Breaking News

ভালোবাসি প্রিয় । পর্ব - ০২

বিয়ের সাজে বসে আছি। আমার বাবা একজন নামকরা ব্যবসায়ী হ‌ওয়ার পরে ও বিয়েতে খুবই সামান্য আয়োজন করেছেন। বাবার না হ‌ওয়া জামাই নাকি তাকে এই সামান্য

আয়োজন করতে বলেছেন।কেননা বিয়ের নামে মা*ত্রা*তি*রি*ক্ত খরচ অনেক সময়

মা*রা*ত্ব*ক অপব্যয় ও অপচয়ের শামিল।

এই কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কম খরচে বিয়ে সম্পন্ন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

একটি হাদিসে এসেছে, যেইখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "নিশ্চয় সে বিয়ে বেশি বরকতপূর্ণ হয় যে বিয়েতে খরচ কম হয়।[আহমাদ , শুয়াবুল ইমান]
আম্মার কথা আজ খুব মনে পড়ছে।
আম্মা বেঁ*চে থাকলে হয়তো আমার আমাকে কখনোই এমন একটা থার্ড ক্লাস ছেলের সাথে বিয়ে দিত না। বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনে স্বপ্ন থাকে। আমি ও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না।
আমার সব স্বপ্নে পানি ঢেলে দিল ঐ ব্যাটা রাজ যাকে কিনা আমি এখন ও দেখি নি।
যদি ও বাবা বলেছিল রাজের সাথে মিট করতে, কিন্তু আমি না করে দিয়েছি।
তবে লোক মুখে যতটুকু শুনেছি অনুমান করতে পারছি যে রাজ নিশ্চয় বাটুল হবে,
মাগুর মাছের মত কালো হবে,ট্যাপা মাছের মত পেট হবে, শিং মাছের মত দাড়ি থাকবে ,
আহ্ এর থেকে বেশি আর কি লাগে?
.
রাজ কে নিয়ে ভাবছিলাম এর‌ই মধ্যে দেখি শীতলের আম্মা খাবার নিয়ে আসছে।
এই মহিলা কে আমি যত দেখি ততই অবাক হয়ে যায়।
আমি হাজার বার বারন করেছি আপনি আমার আশেপাশে আসবেন না,
আমার কোন জিনিসে আপনি হাত দিবেন না।
ত অপমানিত হ‌ওয়ার পরে ও আমার রুম গোছানো থেকে শুরু করে আমার কাপড় চোপড় পর্যন্ত ধুয়ে দেয়। আবার ছুটির দিনে আমার পছন্দের নানা আইটেম রান্না করে।
কুয়াশা মা তুমি দুই দিন কিচ্ছু খাও নি। একটু খাবার খেয়ে নাও।
না খেয়ে থাকলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।
আমি জানি তুমি আজ ও শীতলের আম্মা কে নিজের আম্মা হিসেবে মানতে পারো নি। কিন্তু ‌
তুমি আমাকে মা হিসেবে মানো বা না মানো
আমি কিন্তু কখনোই শীতল আর তোমাকে আলাদা চোখে দেখি নি।
আমি শীতল কে যতটা ভালোবাসি তোমাকে বরং তার থেকে বেশি ভালোবাসি।
শুধু গর্ভে ধারণ করলেই মা হ‌ওয়া যায় না।
এইটা তুমি এখন বুঝবে না নিজে যখন মা হবে,
তোমার ভিতরে যখন মাতৃত্ব বোধ জাগ্রত হবে তখন বুঝতে পারবে
তোমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী,শীতলের আম্মা ঠিক তোমাকে কতটা ভালোবাসত?
ভালো তো আমাকে সবাই বাসে।
অনেকেই তো বলে ভালোবাসি প্রিয়, কিন্তু সেই ভালোবাসা শুধু নামে মাত্র।
তা না হলে কি আমার নিজের বাবা কখন ও আমাকে এমন একটা আনস্মার্ট ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইতো?
আমি বুঝতে পারছি মা তুমি এই বিয়ে টা মানতে পারছ না। কিন্তু আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্য করেন।জানো তো মা সূরা আনফালের ৩০ নং আয়াতে বলা হয়েছে "নিশ্চয় আল্লাহ‌ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী"। আমাদের কিসে মঙ্গল হবে সেইটা তো আল্লাহ ভালো জানেন। তুমি দেখ.....
অনেক ক্ষুধা লাগছে আমার।আমাকে একটু আপনার হাতে খাইয়ে দিবেন? কথাটা বলার পর
দেখি উনার চোখ পানিতে চিকচিক করছে। হয়তো আমার থেকে এতো
ভালো ব্যবহার আশা করে নি। আর করবেই বা কিভাবে? আমি তো তার সাথে কখনো ভালো
ব্যবহার করি নি। অবহেলা, অপমান ছাড়া কিছুই পান নি আমার থেকে।
কিন্তু সেদিন হঠাৎ করে উনি অসুস্থ হ‌ওয়ার পর থেকে কেন জানি না উনার জন্য
আমার মনে একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছে । হয়তো আম্মার মতো তাকে ও হারানোর ভয়
কাজ করছে।‌ কি হলো দিবেন না?
অবশ্যই দিব মা। আমি সবসময় চেয়েছি আমার দুই মেয়েকে আমি নিজে হাতে খাইয়ে দিব।
আর আজ এতো গুলো বছর পরে আল্লাহ আমার সেই ইচ্ছা পূরণ করল।
জানেন আপনি যখন শীতল কে খাইয়ে দিতেন, আমি দূর থেকে দেখতাম।
ভাবতাম আমি ও ছুটে এসে আপনার হাতে খাবো, কিন্তু আমার ইগো আমাকে আসতে বাধা দিত।
আজ এতগুলো বছর পর মনে হচ্ছে আমি আমার আম্মার হাতে খাচ্ছি।আম্মা ও
আমাকে ঠিক এই ভাবে খাইয়ে দিত। হঠাৎ দরজায় চোখ যেতেই দেখি বাবা
চশমা খুলে তার চোখের পানি মুছছে।
একি বাবা তুমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছ কেন? ভেতরে আসো। আর তুমি কান্না করছো কেন?
এ কান্না দুঃখের নয় মা। এটা সুখের কান্না। ফারজানা মা*রা যাওয়ার
পর আমি তোমার কথা ভেবে দ্বিতীয় বিয়ে করি। কিন্তু তুমি তাকে নিজের আম্মার জায়গা দিতে পারো নি।
সবসময় তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছ।আজ হঠাৎ রেহেনার
হাতে তুমি খাচ্ছো দেখে অনেক ভালো লাগলো।
আর একটা কথা , আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও ‌মা।
তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।তবে একটা কথা মনে
রেখ, বাবা মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।
আমি রাজের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছি। ছেলেটা অনেক ভালো।
তোমাকে অনেক সুখে রাখবে। তুমি আজ যাকে থার্ড ক্লাস, অশিক্ষিত, গেঁ*য়ো বলছো
এমন ও তো হতে পারে একদিন ঐ থার্ড ক্লাস লোকটা তোমার হাসি মুখের কারণ হলো,
তুমি তাকে নিয়ে প্রাউড ফিল করলে।
আমি তোমার এতোটাই বোঝা হয়ে গিয়েছি ,যার জন্য আমার গ্ৰাজুয়েশন টা ও
কমপ্লিট করতে দিলে না। আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলে।
দেখ মা বিয়ে একটা সামাজিক নিয়ম ও পারিবারিক বন্ধন। সমাজের নিয়মে
একটা মেয়ে সারাজীবন তার বাবার মায়ের কাছে থাকে না, একদিন না একদিন
তাকে বাবার ঘর ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যেতে হয়।
অন্যদিকে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
বান্দা যখন বিবাহ করে,তখন সে তার অর্ধেক ইমান (দ্বীন) পূর্ণ করে।
এত‌এব বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহ কে ভয় করে।
[ সহীহ‌ আল_জামিউস সাগীর ওয়া যিয়াদাতুহ হা/ ৬১৪৮,সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব ,‌ ইমাম আলবানী বলেন,হাদিসটি হাসান লিগাইরিহ]
অবশেষে বিয়ে টা হয়ে গেল।তিন‌ কবুলে আর একটা স‌ই দিয়ে হয়ে গেলাম আমি অন্য কারো স্ত্রী। একজন টিকটক সেলিব্রিটির বিয়ে হলো অথচ মিডিয়ার কেউ জানতে ও পারল না।
এমন কি আমার ফ্রেড সার্কেলের দুই একজন ছাড়া আর কাউকে জানানো হয় নি।
বিদায় বেলা বাবা ,শীতলের আম্মা, শীতল কান্নায় ভেঙে পরলেন।
বাবা রাজ কে বললেন, আমার উ*শৃ*ঙ্খ*ল মেয়েটা কে তোমার হাতে তুলে দিলে দিলাম বাবা ‌।
তুমি ওর খেয়াল রেখ বাবা।
আপনি চিন্তা করবেন না বাবা। কুয়াশা এখন আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমার দায়িত্ব। আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব কুয়াশাকে কে সঠিক পথে আনার।
র‌ওনা দিলাম নতুন ঠিকানায়। যদিও রাজ বাদে শ্বশুর বাড়ির সবাই আমার পরিচিত ,
তারপর ও ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছিল। লোকমুখে শুনেছি বিয়ের পরে নাকি
মেয়েরা বাবার বাড়ির আত্মীয় হয়ে যায়। বিয়ের আগে যেই বাড়িতে ছেঁড়া কাপড় ও পরা যায় ,
বিয়ের পরে নাকি সেই বাবার বাড়ি আসতে গেলে দশ বার ভাবা লাগে কোন‌ জামা টা পরে যাব?
তখন স্বামীর বাড়ি মেয়েদের সবকিছু হয়ে যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে চলে আসলাম আমার আপন ঠিকানায়।
.
চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com