এক মুঠো রোদ । পর্ব - ০৬
মেয়েটার একটা ভবিষ্যৎ আছে, তাছাড়া সে এবাড়ির কাজের মেয়ে না।
বিপদে পড়েই মেয়েটা এখানে আছে। আর তার এই বিপদের সুযোগ নেওয়াটা অমানুষের কাজ।
এই কাজ আমি করতে পারবো না। যদি তুই রাজি থাকিস তাহলে আমাকে বল,
আমি মিষ্টিকে জানাই। আর না হয় যদি পারি মিষ্টির অনুমতি নিয়ে ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবো। এভাবে আর না।
--আমি সেটা বলিনি, এখনি কেনো বিয়ে? কিছুদিন সময় নাও না।
--সম্ভব না, প্রতিবেশীরা বাজে মন্তব্য করছে।সম্পর্কে ও তোর বোন নয়, একটা যুবতী মেয়ে সে। এভাবে ওকে ঘরে রাখা সম্ভব না।
--তাহলে এখন কি করতে হবে?
--যদি মিষ্টিকে তোর পছন্দ হয়, তাহলে এই বিষয়ে তাকে জানাতে হবে। আমি চাই সে এখানেই থাকুক, এবাড়ির বউ হয়ে।
--কিন্তু মা, তার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তার পরিবার সম্পর্কেও কিছু জানি না। কিভাবে???????
--দেখ বাবা, ৩-৪ মাস যাবত দিনের বেশিরভাগ সময় আমি মিষ্টির সাথে কাটিয়েছি। একটা মানুষকে জানতে-বুঝতে এটা কম সময় নয়। আমার ওপর ভরসা করতে পারিস।
--কি করতে হবে এখন???
--সেটা আমি দেখতেছি। কাল ওকে যা যা বলেছিস এখন তার জন্য ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।
--এখন?
--হুম, যা।
--আচ্ছা।
মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে মামুন মিষ্টির রুমের দিকে যায়। দরজাটা খোলা, মিষ্টির বিছানার এক কোনায় গুটি মেরে বসে আছে।
দরজার সামনে এসে মামুন গলার আওয়াজ দেয়,
মামুনকে দরজার সামনে দেখে মিষ্টি বিছানা থেকে উঠে দাড়ায়।
--আসবো?
--জ্বি আসুন।
ধীরে পায়ে মামুন মিষ্টির সামনে এসে নিচেই বসে পড়ে।
--আমার ওপর কি রেগে আছো?
--না।
--তাহলে আজ আমাকে ঘুম থেকে জাগাতে এলে না যে?
--সীমানা অতিক্রম করতে চাইনি।
--সরি।
--কেনো?
--মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছিলো। বলতে চাইনি এমন কথা।
--তার জন্য সরি বলতে হবে কেনো? আপনি তো ভুল কিছু বলেন নি।
--ভুলই বলেছি, আসলে তোমার বিয়ের কথা শুনে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিলো। কি বলেছি নিজেও জানি না।
--আমার বিয়ের কথা শুনে আপনার মেজাজ কেনো বিগড়ায়?
--তা জানি না।
--আর কিছু বলবেন?
--আমায় ক্ষমা করেছো?
--সত্যি বলতে আপনার ওপর আমার কোনো রাগ নেই যে ক্ষমা করতে হবে। আপনারা আমার জন্য এত করতেছেন, কি করে আমি আপনার ওপর রাগ করবো বলুন। ছোট বেলা থেকেই কারো ওপর রাগ দেখাতে পারতাম না, ওরকম কেউ আমার জীবনে ছিলোই না। তাই কারো ওপর আমার রাগ হয়না।
--আমার ওপর রাগ দেখাতে পারো।
--কেনো?
--এমনিই,
--না থাক, আমার ওই অধিকার নেই আপনার ওপর রাগ দেখানোর।
--সত্যিই আমি অনুতপ্ত, এমন একটা কথা তোমায় বলেছি যা আমার মাথায়ই ছিলো না।
--বাদ দিন না, ওসব আমি কত আগেই ভুলে গেছি ।
--তোমার মুখ দেখলে বোঝা যায়, রেগে আছো আমার ওপর।
--না আমি রেগে নেই।
--তাহলে একটু হাসো।
--কেনো হাসবো?
--বাব্বাহ, এতো রাগ। আগেতো কখনো দেখিনি।
--আমি থাকবো না আর এখানে, চলে যাবো।
--কোথায় যাবে?
--জানি না। যেদিকে দুচোখ যায়।
--তাহলে মা আমায় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।
আচ্ছা চলো আমরা একসাথে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।
--আপনি কেনো যাবেন?
--তোমার খেয়াল রাখতে।
--আমার খেয়াল আমি রাখতে পারবো।
--পারবে না। মা বলেছে তোমার খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিতে।
--সব শুধু মা বলে, নিজের থেকে কিছুই করেন না?
--করি তো।
--কি করছেন শুনি তো।
--মা বলার আগে থেকেই তোমায় পছন্দ করি।
--মিথ্যা বলবেন না।
--সত্যি বলছি।
--তাহলে কাল আমাকে এমন কেনো বকা দিলেন?
--বললাম তো তোমার বিয়ের কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।
--তাই বলে কি আমার বিয়ে হবে না?
--আমার মা সারাদিন খুব একা থাকে। তার একজন সঙ্গির খুব প্রয়োজন। তুমি চলে গেলে আমার মায়ের দেখাশোনা কে করবে? আমাকে সব কাজে সাহায্য কে করবে? পারবে রিয়াকে একা করে চলে যেতে?
--না, খুব কষ্ট হবে। এত ভালোবাসা আমি কখনো পাইনি যতটা আপনারা দিয়েছেন। আমারও তো খুব ইচ্ছে করে এইবাড়িতে সারাজীবন থেকে যেতে। আপনাদের ছেড়ে কোথাও না যেতে।
--এই বাড়ির বউ হবে?
নিচের দিক থেকে মাথা তুলে মিষ্টি মামুনের চোখের দিকে তাকায়। ওমনি মামুন চোখ নামিয়ে নেয়।
--আন্টি শিখিয়ে দিয়েছে তাই না?
--শিখিয়ে দেয় নি, আন্টি অনুমতি দিয়েছে। বাকিটা আমারই মনের কথা।
--কি এমন দেখলেন আমার মধ্যে? যে বিয়ের চিন্তা করছেন। একটা কাজের মেয়েকে বিয়ে করলে কেউ আপনাকে ভালো বলবে না।
--কাজের মেয়ে হলে কবে? আমি দেখেছি মা নিজের সন্তানদের চেয়ে তোমায় বেশি ভালোবাসে।
তোমার ব্যবহার, নমনীয়তা, সাংসারিক মনোভাব আর বিশেষ করে তোমার মায়া ভরা মুখটা,
এর চেয়ে বেশি আর কি চাইতে পারি?
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাসায় ফিরে যখন দরজায় তোমায় দেখি, মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে যায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার প্রথমে তোমার মুখটা দেখা,
খেতে বসলে পাতে খাবার বেড়ে দেওয়া, গোসল শেষে রুমে এসে নিজের জামা
চোখের সামনে রাখা, সারাক্ষণ চোখের সামনে তোমার হাসি মাখা মুখটা দেখাতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এই অল্প কিছুদিনেই তোমার প্রতি অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছি।
পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।
--বলেননি তো কখনো।
--সাহস পাইনি। তোমার বিশ্বাস ভাঙতে চাইনি। এমনিতেই পুরুষ মানুষ তুমি ঘৃণা করতে, সেই কাতারে আমি পড়তে চাইনি। তবে আজ এই সুযোগ হাতছাড়া করতে পারি নি।
--আমার ভয় করছে খুব।
--কেনো?
--জানি না, আপনি যা বলতেছেন এসব শুনে আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
--আমায় বিশ্বাস করো?
--হুম।
--তোমার হাতটা দেবে?
--কেনো?
--দাও না।
--হুম
মিষ্টির হাতটা নিজের হাতের মাঝে নিয়ে...
--এই যে তোমায় ছুয়ে কথা দিলাম। অতীতে যতটা কষ্ট পেয়েছো, তার ১% ও তোমায় পেতে দিবো না। মাথায় করে রাখবো তোমায়। জীবনের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত তোমায় ভালোবেসে যাবো।
মামুনের চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি চোখের পানি ছেড়ে দেয়। মামুনও মিষ্টির দিকে একনজরে চেয়ে আছে। মেয়েটাকে কতটা নিশ্পাপ লাগছে।
--আচ্ছা, কাঁদলে তোমায় এত সুন্দর লাগে কেনো?
--কই লাগে?
--খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।
--মোটেও না।
--আমি কিন্তু তোমায় রোজ কাঁদাবো।
--তাহলে আমি চলে যাবো।
--কোথায়?
--অনেক দুরে।
--পাগলি.... আজ সারাদিন আমার ওপর রাগ করে ছিলে?
--হুম।
মিষ্টির হাতটা ছেড়ে দিয়ে মামুন রিয়ার পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।
টেবিলের ওপর রাখা ফুলদানি থেকে একটা লাল গোলাপ নিয়ে মিষ্টির সামনে এগিয়ে আসে।
গোলাপটা মিষ্টির দিকে এগিয়ে দিয়ে হাটু গেড়ে বসে.......
--এই ছোট্ট জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছো, দুঃখ পেয়েছো, কাছের মানুষদের হারিয়েছো,
এই জোয়ারভাটার মাঝে পড়ে অনেক কিছুই শিখেছো। তবুও সাহস করে তোমায় একটা অনুরোধ করতে চাই। আমায় একবার সুযোগ দিয়ে তোমার নিশ্পাপ জীবনে আর একবার ঝুঁকি নিয়ে দেখো। কথা দিলাম, এটাই তোমার জীবনের শেষ ঝুঁকি।
--কিছুই বুঝিনি।
--
--এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
--কত সুন্দর করে প্রপোজ করলাম।
--ওও আচ্ছা, প্রপোজ করেছেন? এত কঠিন করে বলার কি আছে? আমি বুঝিনা এমন।
--আচ্ছা সরি, আবার বলছি।
--কি?
--আমায় কি আপনার জীবনে আসার সুযোগ দিবেন? খুব ইচ্ছা জীবনের বাকি দিন গুলো আপনার সাথে কাটানোর। হবেন আমার মনের সিংহাসনের রাজকুমারী? "Will You Marry Me?"
লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচুৃ করে মামুনের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে মিষ্টি একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়।
--উত্তরটা পেলাম না।
--সব কি বলতে হয়? বুঝে নিতে পারেন না?
--না, বলো।
--না, পারবো না।
--কেনো?
--আমার বুঝি লজ্জা করে না?
--আচ্ছা? আপনি লজ্জা পাচ্ছেন?
--হুম, খুব।
--আচ্ছা থাক, আমি আর কিছু বলবো না।
এই লজ্জা ভাঙানোর কাজটা বিয়ের পরের জন্য তুলে রাখলাম।
--কেনো?
--বিয়ের পরেই বলি, এখন কিছু বলবো না।
--জমাচ্ছেন?
--হুম।
--মামুন............
নিজের রুম থেকে সানু বেগম মামুনকে ডাকতে থাকে।
--এই যান যান, আন্টি ডাকতেছে।
--হুম। এক্ষুণি মাকে বিয়ের ব্যাপারে বলবো।
--আপনার যা ইচ্ছা।
--কেনো? তোমার ইচ্ছা নেই?
--যানতো, আন্টি কতক্ষণ যাবত ডাকতেছে।
--যাচ্ছি।
মামুন কিছুক্ষণ মিষ্টির দিকে চেয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
.
রাতে মামুন আর মিষ্টি দুজনকেই সানু বেগম তার রুমে ডাকেন।
--মা ডেকেছো?(মামুন)
--হুম, মিষ্টি কই?
--এই তো আন্টি, আমি চলে এলাম।(মিষ্টি)
--তুমি না কাল আমাকে মা ডেকেছিলে, আবার আন্টি কেনো?
--অ্যাহ! কাল থেকেই মা ডাকা শুরু করছে?(মামুন)
--চুপ করতো।
--সরি আন্টি, এখন থেকে মা ডাকবো।
--আবার?
--সরি মা।
--বসো এখানে।
--আমাদের ডাকলে যে?(মামুন)
--কিছু কথা ছিলো, তাই ডাকলাম।
--হুম বলো না।
--যেহেতু তোরা দুজনই বিয়েতে রাজি, তাই আমি আগামী শুক্রবারই তোদের বিয়ে দিয়ে দিতে চাই।
--এত তাড়াতাড়ি?
--হুম, আমার মনে হয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে গেলেই হয়।
--তুমি যেমনটা ভালো বোঝো।
--মিষ্টি, তোমার কোনো আপত্তি আছে?
--না মা। আপনি যা ভালো মনে করেন।
--তাহলে আর ৪ দিন পরই তোদের বিয়ে।
--অনুষ্ঠান হবে না মা?
--আমাদের তো কোনো আত্মীয় স্বজনই নেই, অনুষ্ঠান করে কি করবো? কয়েকজন প্রতিবেশীকে দাওয়াত দিয়ে কাজি ডেকে বিয়েটা সেরে ফেলবো।
--আচ্ছা।
--অনেক রাত হয়েছে, যা।
--আচ্ছা।
মিষ্টি আর মামুন দুজন দুজনের রুমের দিকে হাটা দেয়।
--এতো রাতে মা তোমায় কেনো ডাকলো?(রিয়া)
--তোমার ভাই তোমায় কিছু বলেনি?
--নাতো।
--মা?
--না। কেনো? কি হয়েছে?
এমন সময় মামুন রিয়ার রুমে প্রবেশ করে।
--ওই গাঁধা, এতরাতে এখানে কি? (রিয়া)
--তোকে বলতে হবে?
--তো কাকে বলবি?
--তোর বান্ধবীকে।
--আচ্ছা? কি বলবি?
--আচ্ছা বনু, ওকে তোর কেমন লাগে রে?
--কোন বিষয়ে?
--যদি তোর ভাবি হয়, কেমন হবে?
রিয়া মুখে হাত দিয়ে মামুনকে ইশারা করে চুপ করার জন্য।
--কি হলো?
--যা বাইরে যায়, কি সব বলতেছিস?
--কেনো? ওকে তোর পছন্দ না?
রিয়া বিছানা থেকে উঠে এসে মামুনের হাত ধরে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে আসে।
--কি সব উল্টাপাল্টা বলতেছিস? মিষ্টি কি ভাববে? মেয়েটা এসবে একদম অভ্যস্ত নয়, কষ্ট পাবে। মজা করিস না ওর সাথে।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com