ওসির অহংকারী মেয়ে । পর্ব -১১
আকাশ,ফোন কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,বিকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে কারোর হাতের স্পর্শে,কেউ একজন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,আকাশ মিটমিট করে চোখটা খুলে দেখে আম্মু,সে দেখে তো অবাক
আম্মু তুমি.....?
--আজ এক বছর পর তোকে দেখতে পেয়েছি,আজ একটা বছর ধরে তোর চাঁদ মাখা মুখ খানা দেখি না,তো কান্না করবো না তো কি করবো,
আকাশ,ও ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়,আম্মু আমায় ক্ষমা করে দাও
আমি নিজেকে মানুষ করার জন্য ঘর ছেড়েছি,কিন্তু আম্মু তুমি আমার খোজ পেলে কোথায়...?
--তোর আব্বু আজ বললো তুই এখানে একটা কলেজে পড়াশোনা করিস,
আর তা ছাড়া তোর ড্রাইভারের সাথে আমার গতকাল দেখা হয়েছে,ওদেরকে জিগ্যেস করেছি তোর কথা,কিন্তু ওরা বলেছে তোর নিষেধ আছে ঠিকানা বলতে,তাও অনেক জোর করে তোর ঠিকানা মুখ থেকে বের করেছি...
আকাশ,ওর আম্মুর কথা শুনে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,তবে আম্মুর সাহস দেখে আমার অবাক লাগছে,যে উনি থাকে এক শহরে,আর সেই শহর থেকে আমার খোজ করার জন্য অন্য শহরে চলে আসছে,তাও আবার একা..
আব্বু জানে তুমি যে আমার খোজে এসেছো..?
--হা জানে...
আকাশ,তাহলে তোমায় একা ছেড়ে দিলো কি করে...?
--ছেড়েছো কোথায় আমি জোর করে বের হয়েছি,বলেছি আমার ছেলের কাছে যাবো আমি,আমায় যদি আটকানোর চেষ্টা করে তাহলে চিরতরে ঘর ছেড়ে দিব,আর তা ছাড়া ঐ লোকের জন্য তুই ঘর ছেড়েছিস,একটা বছর আমার কত চোখের জ্বল ঝরেছে জানিস,রোজ রাতে কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে লাল করে ফেলতাম...
আকাশ,আম্মু সরি
--এই পাগল ছেলে কি করছিস,যা হয়েছে হয়েছে এবার ঘরে চল...?
আকাশ,নাহ আম্মু এটা সম্ভব না...?
--তুই যদি আজ আমার সাথে ঘরে না যাস তাহলে আমি এখান থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো...
আকাশ,আম্মু তুমি কি বলছো এই সব উল্টা-পাল্টা,
--আমি এত কিছু বুঝি না তোর ঘরে যেতে হবে আমার সাথে...
আকাশ,আম্মমমমমু
--তুই আমার সাথে যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল,
আকাশের আম্মু যখন বাসায় এসেছে তখন পল্লব ছিলো না বাসায়,
সে পল্লবকে ফোন করে বলে বাসায় আসতে,সে তার নিজ বাড়িতে ফিরে যাবে,পল্লব আকাশের ফোন পেয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় আসে,
আকাশ,আচ্ছা পল্লব তুই থাক আমি বাড়ি যাচ্ছি,
পল্লব,আচ্ছা ভাই তাহলে আজ রাতে আমিও আমার বাড়িতে ফিরে যাবো,
আকাশ,হা তাই কর,বাসার মানুষ অনেক চিন্তায় আছে...
তারপর আকাশের আম্মু আর আকাশ মিলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,এদিকে আকাশ ফোন করে ওর সমস্ত গাড়ির ড্রাইভারকে বলে দেয় সবাই যেন ওর বাড়িতে চলে যায় গাড়ি নিয়ে,
বাসায় পৌঁছাতেই রুহি এসে ঝাপটে ধরে কান্না করে দেয়,
এই কুত্তা শয়তান বদমাইশ কই ছিলি তুই এতদিন বলে মারতে শুরু করে..?
রুহি আকাশের ছোটবোন...
আকাশ,আরে আরে মারছিস কেন লাগছে তো..
রুহি,চুপ কুত্তা কোথাকার তোর শরীরে একদম হাতের নোখ ঢুকিয়ে দিব,
কি ভাবে পারলি তুই আমাকে ভুলে থাকতে ভাইয়া..?
আকাশ,চুপ করে আছে...
--আকাশের আম্মু এই রুহি এখন বকবক করিস না,পরে এইসব আলাপ করিস,এখন অনেক দূর থেকে এসেছে আগে একটু ফ্রেশ হতে দে...
আকাশ,আজ এক বছর পর বাসায় এসেছে,বাসাটা সেই আগের মতই আছে,কিন্তু কেমন নিরব একটা পরিবেশ ঘরটাকে মরা বাড়ির মত বানিয়ে ফেলেছে,আমি আমার যেই রুম ছিলো সেটাতে চলে গেলাম,গিয়ে দেখি সমস্ত কিছু আগের মতই আছে,অবাক হলাম আমার রুমটা একদম পরিপাটি করে গোছানো দেখে,তার মানে এই রুমটা রোজ কেউ গুছিয়ে রাখে,
আকাশকে পেয়ে বাসার সবাই মহাখুশি,আকাশও খুব খুশি সে সবার সাথে হেসে খেলে কথা বলতেছে,শুধু তার বাবাকে ছাড়া,কারন সেই মানুষটার প্রতি তার কেন জানি একটা অভক্তি চলে আসছে...
--আকাশের বাবাও কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে,তিনিও ভিতরে ভিতের কুকড়ে কুকড়ে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছেন...
আকাশ,একেবারে বাসায় ফিরে আসছে,সে সারাদিন বাসায় থাকে পরেরদিন সকাল বেলা রেডি হয়ে নিজের গাড়িটা নিয়ে কলেজে চলে যায়,
কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকবে এমন সময় হেনা তার সামনে পথ আটকায়,
হেনা,এই আকাশ দাঁড়াও তোমার সাথে আমার শেষ কিছু কথা আছে...
আকাশ,তোমার মত মেয়ের সাথে আমার কোন কথা নাই..
হেনা,নাহ তোমার কথাগুলো শুনতে হবে বলে হেনা আকাশের পথ আটকে ধরে...
আকাশ,আচ্ছা বলো কি বলবে..?
হেনা,আকাশ তুমি কি সত্যি আমায় ভালোবাসো না..?
আমার জন্যে কি তোমার একটুও মায়া হয় না..?
আকাশ,এই মেয়ে ড্রামা বন্ধ করো,তোমাকে আমার দুই চোখেই সহ্য হয় না,আর রইলো ভালোবাসা,শুনো তুমি ভালোবাসার মত যোগ্য মেয়ে না,তোমার থেকে পতিতা মেয়েও ভালো আছে,তুমি তো মুখোশধারী শয়তান মেয়ে,তোমার মত মেয়েকে যে কি ভাবে আমি ভালোবেসে ছিলাম সেটা এক মাত্র আল্লাহ জানে....
হেনা,আকাশ বলো আরো বলো,যা ইচ্ছে হয় বলো আমাকে নিয়ে,যত অপবাদ দিতে ইচ্ছে হয় দাও,কিন্তু প্লিজ আমায় ফিরিয়ে নাও,আমি তোমার সাথে যা করেছি অন্যায় করেছি,আমি জানি যে আমি
ক্ষমার যোগ্য না,
কিন্তু বিশ্বাস করো আমার তোমাকে চাই,তুমি ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতে পর্যন্ত কষ্ট হয়,তোমাকে না পেলে আমি সত্যি মরে যাবো...
আকাশ,এই ধোঁকাবাজ মেয়ে মরবি না হয় যা করবি কর,আমাকে কেন বলতেছিস এই সব কথা,তুই হচ্ছিস বিষাক্ত একটা সাপ,যার জীবনে যাবি তাকে দংশন করে বিষে নীল করে দিবি,তোর মত মেয়ে ভালোবাসার যোগ্য না,আর শোন তোর যা ইচ্ছা হয় তাই কর,মরবি না কি করবি সেটা তোর একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার,কিন্তু এই সব কথাবার্তা আমার সামনে বলিস না,
যা দূরে গিয়ে মর আমি গেলাম....
আকাশ হেনাকে রেখে ক্লাসে চলে আসে,হেনা সেখানেই বসে
কান্না করে দেয়,
আকাশ ক্লাসে এসে আরুর সাথে কথা বলছে এমন সময় স্যার ক্লাসে ঢুকে,
স্যার আসা মাত্রই সবাই নিরব হয়ে যায়,এভাবে চার ঘন্টা হওয়ার পর কলেজ ছুটি হয়ে যায়,
আকাশ আর আরু ক্লাস শেষ করে কেন্টিনের দিকে যাবে,এমন সময় আকাশের নজর পড়ে কলেজের গেইটের দিকে,হেনা এখনো সেখানে মাটিতে বসে আছে,যেভাবে বসা ছিলো ঠিক সেভাবেই বসে আছে,আকাশের মাথায় ঢুকছে না মেয়েটা চার ঘন্টা একটা জায়গার মধ্যে কি ভাবে বসে ছিলো
ধুর আমার কি,ওর ভালো লেগেছে তাই সে বসেছিলো,
আকাশ ওকে পাত্তা না দিয়ে আরুকে নিয়ে কেন্টিনের দিকে হাটা দেয়,
হেনা আকাশকে দেখতে পেয়ে ঘাড় ঘুরে আকাশের দিকে অসহায় ভাবে এক ঝলক তাকায়,হেনা হয়তো আকাশকে কিছু একটা বলতে চায়,
কিন্তু আকাশের কোন ফিলিংস এই নাই যে হেনার কথা শুনবে,সে দেখেও না দেখার ভান করে কেন্টিনে চলে যায়,
আকাশ আর আরু কেন্টিন থেকে নাস্তা করে ফিরে আসে,কিন্তু আকাশ লক্ষ্য করে হেনা আর নাই,সে চলে গেছে,আর সে যেই জায়গাটায় বসে ছিলো সেখানে চোখের পানিতে ভিজে মাটিগুলো কাঁদা হয়ে আছে...
ধুর তাতে আমার কি,আমাকে কাঁদিয়েছে এখন সে নিজে কাঁদুক..
আকাশ কলেজের পাশে পার্ক করা তার যেই গাড়িটা আছে সেটা স্টার্ট করে আরুকে সাথে নিয়ে নেয়,আরুকে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে সে তার বাড়িতে চলে যায়,
বাসায় মোটামুটি ভালোই লাগছে এখন আকাশের,সবাই অনেক কেয়ার করে তার,সারাদিন মা আর ছোটবোনের সাথে হাসি ঠাট্টা করেই সময় চলে যায়,রাতের বেলা খেয়ে দেয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আর ঘুমানোর চেষ্টা করছে,কিন্তু ঘুম কোন ভাবেই ঘুম আসতেছে না,বিছানার এপাশ থেকে ওপাশ খালি ছটফট করতেছে,ঘুম কোথাও যেন উধাও হয়ে গেছে,
আকাশ,চোখ বুঝে শুয়ে আছে,তখনি তার সাকলের কথাগুলো মনে পড়ে,
নাহ আজ মেয়েটাকে অনেক কথা শুনিয়েছি,এমনভাবে না বললেও পারতাম,মেয়েটার চোখ মুখ দেখে কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা আমায় সত্যিই ভালোবাসে,এবার তার ভালোবাসার মধ্যে কোনো খুঁত নাই,
কিন্তু কি আর করবো সে তো আমার মন নিয়ে খেলা করলো,আমিও তো তাকে সত্যি ভালোবাসতাম,আর এখনো বাসি,কারন প্রথম প্রেম কখনো ভুলা যায় না,
তবে যত যাই হোক মেয়েটাকে এই ভাবে কাঁদানো আমার একদম উচিৎ হয় নি,নাহ কালকে কলেজে গিয়ে ওর সাথে কথা বলবো,যদি ওর হাবভাব ভালো দেখি তাহলে সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করবো....
আকাশ,হেনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে,সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গে কারোর ফোনের আওয়াজে,সে মিটিমিট করে চোখটা খুলে বালিশের কাছ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে,ফোনটা কানে দিতেই অপরপাশ থেকে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠে,বিল্লা ভাউ আপনাকে বলেছিলাম আমার মেয়েটাকে নিজের করে নিতে,কিন্তু আপনি নেন নি,
যদি নিতেন আজ আমার মেয়েটার এমন দুর্দশা হতো না,সে জীবিত থাকতো
আকাশের তো কিছুই ঢুকছে না মাথায়,এই কি বলছেন উল্টা-পাল্টা আপনি...?
--হা যা শুনেছেন ঠিকই শুনেছেন,গতকাল রাতে হেনা সুইসাইড করেছে
জানেন বিল্লা ভাউ সে রাতের বেলা আমাকে আর ওর মাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো,আর বারবার খালি একটা কথাই বলছিলো আম্মু-আব্বু তোমারা দুজনেই আমাকে মাফ করে দিও,কিন্তু বিশ্বাস করেন কখনোই বুঝতে পারি নাই যে আমাদের মেয়েটা এতবড় একটা কান্ড করে ফেলবে...
হেনার আব্বুর কথা শুনে আকাশ বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে পড়ে...
আকাশের যেন দুনিয়াদারী ঘোলাটে হয়ে গেছে হেনার আব্বুর কথা শুনে...
আকাশের নিশ্বাসটাও যেন এখনি বের হয়ে যাবে শরীর ছেড়ে,
কি বললো এটা যে হেনা সুইসাইড করেছে,আকাশ চিৎকার করে কান্না করে দেয়,নাহ হেনা এটা করতে পারে না,সে গতকাল আমাকে কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো,সে মরতে পারে না.....
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com