Breaking News

ওসির অহংকারী মেয়ে । পর্ব -১৩

আকাশ,ঢুলতে ঢুলতে নিজের রুমে চলে যায়,রুমে গিয়ে ব্লেড খু্ঁজতে আরম্ভ করে,ব্লেড পেয়েও যায়,ব্লেডটা রগ বরাবর চেপে ধরে কলিজা আমিও তোমার কাছে চলে আসতেছি বলে রগের উপরে চালিয়ে দেয়,

সাথে সাথে হাত থেকে ফুলকি দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়...
হাত দিয়ে অনবরত রক্ত বের হয়ে পড়ছে,একটা সময় আকাশ সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে যায়,পরে আর কিছু মনে নাই....
--আকাশের আম্মু,ছেলেটার কি হয়েছে যে ছেলেটা আজ নেশা করে এসেছে,আমার ছেলে তো এমন ছিলো না,নাহ ওর কিছু একটা হয়েছে,নাহ ওর কাছে গিয়ে জিগ্যেস করি কি হয়েছে...
আকাশের আম্মু রুমে এসে দেখে আকাশ বেহুশ হয়ে ফ্লোরের উপরে পড়ে আছে,আর পুরো ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে,আকাশের এই অবস্থা দেখে ওর আম্মু সজোড়ে একটা চিৎকার মারে....
--আকাশের আব্বু আর রুহি নিচেই ছিলো,আকাশের আম্মুর চিৎকার শুনে উনারা দৌড়ে রুমে আসে,বাসায় আরো কাজের মানুষ যারা ছিলো সকলেই দৌড়ে আসে,এসে দেখে পুরো ফ্লোর রক্তে লাল হয়ে আছে আর আকাশ ফ্লোরের উপরে পড়ে আছে,
--আকাশের আম্মু তো হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিছে,আকাশের আব্বুও পাগল হয়ে গেছে আকাশের এই অবস্থা দেখে,তিনি তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে,তারপর আকাশকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়...
আকাশকে তাড়াতাড়ি ইমারজেন্সি রুমে নিয়ে যাওয়া হয়,
সবাই বাহিরে অপেক্ষার করছে,একটু পর একজন ডাক্তার বের হয়ে আসে ইমারজেন্সি রুম থেকে,
--আকাশের আব্বু,ডাক্তার আমার ছেলের কি অবস্থা..?
ডাক্তার,দেখেন সে রগের মধ্যে এমন ভাবে ব্লেড চালিয়েছে যার ফলে তার পুরো রগ কেটে গেছে,আর অনেক ব্লিডিং ও হয়েছে,আপনারা তো জানেন এই একটা মানুষের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্ত বের হওয়া এটা কখনোই ভালো লক্ষণ নয়...
তবে আমরা আমাদের সাধ্য মত চেষ্টা করেছি,আশা রাখতে পারেন সে এখন সেইভ আছে,বাকি যদি উপর ওয়ালার অন্য কোনো হুকুম থাকেন সেটা উনিই ভালো জানেন,আচ্ছা আপনারা এখন টেনশন করিয়েন না রুগী সুস্থ হয়ে যাবে,রুগীর এখনো জ্ঞান ফিরেনি,জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে,তারপর আপনারা রুগীর সাথে দেখে করতে পারবেন....
এটা বলে ডাক্তার চলে যায়,
এদিকে আকাশের আম্মুর তো রুহু বের হয়ে যাবে যাবে অবস্থা,তার সোনার টুকরা ছেলেটার কিছু হলে তিনিও বাঁচবেন না...
একদিন পেরিয়ে দুই দিনের মাথায় আকাশের জ্ঞান ফিরে আসে,
আকাশের জ্ঞান ফিরার পর সে হেনাকে খুজতে থাকে,
নার্স,একজন কেবিন থেকে বের হয়ে এসে আপনাদের মধ্যে হেনা কে..?
--আকাশের আম্মু,আমাদের মধ্যে তো হেনা নামের কেউ নাই...
নার্স,পেসেন্ট হেনা নাম বলে বলে ডাকতেছে...
--আকাশের আম্মু,আচ্ছা আমাকে যেতে দিন আমি দেখছি,
নার্স,আচ্ছা আপনি ভিতরে আসুন...
.
--আকাশের আম্মু,কেবিনের ভিতরে ঢুকে আকাশের মাথার কাছে গিয়ে বসে,আকাশ ওর আম্মুকে দেখতে পেয়ে হাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে কান্না করে দেয়,আম্মু আমার হেনা সুইসাইড করেছে,মেয়েটা আমায় খুব ভালোবাসতো,আমিও ওকে খুব ভালোবাসতাম,কিন্তু মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়,তাই আমি ওর থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম,মেয়েটা সেটা মেনে নিতে পারেনি তাই সে সুইসাইড করেছে,আমার ওকে চাই...?
--আকাশের,আম্মুর তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না,তবে উনি কিছুটা ক্লিয়ার যে ছেলে পাগলামো টা করেছে হেনার জন্য...
আকাশ,আম্মু আমার হেনাকে চাই?ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও?
--আকাশের আম্মু,আচ্ছা বাবা তুই সুস্থ হয়ে নে,তারপর আমরা সবাই মিলে হেনাদের বাসায় যাবো,আচ্ছা আমি খোজ লাগাচ্ছি হেনার....
আকাশকে আরো তিনদিন হসপিটালে রাখা হয়,মোট পাঁচদিন পর হসপিটাল থেকে আকাশকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়,
আকাশ, ধিরে ধিরে পাগল হয়ে যাচ্ছে সর্বক্ষন খালি হেনার নাম মুখে,যে ওর হেনাকে চাই...
--আকাশের আম্মু,খবর লাগিয়েছিলো ড্রাইভারকে দিয়ে,
ড্রাইভার খোজ চালিয়ে দেখে আসলেই মেয়েটা সুইসাইড করেছে...
--আকাশের আম্মু,তো হতাশ হয়ে যায়,এখন ছেলেকে কি জওয়াব দিবে,
ছেলে তো হেনা করে করে নিজকে শেষ করে দিচ্ছে,খাওয়া দাওয়া করছে না কিচ্ছুই করছে না,ওর এক কথা হেনাকে চাই...
আকাশ হেনা হেনা করে করে পাগল হয়ে যাচ্ছে,কিন্তু কেউ হেনাকে এনে দিচ্ছে না,আর এনে দিবেই কি বা করে হেনা তো মরে গেছে,সে যেই দুনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে সেই দুনিয়ায় একবার কেউ গেলে আর ফিরে আসতে পারে না,কিন্তু আকাশের মন তো মানছে না,ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে হেনা আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নাই..
আকাশ এখন মোটামুটি সুস্থ,সে গাড়িটা বের করে হেনার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়,সে হেনার বাবা-মায়ের সাথে গিয়ে কথা বলবে,কিন্তু হেনার বাসায় গিয়ে দেখে সব কিছু তালা মারা,ঘরের মেইন দরজায় বড় একটা তালা ঝুলানো,সে পাশের একটা মানুষের কাছ থেকে জিগ্যেস করে উনারা কোথায় গিয়েছেন..?
--মানুষটা,উনার মেয়ে মারা যাওয়ার পরেরদিন এই এই শহর ছেড়ে উনারা অন্য কোথাও চলে যায়,
আকাশ,কিন্তু কেন..?
--উনাদের নাকি এই শহরে দম বন্ধ হয়ে আসছে,উনার মেয়ের জন্যই নাকি উনারা এই শহরে পোস্টিং হয়েছে,কিন্তু উনার মেয়েই যেহেতু নাই তাহলে উনারা এখানে থেকে কি করবেন,তাই উনারা অন্য কোথাও পোস্টিং নিয়ে চলে গেছে...
আকাশ,আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন উনারা কোথায় গেছেন...?
-- নাহ আমাদের তো বলে যায়নি কোথায় যাবে,তবে এই টুকু বলেছে উনারা এই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাবে....
.
আকাশের চোখ জোড়া আবার ভিজে যাবে মনে হচ্ছে,আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ,তার পরে আকাশ গাড়ি স্টার্ট করে বাসায় দিকে রওনা দেয়,
--আকাশের আম্মু একটা বারবার ফোন দিচ্ছে,উনারা তো পাগল হয়ে গিয়েছে ছেলেটা গাড়ি নিয়ে কোথায় চলে গেলো,এমনিতে শরীর ভালো না আবার যদি কোন দূর্ঘটনা হয়,আল্লাহ তুমি রক্ষা করো আমার ছেলেটাকে..
আকাশের,ফোন বেজেই চলেছে কিন্তু সে ইচ্ছা করে ফোন পিক করছে না,কারন তার কিছুই ভালো লাগছে না এখন, তার একা কিছু সময় চাই,
আকাশের ভিতরটা যেনো ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়ে গেছে,হটাৎ আকাশের আরুর কথা মনে পড়ে,আল্লাহ এতদিন ওর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম,
ফোনটা হাতে নিয়ে আরুকে ফোন দেয়,ফোন বারবার সুইচ অফ আসছে..
আকাশ,গাড়ি ঘুরিয়ে আরুর বাসার দিকে রওনা দেয়,
আরুর বাসায় গিয়েও দেখে সেইম অবস্থা,আরুর বাসায় ও তালা ঝুলানো,আসেপাশের মানুষ থেকে জিগ্যেস করলে তারা বলে তারা নাকি কিচ্ছুই জানে না,তারা কোথায় গিয়েছে ঘর তালা মেরে,আকাশের যেন এখন পুরোপুরি ভাবে দুনিয়াদারী অন্ধকার হয়ে গেছে,
এখন ওকে কে সামলাবে,হেনা ওকে ছেড়ে অন্য দুনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে,এদিকে আরুর ও কোন খোজ পাওয়া যাচ্ছে না,আকাশ অনেক বন্ধু বান্ধবের কাছে খোজ লাগায় আরুর ব্যাপারে কিন্তু কেউ নাকি কিচ্ছুই জানে না,সে নাকি বিগত তিনদিন ধরে ক্লাসে আসছে না...
আকাশ,মন খারাপ করে বাসায় চলে আসে,
--আকাশের আম্মু তো পাগল পাগল হয়ে গেছে,এই ছেলে কোথায় গিয়েছিলি..? আকাশকে দেখতে পেয়ে
আমাকে আর কত টেনশনে রাখবি বল..?
আকাশ,কোনো জওয়াব না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়,
রুমে গিয়ে নিরবে কান্না করতে থাকে হেনার সৃতি গুলো মনে করে করে,
কলিজা তুমি কেন আমায় ছেড়ে চলে গেলে,আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ছাড়া থাকতে,সময়ে তোমার মূল্য দেইনি তাই বলে আজ এই ভাবে পস্তাতে হবে আমাকে..
--আকাশের আম্মু,বাহির থেকে খাওয়ার জন্য ডাকছে,কিন্তু সে বারন করে দিয়েছে খাবে না,আকাশের আম্মু অনেক করে রিকোয়েস্ট করে,কিন্তু সে খাবে না খাবেই না,আকাশের আম্মু হতাশ হয়ে ফিরে যায়,
আকাশ পুরোপুরি খাওয়া দাওয়া অফ করে দিয়েছে,
সব সময় হেনার কথা মনে করে করে নিরবে কান্না করে,নিজেকে সে সব সময় তার রুমের মধ্যেই বন্দী করে রাখে,বাহিরের আবহাওয়া যেনো তার কাছে বিষাক্ত মনে হয়,কারোর সাথেই ঠিক মত কথা বলে না,মা-বাবা বোন সবার সাথেই ধিরে ধিরে কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে,ধরতে গেলে এক প্রকারের ম্যান্টালি সিক হয়ে গেছে,মুখের গোঁফ,দাঁড়ি সমস্ত কিছুই বড় হয়ে গিয়েছে,কিন্তু সে কিছুই কাটায় না,
এভাবে দেখতে দেখতে চারমাস পার হয়ে যায়,এতদিনে আকাশের অবস্থা ক্রমশ আরো খারাপ হয়ে যায়,সে পুরোপুরি পাগল হয়ে গিয়েছে,
সবার কথা সে ভুলেই গিয়েছে,এক কথায় তার খালি হেনার কথা মনে আছে,বাকি মা-বাবাকেও ঠিক মত চিনতে পারে না সে..
কলেজ তো সে বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছে..
একদিন রাতের বেলায় কান্না করতে করতে ফ্লোরের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে,
সকাল বেলা কারোর স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গে,সে অনুভব করে কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া দিয়ে চুমু খাচ্ছে,আর নরম সুরে বলছে এই আকাশ আর কত ঘুমাবে?
আকাশ মিটমিট করে চোখ খুলে দেখে হেনা,আকাশ লাফিয়ে শোয়া থেকে উঠে পরে,কলিজা তুমি এসে গেছো....?
আমি জানতাম তুমি আসবে,আমার কলিজা আমায় রেখে কখনো মরতে পারে না,আকাশ দুইহাত দিয়ে হেনাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে...
হেনা,কলিজা কি হাল করেছো তুমি নিজের?
আমি তোমায় রেখে কি ভাবে মরতে পারি বলো...
আমি জানি তুমি আমায় খুব ভালোবাসো,আমি যদি মরে যাই তাহলে যে আমার কলিজাটাও ভালো থাকবে না....
এমন সময় আকাশের আম্মু আকাশের রুমে আসে,
আকাশ,ওর আম্মুকে দেখে আম্মু হেনা ফিরে এসেছে আমার কাছে..
-আকাশের আম্মু,হেনাকে দেখে কুঁকড়ে কান্না করে দেয়.....
.
চলবে....

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com