বিরহ মিছিল । পর্ব - ১২
"কবে থেকে ফোন চালাচ্ছো আদিল?"
মুগ্ধতা হ্যা বা না একটা উত্তর দিলো না। চুপ করে রইল। দীর্ঘ দুদিন পর ফোনালাপ। এটাই তাদের প্রথম ফোনালাপ। আগে সে রকম সুযোগ, সময় হয়ে উঠে নি। মুগ্ধতা আদিলের প্রশ্নের উত্তর না করে বিপরীত প্রশ্নে চলে গেল। বলল,
" তুমি ফোন চালাচ্ছো অথচ এই খবর আমি জানি না।"
আদিল ধাতস্থ হলো এ মুগ্ধতা। সে ভুল শুনেনি। মুহূর্তে গোমড়ায় আবৃত মুখবিবর হাসোজ্জল। মুগ্ধতার ভুল ধরিয়ে দেওয়ার ন্যায় বলল,
" তোমার খবর কি ভুল হতে পারে? সাতঘন্টা হলো বাবা ফোন কিনে হাতে দিয়েছে। মামের বাড়িতে আমি রইলে অবশ্য এ খবর প্রথম ঘন্টায় জানতে।"
মুগ্ধতা লজ্জায় পড়ে গেল। চিবুক এসে ঠেকল বক্ষ বরাবর।বলল,
" ভুল বললে। প্রথম ঘন্টায় কেন? প্রথম মিনিটেই জেনে ফেলতাম।"
আদিল অনুভব করলো তার মন এখন সতেজ। চারিপাশের সব কিছু ভালো লাগছে এমনকি মুগ্ধতার বকবক। হৃদযন্ত্র ধুকপুক করছে। কিছুদিন ধরেই এমন হচ্ছে। আগে তো এমন হয়নি৷ দুশ্চিন্তা হলো, এটা কি হার্টের রোগ টোক নাকি৷
"উমমম, ভুল বলে ফেলেছি।"
এইটুকু আদিল বলে অল্প হাসলো৷ পূর্নবার বলল,
" কেমন আছো মুগ্ধতা? "
মুগ্ধতা প্রতুত্তরে কিছু বলতে পারলো না। এর আগেই পারভিন বসার ঘরে এগিয়ে এলেন। মুগ্ধতা ঝটপট ফোনটা আগের জায়গায় রেখে দিল।
.
বাম হাতের তালুতে আদিলের নাম্বার লিখে নিয়ে এলো মুগ্ধতা। কাজটি অতোটা সহজ ছিল না। জেঠিমার চোখে ধুলো দেওয়া চারটে খানি কথা না। নাম্বার টা খাতার একটা পৃষ্ঠায় লিখলো।
সঠিক লিখেও নাম্বার কেটে নতুন পৃষ্ঠায় গেল মুগ্ধতা। আবারো একি কান্ড করে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে আরেকটি ফকফকা পৃষ্ঠায় লিখতে শুরু করলো।
নিজের লেখাকে কুৎসিত লাগছে মুগ্ধতার কাছে। নাম্বার টা আরো সুন্দর করে লিখতে হবে মনে মনে ভাবনা।
.
হাঁপিয়ে ফোনটা অফ করে আদিব আদিলের বিছানায় শায়িত হলো। স্বেদজলে জুবুথুবু শরীর। আদিল শুয়েই ছিল। চিন্তায় মগ্ন আদিব। বুঝলো সিরিয়াস কিছু। আদিল নিজেই জিজ্ঞেস করলো,
" কি হয়েছে ভাইয়া? তোমায় এমন লাগছে কেন?"
আদিব দম নিলো। মনের কথা বলার বিশ্বস্ত মানুষ এ পৃথিবীতে আদিল। যদিও বেশির ভাগ সময় কাটে আদিলের বড় আন্টির বাসায়। এক প্রকার নাকানিচুবানি খেয়ে বলল,
" সুখে থাকতে ভুতে কিলাইলে যা হয়। সে দশা আমার। একটা রিলেশন ভালো লাগছিল না। প্রচুর প্যারা দেয় মিলি। তাই সুখে থাকার জন্য আরেকটা রিলেশনে গেলাম। কিন্তু দুজনে এত প্যারা দিচ্ছে, নিতে পারছি না।"
আদিবের কন্ঠস্বর শোচনীয়। পারছে না কান্না করতে। আদিল সব শুনে বলল,
" এখন তুমি কি চাচ্ছো?"
"ঘাড় থেকে নামাকে। কিন্তু পারছি না।"
আদিল বলল, " আমার অভিজ্ঞতা নেই। তাই তোমায় সাহায্য করতে পারছি না।"
আদিব দুঃখী স্বরে বলল, "জীবনে আর যাই কর৷ প্রেম করিস না। যদি প্রেম করিস একটা,কিন্তু দুইটা না।"
.
আসরের আযান মসজিদে মসজিদে হচ্ছে। বাহিরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মুগ্ধতা পড়তে বসেছে।
মুগ্ধতা এইবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে।
পড়ার চেয়ে মুগ্ধতার বইয়ে আঁকাআকি বেশি করছে। আমেনা মেয়েকে পাহারা দিচ্ছেন। পায়চারি করছেন সারা বাড়ি। মেয়ের কান্ড চোখের আড়াল হচ্ছে না। তিনি ঘরে গিয়ে পড়ার টেবিলে দাঁড়িয়ে বললেন,
"পড়াশোনা হচ্ছে কিছু?"
মুগ্ধতার কলম থামলো। বোকা চোখে মায়ের দিকে চাইলো। তোতলানো স্বরে বলল,
"আসলে মা...!"
আমেনা বিদ্রুপ কন্ঠে বললেন,
" খুব পড়াশোনা হচ্ছে দেখি।"
মেয়েকে বকতে ইচ্ছে করলো না আজ আর আমেনার। তিনি রুমের বাহিরে চলে গেলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেয়ের ইন্টার পাস করলেই একটা ভালো ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ে দিবেন। এই কয়েকমাস যত ইচ্ছে উড়ুক।
.
জয়দেবপুরে ফিরবে আজ আদিল। মুগ্ধতার সঙ্গে কাল ফোনে কথা হয়েছে। রাত বারোটা নাগাত। মুগ্ধতার বাবা মা ঘুমে তখন কাঁদা। সেই সুযোগে মুগ্ধতা মায়ের ফোন ছিনতাই করে।
মিষ্টি আবহাওয়া। সূর্যের কিরণ নিহাত দুর্বল। বিকেল চারটার কাছাকাছি। প্রগতির সঙ্গে বাজারে এসেছে মুগ্ধতা। মূলত শার্ট কিনতে। কালকে প্রগতির বয়ফ্রেন্ডের জন্মদিবস।
প্রথমেই তারা চাঁদের হাঁটে গেল। কালেকশন বেশি একটা ভালো লাগলো না। তাই বাসস্ট্যান্ড রোডের দুই তলার উৎসবে গেল। এখানে শার্ট ভালো লাগলেও শার্টের কালার ভালো লাগছে না। তাই তারা পাশের রঙের ছোঁয়ায় গেল। পুরো বাজার ঘুরে মন আটকালো এইখানেই। শার্ট গুলো সুন্দর। প্রগতির বয়ফ্রেন্ডের শার্ট বাছাই করতে করতে মুগ্ধতাও একটি শার্ট কিনে ফেললো।
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com