Breaking News

কালো ছেলে । পর্ব - ০২



না, তুমি খাইয়া নাও। আমি চাচার কাছে গিয়ে খেয়ে নিব।

= আইচ্ছা।
আমি গেরেজে চলে আসলাম।
= সানি, তুই আইজ কলেজে যাস নাই?
= না চাচা। আইজ আর কলেজে যামু না।
= খাইয়া আইছস?
= না। রান্না হয় নাই। তুমার কাছে কিছু আছে খাওন যাবো?
= অইখানে দুইডা বিস্কুট আছে। খাইয়া নিয়া কামে লাইগা
যা।
আমি বিস্কুট খেয়ে কাজে লেগে পরলাম৷ আজ মনটা খুব খুশি লাগছে।কিছু টাকা বেশি পামু।
সারাদিন কাজ শেষ করে টাকা নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
চাল আর কিছু বাজার করে আম্মার কাছে দিলাম।
= আম্মা খিদা লাগছে খুব। তারাতারি রাইন্দা খাওন দেও।
= তুই হাত মুখ দুইয়া নে।
= আইচ্ছা।
হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে খুব ভোরে উঠলাম।শার্টটা শুকিয়ে গেছে।
কিছুক্ষন আগের পড়া গুলা রিভিশন করে কলেজে চলে এলাম। এসে দেখি রিহারা সবাই আড্ডা দিচ্ছে।
= এই কালু। তোর শার্ট পরিস্কার হল কিভাবে?(রিহা)
= কাইল ধুইয়া দিছিলাম।
= তোর কি আর নতুন কাপড় নাই? প্রত্যেক দিন এক
শার্ট পরেই আসিস।
= না গো আফা। নতুন শার্ট কিনবার টাকা কই পামু৷
= শার্ট কিনতে পারিস না তাহলে পরিস কেন? না পরে
কাজ করলেই তো পারিস। ফকির আসছে কলেজে। শোন তোদের মত কালুর কলেজে পড়ার কোনো মানে হয় না।ফকির কোথাকার।(রিহা)
= হুম আফা। সত্য কথা কইছে।আমরা তো দুই এক
টাকা ভিক্ষা নেই। কিন্তু আপনার যে বন্ধুরা আছে।
শুনছি তাদের বাবা নাকি এমপি মন্ত্রি। তারা তো আমাদের
থেকেও বেশি ফকির। আমরা ২/১ টা চাইয়া নেই।
আপনা গো বন্ধুর বাবারা তো হাজার হাজার টাকা চুরি কইরা নেয়।
কথাটা বলার সাথে সাথে রিহা আমাকে চড় মারল।
== হারামির বাচ্চা তোর সাহস কি করে হয় আমার বন্ধুদের সম্পর্কে এগুলা বলার। শালা কালুর বাচ্চা কালু। আব্বুকে বলে তোকে আজই কলেজ থেকে বের করে দিব।
আমি আর কিছু না বলে ক্লাসে চলে এলাম। এসব অপমান এখন আর আমার গায়ে লাগে না। পেটে ভাত না থাকলে মানসম্মান দিয়ে কি হবে।
"ভাত দে, নয় তো মানচিত্র চিবিয়ে খাব " হাহাহাহা।
সুকান্ত সাহেব ভালভাবেই টের পেয়েছিলেন ভাতের মুল্য।
কিছুক্ষন পর রিহা,সাগর আর শাকিল ক্লাসে ঢুকল।
= এই কাইল্ল্যা। তোর তো কলেজ ছাড়ার সময় হইছে রে। (শাকিল)
= কেন ভাই?
= সেটা একটু পরেই জানতে পারবি৷ তবে এটা সিউর
থাক এই কলেজে তোর থাকার মেয়াদ আর কিছুক্ষন
এমন সময় প্রিন্সিপাল স্যার আসলেন।
=সানিউর রহমান ছাড়া সবাই বসে পর।
সবাই বসার পর স্যার বলল .....
= তুই কি এই কলেজের ছাত্র?তোকে তো দেখে মনে হয় কোনো ডাস্টবিন থেকে উঠে এসেছিস।
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
_ তোর কাল থেকে আর কলেজে আসতে হবে না। এই কলেজ তোর জন্য না। যদি লেখা পড়া করতে চাস তাহলে কোনো নিম্ন মানের কলেজে গিয়ে পর। যাওয়ার সময় কাগজগুলা নিয়া যাস।ওকে।
বলে স্যার চলে গেলেন।
কলেজ ছুটির পর আমি কাগজ নিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছি। শেষ বারের মত কলেজটাকে দেখে নিচ্ছি।
= কিরে কাইল্ল্যা। আহারে রিহা দেখ বেচারার মুখটা কেমন হয়ে গেছে? (শাকিল)
=শোন তুই বরং অন্য কলেজে গিয়ে ভর্তি হ।পাশের যে হরবর কলেজ আছে সেখানে যা। সালা কালু কাক। (সাগর)
বলে ওরা চলে গেল।
আমিও বাসায় চলে এলাম।আম্মারে এগুলা বলা যাব না।
আম্মারে বললেও কিছু হব না। কারন আম্মা বুঝেই না এগুলা।
= আম্মা কাইল থাইক্যা আর ওই কলেজে যামু না।
= কেন কি অইছে। কলেজে যাবি না কেন?
= ওই কলেজ আমাগো জন্য না৷ মন্ত্রি এমপির পোলা মাইয়া গোর জন্য।
= তরে তো আগেই কইছিলাম ওত বড় কলেজে পড়া পাবি না। অহন তাইলে কি লেহাপড়া ছাইড়া দিবি?
= কি যে কউ মা। আমাগো পাশের এলাকায় যে কলেজটা আছে অইডাতে ভর্তি হমু।
= তুই যা ভালা বুজস কর। আমার মাতাত( মাথায়) কিছু ধরে না।
= আম্মা। আমি গেরেজে গেলাম।
= আইচ্ছা যা।
কি করমু বুঝতেছি না। এই কলেজে পড়তে পারলে কাজটা ও করতে পারতাম। লেখাপড়াটাও করতে পারতাম।
এখন কি করমু? ক্লাস করলে কাজ হবে না আর কাজ করলে ক্লাস হবে না।
চিন্তায় আমার চোখের পানি এসে গেল। শালার কি চেহারা? যদি একটু ফর্সা হতাম তাহলে আর এভাবে কলেজ ছাড়তে হতো না।
.
চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com