বিরহ মিছিল । পর্ব - ০৮
অটোরিকশা স্থিতিশীল হলো কানায়া ব্রিজে। মাত্র ত্রিশ মিনিটের পথ ছিল এইখানে আসতে। আদিল অটো হতে নেমে ভাড়া মিটালো। মুগ্ধতা আলগোছে নামলো। ব্রিজের দু'দিকে নদী দেখা যাচ্ছে। মানুষের কোলাহলে চারপাশ গিজগিজ করছে। ব্রিজ পেরিয়ে দুজনে আঁকাবাকা ইটের রাস্তায় উদ্যত হলো।
গ্রাম গ্রাম আমেজ অনুভব করছে মুগ্ধতা। রাস্তার দুদিকে গাছ, গাছ আর গাছ। রাস্তার পাড় ঘেঁষে রেস্টুরেন্ট। মুদির দোকান ঝালমুড়ির গাড়িও দেখা যাচ্ছে। তার পাশেই বিশাল এক নদী। বেশ কিছু নৌকা নদীর পাড়ে বাঁধা। আদিল সেই দিকে গেল। যাওয়ার সময় মুগ্ধতা কে হুকুম জারি করলো,
" আমার সঙ্গে সঙ্গে আসো।"
মুগ্ধতা ত্বরিতগতিতে আদিলের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনে এগোলো। আদিল এগিয়ে স্থির পায়ে দাঁড়াল নদীর পাড়ে। নৌকায় বসা এক মাঝিকে বলল,
" ঐ পাড়ে যাবে মামা?"
আদিল ঈষৎ চোখে ইশারা করলো। মাঝি আদিলের উত্তর না দিয়ে সোজা টাকার প্রসঙ্গে গেল,
" এক ঘন্টা ঘুরলে দুইশো পঞ্চাশ টাকা, দুই ঘন্টা হলে পাঁচশ!"
আদিল বিরক্ত মুখে মাঝির দিকে তাকালো। এখনো যাবে কিনা সেটাই ঠিক হলো না, নৌকায় উঠলো না। লোকটা টাকা প্রসঙ্গে চলে গেল। অদ্ভুত!
আদিল নিজের বিরক্ত প্রকাশ না করেই বললো,
" জি।"
মাঝির সাথে আদিলের কোন রূপ কথা হলো না। মুগ্ধতা চুপ করেই আছে। মাঝি একটি শক্ত তক্তা নৌকায় ঠেকিয়ে হাঁক ছাড়লো,
" এইটা উপর দিয়ে হেঁটে আসেন ।"
মুগ্ধতা প্রফুল্লচিত্তে আগে ছুটলো। আদিল এগোলো তার পিছুপিছু। নৌকা ইতি মধ্যে চলছে। মুগ্ধতা, আদিল এক পাশে বসলো। মাঝি আরেকপাশে দাঁড়িয়ে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালাচ্ছে।
ঠান্ডা বাতাস বইছে চারিদিক। মুগ্ধতার চুল আলুথালু প্রায়। নৌকা নদীর মাঝখানে অবস্থান করছে। আর একটু নৌকা এগোতেই সাদা শাপলার দেখা মিললো নদীতে। ফুটন্ত শাপলা,কলি,পাতা! মুগ্ধতা আদিল কে অনুনয় না করে সে নিজে নৌকার কিনারায় ঝুকলো। আদিল ব্যস্থভঙ্গিতে মুগ্ধতার পাশে গিয়ে রা ম ধমক দিলো,
" কি হচ্ছে কি? নদীতে পড়ে যাওয়ার ধান্দা করছো?"
মুগ্ধতা স্মিত হেসে শাপলা ফুল আদিলকে হাত দিয়ে নেড়ে দেখালো। বলল,
" শাপলা ফুল ছিঁড়ছিলাম।"
বলতে বলতে মুগ্ধতা উঠে পূনরায় আগের ন্যায় বসলো। আদিল তীর্যক কন্ঠে বলল,
" দেখতেই পারছি।"
নদীর শেষ মাথায় নৌকা থামলো। মাঝি বৈঠা নৌকায় রাখলো। নৌকার পিছনে লাল বর্ণের ঘাট দেখা যাচ্ছে। মুগ্ধতা দিক বেদিক পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। নেটওয়ার্কের টাওয়ার নদীতে অনেকগুলো। নৌকা দুলছে মৃদু বাতাসে। মাঝি বলল,
" এই টাই নদীর শেষ দিক।"
মুগ্ধতা মাঝিকে পরোক করল। বয়স বেশি নয় বিশ হবে। চেহারা মন্দ নয়। আদিল ললাটে ভাজ ফেলে বলল,
" এখানে কিছুক্ষণ থাকবো আমরা। সেই টুকু সময় নৌকা চালাতে হবে না। আপনি আমাদের সঙ্গেই থাকুন।"
যুবক মাথা ঘামালো না। বলল,
" ঠিক আছে।"
মুগ্ধতা উৎকন্ঠা স্বরে বলল,
" আদিল ঐদিকে দেখ বড় একটা বাংলো দেখা যাচ্ছে।"
আদিল মুগ্ধতার ইশারায় চোখ রাখলো সেখানে। মাঝি গর্ব করে বলল,
" অনেক বড় বাংলো আপা। যাবেন নাকি?"
মুগ্ধতা বলল,
" আদিল।"
" নিয়ে যেতে পারবে মামা?"
মাঝিকে জিজ্ঞেস করলো আদিল। মাঝি গদগদ কন্ঠে বলল,
" পারবো না কেন? আমার আব্বা এই বাংলো দেখাশোনা করে। চলেন, চলেন।"
আদিল সন্তোষ কন্ঠে বলল,
" চলুন তাহলে।"
মাঝি নৌকা চালিয়ে ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল। মুগ্ধতার চোখ মুখে কৌতুহল, উচ্ছ্বাস। মুগ্ধতার অগোচরে আদিল সেই মাধুর্য বদন দেখলো।
মাঝির ব্যবহারে বোঝা গেল অতি চাপা স্বভাবের সে। হয়ত পরিস্থিতি দায়ী। বেশ বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করছে। নদীর ঘাটে নৌকা বেঁধে তারা সবাই নামলো। বিশাল বড় ঘাট। মুগ্ধতা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। আদিল মুগ্ধতার কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল। এক প্রকার চোখেচোখে রাখছে মুগ্ধতা কে। এ মেয়ের যে স্বভাব কখন কোথায় গায়েব হবে কে জানে।
আদিল ও মুগ্ধতার উদ্দেশ্যে মাঝি বলল,
" চলেন আপা। ভিতরটা আরও সুন্দর। আপনাদের নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগবে।"
মুগ্ধতা সহমত পোষণ করলো। আদিল মুখে বলল,
" যাওয়া যাক তবে।"
ফল,ফুলের গাছে বাংলোর আশপাশ দখল। একটি কুলবড়ই গাছ কুলবড়ইয়ের ভারে কান্ড, ডাল মাটিতে নুইয়ে গেছে। মুগ্ধতার কুলবড়ই আগে থেকেই খেতে ভালো লাগে। এরূপ গাছ দেখে হাত নিশপিশ করছে দুটো ফল হাতে আঁজলায় নিতে। নিতে পারছে না যদি কেউ এসে বকা দেয়। আদিলের দৃষ্টিগোচর হলো না ব্যাপারটি। মুগ্ধতার ইতস্ততভাব ও হয়তো বুঝলো। মাঝি তার পাশেই ছিল। মাঝিকে বলল,
" মামা কয়টা কুলবড়ই ছেড়া যাবে?"
"যাবে।"
এক কথায় উত্তর দিল মাঝি। আদিল মুগ্ধতার দিকে এগিয়ে গেল। কুলবড়ই কয়েকটা ছিঁড়ল ধীর গতিতে। মুগ্ধতার হাতের আঁজলায় কুলবড়ই দিয়ে বলল,
" থ্যাংক গড! তোমার লজ্জা বলে কিছু আছে।"
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com