কুমারী । পর্ব - ০৩
পালক: তুই পালিয়ে যা মুকপুড়ি !
পালক: ওরা তোকে মে*রে ফেলবে তুই চলে যা মল্লিকা।
মল্লিকা: কেনো ওরা আমায় মেরে ফেলবে বউ দিদি?
পালক: সেসব শোনার সময় এখন নেই বোন আমার, বলতে বলতে মল্লিকা
কে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে পালক, হঠাৎ পার্বতীর সামনে পড়তে পালক থমকে যায়!!
পার্বতী: হ্যাঁ রে পালক, পাপ পুন্নী বোধ কি হারিয়েছিস নাকি লো? এমন ঘোর
অন্যায় কি করে করতে যাচ্ছিলি তুই? মল্লিকা কে যে স্বর্গে যেতে হবে,,, এজে মল্লিকার সৌভাগ্য।
পালক: অশ্রুসিক্ত চোখে, এমন করো না জেঠি মা তোমার পায়ে পড়ি।
পার্বতী: হেয়ালি ছাড় পার্বতী! ওকে সাজিয়ে দে স্বর্গে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে যে....
বলে বেরিয়ে গেলো পার্বতী।
পালক এর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে, মল্লিকা যেনো কিছু বুঝতে পারছে না!
মল্লিকা: বৌদি স্বর্গে তো মৃত মানুষ যায় আমি কিভাবে যাবো সেখানে?
পালক নিশ্চুপ।
এই দিক এ পুরো গ্রাম জেনে গেছে জমিদারের মেজো ছেলে আর নেই,
আয়জন চলছে মহেশের অন্তিম কাজ সম্পূর্ণ করার।
.
ঐশ্বর্য্য চুপ চাপ বসে আছে কাদঁছে না, যেনো পাথর হয়ে গেছে!
অভিজিৎ এর দেখা নেই , ভাই মারা গেছে কিন্তু তার কিছু যায় আসে না,
অভিজিৎ পড়ে আছে বাইজি মহলে... ঐশ্বর্যর মনে মায়া স্নেহ মমতা ভালোবাসা
ছিলো বলে ই অভিজিৎ কে নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছে, অন্য কেউ হলে হয়তো
এত দিনে বের করে দিত। ঐশ্বর্য্য এর একটা ই খালা ছিলো পাগল,তার মেয়ে কে
ঐশ্বর্য্য নিজের মতো ভালোবেসে বড় করে তার বিবাহ ও দেয় কিন্তু জন্ম দিয়ে ই হতভাগী মারা যায়!
তার পর থেকে ই অভিজিৎ কে সন্তানের মত বড় করে ঐশ্বর্য্য।
অভিতিত তো কখনো ই ঐশ্বর্য্য কে মা ভাবে নি! যেনো তার কোনো কৃতজ্ঞতা ও নেই,
সবাই অভিজিৎ কে নিয়ে কানা ঘষা করলে ও সামনে বলার সাহস নেই।
মল্লিকার ঘরের সামনে পাহারা বসানো হয়েছে, পালকের থেকে আলাদা হওয়াতে
মল্লিকা একা একা কাদঁছে,কি এক অজানা ভয় মল্লিকা কে ঘিরে আছে...
.
পালক কে পাঠানো হয়েছে মল্লিকা কে শেষ বারের মত সাজাতে,সাজানোর শেষ পর্যায় নিখিল
এর প্রবেশ...
নিখিল: আপনাদের হলো বৌদি ? ওদিকের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে, বলতে বলতে নিখিলের
চোখ পড়ল মল্লিকার দিকে, আহা কি সুন্দর নিষ্পাপ,চোখে ঘনো পাপড়ি গুলোতে জমেছে
ভেজা ইলশেগুঁড়ি!
নিখিল যেনো চাইছে কোনো ভাবে যদি মেয়ে টাকে বাঁচাতে পারতাম! একটা ই তো
উপায় আছে, কিন্তু না না তা কি করে হয়! ভাবতে ভাবতে পালকের কোথায় ঘোর ভাঙলো...
পালক: তুই ওকে বাঁচা নিখিল (ভেজা চোখে)
নিখিল কোনো কথা না বলে বেরিয়ে আসলো....
মল্লিকা: কাদঁছে বৌদি মা এর কাছে যাবো, ওরা আমায় কোথায় নিয়ে যাবে ?
পালক মল্লিকাকে শান্ত করতে...
ও কিছু না বোন তোকে যে স্বামীর সাথে স্বর্গে যেতে হবে সেখানে যে তুই খুব
ভালো থাকতে পারবি।
মল্লিকা: আমি ভালো থাকতে চাইনা বৌদি! আমি মা এর কাছে যাবো, আমাকে
নিয়ে যাও না (কান্না করে)
পালক: মহেশ খুব ভালো ছেলে জানিস মল্লিকা, এই বাড়িতে নিখিল শিউলি ওরা
আমায় বৌদি বললে ও মহেশ আমায় ভাবী বলতো, ও নাকি শুনেছে উত্তরাঞ্চলে
সবাই নাকি বড় ভাই এর বউ কে ভবি ডাকতে। বলে মলিন হাসলো পালক।
মল্লিকা: তাকিয়ে আছে।
পালক: চল সময় হয়েছে জাই এবার।
.
মৃণালিনী বেরিয়েছে ভিক্ষা করতে, যদিও জমিদার মশাই বলেছিল তার মহলে থাকতে কিন্তু মেয়ের শশুর বাড়ি থাকতে তার সম্মানে বাঁধে তাই তো আর যাওয়া হলো না!
কিগো মল্লিকার মা, তোমার মেয়েকে নাকি জমিদারের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে?(অন্তক)
মৃণালিনী: হেসে , টা দিয়েছি বই কি।
হঠাৎ একটা ছেলে দৌড়ে এসে বললো মা জমিদারের মেজো পুত্র নাকি গত হয়েছে কাল রাতে।
অগন্তক: চোখ বড় বড় করে মৃণালিনীর দিকে তাকিয়ে আছে, চোখে যেনো বিস্ময় এর চাপ!
মৃণালিনীর হাত থেকে চালের ব্যাগ টা পড়ে যায়!
মল্লিকা রে... বলতে বলতে দৌড়াতে থাকে মৃণালিনী !
.
মল্লিকা কে নিয়ে আসা হয়েছে সমীর সাথে সতীদাহ করতে তবে ই যে স্বর্গে যাবে মল্লিকা!
মল্লিকা কে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মল্লিকা চিৎকার করে কাড়ছে ! আমি যাবো না! আমি যাবো না!
সবার মনে এক আনন্দের রেখা, মল্লিকা স্বর্গে যাবে!
নিখিল যেনো আর মেনে নিতে পারছে না, নিখিলের মনে না না প্রশ্ন! কি করবে সে!?
এখন তার কি করা উচিত? সে চাইলে ই তো বাঁচাতে পারে মল্লিকা কে। কেনো কিছু বলছে না নিখিল...
দেবর মানে তো দ্বিতীয় বর,স্বামী মরার পর যদি দেবর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয় তবে
ই তো বেঁচে যাবে চন্দ্রমল্লিকা ফুল টি...
এইদিক এ মল্লিকা কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, মল্লিকার ছোটো হাত গুলো যেনো
এই বিশাল দেহি মানুষ গুলোর সাথে পেরে উঠছে না!
মৃণালিনী দেবী দৌড়ে এসে ই মল্লিকা কে এমন অবস্থায় দেখে চিৎকার করে বলছে,
ছেড়ে দাও আমার মেয়ে কে...
আর দুজন লোক ধরে ফেললো মৃণালিনী কে!
মল্লিকা আর আগুনের মাঝে এক কদম দূরত্ব... হঠাৎ নিখিল বলে উঠলো..
ছেড়ে দাও ওকে, আমি বিয়ে করবো চন্দ্রমল্লিকা কে ।
সবাই নিখিল এর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে কেউ যেনো বিশ্বাস করতে পড়ছে না।
মল্লিকার হাত ছেড়ে দেওয়া হলো, মল্লিকা দৌড়ে গিয়ে মৃণালিনী কে জড়িয়ে ধরলো।
নিখিল আবার বললো....
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com