ কি করছেন ছাড়ুন
শুভ্রঃ আমি ঘুমাবো এখন তার সাথে তুমিও ঘুমাবে বুঝলা
পরের দিন,,,
আজ বৌভাত,,বাড়িটা আরও পরিপাটি করা হয়ছে,,আজ আমার ফ্যামিলি+ বন্ধু-বান্ধব এসেছে শুধু মেহেন্তা আপু বাদে।শাশুড়ী ননদবাদে সবাই এসেছে,,,
শুভ্র সবার সাথে পরিচয় করে দিলো,,,,
ক্যামের ফ্লাস লাইট,,সবার সাথে পরিচয়,,পিক তোলা বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি।
সন্ধ্যায়,,
সবাই একে একে করে চলে গেছে,,,আমার পরিবারও চলে গেছে থেকে গেলো শুভ্রের ছোট মামি আর আর মামাতো বোন। ছোটবেলা থেকে নাকি মামিই শুভ্রকে বড় করেছে,,তাই শুভ্র আর মামিকে যেতে দিলোনা।
ডিনারের শেষে শুভ্র একটু বাইরে গেলো আমার মাথা খুব ব্যাথা করছিলো।
মিসেস সোফিয়াঃ আয় মা তোর মাথায় তেল ম্যাসাজ করে দি ভালো লাগবে
আমিও আর না করলাম না,,আসলেই খুব খারাপ লাগছিলো,,
তিনি তেল নিয়ে চুলগুলো বিলি কেটে কেটে দিচ্ছে,,
তানিশাঃ আচ্ছা আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো
মিসেস সোফিয়াঃ শুভ্র তো ছোট মা বলে তুই ও বলিস
তানিশাঃ আচ্ছা চোট মা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো
মিসেস সোফিয়াঃ হুম বল পারমিশন নিতে হবেনা
তানিশাঃ আচ্ছা শুভ্রের সাথে শুভ্রের মায়ের সম্পর্ক ভালো না কেন?
মিসেস সোফিয়াঃ তোর শাশুড়ী ছেলেসহ বাদ দিয়ে অন্য এক লোককে বিয়ে করে যার পক্ষে তোর ননদ।শুভ্র খুব কষ্ট পায়ছিলো,,,তার কিছুদিন পর শুভ্রের আব্বু মারা যায় তারপর থেকে আমি শুভ্রকে নিয়ে নিছি কারণ,, আমার কোন সন্তান ছিলো না,,তখন শুভ্রের বয়স মাএ আট বছর
তানিশা কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট পেলো এতো ছোট বয়সে এতো বড় আঘাত পেয়েছে ও,,,
এই জন্য ওর মাকে সহ্য করতে পারেনা
মিসেস সোফিয়াঃ হুম রে মা ওর খেয়াল রাখিস
আমি ছোট মাকে জড়িয়ে ধরি,, তিনিও বেশ অবাক হয়,,হয়তো তিনি এটা আশা করেনি...
মিসেস সোফিয়াঃ আমি কখনো ভাবিনি আমার এতো ভালো বৌমা থুক্কু মেয়ে হবে
তানিশাঃ আচ্ছা ছোট মা আপনার কথা বার্তাতে মনে হচ্ছে অনেক শিক্ষিত
মিসেস সোফিয়াঃ হুম রে মা,,,মাস্টার্স পাস।তখন তোর ছোট আব্বু বেকার ছিলো আমাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে ছিলো কিন্তু আমি পালিয়ে আসি কারণ আমি তাকে হারাতে চায়ছিলাম না।পরে মেনে নেয় আমার পরিবার কিন্তু যখন বাচ্চা আর হলো না তখন শুভ্রকে পেলাম বুঝলি
শুভ্রঃ ছোট মা ওকে একা একাই আদর করছো আমি পর হয়ে গেলাম
মিসেস সোফিয়াঃ দেখছিস কি হিংসা করছে
তানিশাঃ হুম দেখছি তো,,আচ্ছা তুমি এখানেই থাকো
শুভ্রঃ হুম তানিশা তো ঠিকি বলেছে
মিসেস সোফিয়াঃ আচ্ছা
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com