বাড়িওয়ালার দুষ্টু মেয়ে । পর্ব - ০৯
সকালে খাওয়া-দাওয়া শেষ
করে, রেডি হয়ে আমি আর রিমি কলেজের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
আজ আমার এই কলেজে প্রথম ক্লাস.!
খুব অস্থির অস্থির লাগছে.!
মনের মধ্যে একটা অজানা ফিলিংস কাজ করছে.!
এ এক আলাদা অনুভূতি, যা লিখে প্রকাশ করা যাবে না।
.
একটুপর আমরা কলেজে এসে পৌছালাম।
রিমি ওর ক্লাস রুমের দিকে চলে গেল আর আমি আমার ক্লাস রুমের দিকে।
.
আমি তাড়াহুরো করে ক্লাস রুমে ঢুকতেই একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে গেল।
.
ধাক্কা লাগার সাথে সাথে আমি আর মেয়েটা দু'জনেই ফ্লোরে পরে গেলাম।
কোমড়ে প্রচন্ড ব্যথা লাগলো।
মাথাটা কেমন যেন ঝনঝনিয়ে উঠলো।
চোখের সামনে সরষে ফুল দেখতে লাগলাম।
.
আমি কোনোমতো উঠে দাঁড়ালাম।
তারপর মেয়েটার দিকে তাকালাম।
মেয়েটা এখনো ফ্লোরে পরে আছে।
আমি মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে তাকে উঠতে সাহায্য করতে চাইলাম কিন্তু
মেয়েটা আমার হাত না ধরে একাই উঠে দাঁড়ালো।
.
তারপর দিক-বেদিক না দেখে ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দিল।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ঘটনার আকস্মিকতায় একদম তব্দা
খেয়ে গেলাম। আমার কি বলা উচিত ভেবে পেলাম না।
শুধু অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
.
এদিকে ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রী'রাও আমাদের দু'জনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
অনেকে আবার মুখ টিপে হাসছে। দুই-তিন জন সিটিও মারলো.!
.
এমন একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হলো না।
তব্দা খেয়ে ঠায় মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
মেয়েটা আমার কাছে দু'পা এগিয়ে এসে কড়া গলায় বলল,
.
-- মেয়ে দেখলেই গা'য়ে পড়তে ইচ্ছা করে, তাই না.?
লজ্জা করে না এসব করতে.?
বাড়িতে মা-বোন নেই.?
.
মেয়েটার এমন কঠিন কথা শুনে ঢোক গিললাম।
আমতা আমতা করে বললাম,
.
-- আসলে আমি আপনাকে দেখতে পাই নি। একটু তাড়া ছিল তো.!
.
আমার কথা শুনে মেয়েটা মুখ বাঁকা করে বলল,
.
-- দেখতে কেন পাবি.!
মেয়ে মানুষ দেখলেই তো, তোরা কানা হয়ে যাস.! দেখতে পাস না।
চোখে ছানি পড়ে.!
.
-- আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নয়।
আমি সত্যি-ই আপনাকে দেখতে পাই নি।
.
-- হইছে আর মিথ্যা বলতে হবে না।
তোদের মতো ছেলেদের চেনা আছে আমার। স্যরি বল.!
.
-- আচ্ছা, স্যরি.! প্লিজ সবার সামনে আর সিনক্রিয়েট করিয়েন না।
সবাই দেখছে.!
.
মেয়েটা এবার আশেপাশে তাকিয়ে এক নজর সবাইকে দেখলো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল,
.
-- ঠিক আছে, এবারের মত ক্ষমা করে দিলাম।
নেক্সট টাইম চোখ-কান খোলা রেখে চলাচল করবি।
উজবুকের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে চলবি না, বুঝলি.?
.
-- জ্বি।
.
মেয়েটা আর কিছু না বলে ক্লাস রুমে গিয়ে বসলো।
আমি একবার আশেপাশে তাকিয়ে পরিস্থিতিটা ঠিক আছে কিনা দেখলাম।
না, ঠিক নেই.! সবাই এখনো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমার এবার একটু অসস্তি হতে লাগলো। মনে মনে বললাম, "আমি কি এলিয়েন নাকি যে
আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে হবে.!"
.
আমি লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে, বুকে সাহস সঞ্চার করে ক্লাস রুমে পা রাখলাম।
আশেপাশে এক পলক তাকিয়ে পিছনের বেঞ্চে গিয়ে বসলাম।
মনটা প্রচন্ড খারাপ। কলেজের ১ম দিনেই সবার সামনে
এভাবে অপমানিত হতে হবে ভাবিনি.!
.
আমার মেয়েটার উপর খুব রাগ উঠলো।
কি দরকার ছিল সবার সামনে
চড় মারার.? গুন্ডি মেয়ে একটা.!
এত জোরে কেই চড় মারে.?
আমি আমার ভুলের জন্য তো ক্ষমা চাইলাম, তারপরও কেন মারতে হবে.?
ইশশশ.! চড় মেরে গালটা একদম লাল করে দিয়েছে।
.
একটু পর স্যার ক্লাস রুমে আসলেন।
আমি কলেজে নতুন তাই সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন।
আমি একে একে সবার সাথে পরিচিত হলাম।
তারপর আমাদের ক্লাস শুরু হলো।
.
অতঃপর ক্লাস শেষ করে আমি রিমির জন্য আমগাছের নিচে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
.
.
.
এদিকে রিমি আর ওর বান্ধবিরা ক্লাস শেষ করে কলেজের পিছনে
বসে ভাবছে কিভাবে শাহিনকে শায়েস্তা করা যায়.!
কিভাবে তাকে বাড়ি থেকে বিদায় করা যায়।
কিছুক্ষণ ভাবাভাবির পর, রিমির বান্ধবি ইতু বলল,
.
-- আচ্ছা রিমি, তোর স্যারের পকেট ফাঁকা করলে কেমন হবে রে.?
.
-- মানে.? ঠিক বুঝলাম না.!
.
অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রিমি।
ইতু বলল,
.
-- আরে বোকা, আমরা সবাই যদি তোর স্যারের টাকায় ফুচকা খাই, তাহলে কেমন হবে.?
.
রিমি আহ্লাদে আটখানা হয়ে বলল,
.
-- দারুণ হবে.! কিন্তু একটা বিষয় বুঝলাম না, স্যার কেন আমাদের সবাইকে ফুচকা খাওয়াবে.?
.
-- আরে বোকা, খাওয়াবে না আমরা জোর করে খাবো.!
.
-- কিভাবে.?
.
-- শোন, আমরা সবাই মিলে জোর করে তোর স্যারকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাবো।
.
-- তারপর.?
.
-- তারপর আমরা ফুচকা খেয়ে চলে আসবো আর তুই বিল দিতে যাবি।
.
ইতুর কথা শুনে রিমি কপাল কুঁচকে বলল,
.
-- আরে আবুলের বউ.!
বিল যদি আমি-ই দিই তাহলে স্যারের পকেট ফাঁকা হবে কেমনে.?
আমাকে বোকা পেয়েছিস.? শোন, এই রিমিকে বোকা বানানো এতো সহজ না, হুহ.!
.
ইতু, রিমির মাথায় চাটা মেরে বলল,
.
-- তুই আসলেই বোকা.!
খালি বেশি বুঝিস।
আমি বলতে চেয়েছিলাম, ফুচকা
খাওয়ার পর তুই যখন বিল দিতে যাবি তখন তোর বলদ মার্কা স্যারকে বলবি, তোর কাছে
টাকা নেই।
টাকা আনতে ভুলে গেছিস।
তারপর তোর স্যারকে বিল দিতে বলবি।
বেচারা আর কোনো উপায় না পেয়ে বিল দিতে বাধ্য হবে।
.
-- WOW.! দারুণ আইডিয়া তো.!
আমার সাথে থেকে থেকে তোদের বুদ্ধির দরজা দিনদিন খুলছে তাহলে.! গুড.! গুড.!
.
-- হুমম। তাহলে যাওয়া যাক।
.
-- হ্যা, চল।
.
খুশিতে সবার চোখ চকচক করে উঠলো।
আজ শাহিনকে মুরগী বানাবে কথাটা ভেবেই রিমি একটা
পৈচাশিক হাসি দিলো।
মনে মনে বলল, "স্যার, আপনি আজ গেছেন.! আপনার পকেটের
আজ বারোটা বাঁজাবো।"
তারপর সবাই মিলে শাহিনের কাছে যেতে লাগলো।
.
এদিকে আমি বসে বসে আশেপাশে তাকিয়ে রিমিকে খুজছি।
মেয়েটা এখনো আসছে না কেন.?
এদিকে প্রায় দুপুর হয়ে এলো।
বাড়িতে যাবো কখন.?
আবার খিদেও লেগেছে প্রচুর.!
কিন্তু ওই ফাজিল মেয়েটার কোন খবর নেই।
.
একটু পর দেখলাম, রিমি আসছে।
সাথে ওর একগাদা বান্ধবী.!
মনে মনে বললাম, "এই আপদগুলো আবার এদিকে আসছে কেন.?
না জানি এখন আবার কি অঘটন ঘটায়.!
একেকটা তো
শয়তানের গোডাউন.!"
.
আমি একটু নড়েচড়ে বসে, শার্টের কলার, চুল-টুল ঠিক
করলাম। মনে মনে দোআ দরুদ পড়তে লাগলাম।
রিমির বান্ধবীরা আমার কাছে এসে এক সুরে সালাম দিয়ে উঠলো...
.
-- আসসালামু আলাইকুম, স্যার.!
(রিমির বান্ধবীগুলো)
.
আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে সালামের জবাব দিলাম,
.
-- অলাইকুম আসসালাম। (আমি)'
.
-- কেমন আছেন, স্যার.?
(সবাই একসাথে বলল)
.
-- ভালো। তোমরা.? (আমি)
.
-- আমরাও ভালো আছি, স্যার। (রিমির বান্ধবী)
.
-- ওহ্... ভালো। (আমি)
.
-- হুমম। (রিমির বান্ধবী)
.
-- তা সবাই এক সাথে কি মনে করে আসলে.? (আমি)
.
-- আপনাকে দেখতে আসলাম, স্যার.! (রিমির বান্ধবী)
.
-- কি, আমাকে দেখতে.? (আমি)
.
-- হুমম, স্যার। রিমির কাছে আপনার কথা শুনলাম তো, তাই ভাবলাম এসে আপনার সাথে দেখা করি আর পরিচিত হই। রিমি আপনার সম্পর্কে যা সব বলল, না এসে থাকতে পারলাম না। (রিমির বান্ধবী)
.
-- ওহ্... তা রিমি আমার সম্পর্কে কি কি বলেছে.? (আমি খুশি হয়ে বললাম) .
রিমির বান্ধবী ইতু বলল,
.
-- বলেছে আপনি একটা বলদ.!
.
-- What..?
.
রিমির বান্ধবীর কথা শুনে চমকে উঠলাম.!
সাথে রাগে গা জ্বলে উঠলো।
আমি বলদ.? এত বড় কথা.!
আমি রিমির বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললাম,
.
-- কি বললে তুমি.?
আবার বলো তো.?
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com