বিরহ মিছিল । পর্ব - ১৫
আদিল উতলা কন্ঠে পূর্নবার বলল, " উত্তর দাও মুগ্ধ, উত্তর দাও। আমার ধৈর্যে আর কুলচ্ছে না।"
স্বেদজল ছুটে যাচ্ছে আদিলের পুরো শরীরজুড়ে। ললাটে ক্ষুদ্র অস্তিত্ব। রেস্টুরেন্টে এসি চলছে। তবুও অস্বাভাবিক লাগছে তাকে।
মুগ্ধতা ত্বরিতগতিতে চেয়ার ছেড়ে আদিলের কাছে গেল। ঝুঁকে ওড়নার আঁচলে ললাটের স্বেদজল মুছে দিয়ে আশ্বাস সহিত শুধালো,
" শান্ত হও আদিল। আমি সব তোমায় বলবো। "
আদিল কিছু টা শান্ত হলো। মুগ্ধতা টেবিলের পানির বোতলটি এগিয়ে দিলো। আদিল বোতলের ছিপি খুলে গলা ভেজাল। মুগ্ধতা তার স্বভাবে এলো। চেয়ার টেনে বসে বলল,
" তোমার টিশার্টে মেয়ে মানুষ আই লাভ ইউ লিখে তুমি সে খবর রাখো?"
কন্ঠ জোড়ালো, অভিযোগ! আদিল মুগ্ধতার কথার আগাগোড়া বুঝতে না পেরে বলল,
" আমি বুঝতে পারছি না মুগ্ধ। তুমি কি বলছো।"
মুগ্ধতা ধমক সুরে বলল,
" একদম আমায় মুগ্ধ বলে ডাকবে না৷ আমাকে ইমোশনাল করার ধান্দা? উমমম ..পারবে না।"
মুগ্ধতার ধমক খেয়েও আদিলের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। তার ধমক খেতেও যেন ভালো লাগছে। এটাই তো এতক্ষণ মিসিং ছিলো।
মুগ্ধতা চটজলদি তার হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটি ধূসর রঙের টিশার্ট বের করলো। নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি কোন র্যাগ ডে এর টিশার্ট। শুকনো গোলাপি, হলুদ, সবুজ রঙ টিশার্টে ভরে আছে। রঙবেরঙের সাইনপেনে তাতে কত কি লেখা।
টি-শার্ট টেবিলে মেললো মুগ্ধতা। আদিলের প্রশ্নবিদ্ধ নয়ন৷ এটা তারই টিশার্ট। কালকেই খুঁজেছিল। পায়নি। মুগ্ধতা রোষাগ্নি কন্ঠে টিশার্টের এক জায়গায় আঙ্গুল ঠেকিয়ে বলল,
" এই দেখো।"
আদিল মুগ্ধতার আঙ্গুলের ইশারার স্থানে তাকালো। টিশার্টের পিছন দিকের এক কোনায় ইংরেজি তে কালো মার্কারে লেখা "আই লাভ আদিল।" তার একটু নিচে একটি টেলিটক নাম্বার। লেখা "কল দিও।"
কে লিখেছে তার নাম উল্লেখ নেই। মুগ্ধতা ধরেই নিয়েছে এটা কোন মেয়ের কারসাজী।
মুগ্ধতার লেখাটিতে চোখ যেতেই শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে টিশার্ট খামচে ধরলো। রাগে ফুঁসছে মুগ্ধতা। চোখযুগল অগ্নিশর্মা। আদিল সন্তপর্ণে দেখলো। বলল,
" ছিঁড়ে ফেলবে? ফেলো।"
আদিলের স্বাভাবিক কন্ঠ৷ মুগ্ধতা রাগত্ব গলায়
বলল,
" তুমি কি করছিলে তখন আদিল? কোন মেয়ে এগুলো লিখেছে?"
আদিল ঠাট্টা স্বরে বলল,
" এবার তুমি বাচ্চাদের মতো করছো।"
মুগ্ধতা জোড়ালো কন্ঠে বলল,
" করছি বেশ করছি। দরকার পড়লে আরো করবো।"
আদিল চারদিক দেখলো। অতঃপর
আদিল ভুল ভাঙানোর ন্যায় শুধালো,
"তুমি যা ভাবছো তা না। এটা আমার এক বন্ধুর কাজ। সে ছেলে, মেয়ে না।"
মুহূর্তে মুগ্ধতার হাত টিশার্ট থেকে আগলা হলো। কুঁচকে গেছে টিশার্টের কিছু ভাগ হাতের শক্তির জোরে। সে দৃশ্য দেখে আদিল মৃদু হাসলো।
আদিলকে খুবই স্নেহ করেন রফিক আজম। নিজের সন্তানের ন্যায় আদিল। কালকে আদিলের কলেজ থেকে গার্ডিয়ান কল এসেছে আদিল কলেজ যায়নি৷ স্পষ্ট মনে আছে উনার ছেলে তার কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিল। তবে মাঝপথে কি হলো হঠাৎ।
কাল রাতে স্কুল থেকে বেশ রাতে ফেরায় পারভিনের সাথে এ নিয়ে কথা তুলেনি। আদিল কলেজে যাবে বলে তৈরি হয়ে নাস্তা করতে এসেছে খাওয়ার টেবিলে। রফিক আজম ও এলেন কিছু মিনিট পর। আদিলের খাওয়া প্রায় শেষের পথে৷ পরোটা মুগডাল দিয়ে নাস্তা করছিল। সঙ্গে ছিল একটি সেদ্ধ ডিম। টেবিলে বসতে বসতে রফিক আজম হেসে বললেন,
" কলেজ যাওয়া হচ্ছে বাবা?"
" জি বাবাই।"
আদিল নাস্তা করা শেষ ইতিমধ্যে। সে উঠে ডাইনিং রুমে সংলগ্ন বেসিনে হাত ধুলো। ভেজা হাত তোয়ালে দিয়ে মুছে বাবার সামনে এলো৷ বলল,
" আল্লাহ হাফেজ বাবাই।"
রফিক আজম স্নেহ কন্ঠে বললেন,
"আল্লাহ হাফেজ। টাকা নিয়ে যাও বাবা।"
আদিলের কাঁধে ব্যাগ। সে মেইন দরজায় প্রায়। বাবার কথা শুনে আদিল সেখান হতে বলল,
" আমার কাছে টাকা আছে বাবাই।"
মুগ্ধতার জন্য পাত্র দেখছেন আমেনা। স্বামী না করা সত্ত্বেও তিনি মানছেন না। ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাব এসেছে মুগ্ধতার। আজকে কয়েকটা ছেলের ছবি মুগ্ধতা কে দেখালেন তিনি।
মুগ্ধতা সঙ্গে সঙ্গে বলল,
"এগুলো ছেলে?"
আমেনা মেয়ের ভর্ৎসনা শুনে চমকান। ছবির প্রতিটা ছেলেই সুদর্শন, শিক্ষিত ভালো চাকরিবাকরি ও করে। আমেনা কড়া কন্ঠে বলেন,
" এগুলো ছেলে না মেয়ে তাহলে?"
মুগ্ধতা মুখ কুঁচকে বলল,
" একটাকেও ভালো লাগছে না আম্মু।"
আমেনার ললাটে ভাজ পড়লো। মেয়ের চো খ গেল নাকি! মনে মনে ভাবলেন। তৎপর
অস্ফুট কন্ঠে আওড়ালেন,
" একজনকে মন দিয়ে রাখলে বাকিদের তো ভালো লাগবেই না বোবা মেয়ে।"
.
বৃষ্টিমুখর প্রকৃতি। রাস্তা-ঘাট সেঁতসেঁতে। সারারাত বৃষ্টির পর এক ঘন্টা হলো বর্ষণ থেমেছে।
মুগ্ধতার সঙ্গে আদিলের আজ দেখা করার কথা। সকাল এখন সাতটা। রথখোলার রোডে পথচারী খুবই কম। গাড়ি চলাচল করছে স্বল্প।
পৃথিবী গুড়িয়ে বৃষ্টি নামবে নামবে ভাব। এমন আবহাওয়া সত্ত্বেও মুগ্ধতা এই রোডে আদিলের জন্য অপেক্ষারত। পরনে জাম রঙের ওয়ান পিস। শুভ্র ওড়না মাথায়। বাতাসের বেগে চুল তার আলুথালু। বিরক্তে বার বার ঠিক করছে। চুলে কাঁকড়া, রাবার কিছু নেই। হাত খোঁপা করেছিল। মাথায় ঘোমটা দেওয়ায় ভেবেছিল এগুলোর প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু বাহিরের এমন আবহাওয়া কে জানতো!
খোঁপা খুলে আসছে, মুগ্ধতা রাগে চুল ঠিক করলো পূর্নরায়। এক দমকা হাওয়ায় মুগ্ধতার মাথার শুভ্র ওড়না ঝড়ের গতিতে পরে গেল। খোঁপা খুলে গিয়ে স্বাধীন ভাবে চুল বাতাসে উড়ছে।
আচমকা আদিল এলো মুগ্ধতার অতি নিকটে। মুগ্ধতা খেয়াল নেই দিকবিদিক। সে মজে তার চুল, ওড়না ঠিক করাতে। আদিল যত্নে মুখে পরা চুল দুই কানে গুঁজে দিল। বলল,
" আবার বৃষ্টি আসবে মনে হচ্ছে মুগ্ধ।"
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com