Breaking News

মাধবীলতা । পর্ব -০৩



লোকটার কথা শুনে আমি আর স্থির রাখতে পারলাম না নিজেকে।

সারা শরীর একটা অদ্ভুত কম্পন দিয়ে উঠলো।এ কি করলাম আমি....!!

নিজের হাতে নিজের বড়ো বোনের এতো বড়ো একটা সর্বনাশ কিকরে করলাম আমি...???

এই কারণেই তখন ঐ ভদ্রমহিলাকে দেখে এতো পরিচিত মনে হয়েছে আমার...বার বার মনে হচ্ছিলো তার সাথে আমার যেন কোনো সম্পর্ক আছে...
নার্স আমার অস্থিরতা বুঝতে পারলো।
---ম্যাম,কি হয়েছে আপনার?আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন?
---আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো প্লিজ,আমি এখানে থাকতে চাই না।
---সেকি,এতোটা কষ্ট করে আসলাম দেখা না করেই চলে যাবো।কি বলছেন আপনি!
---ওহ,প্লিজ আমি ফিরে যাবো।এখানে আর এক মূহুর্ত নয়।তুমি কি বুঝতে পেরেছো আমার কথা।

অগ্যতা নার্স আমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
আমার পক্ষে এই মুহূর্তে নিজের পরিবারের লোকদের ফেইস করা সম্ভব নয় কিছুতেই।
কারণ আমি ভালো করেই জানি কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না আমি।
আমার জন্য এই পরিবারে এতো বড়ো একটা বিপর্যয় নেমে আসলো।
এই সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী।তবে শুধু আমি না।
আমাকে 'আন্দোলন'নামের সেই লোকটাকেও খুঁজে বের করতে হবে।
অর্থাৎ আমার বোনের প্রাক্তন স্বামীকে।
সে কেন আমার বোনের সন্তান নষ্ট করালো আমাকে দিয়ে,কি শত্রুতা ছিলো তার আমার বোনের সাথে।
এগুলো জানতে না পারলে মরেও শান্তি পাবো না আমি।
যে পাপ করেছি জীবনে,হয়তো একে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে তার কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
এইদিকে আমার মেডিকেল রিপোর্ট বের হতেও আরো কিছু সময় লাগবে।
তার আগে আমি জানতে পারছি না সত্যিই আমি প্রেগনেন্ট কিনা।
যদি এটা সত্যিই হয় তখন কি হবে এই ভেবে ভয়ে সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে আমার।

যতোদ্রুত সম্ভব হাসপাতালে ফিরে আসলাম আমরা।নার্স আমাকে বার বার ফিরে আসার কারণ জানতে চাইলেও আমি তার কাছে সবটাই গোপন করে গেলাম।
পরের দিন অনুরোধ আমার সাথে দেখা করতে আসে।আমি তাকে দেখে একটু হলেও স্বস্তি পাই।
---এবার বলো,তোমার মেডিকেল রিপোর্টের কি খবর ?(অনুরোধ আমাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলো)
---আমি এখন সেই বিষয়ে ভাবছি না।আর ভাবার সময়ও নেই।
---আর ইউ ক্রেজি মাধবী।
এটা তোমার কাছে কোনো ভাইটাল বিষয় মনে হচ্ছে না?
তাহলে আমাকে এভাবে ডেকে পাঠালে কেন!আশ্চর্য!
---কেন, আমি কি তোমায় ডাকতে পারি না?
---সেটা কথা না।দেখো যদি সত্যিই তুমি এক্সিডেন্টলি হলেও প্রেগনেন্ট হয়ে থাকো তবে
তো আমাদের সেটা ভেবেই স্টেপ নিতে হবে।তাই না!
---প্লিজ, স্টপ দিস টপিক। আমি অন্য কিছু ভাবছি।
---কি ভাবছো,তোমার কাছে এই মূহুর্তে নিজের প্রেগনেন্সি ছাড়া কি এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো।আমিও জানতে চাই।
---দেখো অনুরোধ আমি তোমাকে এখন অতোটা ক্লিয়ার করে বলতে পারবো না।কিন্তু আমার এখন একটা লোককে খুঁজে পাওয়া ভীষণ জরুরী!
---লোক....!কোন লোক??
---লোকটার নাম আন্দোলন লস্কর।
---তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক??
---বিশেষ কিছু না,আবার অনেক কিছু...!
---কাম অন, তুমি কি বলছো এগুলো।আচ্ছা মাথা ঠিক আছে তো তোমার?
---আমার মাথা ঠিকই আছে।কিন্তু ঐ লোকটাকে খুঁজে বের করতে না পারলে হয়তো ঠিক থাকবে না।
---কেন, কি করেছে সে তোমার?
---আগে খুঁজে পাই তারপরে তোমাকে সব বলবো।তার আগে বলো তাকে খুঁজতে তুমি সাহায্য করবে আমায়।
---নিশ্চয়ই করবো।কিন্তু তাকে খুঁজবো কিকরে। কোনো ক্লু আছে তোমার কাছে।
---হ্যাঁ,তার বাসার ঠিকানা আছে আমার কাছে।অবশ্য সেখানে গেলে এখন পাবো কিনা জানি না।
(নার্সের মাধ্যমে আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে আন্দোলনের বাসার ঠিকানা ম্যানেজ করেছি)
---আচ্ছা বুঝলাম।তুমি না হয় আমাকে পরেই সবটা বলো।এই মুহূর্তে আমাদের প্রথম কাজ লোকটার কাছাকাছি পৌঁছনো।
---ঠিক বলেছো।একবার পাই তাকে।তার সাথে অনেক হিসেব আছে আমার।
তিয়াশ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।বেচারা আমার অদ্ভুত ব্যবহারের আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।আর বুঝবেই বা কিকরে।যতোক্ষন পর্যন্ত আমি কিছু না বলি।

আমরা সিধান্ত নিলাম পরের দিন সকালে লোকটার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো।
অনুরোধ আমার কাছে থাকার মনস্থির করলো।
একেবারে এখানকার কাজ শেষ করে ফিরে যাবে ও।তার আগে নয়।
সন্ধ্যাবেলা আমরা দুজনে মিলে কিছু রান্না বান্না করলাম।
তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হই।
অনুরোধ ছাদে একা একা পায়চারি করছে।ওর বিছানা রেডি করার জন্য ওর রুমে গেলাম।
জিনিসপত্র এমনকি নিজের জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার একটা বাজে অভ্যাস আছে ওর।
এক কথায় যাকে বলে অগোছালো।অনুরোধ তার ব্যতিক্রম নয়।
ওর বিছানা রেডি করে রুমের বাইরে পা বাড়াবো ঠিক তখন পায়ের কাছে কিছু একটা ঠেকলো।
তাকিয়ে দেখি ওর ওয়ালেট পড়ে আছে।এতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কেউ এভাবে ফেলে রাখে।
ওয়ালেটটা তুলে বিছানার ওপরে একটু জোরেই ছুড়ে ফেললাম।
নিমেষে ভেতর থেকে কতোগুলো কাগজ পত্র,স্টাম্প সাইজের ছবি বেরিয়ে আসে।
আমি এগিয়ে সেগুলো ঠিক করে রাখতে গেলাম।
ওয়ালেটের ভেতর থেকে চার পাঁচটা ছবি বেরিয়ে এসেছি।
এই যুগে এসেও মানুষ ছবি ক্যারি করে সত্যিই অদ্ভুত।
ছবিগুলো উল্টিয়ে দেখতে লাগলাম।একটা অনুরোধের নিজের, সাথে আমার ছবিও আছে দেখছি।
অনুরোধের বাবা মায়ের ছবিও আছে।
ছবি আর কাগজ ওয়ালেটের জায়গামতো রাখার পরে দেখতে পাই আরেকটা ছবি ভুলে বাদ
পড়ে গেছে।তার দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠলাম।এতো আন্দোলনের ছবি...!!
কিন্তু এই লোকটার ছবি অনুরোধে কাছে আসলো কিকরে?
তাহলে কি অনুরোধ চেনে তাকে!যদি তাই হবে আমার কাছে অস্বীকার করলো কেন....??

চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com