Breaking News

হাজতবাস । পর্ব - ০৪



কি হলো ভাইয়া রেডি তুই?

-" এইতো দাঁড়া এক মিনিট। "
-" তুই এত টাইম লাগাস মেয়েদের মতো! "
-" কি বললি তুই? নিজে তো সেজেছিস একদম ভুতনীদের রাজ্যের রাণীর মতো। "
-" তুই কি যাবি আমাকে নিয়ে? "
-" এইযে চল। "
তুর্জয় তন্বী কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তন্বী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। আজ তাদের ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। তুর্জয় তন্বীকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে গেলেই একটি খুবই মোহময় কন্ঠে আটকে গেলো,
" ওরা মনের গোপন চেনে না,
ওরা হৃদয়ের রঙ জানে না....
প্রজাপতি ডানা ছুঁলো বিবাহ বাসরে,
কেনও সারারাত জেগে বাড়ি ফিরি ভোরে....
ওরা মনের গোপন চেনে না,
ওরা হৃদয়ের রঙ জানে না...."
তুর্জয় চোখ বন্ধ করে আবারও শুনতে লাগলো,
" তুমি চিরদিন....ভীষণ কঠিন,
তোমার ঘর ভেসে যায় ওরা
ওরা মুখ দেখে বুঝতে পারে না.....
তুমি চিরদিন....ভীষণ কঠিন,
তোমার ঘর ভেসে যায় ওরা
ওরা মুখ দেখে বুঝতে পারে না.....
ওরা এমন কেনও বোঝে না,
ওরা আসল কারণ খোঁজে না...."
চোখ বন্ধ করে শুনতে শুনতে কখন যে গানটি শেষ হয়ে গিয়েছে তুর্জয় বুঝতেই পারেনি। এত সুন্দর করে গান করছে কে? কি সুন্দর সুর! তুর্জয় মুচকি হাসলো, সে বোধহয় এই কন্ঠের প্রেমে পড়ে গেলো! আচ্ছা যে এত সুন্দর করে গায় সে দেখতেও নিশ্চয়ই তার সুরের মতই সুন্দর হবে? তুর্জয়ের মুখ থেকে হাসি আর সরলো না। সে গাড়িতে এই গানটি বাজিয়ে চললো কাজের দিকে......
.
-" মাইয়ার যে বিয়ার বয়স হইয়া গেছে সেই খেয়াল আছেনি ? "
-" কি বলো? এখনই বিয়ে? "
-" তাইলে আর কবে? জোয়ান থাকতে থাকতে বিয়া দেওন ভালো বুড়া হইলে কি লাইফ ইঞ্জয় করবো? "
-" তা ঠিক বলেছো। শাহরিনের কোনও পছন্দ আছে নাকি? "
-" আপনের যে মাইয়া কোনও পোলারে তার পছন্দ হইবো? আর কোনও পোলা কি সাইধা সাইধা আপনের এই বদরাগী মাইয়ারে নিবো? "
-" আমার মেয়ে একটু রাগী ঠিকই কিন্তু ওর ভিতরটা অনেক নরম। "
-" হইছে হইছে থামেন। মাইয়া তো আপনের নেওটা...ওরে জিগাইবেন ওর কোনও পছন্দ আছেনি নাইলে আমরা পোলা দেহা শুরু করি। "
-" ঠিক আছে বাসায় আসুক আমি ওকে জিজ্ঞাসা করবো।"
কথাটি বলে মাসুদ সাহেব গভীর এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে থামলেন। আবারও বললেন,
-" এক মেয়ে হারিয়েছি এখন আরেকটা কেও হারাতে হবে!"
-" এইডা আপনে কি কন? আমগো বড়ো মাইয়া যেখানে আছে ভালা আছে...আল্লাহ জান্নাতবাসী করছে। মার দোয়া কি ফিরত যায় কন? না ফিরত যায় না! আল্লাহ ওরে যেখানে রাখুক ভালা রাখুক....
আর শাহরিন রে আমরা ভালা দেইখাই বিয়া দিম। দেখবেন ওয় অনেক সুখে থাকবো! একজন তো মইরাই গেছে....এহন মরার আগে আরেকজন রে সুখে দেইখা গেলে শান্তিতে মরতে পারুম। "
-"ঠিক বলেছো। দেখি ওর সাথে কথা বলে আর তুমিও ভালো ছেলের খোঁজ করা শুরু করো। "
-" বীণা আফার পোলা রে আমার অনেক ভালা লাগে। পোলা দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। "
-" বীণা আপার ছেলে আবির? "
-" হ। আর আপনে তো ওরে সেই ছোটো থিকা দেখতাছেন...ওগো টাকা পয়সা আল্লাহ দিলে অনেক ভালা আছে আর পোলাও অনেক শিক্ষিত এহন।"
-" দেখো তোমার মেয়ে পছন্দ করে নাকি। "
-" ওরে তো বলছিলাম আবিরের কথা হাজারবার। ওর নাকি ওই পোলারে ভাল্লাগেনা! মাইয়ারে বুঝান এহনও সময় আছে লাস্টে দেখবেন আর বিয়া দিতে পারবেন না....পোলাই খুইজ্জা পাইবেন না! "
-" আরে এভাবে বলো না তো। দেখি কি হয়! "
.
" তুমি চিরদিন....ভীষণ কঠিন,
তোমার ঘর ভেসে যায় ওরা
ওরা মুখ দেখে বুঝতে পারে না.....
তুমি চিরদিন....ভীষণ কঠিন,
তোমার ঘর ভেসে যায় ওরা
ওরা মুখ দেখে বুঝতে পারে না.....
ওরা এমন কেনও বোঝে না,
ওরা আসল কারণ খোঁজে না...."
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে তুর্জয়, তার মস্তিষ্কে বার বার সেই কন্ঠে গাওয়া গানের লাইনগুলো আঘাত করছে! আচ্ছা তন্বী কে কি একবার জিজ্ঞাসা করবে এই ব্যাপারে? না থাক নাহলে তন্বী আবার পরে মজা নিবে! সে কাকে জিজ্ঞাসা করবে? কিভাবে জানবে সেই গানটি কে গেয়েছে? একবার যদি তাকে দেখতে পেতো ইশশশ! একবার সেই কন্ঠের মালিকের দেখা পেলে তুর্জয় তাকে নিজের করে নিতো যেভাবেই হোক....তারপর তার সামনে তাকে বসিয়ে সারাদিন সেই কন্ঠে এই গানটি শুনতো!
সে কি না দেখেই ভালোবেসে ফেললো তাহলে? না দেখেই সেই কন্ঠের প্রেমে পড়ে গেলো? উফফফফ আর কিছুই ভাবতে পারছে না সে! সে জানে সেই কন্ঠের মালিক কে সে আর কখনও খুঁজে পাবেনা, খুঁজে পাওয়ার কথা ও না আসলে! কিন্তু সবসময় তার মনে সেই মানবী থাকবে এখন থেকে....এই গানের মধ্য দিয়েই!
কিন্তু তার মা যে তার বিয়ের কথা বলছে? কি যে জ্বালা! সে কি আর সেই মানবী কে পাবে নিজের কাছে? না পাবেনা! এমন কাউকে ভালো লেগে গেলো তার যাকে কখনও সে দেখেনি, না পাবে তাকে কখনও খুঁজে! কেনও এমন হলো? তুর্জয় কখনও কাউকে এই ব্যাপারটি শেয়ার করতে পারবেনা....না পারবে সহ্য করতে!
.
-" মানে আমাকে না বলেই বিয়ে ঠিক করে ফেললে তোমরা? ওয়াও! "
-" তোকে কে বলেছে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে? এখনও তো কোনও ছেলে খোঁজা হয়নি। "
-" যেই লাউ সেই কদু! "
-" তোর তো কোনও পছন্দ নেই তাহলে কীসের এত সমস্যা তোর? "
-" আব্বু আমি কি বলেছি আমার কোনও সমস্যা আছে? "
-" তাহলে? "
-" না আমার ভালো লাগেনা আবির কে প্লিজ! "
-" আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তুই বল তোর কেমন ছেলে পছন্দ? আবিরের মত এত ভালো, ভদ্র শান্ত ছেলেকেও তোর পছন্দ হয়না! "
-" আমি জানিনা বাবা! আমি এখন ঘুমাবো! "
-" ওকে আমি এখন চলে যাচ্ছি তোকে এক সপ্তাহ সময় দিচ্ছি তুই আমাকে জানাবি ব্যস! "
-" বললেই হয় তোমরা আমার দায়িত্ব নিতে পারছো না আর! "
-" তোর সব লজিক সবসময় খাটবে না সেটা তুই নিজেও জানিস! যা বলেছি সেটাই যেনও হয়। "
-" কিন্তু আমার স্টাডি? আমার জব? "
-" সে তুই বিয়ের পর ও করতে পারবি। "
-" যদি ওরা এলাউ না করে তখন? "
মাসুদ সাহেব হাসলেন,
-" আমি জানি তুই কিভাবে নিজের অধিকার আদায় করে নিস! "
-" উফফফ তাও আমি প্রিপেয়ার না মেন্টালি প্লিজ! "
-" শোন মন মতো কাউকে পেলে সব ভুলে যাবি তুই, খুশি থাকবি তুই! বিয়ে করবি হাজব্যান্ড কে জ্বালাবি ইচ্ছা মতো, দৌড়ের ওপর রাখবি যেভাবে আমাদের জ্বালিয়েছিস দৌড়ের ওপর রেখেছিস। "
-" কিহহহহ! "
-" তোকে থানা থেকে ছুটিয়ে আনতে হয়েছে আমার ভুলে গেছিস তুই? "
-" এগেইন ভিক্টিম ব্লেমিং উফফফফ! "
-" তবে জানিস কোনও পুলিশ তোর হাজব্যান্ড হলে ভালোই হবে বল? বেচারা বাইরে ক্রিমিনালদের জ্বালায় থাকবে আর বাসায় থাকবে তোর জ্বালায় হাহাহাহাহা! "
-" সিরিয়াসলি? "
-" আমাকে জানাবি তোর কেমন ছেলে পছন্দ হয়। দরকার হলে পাতাল খুঁড়ে সেই ছেলে ধরে আনবো। "
-" আমি যেমন চাই তেমন ছেলে আল্লাহ এখনও পাঠায়নি আব্বু। "
-" পাঠিয়েছে! তিনি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন আমাদের। আমি এখন যাচ্ছি ঠিক এক সপ্তাহ পর তোর সাথে আবার এসব নিয়ে কথা হবে। "

শাহরিন রুম একদম অন্ধকার করে শুয়ে পড়লো।
তার আব্বু আম্মুকে কে বুঝাবে সে কেমন ছেলে চায়?
সে চায় তার মত ত্যাড়া, রাগীর সাথে কেউ নরম হয়ে তাকে ভালোবেসে ভরিয়ে দিক!
তার মুড সুইংস, এংজাইটি কেউ ভালোবেসে হ্যান্ডেল করুক,
সে কখন কি চায় সেই মানব চট করে বুঝে নিক! সে কখন আদর চায়,
আদরের বদলে সে কখন শক্ত বাহুর আলিঙ্গন চায় তার মানুষটি বুঝে নিক!
তার যে ইনসমোনিয়া রয়েছে সে মানুষটি যেন সেটা বুঝে প্রতি রাতে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিক!

কিন্তু না এমন সম্ভব না কারণ এমন ছেলে নেই। আর থাকলেও তা হয়তো শাহরিনের হাতের বাইরে....আর দরকার কি এসবের? বিয়ে,সংসার অসহ্য এসব এখন! সে চায় মানসিক শান্তি.....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com