Breaking News

বোকা ছেলে। পর্ব - ০১



বন্ধুদের কথায় ফাইনাল কোচিং করার জন্য রিক্ত ১০০০ টাকা নিয়ে কোচিং এর আঙ্কেল কে দিলো।

আঙ্কেল টাকাটা রিক্তর মুখে ছুড়ে মেরে রাগে

- এখানে কি ভিক্ষা করতে বসছি? তোর ফাইনাল কোচিং করার কোনো দরকার নেই।
তুই চলে যা। রিক্ত অবাক হয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু আঙ্কেল বলতে না দিয়ে
- তোকে ভালোভাবে বলছি তুই আর কোচিং এ আসবি না।
তোর মতো স্টুডেন্ট আমার কোচিং এ লাগবে না।
বাইর থেকে বন্ধুরা এই দৃশ্য দেখে মজা নিচ্ছে।
( চলুন ঘুরে আসি পিছন থেকে কি ঘটেছিলো..
রিক্ত হাবাগোবা নম্র ভদ্র সাধাসিধা একটা ছেলে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে।
৫ বছর আগে শহর থেকে রিক্ত রা চলে যায়। রিক্তর যখন সিক্সে ছিলো। ৫ বছর পর আবার শহরে চলে আসে। রিক্তর মা আদিতা বেগম রিক্তকে কোচিং য়ে ভর্তি করিয়ে দেয়।
পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকী নেই। হাতে গোনা ৫ মাস।
রিক্ত প্রথম দিন কোচিং এ আসলে প্রাইমারি বন্ধুদের সাথে দেখা মিলে তার।
রিক্তকে চিনতে কেউ বেশি দেরি করেনি। চুলে তেল দিয়ে বোঝায় করে আসছে।
প্রান্ত রিক্তর পাশে বসে
- তুই রিক্ত না।

- হ্যা।
প্রান্ত রিক্তর গায়ে চড় মেরে
- আরে দোস্ত কতদিন পর তুই। কই হারায় গেছিলি।
সিয়াম এসে রিক্তর পিঠে চড় বসিয়ে
- দোস্ত যে আমাদের কোচিং এ৷ কি অবস্থা
রিক্ত কিছুটা ব্যথা পেয়ে পিঠ বাকা করে
- হ্যা ভালো।
রেজা রিক্তর গালে হালকা চড় বসিয়ে
- আমাদের চিনতে পেরেছিস।
- হ্যা হ্যা পেরেছি।
ইবা রিক্তর কান ধরে টেনে
- ভূলিস নি তো আমাকে।
- না না।

এর ভেতর কোচিং এর ভাইয়া চলে আসলো। সবাই যে যার মতো বসে পড়লো।
নিলয় ইংরেজি টিচার। টেন আর ইন্টারের ইংরেজি করায়। নিলয় খুব রাগি স্বভাবের।
যে পড়া না পারবে তার কপালে দুঃখ আছে। বেতের বারি একটা ও নিচে পরবে না।
পড়ার ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয় না। নিলয় রিক্ত কে দেখে উঠে দাঁড়াতে বললো।
রিক্ত উঠে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে রইলো। নিলয় বললো
- এই ছেলে আমার দিকে তাকাও। তোমার নাম কি?
রিক্ত মাথা নিচু করে
- রিক্ত।
-তুমি আমার দিকে তাকিয়ে বলো।
প্রান্ত বললো
- ভাইয়া ওর ঘাড়ে সমস্যা মাথা উঁচু করতে পারে না।
নিলয় রাগান্বিত কন্ঠে
- তুই চুপ। অন্যের পিছনে না লেগে পড়া দেখ। না পারলে আজ কপালে আছে তোদের।
প্রান্ত চুপ হয়ে বসে পড়া দেখতে লাগলো। নিলয় রিক্তকে বললো
- নতুন তুমি।
- হ্যা।
- আমাকে চিনো
- না।
- আমি নিলয় তোমাদের ইংরেজি টিচার। ওদের থেকে নোট গুলো নিয়ে নিবা
- জ্বি স্যার।
- আমাকে স্যার বলতে হবে না। ভাইয়া বললে হবে।
রিক্ত মাথা নাড়ায়। নিলয় বললো
- সবাই রিক্তর সাথে পরিচয় হও
সিয়াম বলে উঠলো

- ভাইয়া ওর সাথে আমাদের পরিচয় সেই লাংটো কাল থেকে৷ তাই না দোস্ত৷
ক্লাসের সবাই হেসে উঠে। রিক্ত মাথা নাড়ায়। নিলয় সবাইকে ধমক দিয়ে
- যারা চিনো না তারা পরিচয় হও। আর সিয়াম তোকে না কম কথা বলতে বলছি।
সিয়াম চুপ হয়ে যায়। রিক্তর সাথে যাদের পরিচয় নেই সবার সাথে পরিচয় হয়ে নেয়।
তারপর রিক্ত বসে পড়লো। নিলয়ের কাছে একজন এসে খাতা দিয়ে গেলো।
খাতা দেখে ক্লাসের সবার গলা শুকিয়ে কাঠ প্রায়। প্রান্ত উঠে দাঁড়িয়ে
- ভাইয়া আমার এখন ছুটি লাগবে। মা কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।
- এই কথাটা আরো ৫ মিনিট আগে বললে যেতে দিতাম।
এখন খাতা দিবো তাই কেউ বাহিরে যেতে পারবে না। তাই চুপচাপ বসে থাকো।
সবাই ভয়ে চুপ হয়ে আছে। নিলয় খাতাগুলো সবাইকে দিলো। বেত নিয়ে এক এক জনের কাছে গেলো।
যারা ১০ এর কম পাইছে তাদেরকে সেই কয়টা বেতের বারি মারছে।
প্রতিটা বারির আওয়াজ খুব জোরে। রিক্ত মার দেখে কাচু মাচু হয়ে বসে।
মনের ভেতর ভয় কাজ করছে এই বুঝি ওকে মারবে।
ক্লাসের সবাই মার খেয়েছে৷ কেউ ১ টা কেউ দুটো আবার কেউ ১০ টা। বেত হাতে নিয়ে রিক্তর পাশে
- দাঁড়িয়ে পড়াশোনা ঠিক মতো করবে। আমি কেমন এদের থেকে জেনে নিবে।
রিক্ত মাথা নিচু করে
- জ্বী ভাইয়া।

- পড়া কালেক্ট করে নিবা। আর যেটা বুঝবা না তা আমাকে জিঙ্গেস করবা।
রিক্ত মাথা নাড়ায়। নিলয় চলে যায় পড়া দিয়ে।
সবাই হাত ডলতে থাকে। সবাই সবাকে দেখাচ্ছে দাগ পড়ে গেছে। বেশি ব্যথা পাইছে।
রিক্ত চেয়ে চেয়ে দেখছে। আর ঢোক গিলছে। কিছুক্ষণপর বাংলা ভাইয়া আসলো।
তাকে সবাই বাংলা ভাইয়া বলেই ডাকে। বাংলা খুব সুন্দর করে বোঝায়।
আবার সুন্দর করে নিজের জায়গা কথা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়। তাই সে আর মারে না।
রিক্ত দেখে বাংলা ভাইয়া
এই তেলে চুপচুপ করা ছেলেটা
উঠে দাঁড়াও দেখি কিসের এতো চিন্তা
লাগিয়েছো এক বোতল তেল
বিয়ে সাধি হয় না বলে, চুলে উঠে যাবে সেই ভয়ে
ক্লাসের সবাই হেসে উঠলো। রিক্ত ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। বসে আছে। বাংলা ভাইয়া বললো
- এই ছেলে আপনাকে বলছি । কষ্ট করে দাঁড়ান।
রিক্ত মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাংলা ভাইয়া বললো
- নতুন আপনি।
- হ্যা।
বাংলা ভাইয়া বললো
এই ছেলে এতো কিসের লজ্জা তোমার
মাথা নিচু করে আছো যে,
লজ্জা পেয়ো না আমরা সবাই বন্ধু যে।
চোখ তুলে দেখো বন্ধু দের মুখের হাসি
লজ্জা পেয়ে ঘোমড়া মুখে থেকো না
বন্ধুদের মাঝে।

সবাই আবার হেসে উঠলো। বাংলা ভাইয়া সবাইকে থামতে বললো।
রিক্তা মনে মনে হাসছে আর ভাবছে এই লোকটার মাথায় সমস্যা আছে।
বাংলা ভাইয়া সবাইকে পড়া দেখতে বলে৷ সবাই পড়া দেখতে ব্যস্ত।
এর ফাঁকে রিক্তর পাশে বসে রিক্তর সাথে পরিচয় হয়ে নিলো।
কিছুক্ষণ পর সবাইকে বই বন্ধ করতে বলে। একজন কে পড়া ধরলো কিন্তু পারলো না।
তখন বাংলা ভাইয়া বললো
- খুব সুন্দর করে হাসেন দেখি। দাঁত তো বেশি চকচকে পড়ার বেলা এতো অনিহা কেন আপনার।
সবাই মাথা নিচু করে ফেললো। ভাইয়া বললো
- চক চকার মতো পড়াটা ও চকচকা করেন। সাফল্য পাবেন নাই দাঁতই কেলিয়ে যেতে হবে।
বাংলা ভাইয়া চলে গেলো। আরো দুটো ক্লাস হয়ে কোচিং ছুটি হয়ে গেলো।
রিক্ত কোচিং শেষে বাসায় চলে যায়। দাঁড়ায় না কোথা ও।
পরেরদিন
কোচিং য়ে সবাই পড়া দেখিয়ে দেয়। দুদিন পর পরীক্ষা নেবে বলে। সবাই পড়া বুঝিয়ে দিয়ে চলে যায়। দেখতে দেখতে দুদিন কেটে গেলো। আজ কোচিং এ পরীক্ষা।
প্রশ্ন কাগজ সব দিলো৷ সবাই লেখা শুরু করলো। অনেকে পারছে না। সিয়াম রিক্তর পাশে বসা।
রিক্ত খাতায় লিখবে তখন সিয়াম বললো

- এখানে ভালো পারলে কিছু হবে না। তোকে কিছু লিখতে হবে না আমাকে বল আমি লিখছি।
রিক্ত মাথা নিচু করে
- আমি কিছু পারি না।
- তাহলে চুপচাপ করে বোস।
রিক্তকে লিখতে দেয় না সিয়াম। সিয়ামের থেকে প্রান্তকে দেয় প্রান্ত আবার আরেক জন কে দেয়।
এভাবে করতে করতে টাইম শেষ হয়ে যায় ।
দুদিন কোচিং বন্ধ থাকে।
দুদিন পর
রিক্ত কোচিং এ এসে জড়োসড়ো হয়ে ভয়তে বসে থাকে৷ নিলয় ক্লাসে ঢুকলে
রিক্তর হাত পা কাঁপা শুরু করে দেয়। প্রথম খাতা রিক্তকে দেয়।
রিক্ত চোখ বুঝে হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে কাপতে থাকে
( waiting for next part......)

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com