বিরহ মিছিল । পর্ব - ১০
জেঠিমার বাড়িতে সকালে মেহমান এসেছে, সে কথা মুগ্ধতা শুনে তড়িঘড়ি করে সে জেঠার বাড়িতে গেল৷ মূলত দেখতে,কে এলো। সবে নিজের পাতে এক চামুচ ভাত নিলেন পারভিন। মুগ্ধতা এ মুহূর্তে উপস্থিত। পারভিনের চোখমুখ বিষন্নতায় ছেয়ে। মুগ্ধতার আঁখিতে এড়ায় না। মুগ্ধতা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো। বড্ড অসময়ে এসে পড়েছে। অন্তত
খাওয়ার আগে বা পরে আসা উচিত ছিল।
মুগ্ধতার ধ্যান কাটলো মেয়েলি আওয়াজে,
" আরে মুগ্ধতা যে কেমন আছো?"
লহমায় ডাইনিং টেবিলের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো মুগ্ধতা। আদিলের খাওয়া থামলো। পারভিন আগে থেকেই অমনোযোগী। মুগ্ধতার আঁখি অনড়। জেঠিমার ছোট বোন কোহিনূর। মন খারাপ হলো ভীষণ। উনাকে অপছন্দ মুগ্ধতার। ভয়ংকর সত্য আদিলের জন্মদাত্রী মা কোহিনূর। ভদ্রতার খাতিরে নাকমুখ কুঁচকে সালাম বিনিময় করলো মুগ্ধতা। ঠোঁটে হাসি নেই।বলল,
" ভালো, মাত্রই এলাম আন্টি।"
পারভিন বিষন্ন মুখে মুগ্ধতা কে হাঁক ছাড়লেন,
" মুগ্ধতা আয় খেতে বস।"
মুগ্ধতা জবাবে কিছু আওড়াতে চাইলে কোহিনূর ও বললেন,
" এসো মুগ্ধতা।"
মুগ্ধতা কিছু বলতে চেয়ে পারলো না। মুগ্ধতা ধীর পায়ে চেয়ার টেনে বসলো। পারভিন উঠে মুগ্ধতা কে ভাত বেড়ে দিলেন। পাতে লাউ শাকের পাতা দিয়ে ইলিশের শুটকি ভর্তা, ভুনা ডাল, কচু পাতা ভর্তা। পারভিন পূনরায় চেয়ারে বসলেন। মনমেজাজ ঠিক নেই। চুপচাপ। অন্যদিন হলে মুগ্ধতার সঙ্গে খেজুরে আলাপ জুড়তেন। আজ হিসাবটা অন্য। মুগ্ধতা বেশ জানে এর জন্য দায়ী একমাত্র কোহিনূর। চরম সত্য টি মুগ্ধতা মানতে নারাজ। সে মনে প্রাণে মানে আদিল তার জেঠিমার সন্তান।
খাওয়ার ফাঁকে মুগ্ধতা দিকে চাইলো আদিল। মুগ্ধতা আনমনে খাচ্ছে। আদিলের সকালের কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটা তাকে বিভ্রান্ত করতে সর্বক্ষণ প্রস্তুত।
আদিলের আজ এসএসসি পরিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটলো। ভোর থেকেই অম্বর গুড়গুড় আওয়াজ করছে। সম্ভবত বৃষ্টি আসবে। কোহিনূর পরিক্ষা শেষ হওয়ার তিন আগে ফোনে বলে রেখেছেন। এইবার দুই সপ্তাহের জন্য হলেও তাদের বাড়ি এসে আদিলকে থাকতে হবে৷ অনুরোধ বলা যায়। পারভিন বিষন্ন মুখে অনুমতি প্রদান করেছেন।
মুগ্ধতার কানে খবর এসেছে, আদিল আজ কোহিনূরের বোডবাজারের বাড়িতে উঠবে। মন খারাপ ভীষণ মুগ্ধতার। দুই সপ্তাহ কম সময় নয়।
কলেজ ছুটি মুগ্ধতার। আজ কোন ক্রমেই কলেজে আসতে চায়নি৷ মা তাকে জোর করে কলেজ পাঠিয়েছে। ভীড়ের মধ্যে একা একাই কলেজ গেট পেরিয়ে বাসার পথ ধরলো। বিড়বিড় করলো,
" আদিল কি চলে গেছে বোডবাজার,তার কি কষ্ট হচ্ছে না?"
বক্ষস্থল কিঞ্চিৎ ভার হয়ে এলো। ক্রন্দন করবে করবে ভাব। দিশেহারা পথে পায়ের গতি বাড়ালো৷ আদিল নিশ্চয়ই এখনো বাসায়। হাতের ঘড়িতে একবার চোখ বুলালো। ভাবনায় মশগুল হলো।
" কি ভাবছো এতো?"
ললাটে ভাজ ফেলে আদিল বলে উঠলো। মুগ্ধতার ভাবনা হাওয়ায় মিইয়ে গেল। আশ্চর্য কন্ঠে চোখ ডাগরডোগরে শুধালো,
" আদিল! তুমি এখানে।"
আদিলের নম্ন উত্তর,
"আসতে পারি না?"
মুগ্ধতা প্রতিত্তোর না করে আদিলের পায়ের দিকে নজর গেল। মাটিতে টলি ব্যাগ দাঁড় করানো। মনটা লহমায় বিষাদ হলো। আদিল পূর্নবার আওড়াল,
" কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেন?"
মুগ্ধতা ভেজা কন্ঠে বলল,
"তুমি চলে যাচ্ছো আজকে?"
ফুসফুস তাড়িত বাতাস বেরিয়ে এলো আদিলের।বলল,
"হুম।"
"কবে ফিরবে?"
"কিছুদিন পর।"
"একা যাচ্ছো?"
" সঙ্গে যাবে?"
"না।"
একরোখা জবাব মুগ্ধতার। মৌনতা বজায় রইল বেশ কিছুক্ষণ। মুগ্ধতা নাক টানছে খানিকক্ষণ পরপর। আদিলকে যেতে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কি করে বুঝাবে তাকে৷ ভাবলো, আচ্ছা আদিলের ও কি তার মতো কষ্ট হচ্ছে।
" নিজের যত্ন নিয়ো। "
মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আদিল বলল। মুগ্ধতার চোখ উপচে অশ্রুজল গাল বেয়ে গেল৷ আদিল সাহস করে কম্পিত হাতে মুগ্ধতার চোখের জল মুছে দিল। মুগ্ধতার ক্রন্দন বাড়লো। আদিল
ঠান্ডা বরফের ন্যায় বলল,
" আমার আগমনে তুমি চোখের পানি ফেলবে জানলে, কখনো আমি এখানে আসতাম না।"
চলবে~
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com