হাজতবাস । পর্ব - ০২
তোকে কত বার বলেছি আমি মেয়ে মানুষ হইয়া কোনও ঝক্কিঝামেলা তে না জড়াইতে...
আমার কথা কি তুই কোনওদিন শুনবিনা? তরে মানুষ করতে পারলাম না আমি! "
-" উফফফ মা সব কিছু দেখার পর শুনার পর তুমি কিভাবে আমাকে এই কথা বললে? আমাকে এটা কিভাবে বলতে পারলে? তোমার কাছে কি আমার সম্মানের কোনও দাম নেই? "
-" তাই বইলা তুই পুলিশের ঝামেলায় গেলি? সাথে কে ভিডিও করছে সেটাও ছাইড়া দিসোস তুই নেটে...ওইটা ডিলিট করবি তুই এখনিই। "
-" তুমি যে আমার আপন মা আমার এখন সন্দেহ হচ্ছে! ছেলেমেয়ের বিপদে মায়েরা নাকি ঝাঁপিয়ে পরে আর তুমি উল্টো আমাকে দোষ দিচ্ছো, আমাকে কথা শোনাচ্ছো! "
-" দেখছো তুমি? মাইয়ারে আদর দিয়া কি বানাইছো এইবার? যদি কিছু হয়না তখন কপাল থাপড়াইবা! "
-" আহ শেলি বাদ দাও না...."
-" আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করতে আসবেনা ইভেন খাওয়ার জন্যও না। "
কথাটি বলে শাহরিন নিজের রুমে গেলো, অনেক জোরে দরজা লাগানোর শব্দ পাওয়া গেলো।
রাগে তার শরীর কটমট করছে।
সে ভাবতেও পারছেনা যে তার সাথে একজন পুলিশ এত বাজে ব্যবহার করলো,
তাকে এত বাজে কথা বললো কুপ্রস্তাব দিলো আর সেখানে সব দোষ তার?
সমাজ থেকে ভিক্টিম ব্লেমিং জিনিসটা বোধহয় আর কোনওদিন যাবেনা!
শাহরিন গোসল করে বিছানায় শুয়ে রইলো। রাগে তার শরীর কিড়মিড় করছে,
হাত কামড়াচ্ছে সেই এএসপি তুর্জয় হোসাইন কে পিটানোর জন্য।
আজ পর্যন্ত একটা পুলিশও সে দেখলোনা ভালো চরিত্রের....
কেউ সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্ত্ব্ব্বেও বাহিরে পরনারীদের সাথে নোংরামি করে, কেউ লোক ঠকিয়ে খায়
আর ঘুষ, গরীবদের হয়রানি এগুলো তো খুবই সাধারণ তাদের জন্য।
শাহরিন এখন জগন্নাথে আইন নিয়ে পড়ছে।
সে ভবিষ্যতে একজন উকিল হতে চায়, সে এত শক্ত উকিল হতে চায় যে শুধু অপরাধী
কেনও মন্ত্রী-আমলারা সহ ওপর মহলের লোকজনও যেন তার সাথে লড়তে ভয় পায়!
যদিও এটা সম্ভব কিনা এখনও সে জানেনা....তবুও সে নিজের সবটা দিয়ে দিবে নিজের
পরিচয় তৈরী করার জন্য, কারণ তার যে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অসমাপ্ত কাজ
রয়েছে যেটা মৃত্যুর আগে সমাপ্ত করতেই হবে!
শাহরিন এসব ভাবতে ভাবতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লো.....
- " কিরে বাবা তুই এখন বাসায় আসলি যে? অফিস ছুটি নাকি? "
-" না মা আসলে ভালো লাগছেনা তাই। "
-" কিরে কি হইছে তোর? শরীর খারাপ নাকি? দাঁড়া লেবুর শরবত কইরা আনি তোর জন্য। "
-" আহা মা দরকার নেই। আমি এখন গোসল করে একেবারে লাঞ্চ করবো। বাবা কোথায়? "
-" তোর বাপে...."
নাসরিন বেগম কথা শেষ করার আগেই নিজাম হোসাইন ড্রইংরুমে আসলেন,
-" কিরে তুই এসময় বাসায়? "
-" কেনও বাসায় কি আসা যাবেনা? নাকি এএসপিদের বাসায় যাওয়া রেস্ট্রিকটেড? "
নিজাম হোসাইন তুর্জয় কে খোঁচা মেরে বললেন,
-" এএসপিদের কথা জানিনা আমি বাপু। আমি পুলিশ কমিশনার শুধু এইটুকই জানি! "
-" হ্যাঁ হ্যাঁ তা তো জানবেনই আফটার অল আপনি গুলশান থানার বিখ্যাত কমিশনার বলে কথা! "
-" বিখ্যাত মানে? "
-" তাহলে কি কুখ্যাত? আপনাকে সবাই এক নামে চিনে আমাকে কি আর কেউ চিনে কমিশনার মশাই? আপনাদের এসব কমিশনারদের চিপায় আমরা সামান্য এএসপিরা বিলুপ্তপ্রায় এখন! "
-" থাক থাক অনেক বলেছিস তুই এখন মুখটা বন্ধ রাখ। তোকে যে থানায় সবাই কিভাবে সহ্য করে আমি সেটাই বুঝিনা! তোকে এএসপি কে হতে বলেছিলো রে? তুই তো ত্রাস করে বেড়াস সব জায়গায় ইনক্লুডিং ইউর গুলশান থানা। "
তুর্জয় মুখ বাঁকিয়ে কেমন একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
-" এখনই হাঁপিয়ে গেলেন নাকি কমিশনার সাহেব? "
-" তাহলে কি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবো আমি? তোর জন্য মাঝে মাঝে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি হয়, শুধুমাত্র তোর জন্য আমি উপরমহলের কথা শুনি। এসব খালি আগে সিনেমাতেই দেখতাম এখন দেখি আসলেই নিজের জীবনে এসব হচ্ছে! "
তুর্জয় তার বাবার কথা শুনে হাসলো,
-" হাহাহাহা শক্তের ভক্ত নরমের যম! আসলে কি বলেন তো কমিশনার সাহেব একটু ভুল হয়েছে এক জায়গায়। এএসপি হওয়া উচিত ছিল আপনার আর কমিশনার হওয়া উচিত ছিলো আমার তাহলে দেখতেন আসলে ত্রাস কাকে বলে! "
-" থাম থাম! যা চুপ করে মায়ের আঁচলে ঢুকে বসে থাক! "
নিজাম হোসাইনের কথা শুনে তুর্জয় ন্যাকামি করে তার মাকে জড়িয়ে ধরলে তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন,
-" তুমি আমার পোলারে কথা শোনাইতাসো কেন এমনে? আমার দশটা না পাঁচটা না একটা না মাত্র পোলাডার লগে খালি এমন করো! নিজে তো পেটে ধরোনাই তুমি কি বুঝবা এইসব! "
-" ওইযে ভাঙা রেডিও শুরু হয়েছে! আমার একমাত্র পোলা এহহহ! তোমার এ-ই একমাত্র পোলার জন্য আমার প্রেসার এখন হাই। আদর দিয়ে দিয়ে পোলা নয়তো বান্দর বানিয়েছো একদম বান্দর। "
-" আমার পোলারে কিছু কইলে কিন্তু ভালো হইবোনা বললাম! নিজের মাইয়া কই? মাইয়ারে তো নিজের পক্ষেই রাখছেন, মাইয়াডা আমার কোনও কথা শুনেনা বাপেরটা ছাড়া। "
-" ও-ই একজনই সুস্থ মানুষ আমার পরে এই পরিবারে...."
-" আপনের না অফিস আছে? মাথা না খাইয়া অফিস যান। এহহহ কমিশনার হইয়া পুরা দুনিয়া কিন্না লইছে! "
-" শুনলি তোর মায়ের কথা শুনলি? "
তুর্জয় হাসতে হাসতে বললো,
-" কমিশনার শুধু ওপর মহল কেনও? ওপর নিচ ডান বাম সব দিক থেকেই তো প্যারা খাবে হাহাহাহাহা! "
নিজাম হোসাইন গজগজ করতে করতে চলে গেলেন থানায়।
-" মা তন্বী কোথায়? "
-" ওয় তো ভার্সিটি গেছে...তুই গোসল কইরা আয় তোরে খানা দেই। আজকে তোর প্রিয় খাসির রেজালা, চিকেন তন্দুরি আর পোলাও করছি। "
মায়ের কথা শুনে তুর্জয় খুশি হয়ে রুমে গেলো।
বাথরুমে ঢুকে ঠান্ডা শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করতেই শাহরিনের মুখটি আবারও ভেসে উঠলো।
শাহরিনের কথা মনে পড়তেই তার ভালো মেজাজটা আবারও খারাপ হয়ে গেলো....
একটা মেয়ে তার পড়াশুনা, তার প্রফেশন বলতে গেলে তার পুরোটাকেই কি সহজে অপমান করে গেলো?
বিসিএস পাস করা কি মুখের কথা? অনেক ভালো ভালো পদ থাকার পরও তুর্জয় পুলিশ প্রফেশন বেছে নিয়েছে কারণ এই প্রফেশন তার খুব ভালো লাগে!
সে আস্তে আস্তে আরও ওপরে উঠতে চায়, এমনকি তার বাবার চেয়েও উপরে।
আর এক পিচ্চি মেয়ে কিনা তার বিসিএস এক্সাম কে ইনসাল্ট করলো?
সে ভেবেছিলো এসব নরমাল ব্যাপার তর্কাতর্কি করে মেয়েটা থেমে যাবে কিন্তু না,
উলটো মেয়েটা তাকে তার ফিউচার নিয়ে থ্রেটও দিয়ে গেলো!
ঠান্ডা পানির নিচে দাঁড়িয়েও রাগে তুর্জয়ের গা জ্বলে যাচ্ছে।
এই মেয়ের জায়গায় কোনও ছেলে হলে এতক্ষণে তুর্জয়ের এক থাপ্পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতো....
থাপ্পড়ের কথা মনে হতেই তার মাথায় এলো অফিসার মাহমুদের বিষয়টি।
তার গালের পাঁচ আঙুলের দাগ দেখে তুর্জয় সেই মুহুর্তেই চড়ের তীব্রতা হিসাব করে ফেলেছিলো।
তার মানে শুধু সে নয় সেই পুঁচকে মেয়ের হাতে অনেক বেশিই জোর রয়েছে!
তবে মেয়েটি মাশাল্লাহ অনেক বেশী সুন্দরী! হলুদ ফর্সা, চোখা চেহারা, চোখা নাক......
হুট করে তুর্জয় চোখ খুলে মাথা ঝাঁকালো। এসব কি উল্টাপাল্টা ভাবছে সে?
ছিঃ! কাকে না কাকে নিয়ে কিসব ভেবে চলেছে সে? এমন সুন্দরী অনেক আছে চারপাশে।
এরা যেমন সুন্দর এদের বিহেভিয়ার তেমনিই ফালতু আর সেটা সে আবারও টের পেলো আজকে।
তুর্জয় আর কিছু না ভেবে শাওয়ার নিয়ে নিচে চলে গেলো....
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com