Breaking News

এক মুঠো রোদ । পর্ব - ১১

চাঁদ দুইটা কই পেলেন?

--একটা ওই যে ওপরে।
--আরেকটা কই গেলো?
--যায়নি তো, আমি তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি।
--ইসসসসসস.
--ইসসস কি? আমি কি মিথ্যা বলছি?
--তো?
--ওই আকাশের চাঁদটাকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে। ওখানে কি করো, নিচে এসে দেখো আমার চাঁদটা কত সুন্দর।
--আমায় এত লজ্জা কেনো দিচ্ছেন?
--লজ্জা দিচ্ছি কই?
--আমার যে লজ্জা লাগছে।
--পাগলি একটা..। আচ্ছা বিয়ের পর রোজ এভাবে ছাদে এসে তোমার কোলে মাথা রেখে চাঁদ দেখার সুযোগ দিবে?

--আমি কি মানা করছি? আমারও খুব সখ আপনার সাথে এভাবে সময় কাটানোর।
--আচ্ছা তোমার আর কি কি সখ বা ইচ্ছা আছে?
--তা তো জানি না। তবে একটা ইচ্ছা আছে।
--শুনি তো।
--আপনার ওপর অধিকার খাটাতে দিবেন?
--ওমা, এটা বলার কি আছে।
--আমি কিন্তু খুব ভালোবাসবো।
--সেটাই তো চাই।
--আমায় বাসবেন না?
--আমি তো তোমায় এমনিতেই খুব ভালোবাসি।
--তাই বুঝি?
--হুম

--ভাবিইইই,,,,, ও ভাবি। কই তুমি?
পেছন থেকে রিয়ার আওয়াজ শুনে মামুন লাফ দিয়ে মিষ্টির কোল থেকে মাথা তুলে নেয়।
--এখানে কি করছো এত রাতে?(রিয়া)
--হাতের কাছে একটা ঝাড়ু থাকলে নিয়ে আয়।(মামুন)
--কেনো?
--তোকে কিছুক্ষণ পিটাইতাম।
--কেনো?
--দেখতেছিস ভাই আর ভাবি এখানে বসে আছে। কেনো এলি?
--আমি এক্ষুণি আম্মুকে ডাকতে গেলাম।
--এই না না, বনু আমার। আমিতো মজা করছিলাম।
--মিষ্টি চলো তো, অনেক রাত হয়েছে।
--তুই যা না। একটু পরই সে আসবে।
--চুপ থাক, বিয়ের আগেই এই অবস্থা। বিয়ের পরতো মনে হয় আমাদেরই ভুলে যাবি।
--কি বলে মেয়েটা। ভুলবো কেনো?
--আচ্ছা বাদ দিন না, আসলেই অনেক রাত হয়েছে। আমি যাই, সকালে তো তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।(মিষ্টি)
--চলে যাবে?
--হুম।
--আচ্ছা যাও।

--বাবারে... তোদের ঢং দেখে বাঁচি না। চলো তো ভাবি.....।
রিয়া মিষ্টির হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে যায়।
রাতের প্রায় অর্ধেকটা সময় পার হয়ে গেছে।
মিষ্টি বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে, আজ তার কিছুতেই ঘুম আসছে না।
প্রায় মাঝরাতে বিছানা ছেড়ে মিষ্টি বারান্দায় এসে দাড়ায়।
গত ৬ মাস ধরে তার সাথে কত কিছু ঘটে গেলো। কত কিছু হারিয়েছে, নতুন করে পেয়েছে। জীবনের এপারওপার পুরো বদলে গেছে।
একটা সময় এই বাড়ির আশ্রিতা হয়ে ছিলো সে, কিন্তু কালই সেই নাম পরিবর্তন হয়ে এইবাড়ি বউ হবে মিষ্টি। নিজের একটা ঘর হবে, নিজের একটা মানুষ হবে।
পেছন থেকে রিয়া এসে মিষ্টির কাঁধে হাত রেখে বলে ওঠে।
--কিগো ভাবি, আজ বুঝি ঘুম আসছে না?
--তুমি উঠে গেলে যে?
--আমারো ঘুম আসছিলো না। তাই তোমার কাছে এলাম। তুমি এখানে কি করছো?
--এমনিই চাঁদটা দেখতে এলাম।
--ওও, কাল থেকে তো চাঁদ দেখার জন্য তোমার পাশে আরেকজন থাকবে, তখন মন ভরে দেখিও। এখন চলো, অনেক রাত হয়েছে।
--আচ্ছা চলো।

বিয়ের আর মাত্র একদিন বাকি। বাড়িতে বড় ধরনের কোনো অনুষ্ঠানও হচ্ছে না। শুধু কিছু পরিচিত মুখ আর বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজি সাহেবকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
বাড়ি ভর্তি অনেক কাজ। রিয়া মায়ের সাথে বিয়ের যাবতীয় কাজগুলো সামলাচ্ছে।
মামুন মিষ্টির কাছে এসে দেখে মিষ্টি হাত দুটো সামনের দিকে বাড়িয়ে বিছানায় বসে আছে।
বিষয়টা ভালো করে বুঝার জন্য মামুন মিষ্টির সামনে এসে দাড়ায়।
ফর্সা হাতদুটোতে কত সুন্দর করে মেহেদী লাগানো আছে। সাথে হাতের তালুর মাঝখানে (M+M) লিখা।
--ওয়াও, কে লাগিয়ে দিলো?
--রিয়া।
--রিয়া পারে?
--হুম
--আমাকে তো লাগিয়ে দিলো না।
--আমি দিবো তো।
--তুমিও পারো?
--একটু একটু।

--M+M তে কি হয়?
--মিষ্টি + মামুন হয়।
--আচ্ছা, আমিতো ভাবলাম এটাও হয়তো ডিজাইন।
--মিথ্যা কেনো বলেন? আপনি কি এতোই বোকা?
--আমি কি চালাক?
--হুম।
--আচ্ছা? জানতাম নাতো।
--একটু সাহায্য করুন না।
--কি?
--নাকের মধ্যে বিড়বিড় করতেছে। একটু চুলকিয়ে দিন না।
--শুধু নাক?
--হুম।
--দিলাম.... আর কোথাও চুলকায় না?
--আপাতত না।
মুখের সামনে উড়ে আসা চুলগুলো ধীরে হাতে কানের পাশে গুজে দিয়ে মিষ্টির দুবাহু ধরে এক ঝাটকায় কাছে নিয়ে আসে।

দুহাতে মেহেদী লাগানো থাকায় হাত দিয়ে কিছুতে সাপোর্ট দিতে না পারায় সোজা মামুনের বুকে গিয়ে পড়ে।
মামুনও দুহাতে জড়িয়ে নেয় মিষ্টিকে।
--কি করছেন? মা এসে পড়বে।
--আসবে না, মা ব্যস্ত।
--আমি কিন্তু জামায় মেহেদী লাগিয়ে দিবো, ছাড়ুন।
--লাগাও, তোমাকেই ধুতে হবে।
--সুযোগ নিচ্ছেন?
--হুম।
--গালে লাগিয়ে দিবো।
--লাগাও, ভয় পাই নাকি?
--এত ভালোবাসা উতলে পড়ছে কেনো? দেখবো বিয়ের পর এই ভালোবাসা কই যায়।
--তখনতো ভালোবাসা আরো বাড়বে। সহ্যই করতে পারবে না।
--বাব্বাহ, এতো ভালোবাসবেন?
--হুম।
--সত্যি?
--মিথ্যে মনে হয়?
--নাতো, আমি কি তা বলছি?

--তোমাকে দেখলেই শুধু আদর করতে ইচ্ছে। এত্ত মিষ্টি কেনো তুমি?
--যাহ, ছাড়ুন।
--একটু আদর করি না!
--ইসসসসস, ছাড়ুন বলছি।
--তোমার নামটা যে রেখেছে, তাকে সামনে পেলে একটা ধন্যবাদ দিতাম।
--আমার বাবা রেখেছিলো।
--শশুড় মশাই, আপনাকে ধন্যবাদ।(চিৎকার করে)
--এই পাগল হলেন নাকি? মা শুনলে কি বলবে?
--মা জানে তার ছেলে একটু পাগল টাইপের। তুমিও জেনে নাও।
--আসলেই পাগল।
--হুম, এবার আরো পাগল হয়ে যাবে।
--আর পাগল হওয়া লাগবে না। এমনিতেই যতটুকু পাগল আছেন ততটুকু সামলাতে পারছি না।
--চেষ্টা করো। পারবে....
--সেটাই তো করতেছি।
--তোমার মেহেদী তো শুকিয়ে গেলো, এবার আমায় লাগিয়ে দাও না।
--আচ্ছা, ছাড়ুন। আপনি বসুন আমি হাত ধুয়ে আসি।
--আচ্ছা যাও।
--
--কি হলো যাও।
--আপনার হাত কোথায়?
--ওহ সরি সরি।
--শয়তান একটা।

আজ মিষ্টির বিয়ে। মামুনের স্ত্রী হয়ে রুমে বিছানার এক কোনায় লম্বা একটা ঘোমটা দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সে। আনমনেই ভাবতে শুরু করে।
জীবনে অপূর্ন স্বপ্ন হিসেবে যা ভেবেছিলাম, তা আর পূর্ন হতে চলেছে। সত্যিই আমি এক মুঠো রোদ এর দেখা পেয়েছি। কখনো ভাবিনি আমার বিয়ে হবে, একটা সংসার হবে, একটা পরিবার হবে। সে আমায় এতটা ভালোবাসে যে মাঝেমাঝে কান্না চলে আসে। সত্যিই কি আমি এই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?
ছোটবেলায় বাবা বলতো, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
সত্যিই আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

কোথায় যেতাম আমি, কোথায় আশ্রয় হতো আমার, কি খেতাম আমি? কিন্তু আল্লাহ আমায় এমন মানুষের কাছে পাঠিয়েছে যেখানে থেকে আমার নতুন করে কিছু চাওয়ার নেই। সবই পেয়ে গেছি আমি। এখন শুধু ভয় আছে, হারানোর। কিন্তু আমি কিছুই আর হারাতে দিবো না। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমার স্বামী, সংসার, পরিবার আগলে রাখবো। সত্যিই আজ নিজের প্রতি নিজের হিংসে হচ্ছে। না চাইতেও কত কিছু পেয়ে গেছি। আর অনেকে চেয়েও পায় না।

মিষ্টির কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মামুন রুমে প্রবেশ করে। সাথে সানু বেগম আর রিয়াও আছে।
মিষ্টি বিছানা থেকে নেমে এসে প্রথমে সানু বেগম এবং পরে মামুনকে সালাম করে।
মিষ্টির হাত ধরে টেনে নিয়ে মিষ্টিকে বিছানায় বসায় সানু বেগম।
--সব শাশুড়ির মতো আজ আমার নতুন করে কিছুই বলার নেই। এমনিতেই পুরো সংসারটা তোমার হাতে। তবে হ্যা, নতুন করে কিছু দিতে এসেছি। এই নাও।
--এটা কি মা?
--আমার বিয়ের গহনা। তোমার শশুড় এগুলো আমাকে বিয়ের পরে গিফট করেছিলো। আমার গহনা পড়ার সখ নেই। তাই ভবিষ্যৎতের জন্য তুলে রেখেছিলাম। আমার পক্ষ থেকে এগুলো তোমার উপহার।
--কিভাবে পড়বো? আমিতো কখনো পড়িনি।
--পাগলি মেয়ে, আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।

সানু বেগম অতি যত্ন করে মিষ্টিকে গয়না পড়িয়ে দিচ্ছে। মিষ্টিও মায়াভরা চোখে শাশুড়ির দিকে চেয়ে আছে।
--মা, শুধু মিষ্টির জন্য? আমার জন্য কিছু নেই?
--গয়না পড়বি?
--ধুর, বাবার কিছু নেই আমার জন্য?
--একটা লুঙ্গী আছে।
--আর কিছু নেই?
--সেন্ডেল আছে একজোড়া।
--মিষ্টির বেলায় গহনা, আর আমার বেলায় সেন্ডেল?
--তোকে যা দিলাম তা কি কম দামি?
--কি দিয়েছো?
--মিষ্টিকে।
--এটা ঠিক বলেছো মা। খুব দামি জিনিস পেয়েছি আমি।
--হুম...। তো তোরা থাক, আমি গেলাম।
--আচ্ছা।

মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সানু বেগম বেরিয়ে পড়ে। রিয়া এসে মিষ্টির পাশে বসে।
--কিরে? তোকে বের হওয়ার জন্য কি এপ্লিকেশন পাঠাতে হবে? সব জায়গায় কাবাবের হাড্ডির মতো ডিস্টার্ব করিস কেনো?
--চুপ করতো। তোর জন্য আমি একা হয়ে গেলাম। মিষ্টি আর আমার সাথে ঘুমাবে না। কত কষ্ট হবে আমার।
--বাবারে, এতো ইমোশনাল হইয়েন না আপু, আপনাকেও খুব তাড়াতাড়ি বিদায় করা হবে এই বাড়ি থেকে। তখন আর একা ঘুমানো লাগবে না। আপাতত এখন আমাদের ডিস্টার্ব করিয়েন না, রুমে চলে যান।
--ভাবি, আমার একটা কথা রাখবে?
--কি?

--এই শয়তানটাকে সারাক্ষণ মাইরের ওপর রাখতে পারবে?
--সে কি তোর মতো? আমার তো আফসোস হয় তার জন্য, যে তোর জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করবে। আমার কপাল ভালো আমি মিষ্টি পেয়েছি।
--তোর সাথে আমি আর কথা ই বলবো না। গেলাম আমি।
--যা যা।
--All The Best ভাবি। শুভ রাত্রি।

রিয়া রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই মামুন দরজা লাগিয়ে দেয়।
মিষ্টির পাশে এসে বসতেই মিষ্টি বলে ওঠে।
--আপনি সবসময় রিয়ার সাথে এমন ঝগড়া করেন কেনো?
--ঝগড়া করি কই? রিয়া আমার কলিজা। আর আমিও রিয়ার কলিজা। শুধু বলে প্রকাশ করাই ভালোবাসা না। তোমার জন্য কি করতে পারবো তা আমি জানি না, কিন্তু আমার বোনের জন্য আমি জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি। সেই ছোটবেলা থেকে ওকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি। ওর একমাত্র খেলার সাথি আমি, বন্ধু আমি, শত্রু আমি, সবই আমি।
--তাহলে ওকে এতো বকা দেন কেনো?
--কই বকি? আমাদের কথাই এমন।
--বাবাহ, বুঝি না।
--ওতো বুঝতেও হবে না।
--আপনি তো এখনো আমার ঘোমটাই তুললেন না।
--ঘোমটা কই?
--দিচ্ছি, আপনি আবার বাহিরে যান। আবার আসেন।
--কেনো?
--যান না। আমি ঘোমটা দিয়ে বসতেছি।
--আচ্ছা।
মিষ্টি আবার নতুন করে ঘোমটা দিয়ে বিছানার মাঝখানটায় বসে। চারদিকটা ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে। পুরো রুমটা কত সুন্দর করে সাজানো। মিষ্টি নিজের হাতেই নিজের বাসর ঘর সাজিয়েছে, সুন্দর না হয়ে উপায় আছে?

মামুনের দরজা আটকানোর শব্দে মিষ্টি ধীরেধীরে বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়।
মামুন বিছানার সামনে এসে দাড়ালে মিষ্টি এগিয়ে গিয়ে মামুনকে সালাম করে।
মিষ্টির দুবাহু ধরে বিছানায় বসানো হয়।
--আমার ঘোমটা তুলবেন না?
--না তুললে হয় না?
--আমাকে দেখবেন না?
--দেখতেই হবে?
--আপনার জন্য কত সুন্দর করে সেজেছি।
--আমার জন্য?

--তো কার জন্য সাজবো?
--দেখে নিজেকে সামলাতে পারবো তো?
--আমি কি করে বলবো?
--যদি না পারি?
--সমস্যা নেই, আজ বাঁধা দেওয়ার মতো কোনো যুক্তি আমার কাছে নেই। আমি যে পুরোপুরি ভাবে আপনার হয়ে গেছি। আর আপনি আমার।
--তাই? তুলবো?
--হুম।
মামুন ধীরেধীরে মিষ্টির ঘোমটার দিকে হাত বাড়াতে থাকে।
--১ মিনিট.
--কি হলো?
--আমার খুব লজ্জা লাগছে।
--বলেছিলাম না একদিন তোমার লজ্জা ভাঙাবো! আজ সেই দিন চলে এসেছে।
--কিসের দিন?
--আজ তোমার লজ্জা ভাঙাবো।
--কিভাবে?
--দেখবে?
--হুম।

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com