মাধবীলতা । পর্ব -০৪
ছবি আর কাগজ ওয়ালেটের জায়গামতো রাখার পরে দেখতে পাই আরেকটা ছবি ভুলে বাদ পড়ে গেছে।
তার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম।এতো আন্দোলনের ছবি...!!
কিন্তু এই লোকটার ছবি অনুরোধে কাছে আসলো কিকরে?
তাহলে কি অনুরোধ চেনে তাকে!যদি তাই হবে আমার কাছে অস্বীকার করলো কেন....??
---এই লোকটাকে তুমি চেনো...??
---হ্যাঁ,না চিনলে আমার কাছে ওর ছবি আসলো কিকরে?কেন কি হয়েছে?
---তাহলে তখন অস্বীকার করলে কেন?
---কি বলছো তুমি এসব,কখন অস্বীকার করেছি?
---আমি যখন আন্দোলনের কথা বললাম।তখন না চেনার ভান করলে কেন তুমি?
---আন্দোলন,কে আন্দোলন?তোমাকে কে বললো ওর নাম আন্দোলন।
---নাহ,আমাকে প্লিজ একদম মিথ্যে বলো না।
আমি জানি এই লোকটার নাম আন্দোলন।একে দেখেছি আমি আগেও।
---কাম অন মাধবী।এটা আমার বন্ধু বর্তমান।পুরো নাম বর্তমান শেখ।
অনুরোধের কথা শুনে মাথা ঘুরে গেল আমার।ও কিনা এই জঘন্য লোকটাকে নিজের বন্ধু বলে দাবি করছে।
---কি বললে,এ তোমার বন্ধু!তুমি আগে তো কখনো বলোনি ওর কথা।
---বলিনি কারণ ওর প্রসঙ্গ ওঠে নি কখনো তাই।তাছাড়া ও দেশে ছিলো না।কয়েকবছর হলো এসেছে।
---তার মানে তুমি একে ভালো করেই চেনো, জানো এর সব ব্যপারে?
---হুমম...আমার খুব কাছের এবং ভালো একজন বন্ধু।দেখতে পাচ্ছো না আমি যার ছবি ক্যারি করি তার সাথে কেমন রিলেশন হতে পারে!
---আচ্ছা ভালো,তাহলে তো ভালোই হলো।
---কি ভালো হলো?
---আমি ওনার সাথে দেখা করতে চাই... কথা বলতে চাই ওনার সাথে?
---মানে কি,চেনা নেই জানা নেই।তুমি কথা বলতে যাবে এমন একজন মানুষের সাথে।
---কে বলেছে চেনা নেই।তুমি একবার দেখো আমি ওর সামনে দাঁড়ালে ওর মুখটা ঠিক কিকরম হয়।
---তুমি কি বলছো বুঝতে পারছি না আমি কিছু,
----তোমায় আমি পরে সব বলবো।আগে ঐ লোকটার কাছে নিয়ে যাও আমায়।ওর সাথে প্রচুর হিসেব আছে আমার।
---আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়,ওকে বরং এখানেই ডেকে পাঠাই।
---না একদম না,আমি নিজে যাবো দেখা করতে ওর সাথে।
---ঠিক আছে।বাট তোমার হাবভাব দেখে আমি ভুলেই যাচ্ছি তুমি একজন ডাক্তার।
ডিটেকটিভদের মতো ব্যবহার করছো।
আমি এরপর অনুরোধের ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছি লোকটা নিজের নাম পরিবর্তন করে এসেছিলো হাসপাতালে।
ও আসলে বর্তমান,আন্দোলন নয়।ভাবতেই পারছি না এই লোকটা আমার হবু স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
অথচ আমি সেটা জানিই না।লোকটা যেই হোক না কেন,
এর পেট থেকে আসল সত্যিটা বের করতেই হবে আমাকে।
তাতে যদি আমাকে জেলে যেতে হয় তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু
আমার বোন আর তার সন্তানের এতো বড়ো সর্বনাশ কেন করলো সেটা জানতেই হবে আমাকে।
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আগামীকালকেই লোকটার সাথে দেখা করতে যাবো।
পরের দিন সকালে।অনুরোধ আর আমি রেডি হয়ে বর্তমানের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
সকাল বললে ভুল হবে।অনুরোধের জন্য বেরেতো বেশ লেইট হয়ে যায়।
যেখানে নয়টার দিকে বেরেনোর কথা সেখানে এগারোটা বেজে গেলো।
গাড়িতে বসে আছি দুজন।অনুরোধ আমার পাশেই।
আমাকে উদ্দেশ্য করে অনুরোধ বলে উঠলো...
----আমাদের যেতে কিন্তু একটু সময় লাগবে।অনেকটা দূরের পথ।
---অনেকটা দূরের মানে, কতক্ষণ লাগবে।দুপুরের আগে পৌঁছবো তো?
---না, বিকেল হয়ে যাবে।সন্ধ্যাও হতে পারে।
---কি!!!!
---এখন আকাশ থেকে পড়লে কেন?তখন তো বললাম আমি ওকে ডেকে পাঠাই।
তখন তুমি নিজেই ব্যাগড়া দিলে।এখন বোঝো।
---ঠিক আছে ব্যপার না।যতো সময় লাগে লাগুক।ঐ লোকটাকে ধরতে পারলেই হলো।
---হুম,সময় লাগবে।
---আচ্ছা এখন কি আর যোগাযোগ নেই তোমাদের ভেতরে আর।
---না,এই জাস্ট টকিং টার্মটুকুই আছে।আসলে কারোরই সময় হয়ে ওঠে না সেইভাবে।
গাড়ি তার আপন গতিতে চলতে থাকে।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়।
অনুরোধের আর একটু পথ শুনতে শুনতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এলো।
অবশেষে বর্তমানের বাড়িতে পৌঁছতে সক্ষম হলাম আমরা।
অনুরোধের সাথে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম।
কেয়ার টেকার আমাদের দুজনকে ড্রয়িং রুমে বসতে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।
---এটা সত্যি তোমার বন্ধুর বাড়ি তো?
আমি কৌতুহল বশত অনুরোধকে প্রশ্ন করি।
---আশ্চর্য, তো কি আমি এমনি এমনি নিয়ে আসলাম তোমায় এখানে!
---কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না।সে কি বাড়িতে নেই নাকি।
---আছে আছে, বাড়িতেই আছে।একটু পরেই চলে আসবে।
অগ্যতা লোকটার জন্য ওয়েট করতে থাকি।জানি না সে কখন আসবে।
অনুরোধের সাথে আর কোনো বাক্যালাপ হলো না।
কিছুক্ষণ পরে আমাদের সকল অপেক্ষায় অবসান ঘটিয়ে লোকটা উপর থেকে নেমে আসলো।
আমি তাকে দেখা মাত্রই দাঁড়িয়ে গেলাম।
---হ্যাঁ, সত্যিই তো।এ তো সেই লোকটাই।অর্থাৎ আমার বোনের স্বামী।
যে কিনা তার সন্তানকে হত্যা করিয়েছে আমার দ্বারা।
লোকটার বেশভূষা একদম ভালো লাগলো না আমার।শরীরে কোনো কাপড় নেই।
কোমড়ে একটা টাওয়াল জড়ানো।দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র গোসল সেরে এসেছে।
তাই বলে কেউ এভাবে কারো সামনে আসে...?
লক্ষ্য করলাম তার হাতে একটা সিগারেট।সেটা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে।
সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি এগিয়ে যাই তার দিকে।
---আমি সেই তো যে আমার হাসপাতালে এসেছিলেন নিজের অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে!
---হ্যাঁ,আমিই গিয়েছিলাম।
আর শুধু তাই নয় তার গর্ভে যে বড়ো হচ্ছিল তাকেও শেষ করেছিলাম।আর সেই কাজটা কে করেছিলো,....!?
---দূর্ভাগ্যবশত সেই কাজটা আর কেউ নয়। আমিই করেছিলাম।
এটাই ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
---রাইট।একদম রাইট।তো এখন কেন এসেছো আমার কাছে।কি চাই....
একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করলাম।
ইনি তো অনুরোধের খুব কাছের বন্ধু।
তাহলে এভাবে ওকে ইগনোর করে আমার সাথে কথা বলছে কিভাবে।
একবার তাকালো পর্যন্ত না অনুরোধের দিকে।
নিজের অন্যায়ের কথা এভাবে স্বীকার করে দিচ্ছে বন্ধুর সামনে!
সত্যিই অদ্ভুত।এই ভেবে পেছনে ফিরে তাকালাম আমি।এরপর যে দৃশ্য দেখতে পাই
নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না।
অনুরোধের হাতে একটা পিস্তল।আর সেটা আমার দিকে তাক করে বসে আছে,
ওর চেহারার এক্সপ্রেশন যেন পাল্টে যাচ্ছে এক মূহুর্তে...!!!
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com