এক মুঠো রোদ । পর্ব - ০৭
রিয়া বিছানা থেকে উঠে এসে মামুনের হাত ধরে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে আসে।
--কি সব উল্টাপাল্টা বলতেছিস? মিষ্টি কি ভাববে? মেয়েটা এসবে একদম অভ্যস্ত নয়, কষ্ট পাবে।
মজা করিস না ওর সাথে।
--হয়ে লাভ কি? তোর কপালে এমন মেয়ে নাই।
--বিয়ে করবো মিষ্টিকে।
--স্বপ্নই দেখে যা।
--বিশ্বাস হয় না?
--না। আম্মু তোর জন্য ৭-৮টা প্রোপজাল নিয়ে এসেছিলো।
একটাও তো তোর পছন্দ হয়নি। এখন বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলি কেনো?
--ওদের মধ্যে তো আর মিষ্টি ছিলো না।
--চাপাবাজি বন্ধ করে রুমে যা, ঘুমাবো।
--আচ্ছা...।
বলেই রিয়াকে পাশ কাটিয়ে মামুন রিয়ার রুমে ঢুকে পড়ে।
--আরে, এখনে না। তোর রুমে যা।
কে শোনে কার কথা। মামুন সোজা মিষ্টির সামনে গিয়ে বসে।
রিয়াও পেছন পেছন এসে মামুনের পেছনে দাড়ায়।
--ভাইয়া, ঘুম পাচ্ছে, এখন যা।
--যাবো তো, তোর ভাবির একটু খেয়াল রাখিস।
পেছন থেকে রিয়া মামুনের পিঠে চিমটি কেটে ওঠে।
--যা এখান থেকে।
--যাচ্ছি বাবা, তুই শুধু আমার রুমে যাইস। দেখবি আমিও প্রতিশোধ নিবো।
রিয়া পেছন থেকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে মামুনকে বাহিরে এনে দরজা লাগিয়ে দেয়
পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে মিষ্টি ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
--ভাইয়ার কথায় কিছু মনে করিও না। ও এমনই, শুধু মজা করে।
--কিন্তু এটা তো মজা না। উনি সত্যিই এমন বলেছে।
--কি সত্যি?
--তুমি কি আসলেই কিছু জানো না?
--নাতো।
--সকালে তোমার আম্মুকে জিজ্ঞেস করিও।
--না না, এখন বলো কি হয়েছে।
--তোমার ভাইয়া যা বলেছেন সবই সত্যি।
--কোন ব্যাপারে? ভাবি?
--হুম।
--কি বলছো? কিভাবে?
--কাল তোমার আম্মু ডেকে আমায় জিজ্ঞেস করলো আমি রাজি কিনা।
--তাই? রাজি হয়ে যাও প্লিজ, না করিও না।
--আগামী শুক্রবার বিয়ে।
--অ্যাহ? বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে?
--হুম।
--আমিকে তো কেউ কিছুই বললো না।
--একটু আগে আমায় ডেকে বললো।
--যাক বাবা, ভালো হয়েছে। ওই গাধা কিভাবে তোমায় রাজি করালো?
--প্রপোজ করেছিলো দুপুরে...।
--ইসসস, এত তাড়াতাড়ি রাজি না হয়ে শয়তানটাকে নাকে রশি লাগিয়ে ঘুরাইতা। আমায় অনেক জ্বালিয়েছে।
--তাই?
--হুম। আমার তো সেই খুশি লাগতেছে। আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে তুমিই পারফেক্ট।
আমি তো অনেক আগে থেকেই মনে মনে ভাবতাম তোমায় যদি ভাইয়ার বউ বানাইতে পারতাম।
কিন্তু কি না কি মনে করো এই ভয়ে কখনো জিজ্ঞেস করতে পারিনি।
এখনতো আর ভয় নেই, সারাজীবন আমাদের সঙ্গেই থাকবে।
--আমারো খুব খুশি লাগছে। যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
--ভাইয়াকে পেয়ে?
--একটা পরিবার পেয়ে। কখনো ভাবিনি আমার একটা পরিবার হবে।
যাদের নিয়ে আমি ভাববো, যাদের ওপর আমার অধিকার থাকবে।
ভেবেছিলাম জীবনটা বুঝি শেষই হয়ে যাবে। পুরো অন্ধকার হয়ে গিয়েছিলো জীবনটা।
শুধু এক মুঠো রোদ এর অপেক্ষায় ছিলাম।
আল্লাহর কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া আমায় একটা পরিবার দেওয়ার জন্য।
--ধুর, এখানে কান্না করার কি আছে? আমরা সবাইও খুব খুশি তোমায় পেয়ে।
আল্লাহ কার ভাগ্যে কি রেখেছেন তা আমরা কেউ জানি না।
আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
--হুম।
--এখন আর কি, ইনজয় করো। চুটিয়ে প্রেম করো দুজন।
--যাহ, কি যে বলো না!
--ওমা, এত লজ্জার কি আছে?
--আমি পারবো না এসব প্রেম টেম করতে।
--বিয়ের তো এখনো ৪ দিন বাকি। দেখবো আপনি কি করেন।
--কিছুই করবো না।
--দেখা যাবে।
.
পরদিন সকালে মিষ্টি নাস্তা বানানো শেষে প্রতিদিনের মতো মামুনকে ঘুম থেকে জাগাতে যায়।
প্রতিদিনের মতো জাগাতে আসলেও আজ অনুভূতিটা প্রতিদিনের মতো না।
কেমন যেনো সারা শরীরে শিহরণ বয়ে চলছে।
মিষ্টি মামুনের রুমটা চারদিকে ভালো করে লক্ষ্য করে।
কিছুদিন পরতো এই রুমটা তারই হবে।
রুমটায় ঘুরে ঘুরে মনে মনে ভেবে রাখে কোন জায়গায় কি জিনিস রাখবে,
কিভাবে সাজাবে, কি পরিবর্তন করবে। ধীরেধীরে মামুনের কাছে এসে ঠায় দাড়ায়।
কিছুদিন পরতো মানুষটাও আমার হবে, সম্পূর্ণ আমার।
যার ওপর শুধু আমার অধিকার থাকবে, যাকে মনের সব কথা খুলে বলতে পারবো,
যার বুকে মাথা রেখে ইচ্ছে মতো কাঁদতে পারবো,
যে আমার কষ্টগুলো নিজের করে নিয়ে আমায় হালকা করে দিবে,
আমায় খুব ভালোবাসবে, যার সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না জুড়ে শুধু আমিই থাকবো।
আচ্ছা, বিছানাটা কেমন যেন খালি খালি লাগছে না?
ওই পাশটায় বুঝি আমি ঘুমাবো? ইসসসস, ভাবতেই আমার কি লজ্জা লাগছে।
এক বিছানায় আমার পাশে একটা পুরুষ মানুষ থাকবে, যে হলো আমার স্বামী।
আচ্ছা, তাকে আমি কি বলে ডাকবো? ওগো শুনছো? নাকি শুনছেন?
যা ইচ্ছা তাই ডাকবো, সে তো আমারই। তার ওপর না আমার পুরো অধিকার আছে?
সে একদম রাগ করবে না আমার ওপর। কেনই বা রাগ করবে?
আমার এক পৃথিবী জুড়ে তো শুধু এই মানুষটাই থাকবে।
সে আমায় একটুও কষ্ট দিবে না। দিলেও ভালোবেসে আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে।
এত্তগুলো ভালোবাসবো তাকে, এএএএএত্তগুলোওওওও।
ধীরেধীরে মামুনের মাথার সামনে দাড়ায় মিষ্টি। একটু নিচু হয়ে মামুনের মুখোমুখি হয়ে বসে।
মিঃ... আপনাকে কি এখন থেকেই ভালোবাসবো? নাকি বিয়ের পর?
এত্ত এত্ত ভালোবাসা আসছে আপনার জন্য।
জানেন, মনে মনে আপনাকে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছি।
আপনার সাথে এটা করবো ওটা করবো আরো কত কি।
আপনাকে না আমি সেই প্রথম থেকেই খুব পছন্দ করতাম।
আমার কি দোষ বলুন।
এই জীবনে যত পুরুষ মানুষের সামনাসামনি হয়েছি তারমধ্যে শুধু দুজনই
আমার কাছে ভালো মানুষ ছিলো। এক আমার বাবা, আর এক হলেন আপনি,
বাবাতো হারিয়ে গেছে। আপনি হারিয়ে যাইয়েন না প্লিজ।
এতকিছু হারিয়ে শেষ হয়েই যাচ্ছিলাম, সেই আপনিই আমায় বাচালেন, স্বপ্ন দেখালেন।
এখন আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে, আপনাকে নিয়ে।
আচ্ছা আপনার ওপর যদি আমি অধিকার দেখাই, তাহলে আপনি কি রাগ করবেন?
করিয়েন না প্লিজ, একটু কষ্ট করে মেনে নিয়েন।
--এত বিড়বিড় না করে স্পষ্ট করে বলো। কিছুই বুঝি না।
মামুনের জবাব শুনে মিষ্টি ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাড়ায়।
--একি, আপনি কখন উঠলেন?
--যেভাবে শুরু করেছো, ঘুমিয়ে থাকা যায়?
--কিছু কি শুনেছেন?
--শুনেছিতো সবই, কিন্তু কি বলেছো বুঝিনি।
--আল্লাহ বাঁচাইছে। উঠেন, নাস্তা রেডি।
--আসছি।
--তাড়াতাড়ি আসেন, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
--আচ্ছা।
মিষ্টির বকুনি খেয়ে তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে সোজা নাস্তার টেবিলে বসে মামুন।
ততক্ষণে সবাই নাস্তার টেবিলে হাজির।
টেবিলে বসে মামুন মাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে।
--আচ্ছা মা, বিয়ের জন্য কিছু কেনা-কাটা করা প্রয়োজন না?
--হুম তা তো লাগবেই।
--হাতে তো শুধু দুইদিন সময়। কিভাবে কি করবো?
কেনাকাটা, অফিসের ছুটি, দাওয়াত দেওয়া, সব কিছুর ব্যবস্থা করা।
একটু তো সময় লাগবেই। বলি কি, বিয়েটা একটু পিছিয়ে দিলে হয় না?
--কয়দিন লাগবে?
--আগামী শুক্রবারে দিলে হয়না?
--এতদিন?
--এতদিন বলতেতো শুধু ৯ দিন।
--সেটাতো অনেক সময়।
--আমার এখনো ছুটির আবেদন করা হয়নি। ২দিন তো এমনিতেই লেগে যাবে।
তো বাকি সব কিভাবে করবো?
--মিষ্টি....
--জ্বি মা।
--তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?
--না না মা, আমার কোনো সমস্যা নেই।
--তাহলে আর কি, আগামী সপ্তাহেই বিয়ে হবে।
মামুন মিষ্টির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপি দেয়।
মিষ্টি লজ্জা পেয়ে মামুনের পাশ থেকে এসে সানু বেগমের পাশে দাড়ায়।
--তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো? বাসো, নাস্তা করবে না?
--আপনারা খেয়ে নিন, এরপর আমি খাবো।
--রিয়াকে ডাকদিয়ে এসে এখানে বসো, একসাথে খাও।
--আপনাদের কিছু লাগলে?
--সবার হাত পা আছে, যার যেটা লাগবে সে নিয়ে খাবে। বসো।
--আচ্ছা।
নাস্তা শেষে মামুন মিষ্টিকে নিজের রুমে ডাক দেয়।
মামুনের আওয়াজ শুনে মিষ্টি দৌড়ে মামুনের কাছে ছুটে যায়।
--ডেকেছেন?
--হুম।
--কিছু লাগবে?
--শুধু কি প্রয়োজন পড়লেই তোমায় ডাকা যাবে? এমনি ডাকা যাবে না?
--তা নয়, আচ্ছা বলুন কি বলবেন।
--না বললে চলে যাবে?
--রিয়ার টিফিন রেডি করতে হবে।
--সেটা রিয়া নিজেই করে নিতে পারবে।
--তো এখন আমায় কি করতে হবে?
--তোমায় একটা জিনিস শেখাবো।
--কি?
--কিভাবে টাই বাঁধতে হয়।
--কেনো শিখতে হবে?
--বিয়ের পর তো তুমিই বেঁধে দিবে। তো শিখে নিবে না?
--আচ্ছা? আপনি চান আমি বেঁধে দেই?
--হুম।
--ঠিক আছে, শিখিয়ে দিন।
--এদিকে এসো।
.
--আচ্ছা, তখন চোখ টিপি দিলেন কেনো?
--চালাকি করে বিয়ের সময়টা বাড়িয়ে নিলাম।
--কেনো?
--ইচ্ছে ছিলো প্রেম করে বিয়ে করবো। সেটা আর হলো কই, তাই এই এক সপ্তাহ তোমার সাথে প্রেম করবো।
--যাহ, কি যে বলেন।
--কি হলো?
--আমি এসব করতে পারবো না।
--কেনো?
--আমার লজ্জা করে।
--ওমা, এত লজ্জা?
--হুম, যা করার বিয়ের পর করিয়েন। বিয়ের আগে আমি পারবো না।
--আচ্ছা? এদিকে এসো......
মিষ্টির হাতটা ধরে একটা হেচকা টান দিয়ে একদম নিজের সামনে নিয়ে এসে...
--এবার বলো কি যেনো বলছিলে....
মিষ্টির একনজরে মামুনের চোখের দিকে চেয়ে আছে...।
--কি দেখছো?
--আপনাকে।
--এভাবে দেখার কি আছে?
--আপনাকে কখনো এতটা কাছ থেকে দেখিনি। বুকের মধ্যে কেমন ধুকধুক করছে।
--আমায় কি মন থেকে মানতে পেরেছো?
--হুম।
--ভালোবাসো?
--জানি না।
--ছেড়ে দেবো?
--না
--তাহলে বলো, ভালোবাসো?
--হুম
--সারাজীবন এভাবে ধরে রাখি এটা চাও?
--হুম
--বিনিময়ে আমি কি পাবো?
--যা চাইবেন তা।
--পারবে দিতে?
--যদি আমার সাধ্যের মধ্যে থাকে।
--আছে।
--তাহলে পারবো, বলুন কি চান।
--তোমার ভালোবাসা।
--হুম। আর কিছু?
--হুম, অনেক কিছু। সেটা না হয় বিয়ের পরই বলি।
--এখন বললে হয় না?
--বললেই তো লজ্জা পাও।
--তাহলে থাক।
উহু উহু...... পেছন থেকে রিয়া কাশি দিয়ে ওঠে।
রিয়ার কাশির শব্দে মামুন আর মিষ্টি দুজন আলাদা হয়ে যায়..।
--মিষ্টিকে সারা বাড়ি খুজেও পেলাম না, তাই এখানে আসলাম। বিরক্ত করলাম নাতো?(রিয়া)
মিষ্টি আস্তে করে রিয়াকে পাশ কাটিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়
--দেখছিস তোর ভাবির সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা চলছিলো, মাঝখানে কাবাবের হাড্ডি হয়ে চলে এলি। চলে গেলে কি হতো?
--সরম কর, দরজা খুলে এসব করছিস। আম্মু দেখলে তোর খবর আছে।
--দেখবে না। যা স্কুলের সময় হইছে।
--হুম, তোকে আম্মু ডাকে।
--কেনো?
--জানি না।
--আচ্ছা আসতেছি।
অফিসের জন্য তৈরী হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মামুন মায়ের রুমের দিকে যায়।
--মা ডেকেছো?
--হুম।
--কিছু বলবে?
--হুম, একটা বিষয় খেয়াল করলাম। তাই ভাবলাম তোকে বলি।
--কি?
--শেষ ৩-৪দিন যাবত একটা লোককে বাসার সামনে ঘুরঘুর করতে দেখি।
--অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়?
--হ্যা, কাল দুপুরে বারান্দায় বসে ছিলাম। লোকটাকে দেখলাম বাসার আশেপাশে পায়চারী করতেছে।
--অস্বাভাবিক কি দেখলে?
--নির্দিষ্ট ভাবে আমাদের বাসার সামনেই পায়চারি করছে। এটা কি অস্বাভাবিক নয়? দেখলাম কিছুক্ষণ পর পর বারান্দার দিকে তাকায়, কিন্তু যখন মিষ্টি বারান্দায় এলো, লোকটা মিষ্টির দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিলো। এমন মনে হলো যেনো লোকটা মিষ্টিকে চেনে।
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com