Breaking News

বিরহ মিছিল । পর্ব - ১৬



দমকা হাওয়ার মধ্যেই ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফোঁটা মুগ্ধতার মুখবিবরে অস্তিত্ব দিচ্ছে৷ বৃষ্টির পানিতে আদিলের পরণের আসমানী রঙা শার্ট পিঠে লেপ্টে গেছে। আদিল বিরক্ত মুখে আওড়াল,

"বৃষ্টি আসার সময় পেল না।"
মুগ্ধতার মুখশ্রী উজ্জ্বল। ছিটেফোঁটা বিরক্ত তার বদন স্পর্শ করেনি। গুড়গুড় আওয়াজ হচ্ছে অম্বরে। মুগ্ধতা বলল,
" বৃষ্টি তীব্র হচ্ছে আদিল। এখানে দাঁড়ানো ঠিক হবে না। চলো যাই।"
"চলো মুগ্ধ।"
বৃষ্টি ক্রমশ বাড়ছে। আকাশের অবস্থা ভালো না৷ চারদিক অন্ধকার নেমে এসেছে। যেন এখন রাত!
আদিল মুগ্ধতা এক সঙ্গে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে ফুট পার্কে ঢুকলো দুজন।

জরুরি তলব এসেছে আদিলের বোডবাজার যাওয়ার জন্য। দু-দিনের জন্য আদিল আজ বোডবাজারে যাচ্ছে। পারভিন ছেলেকে এগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত এলেন। চোখে জলে কপোল ভিজে। আদিল চোখের জল মুছিয়ে দিলো। বলল,
" জলদি ফিরবো মাম। প্লিজ কেঁদো না।"
প্রতিত্তোরে পারভিন ছেলের ললাটে ওষ্ঠ ছোঁয়ালেন।
বারান্দায় আমেনা দাঁড়িয়ে নিচে পারভিনের কার্যক্রম সচক্ষে পর্যবেক্ষণ করলেন। ঠোঁটে তার ক্রুর হাসি বিদ্যমান।

মুগ্ধতা সকাল নয়টায় ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে ছুটছে জেঠিমার বাড়িতে। কালকে রাতে আদিলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। সে জানিয়েছে কাল বোডবাজারে যাবে দুদিনের জন্য। হয়তো এতক্ষণে বন্দবস্ত হয়ে গেছে আদিলের যাওয়ার।
সদর দরজা খোলা থাকায় জেঠিমার বাড়িতে মুগ্ধতার ঢুকতে অসুবিধা হলো না।
জেঠিমা মনমরা হয়ে খাওয়ার টেবিলে বসে আছেন। মুগ্ধতা ঠাউর করতে পারলো আদিল বোডবাজার যাবে বলে মন খারাপ। মুগ্ধতা চেয়ার টেনে টেবিলে বসলো। সে যে ব্যাপার টা সম্পর্কে অবগত বুঝতে না দিয়ে বলল,
" কি হয়েছে জেঠিমা, মন খারাপ কেন?"
জেঠিমার দীর্ঘ শ্বাস কানে পৌঁছালো মুগ্ধতার।
" আমি খুব স্বার্থপর তাই না রে মুগ্ধ? "

হাহাকার পারভিনের কন্ঠে। দুই চোখের পাতায় নোনাজলে থইথই করছে। চোখ মুদে ঘনঘন নিঃশ্বাস নির্গত করছেন পারভিন। মুগ্ধতার প্রশ্ন উদয় হয়, "জেঠিমা কি কাঁদছে?"
মুগ্ধতার বক্ষ ছলাৎ করে উঠলো। জেঠিমার হাত শক্ত করে মুগ্ধতা ধরলো। চটপটে কন্ঠে বলল,
" তোমার কি হয়েছে জেঠিমা? তুমি এই ভাবে কথা বলছো কেন?"
পারভিনের চিবুক বক্ষের মধ্য ভাগে এসে ঠেকেছে৷ তিনি নত মাথা উঁচু করে মু্গ্ধতার দিকে চাইলেন। সজল নেত্র পারভিনের। মুগ্ধতা স্তব্ধ।জেঠিমার হঠাৎ হলো টা কি!
পারভিন ছোট বাচ্চাদের মতো ভেজা কন্ঠে শুধালেন,
" আদিলের ঐ বাড়িতে যাওয়া আমি একদম মানতে পারি না রে মুগ্ধ। মনে হয় আদিলকে ছিনিয়ে নিবে ওরা৷"
ওরা বলতে কাকে বুঝিয়েছে বুঝতে বেগ পোহাতে হলো না। মুগ্ধতা চঞ্চল হাতে জেঠিমার চোখের জল মুছে দিলো। হাসার চেষ্টা করে বলল,
" আমরা আছি না? তোমার থেকে আদিলকে কেউ কেঁড়ে নিবে না। কান্না থামাও জেঠিমা। আদিল কিন্তু বাসায় তোমাকে এভাবে দেখলে খুব রাগ করবে।"
পারভিনের কান্না বেড়ে গেল। ভেজা গলায় আওড়ালেন,
" আদিল সকালেই বোডবাজার চলে গেছে। এখানে আদিল থাকলে তো জানবে।"
মুগ্ধতার বক্ষে বেদনার ঝড় বয়ে গেল। খারাপ লাগা কাজ করলো। আদিল চলে গেছে। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেই!
.
দ্বিপ্রহর গড়িয়ে অপরাহ্নের মধ্য লগ্ন। রবির উত্তাপ খুবই কম ধরণীতে। নিজের রুমে মুগ্ধতা ঘুমাচ্ছে। দুপুরে গোসল সেড়ে না খেয়ে ঘুমিয়েছে।
ফুরফুরে মনে আমেনা মেয়ের ঘরে ঢুকলেন। হাসির ঝিলিক ওষ্ঠে। আমেনা আদুরে ভঙ্গিতে মেয়ে কে হাঁকলেন,
"সন্ধ্যা হতে চললো। মুগ্ধ মা আর কতক্ষণ ঘুমাবি?"
আমেনার কথার আঁচে মুগ্ধ সামান্য লড়ল শুধু। আমেনার বদনে হাসি অক্ষুন্ন রইলো। তিনি মেয়ের মাথার কাছে বসে, হাত বুলিয়ে আহ্লাদী কন্ঠে হাঁকলেন,
" মুগ্ধ মা।"
মুগ্ধতার ভ্রু কুঁচকে পিটপিট করে চোখের পাতা খুললো। ঘুমঘুম চোখে মুগ্ধতা অলস ভঙ্গিতে শোয়া থেকে উঠে বসলো। আমেনা শুধালেন,
" জলদি ফ্রেশ হয়ে আয়।"
"কেন আম্মু?"
ঘুমঘুম কন্ঠে মুগ্ধতা প্রশ্ন করলো। আমেনা বিরক্ত মুখ না করে আদুরে কন্ঠে আওড়ালেন,
" আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।"

মুগ্ধতা শুধু মাথা দুলিয়ে শায় দিলো। মাথা এখন অচল লাগছে। বেশি মাথা না ঘামিয়ে
বিছানা থেকে নেমে তার ঘর সংলগ্ন ওয়াশরুমে গেল। আমেনা মুগ্ধতার বারান্দা থেকে তোয়ালে এনে বিছানায় বসে মেয়ের অপেক্ষারত। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মুগ্ধতা এলো। চোখমুখে পানি৷ মুগ্ধতা বারান্দার দিকে এগুতে নিলে আমেনা আওড়ালেন,
" আমি তোয়ালে নিয়ে এসেছি। এদিকে আয়।"
মুগ্ধতার ভ্রু কুঁচকে গেল। এতক্ষণে অভ্যন্তরে লুকায়িত টলমল প্রশ্ন করেই ফেললো,
" তোমার হঠাৎ কি হলো আম্মু?"
মুগ্ধতা এগিয়ে এলো বিছানায় তোয়ালে নিতে৷ আমেনা তোয়ালে না দিয়ে নিজ হাতে মেয়ের মুখ মুছিয়ে শুধালেন,
" কি হবে! কিছুই না।"
"আচ্ছা।"
বলেই মুগ্ধতা পিছনে বালিশ রেখে হেলান দিলো। আমেনা ধমকানোর মত করে বললেন,
" আবার ঘুমানোর প্রস্তুতি। চল আমার সঙ্গে।"
মুগ্ধতা কে এক প্রকার টেনে-হিঁচড়ে বিছানা থেকে নামালেন আমেনা। মুগ্ধতা ব্যথাতুর দৃষ্টি মায়ের উপর রাখলো।
" ব্যথা পাচ্ছি। এমন করে টানছো কেন?"
আমেনা প্রতুত্তরে কিছু না বলে মেয়েকে আপাদমস্তক দেখে নিলেন। গায়ে মুগ্ধতার মিষ্টি রঙের ফতুয়া,হাঁটু অবধি। পায়জামা খয়েরী রঙের। দেখতে খারাপ লাগছে না। চিকনচাকন শরীরে বেশ মানানসই। মেয়ে তার এই সবে অভ্যস্ত। বিধায় এইভাবে লিভিং রুমে নিবে বলে ভাবলেন।
বালিশের কিনারে রাখা মুগ্ধতার জর্জেট খয়েরী ওড়না আমেনা এনে মুগ্ধতার শরীরে জড়িয়ে দিলেন। সামনে দু কদম এগিয়ে বললেন,
" চল আমার সঙ্গে।"
মুগ্ধতার মুখে বিরক্ত ছুঁইছুঁই। চোখ মুখে অসহায়ত্ব ও ধরা দিলো। মায়ের হঠাৎ হলো কি।
প্রশ্ন টা বেশিক্ষণ মনে ঘুরপাক খেতে পারলো না।
লিভিং রুমে যেতেই সকল কিছু খোলাসা হলো।
মুগ্ধতার মাথা ভনভন করে উঠলো। চোখ জোড়া অশ্রুসিক্ত! মুগ্ধতা লিভিং রুমে স্থির চোখে তাকিয়ে অস্পষ্ট কন্ঠে বলল, " এটা তুমি করতে পারো না আম্মু। এটা অন্যায়।"

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com