কালো ছেলে । পর্ব - ১৩ এবং শেষ
আজকে কেন চলে যেতে চাইছে।
প্রিয় সানি,
খুব ইচ্ছা ছিল তোমার হাতে হাত রেখে বাকি জিবনটা কাটিয়ে দিব।
তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার অনুভুতির ভাগিদার হব।
কিন্তু আল্লাহ হয়তো আমার কপালে সেই শুখ রাখে নি।
আমি সত্যি তোমায় খুব ভালোবাশি।
ডাক্তার বলেছে আমি মাত্র কয়েকদিনের সদস্য এই দুনিয়ার।
আর কিছু লিখতে পারছি না।
যদি পারো আমার কবরের পাশে এসে একটু দোয়া করে যেও।
ইতি
রি........
,
মনে হচ্ছে নিজের নামটাও লিখতে পারে নি।
,
== হিয়া আপু এটা হতে পারে না। আমি পারব না রিহাকে
ছাড়া বাচতে। প্লিজ কিছু একটা করুন৷।
,
আমার কান্না দেখে হিয়া আর শাকিলও কান্না করছে।
আকাশটা আজ খুব ভারি মনে হচ্ছে আজ।
হয়তো সে নিজেও খুব দুখি কাওকে হারানোর শোকে।
একটু পর হয়তো অঝরে বর্ষন করে বুঝিয়ে দিয়ে হারিয়ে গেছে সে।
তখন হাজার কেদেও কোন লাভ হবে না।
,
== আমি এখনি রিহার কাছে যাব৷ বলতে পারেন কই আছে?
== ওরা এখন ময়মনসিংহ তে আছে।
== আমি কেমন ছেলে। নিজের ভালবাসাকে ধরে
রাখতে পারছি না। তাহলে কি হবে আমার ডাক্তার হয়ে।
আমি যেখানে পড়ি সেখানে থাকার পরও কেন
খুজে পেলাম না। আমি এখনি যাব। প্লিজ ওর বাসার ঠিকানাটা দেন।
== চলুন আমি চিনি ওদের বাসা। আমিও যাব।
,
এরপর সবাই বেরিয়ে পরলাম রিহার বাসার উদ্দেশ্যে।
রাস্তা যেন শেষ হতেই চাচ্ছে না।
মনে হচ্ছে বিপদের সময় সবই কিছু বেড়ে যায়।
যেমন আজ বেড়ে গেছে পথের দুরত্ব।
কিছুক্ষন পর আমরা রিহার বাসায় এসে পৌছালাম।
ভিতরে গিয়ে দেখি রিহার আম্মু সোফায় বসে কান্না
করছে।
,
== আন্টি রিহা কই?( আমি)
== সানি, তোমার এতোদিনে রিহার কথা মনে হল?
== আন্টি এখন কথা বলার সময় নাই। তারাতারি বলুন রিহা কই?
== রিহা ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি। হয়তো
তোমাকে শেষবার দেখার জন্য আল্লাহ ওকে বাচিয়ে রাখছে।
,
আমি আর দেরি না করে তারাতারি হসপিটালে চলে আসলাম।
এখানের সব আমার চেনা।
রিসিপশনে গিয়ে রিহার নাম জিজ্ঞেস করতেই বলে দিল।
আমি দৌড়ে রিহাড় কেবিনে গেলাম।
,
গিয়ে দেখি রিহার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।
রিহার পাশে স্যার দাঁড়িয়ে আছে।
আমি রিহার কাছে যেতেই রিহার আব্বু বের হয়ে গেলেন।
আমি রিহাকে বিরক্ত না করে অর পাশেই বসে রইলাম।
কিছুক্ষন পর রিহা চোখ খুলল।
আর আমাকে দেখার সাথে সাথে মাস্ক খুলে জড়িয়ে ধরল।
==ভাবতে পারিনি মরার আগে তোমাকে দেখতে
পাব। প্রত্যেকদিন দোয়া করতাম যেন মৃত্যুর কিছুক্ষন
আগে তোমার সাথে দেখা হয়। আল্লাহ আমার কথা
শুনেছেন। এখন তোমার বুকে মাথা রেখে আমি মরতে পারব।
==তোমার কিছুই হবে না পাগলি। আমি আছি তো।
আমার জীবন থাকতে তোমার কিছু হবে না। তুমি শান্ত
হয়ে মাস্ক পরে সুয়ে থাকো। আমি তোমার কাছেই আছি।
,
কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে রিহাকে অপারেশন
থিয়েটারে নিয়ে গেল।
যাওয়ার আগে রিহা খুব কান্না করেছে।
,
== সানি তুমি আমাকে কখনও ভুলে যেও না।
== তোমাকে ভুলার মত ক্ষমতা আমার নাই। দেখ তুমি ভাল হয়ে যাবে।
,
আস্তে আস্তে রিহা হারিয়ে গেল ওটি তে।
প্রায় চার ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে আসল।
আমি ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললাম......
== স্যার রিহা কেমন আছে?
== সরি আমরা আমাদের সাধ্য মত চেস্টা করেছি। কিন্তু বাচাতে পারিনি।
,
ডক্টরের কথা শোনার পর আমার কি হয়েছিল মনে নাই।
জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি কেবিনে শুয়ে আছি।
পাশে হিয়া আর শাকিল।
,
== কি রে তোরা এখানে কেন? আর আমিই বা কোথায়?
== তুই এখন হস্পিটালে।
== আমি এখানে কিভাবে এলাম। আর রিহা কই?
== রিহা মারা গেছে। সেদিন তুই ওর মৃত্যুর কথা শুনে
সেন্সলেস হয়ে কোমায় চলে যাস। আজ দেড়
বছর পর তোর জ্ঞান ফিরলো।
,
আস্তে আস্তে আমার সব কিছু মনে পরতে লাগল।
হয়তো চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।
হয়তোবা নির্বাক হয়ে গেছি।
কি ভাগ্য আমার ভালোবাসার মানুষটার জানাযাটাও দিতে
পারলাম না।
হস্পিটাল থেকে ছাড়া পেলাম।
রিহা মারা যাওয়ার দেড় বছর পর ওর কবরের পাশে এলাম।
" কেমন আছো তুমি?
ভয় করে না একা থাকতে?
তুমি তো বলতা আমায় ছেড়ে থাকতে পারবে না?
এখন কিভাবে পারছো?
মিথ্যুক একটা।
"
আমি দাঁড়িয়ে আছি। সময় চলছে তার আপন গতিতে।
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা।
সবকিছু নিয়তির খেলা.
.
<>সমাপ্ত<>
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com