Breaking News

গল্প- মনোহরণী । পর্ব - ০১

-"এই মেয়ে কান ধরো।"

--"মানে?
--"মানেটা তোমার বোঝা লাগবে না। আমি কান ধরতে বলেছি, তাই তুমি কান ধরবা।"
--"আ.. আপনি কে?"
--"তোমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড।"
--"কি বলছেন এসব?"
--"আবার বলবো?"
আজ সকালে আলো ওর সবচেয়ে কাছের বান্ধবী মিশুর বিয়েতে এসেছে।
সারাদিন অনেক মজা করে, দুপুরে খেয়ে একটু ঘুমিয়েছিল।
বিকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কফির মগ হাতে নিয়ে সে ছাদে এসেছে।
মৃদু বাতাস, স্বচ্ছ আকাশ, পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ,
ছাদে লাগানো ফুলের সুগন্ধ নাকে ভেসে আসছে।
আর এতেই মনটা যেন দ্বিগুন ভালো হয়ে গেছে৷ পড়ন্ত বিকেলে সূর্যটা বিদায়
নেওয়ার জন্য রক্তিম আভা ছাড়াচ্ছে। সামনে গাছের ডালে জোড়া শালিক কিচিরমিচির করে
গল্প জুড়ে দিয়েছে। আলো গুনগুন করতে করতে টবে লাগানো
বড় বড় গাঁদা ফুল গুলো ছুঁয়ে দিচ্ছে। ফুল গুলো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।

আলো বামদিকে ঘুরে খেয়াল করে দেখলো, একটা ভোমর ফুলের উপর বসেছে। হয়তো মধু আহরণ করা জন্য। আলোর জানামতে, লাল রংয়ের ফুলে ভোমর বসে না। তাছাড়া Mexican marigolds (Tagetes lucida) এবং chrysanthemums ফুলেও ভ্রমর বসে না। কারণ ভ্রমর শুধুমাত্র সেসব ফুলেই বসে, যেগুলোর রং উজ্জ্বল হয়। এই যেমন নীল, হলুদ কিংবা বেগুনী। এই রং গুলো ভোমরকে অধিক আকৃষ্ট করে। এবং তীব্র মিস্টি গন্ধযুক্ত ফুলে ভোমর একটু বেশিই বসে। বেশ কয়েকটা ভোমর একটু করে ফুলের উপর বসছে। আবার উঠে গিয়ে অন্য ডালের ফুলে বসছে। এই ব্যাপারটা দেখে আলো মুচকি হেসে বললো,
--"ইস! কি দুষ্টু ভোমর রে তুই? ফুল দেখে ওমনি ফুলের কাছে চলে এসেছিস? তুই লজ্জাহীন অসভ্য একটা ভোমর।"

কথাটা বলে আলো মুচকি হাসলো। আলো কিছু একটা শব্দ পেয়ে পেছনে তাকালো। ঠিক তখনই দেখলো, পাশের ছাদ থেকে একটা ছেলে লাফ দিয়ে এই ছাদে চলে আসলো। আর এসেই ছেলেটা কর্কশ কন্ঠে কান ধরতে বললো। আলো বুঝতে পারছে না যে, কোন অপারাধের জন্য ওকে এই ছেলেটা কান ধরতে বলছে। ছেলেটা আবার বাজখাঁই গলাতে ওকে ধমকে উঠলো। আলো চমকে উঠে চোখ ছলছল করে ছেলেটার তাকালো। তারপর আবার চোখ নামিয়ে নিলো। কারণ ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
আলো এই ছেলেটাকে এর আগে কখনো দেখেনি। আজকেই ওদের প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই একটা মেয়েকে কেমন নিষ্ঠুরভাবে ধমকাচ্ছে ছেলেটা। আলো ছেলেটার নাম অবধি জানে না। তবে সকালে আলো যখন মিশুর সাথে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, তখন ছোট একটা বাচ্চাকে এই ছেলেটার সাথে দেখেছিলো। আর সেই বাচ্চাটা তখন এই ছেলেটাকে দা'ভাই বলে ডাকছিল। একটা ছেলে নাম তো আর দাভাই হতে পারে না। এটা একটা আদুরে ডাক। আলো এই ছেলে নামও জানে না, ওর কোনো পূর্ব পরিচিত নয়। তাহলে ওকে এভাবে ধমকাচ্ছে কেন? আলোকে চুপ করে থাকতে দেখে ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বললো,

--"তুমি কি বয়রা?"
--"ব ব বয়রা হতে যাবো কেন?"
--"তাহলে কান ধরছো না কেন? জলদি কান ধরো! নয়তো ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।"
--"আমি কি করেছি? আপনি আমার সাথে এমনভাবে কথা বলছেন কেন?"
--"তো কিভাবে কথা বলবো? এখন তোমাকে আমার কোলে বসিয়ে আদর করে তারপর তোমার সাথে কথা বলতে হবে নাকি?"
আলো ছেলেটার এমন ত্যাড়া কথা শুনে যখন পাশ কেটে চলে যাবে, তখন ছেলেটা আবার ওর রাস্তা আটকে দাঁড়ালো। আলো মনে মনে ছেলেটার পায়ে পাড়া দিয়ে দৌড় দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেললো। কিন্তু ছেলেটার আত্মা কাঁপানো ধমক শুনে সব নিমিষেই সবটা ভুলে গেল। ছেলেটা আবারও কর্কশ কন্ঠ বলে উঠলো,

--"আমি তোমাকে যেতে বলেছি?"
--"ন ন না।"
--"তাহলে যাচ্ছিলে কেন? আমার কথার অবাধ্য হলে এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো। কান ধরতে বলছি না? ধরো তাড়াতাড়ি!"
ছেলেটা ধমকের ঠেলায় আলো মাথা নিচু করে কান ধরলো। ছেলেটা তবুও ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আলো কান্নামাখা গলায় বললো,
--" আ আম আমি কি করেছি? আপনি আমার সাথে এমন ক ক করছেন কেন?"
--"তুমি মারাত্মক ভুল করেছো। আর এই ভুলের শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। তোমার কোনো মাফ নেই।"
আলো এবার সত্যি সত্যি কেঁদে দিলো। ছেলে এখানে আসা অবধি ওকে বকেই যাচ্ছে। আলোর কান্না দেখে ওকে কান থেকে হাত সরিয়ে নিতে বললো। আলো ওর চোখ মুছে নিলো। ছেলেটি ছাদের দোলনাতে পায়ের উপর পা তুলে বসলো। তারপর আলোর দিকে তাকিয়ে বললো,

--"ওই ভোমর গুলো কার জানো?"
--"না! ভ ভ ভোমর কারো হয় নাকি?"
--"ওইগুলো আমার পোষা ভোমর।"
--"ভোমর পোষ মানে? আগে তো এমন কথা কখনও শুনিনি।"
--"ওরা আমার মন্ত্রপূত ভোমর।"
--"ওহ।" (অবাক হয়ে)
--"এবার আমি মেইন পয়েন্টে আসি। তুমি প্রথমে আমার ভোমরকে দুষ্টু বলেছো। ওরা তো খুশি মনে তোমার কথা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ওদের অসভ্য বললে কেন? এজন্য ওরা আমার কাছে বিচার দিয়েছে। বার বার বলেছে তোমাকে শাস্তি দিতে। ওরা তোমার উপর মারাত্মকভাবে রেগে আছে। ওরা এখন দলবল নিয়ে এসে তোমাকে কামড়ে দিতে চাচ্ছে।"
--"না! প্লিজ! এমনটা করবেন না।"

ছেলেটার কথা শুনে আলো আঁতকে উঠে। এর আগে সে ভোমরের কামড় খেয়েছে। খুব জ্বালা করে আর ফুলেও যায়। সেদিন আলো কেঁদে দিয়েছিল। ভোমরের কামরের জ্বলুনি কমাতে ওর আম্মু টুথপেষ্ট লাগিয়ে দিয়েছিলো। ভোমর কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা। আক্রান্ত স্থানে আধা ঘণ্টার মতো টুথপেষ্ট লাগিয়ে রাখলে জ্বলুনি কমার পাশাপাশি ভোমরের বিষও দূর হয়। আলোর ঘাড়ে ভোমরটা এমনভাবে কামড়ে ছিল যে রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল। এজন্য আক্রান্ত স্থানে বরফ চেপে বসে থাকতে হয়েছিল। সেদিনের কথা মনে হতেই আলো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বললো,

--"আমি আর এমন কথা বলবো না। আমার ভুল হয়ে গেছে। ওরা দলবল নিয়ে এসে আমাকে কামড়ালে আমি এবার মরেই যাবো। আপনি কিছু একটা করুন।"
--"ওদের রাগ কমানোর জন্য সাতটা ভাষাতে মন্ত্র বলতে হবে। নাহলে ওরা কিছুতেই থামবে না।"
--"আমি তো কোনো মন্ত্র জানি না। তাহলে কিভাবে বলবো?" (নাক টেনে)
--"তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, তুমি বেশি না একটু ভালো মনের মানুষ। এজন্য আমি তোমাকে সাহায্য করবো। যদি তুমি ওদের থেকে বাঁচতে চাও, তাহলে আমার সাথে সাথে মন্ত্রগুলো বলো।"
--"আচ্ছা!

ছেলেটা আলোকে ওর সোজাসুজি বসতে বললো। আলো কফির মগটা ওর পাশে রেখে বসলো। হুট করে ছেলেটা কফির মগটা তুলে কফি খেতে লাগলো। আলো ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। আলোর তাকানো দেখে ছেলেটা গলা পরিষ্কার করে বললো,
--"গলা ভিজিয়ে নিলাম, যাতে স্পষ্টভাবে মন্ত্রগুলো উচ্চারণ করতে পারি। উহুম! উহুম! "
এরপর ছেলেটা গলা পরিষ্কার করে নিলো।সে এখন সাতটা ভাষাতে যা বলবে, আলোকেও তাই বলতে বললো। আলোও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। ছেলেটা মুচকি হেসে বললো,
--"বলো রোদ তি আমো।"
--"রোদ বলবো কেন? এটা তো কোনো মানুষের নাম।"
--"রোদ ওই ভোমরের টিচার। এজন্য সন্মান দেখিয়ে উনার নাম বলতে হবে। এখন আমি পরপর মন্ত্র বলবো। তুমি চোখ বন্ধ করে মন্ত্রের আগে রোদ নামটা যোগ করে নিবা। এখন বেশি ফকফক করবে না।"
--"আচ্ছা।"
-- "বলো তি আমো।" (ইটালিয়ান)
--"রোদ তি আমো।"
--"ইস লিবে দিস।" (জার্মান)
--"রোদ ইস লিবে দিস।"
--"দুস্তাত দারাম।" (ফার্সি)
--"রোদ দুস্তাত দারাম।"
--" সেনি সেভিউর ম।" (তুর্কি)
--"রোদ সেনি সেভিউর ম।"
--"নান উন্নাই কাদালিকিরেণ।" (তামিল)
--"রোদ নান উন্নাই কাদালিকিরেণ।"
--"তাঙশিনুল সারাঙ হা ইয়ো।" (কোরিয়ান)
--"রোদ তাঙশিনুল সারাঙ হা ইয়ো।"
--"আনা বেহিবেক।" (আরবি)
--"রোদ আনা বিহিবেক।"
রোদের কথা মতো আলো সব মন্ত্রগুলো পরপর
বলে ওর চোখ খুললো। তখনই রোদ ওর ফোনটাকে পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। আর হাতে ধুলো ঝাড়ার মতো করে বললো,
--"এই মন্ত্রগুলো ভুলেও আর কাউকে কোনদিন বলবে না। যদি বলো, তাহলে ভোমরের টিচারের মারাত্মক অসুখটা তোমার শরীরেও চলে আসবে। তখন তুমিও সারাজীবন সুপ্ত অনুভূতির দহনে দগ্ধ হতে থাকবে। তাই ভুলে এই কথা কাউকে বলবে না। কি মনে থাকবে তো?"
--"হুম।"

এই কথা বলে রোদ আগের মতো আবার লাফ দিয়ে পাশের ছাদে চলে গেল। আলোর দিকে একবার তাকালো। তারপর সে ফুল গাছে পানি দেওয়াতে মনোযোগী হলো। ওই ছাদে গিয়ে এমন ভাব করছে, যেন সে আলোকে চিনেই না। আলো এতক্ষণে খেয়াল করলো যে ছেলেটা ডিপ ব্ল্যাক শার্ট সাথে ক্রিম কালার গ্যাবাডিং প্যান্ট পড়ে আছে। মৃদু বাতাসে কপালের উপরে পড়ে থাকা চুল গুলো হালকা ভাবে নড়ছে। হাতে আছে দামী কোনো ব্যান্ড্রের ব্ল্যাক ওয়াচ। ছেলেটার ড্রেসআপ দেখে ভদ্র মনে হলেও, আলোর কাছে ছেলেটাকে মারাত্মক অভদ্র বলে মনে হয়েছে। যাই হোক সে ভোমরের কামড় থেকে তো বাঁচলো। ওর কাছে এটাই বা কম কিসে। ঠিক তখনই একটা ভোমর আলোর মুখের সামনের গিয়ে উড়ে গেল। আলো ভয়ে ঢোক গিলে মগটা হাতে নিয়ে দৌড় দিলো। আলোর দৌড়ে যাওয়া দেখে রোদের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা দেখা গেল।

মিশুর বিয়ে উপলক্ষে পুরো বাসাটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। মিশুদের বাসাটা তিনতলা। মিশুরা থাকে দোতলাতে। নিচ তলা আর তিন তলা পুরোটা ভাড়া দেওয়া। রোদদের পরিবারের সাথে মিশুদের পরিবারের অনেক ভালো সম্পর্ক। ওদের বিল্ডিংটাও পাশাপাশি। মিশুর বিয়ে উপলক্ষে দুই পরিবারে মানুষের যেন আনন্দের শেষ নেই। বাগানে ফুল সাউন্ড গান বাজছে। বাচ্চারা গানের তালে তালে নাচানাচি করছে।
আলো ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুছে পানি দিয়ে নিচে নেমে এলো। মিশুকে এখন মেহেদী পড়ানো হচ্ছে। আলো মিশুর পাশে বসলো। মিশুর আম্মু এসে আলোর সাথে কথা বললো। মিশুর আম্মু দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে চলে গেল। আলো মিশুর আম্মুর হাতে হাতে কাজ করে দিলো। মিশুর আম্মুর বারণ শুনলো না। কাজ সেরে আলো মিশুর কাছে আসলো। মিশু আলোকে দেখে বললো,
--"এখন তোর আসার সময় হলো। বসে পড় তুইও মেহেদী দে।"
--"তুই দে। আমি পরে দিবো।"
--"না এখনই দে।"

পার্লারের আরেকজন মেয়ে এসে আলোর হাতেও মেহেদী দিয়ে দিলো। আলো শুধু ওর বাম হাতে মেহেদী দিলো। পাশে বড়রা এত এত কাপড়ের গাট্টি
নিয়ে কি সব আলোচনা করছে। মিশুদের বাগান খুব সুন্দর করে সাজিয়ে মেহেদীর আয়োজন করা হয়েছে। মিশুর বিয়ে উপলক্ষে কাছের রিলেটিভরা এসে গেছে। মিশুর বড় ভাই মারুফের সাথে আরো কয়েজন বাগানের এক সাইডে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মিশুর কাজিনরা মিশুর সাথে হাসি ঠাট্টাতে মশগুল হয়ে আছে। তখন একটা গুলুমলু বাচ্চা এসে কোমরে দুই হাত রেখে ভ্রু কুচকে বললো,
--"তোমরা সবাই মেহেদী দিচ্ছ? আমি কখন দিবো? ওমা গু, তোমরা তো দেখছি সব মেহেদীই শেষ করে দিয়েছো।"
মিশু হেসে বললো,
--"মেঘ তুই তো ছেলে। ছেলেদের মেহেদী পড়তে নেই।"
--"উমম, বললেই হলো। আমাকে কেউ মেহেদী দিয়ে ট্যাটু করে দাও।", মেঘ মুখ বাঁকিয়ে বললো।
আলো হাসলো বাচ্চাটার কথা শুনে। মেঘ একটা মেহেদী নিয়ে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। এরপর আলোর কাছে গিয়ে বললো ওকে মেহেদী দিয়ে দিতে। আলো মেঘের গাল টেনে আদর দিলো। এরপর মেঘের হাতে কব্জির নিচে বাঁকা করে তিনটা স্টার করে দিলো। মেঘ খুশি হয়ে বললো,
--"ওমাগু, টুরু স্টার।"
মেঘের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। মেঘ ওর হাতটা সবাইকে দেখানোর জন্য দৌড়ে চলে গেল। আর দৌড়াতে গিয়ে ঠাস করে মুখ থুবকে পড়ে গেল। রোদ ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। মেঘকে পড়তে দেখে ওকে তাড়াতাড়ি তুলে কোলে নিলো। মেঘ রোদের কাঁধে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। ওর হাঁটু একটু ছিলে গেছে। মেঘকে কাঁদতে দেখে রোদ বললো,

--"কাঁদে না ভাই। ইস!বেশি ব্যাথা পেয়েছিস? কতদিন বলি এভাবে দৌড়াবি না। এবার বাসায় চল।"
রোদ মেঘকে নিয়ে ওদের বাসায় চলে গেল। মেঘের পা পরিষ্কার করে এ্যান্টিসেপটিক লাগিয়ে দিলো। মেঘ কান্না থামিয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে আবার কেঁদে দিলো। রোদ দেখলো মেঘ ওর হাতের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। ওর হাতের মেহেদীটা লেপ্টে নষ্ট হয়ে গেছে। রোদ ওর শার্টের দিকে তাকালো। মেঘ যা আকাম করার করে দিয়েছে। রোদ মেঘের মাথাতে ঠুয়া মেরে বললো,
--"এসব কি দিয়েছিস তুই? আমার শার্টের জানটা কবজ করে নিলি তো?"
--"দা'ভাই! ওই মিষ্টিমণি টা আমাকে মেহেদী দিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু পড়ে গিয়ে সবটা নষ্ট হয়ে গেল।"
রোদ ওর শার্ট খুলে অন্য শার্ট পড়লো। টিস্যু দিয়ে মেঘের হাত মুছে সাবান দিয়ে ধুয়ে দিলো।
মেঘের মন খারাপ দেখে রোদ মেঘকে কোলে আলোর কাছে গিয়ে বললো,
--"মিস ছিঁচকাঁদুনী! মেঘের হাতে সুন্দর করে আর্ট করে দাও।"
আলো রোদের কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে থাকলো।
পাশে থেকে মেহেদী এনে মেঘের হাতে আবার আর্ট করে দিলো।
এবার তিনটা স্টারের পাশে ছোট্ট করে স্মাইলের ইমুজিও করে দিলো।
ইমুজি দেখে মেঘের খুশি আর ধরে না। মেঘ খুশি হয়ে আলোর গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
--"থ্যাংক ইউ মিষ্টিমণি।"

আলো মেঘের কথা শুনে মুচকি হাসলো। রোদ মেঘের হাত ধরে নিয়ে সামনের রাস্তার দিকে গেল।
ওইদিকে রোদের আম্মু হন্তদন্ত হয়ে রোদের আব্বুর কাছে ছুটে গেল।
রোদের আব্বু সংবাদপত্র থেকে চোখ সরিয়ে রোদের আম্মুর দিকে তাকালো।
রোদের আম্মু দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
--"তোমার গুনধর ছেলেরা নাড়ু গুলো খেয়ে নিয়েছে।"
--"নাড়ু তো খাওয়াই জিনিস। এখানে দোষের কি দেখলে?"
--"ওগুলো সাধারণ নাড়ু না।"
--"নাড়ু আবার অসাধারণ হয় নাকি?"
--"ওগুলো অামাদের না। ওগুলো অন্য কারো।"
--"তুমি বানিয়ে দাও। তাহলেই তো হয়ে গেল। এখানে চেচাঁমেচি করার কি আছে?"
--" বুঝছো না কেন তুমি? নতুন ভাড়াটে এসেছে, ওই ভাবিটাই এই নাড়ু গুলো রেখে গিয়েছিল।
ওনাদের বাচ্চা হয় না। ওই ভাবিটার স্বামীর শারীরিক সমস্যা আছে।
এজন্য কোনো কবিরাজ ওই নাড়ু গুলো উনাকে খেতে দিয়েছে।
উনাদের ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমাদের ফ্রিজে রেখে গেছে।
আর তোমার গুনধর রাজপুত্ররা ওগুলো খেয়ে নিয়েছে।"
রোদের আব্বু কি বলবে বুঝতে পারছে না।
উনার ছেলেরা কিনা কবিরাজের দেওয়া নাড়ু খেয়ে নিয়েছে।
খেয়েই তো নিয়েছে। এখন আর কি করার? উনাকে চুপ থাকতে দেখে,
রোদের আম্মু রাগে গজগজ করতে রুম ত্যাগ করলো।
সন্ধ্যার পর...!!
আলো পানি খাচ্ছিলো। ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
--"হাতের বাহুতে থাকা সাতটা তিল কি মানুষকে না দেখালে তোমার কলিজা ঠান্ডা হচ্ছে না? নাকি থাপ্পড় না খেলে নিজেকে শুধরাবে না?"
--"কে রে ?"
--"রোদ মেহবুব।"

To be continue.......!!

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com