জেলাসবতী বউ । পর্ব -০৭
বউ হয় ওও আমার। নাক গলানোর তো কথাই তাই না।
ছেলেটা তিথির হাত ছেড়ে দূরে গিয়ে পড়ল। আরেকটা ছেলে এগিয়ে আসল। সজোরে একটা চড় মারলাম। মনে হয় চোখে অন্ধকার দেখল নিচে পড়ে গেলো। তারপর সবাই দৌড়ে পালাল। বেশ হিরোগিরি দেখিয়ে ফেলেছি। হ্যাংলা পাতলা ছিল ছেলেগুলো। না হয় ওদের ঠেকানো বেশ মুশকিল হয়ে যেতো।
- ছেলেগুলো বেশ কতক্ষণ ধরে ডিস্টার্ব করছিল তোমাকে। কাউকে ডাকতে পারোনি বা আমাকে ফোন করতে পারনি।
তিথি কোনো কথা না বলে চলে যেতে লাগল।
- আরে আরে কোথায় যাচ্ছো?
দৌড়ে গিয়ে তিথির পাশে হাঠতে লাগলাম।
- কি সমস্যা তোমার? কথা বলছো না কেনো?
তিথি তবুও কোনো কথা বলছে না ।
- ছেলেগুলো তোমাকে ডিস্টার্ব করছিল কেনো?
- প্রপোজ করেছে আমাকে।
এবার মুখ খুলল তিথি।
- তুমি বলোনি তুমি বিবাহিতা?
- না।
- কেনো?
- আমারতো স্বামী নেই তাহলে আমি বিবাহিতা হবো কি করে?
অন্যদিকে তাকিয়ে হাঠতে লাগল।
- মানে, নেই মানে!
- নেই, মানে নেই।
- তাহলে আমি কে?
- আপনি আমার কেউ না। আপনি একটা বাজে লোক, খারাপ লোক, পচা লোক।
- আরে আরে আমি খারাপ আর পচা যাই হই না কেনো স্বামী তো তোমার।
- চাই না আমার এমন স্বামী। আপনি আমাকে একটু ভালোবাসেন না। শুধু কষ্ট দেন।
কেঁদে দিলো তিথি।
- আমি সত্যি সরি। আমি ভুল করে ফেলেছি ক্ষমা করে দাও আমায়। আর কখনো ভুল হবে না এই কানে ধরলাম।
তিথি কেঁদেই চলছে।
- প্লিজ, তিথি কেদো না। আর কখনো আমি কষ্ট দিবোনা তোমাকে।
- সত্যিতো..
কান্না মুছে বলল তিথি।
- হুম, তিন সত্যি।
জরিয়ে ধরলাম তিথিকে।
- আরে আরে কি করছেন? ছাড়েন। সবাই দেখছে তো। পাবলিক প্লেসে এভাবে কেউ কাউকে জরিয়ে ধরে নাকি?
- তো, আমি আমার বউকে জরিয়ে ধরেছি। এতে কার কি?
- ইশ! বুড়ো বয়সেও দুষ্টুমি গেলো না আপনার।
লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকালো..। গাড়িতে উঠে পড়লাম,
- জানো, কাল রাতে একটুও ঘুম হয়নি আমার।
- কেনো? তিথি বলল।
- কেনো আবার। আমার পিচ্ছি বউকে ছাড়া যে আমার ঘুম আসছিল না। বারবার তোমাকে মনে পড়ছিল।
তিথি মনে মনে ভাবল, আমারওতো আপনার কথা মনে পড়ছিল।
- তোমার আমার কথা মনে পড়েনি? (আমি)
- পড়েছিল তো।
- তাহলে, আসলে না কেনো আমার কাছে?
- আম্মুর ভয়ে, আম্মু বলেছেন, যদি আপনার কাছে যাই তাহলে থাপ্পড় দিবেন।
- ওও। আমার বউটা তাহলে আমাকে মিস করছিল?
- একটুও না। কোনো বাজে লোককে আমি মিস করি না।
মুখ ভেংচালো।
- তাই। বেশ তো..।
তিথির গালে একটা চুমু দিলাম।
- আরে আরে কি করছেন? এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে তো।
- হবে না।
- আপনি জানেন নাকি? এরকম কেউ করে।
- কেউ না করলেও আমি করি।
- ফাজিল...
লজ্জা পেয়ে বলল তিথি। আমার কাধে মাথা রাখল। বাসার কিছু সামনে আসতেই তিথি বলে উঠল,
- ওয়েট, ওয়েট, ওয়েট।
- কি হলো?
- থামুন এখানে।
- কেনো?
- আরে আম্মু দেখলে তো মাইর দিবে। আমি বরং আগেই নেমে পড়ি। আপনি আমাকে এখানে নামিয়ে দিন।
- আমার বউটা বুদ্ধিও আছে দেখি। একদিকে স্বামীর সাথে রোমান্স করবে অন্যদিকে নিজেকে আম্মুর কাছে নিজেকে নিরপরাধ প্রমান করবে।
বাহ বাহ ভালো তো...।
তিথি কিছু না বলে মাথা নিচু করে নেমে পড়ল। আমি গ্লাসে তাকিয়ে দেখলাম তিথি বেশ লজ্জা পেয়েছে। গালদুটো লাল হয়ে গেছে...।
,
বাসায় পৌছে গেলাম। একটুপর তিথিও এসে পড়ল। আম্মুকে দেখলাম সোফায় বসে আছে।
- কিরে তোরা দুজনই দেখি আজ একসাথে?
- একসাথে কই? আমি আগে আগে আসলাম তারপর তিথি।
আমি তিথির দিকে তাকালাম।
- হ্যা, আম্মু। উনি সত্যি বলছেন।
- তাই।
- হুম। ( আমি)
- আমরার তো বিষয়টা খটকা লাগছে।
গালে হাত দিয়ে বলল আম্মু। যাহ বাবা এ কোন ঝামেলায় পড়লাম। আম্মু মনে হয় আচ করতে পেরে গেছে। কি জ্বালারে বাবা? নিজের বউয়ের সাথে থাকতেও দিবে না নাকি?
- আম্মু, বিশ্বাস করো উনি আমার কলেজে যান নি। আর আমাকে ড্রপও করেননি। আমি নিজেই এসেছি...
- আমি কখন বললাম যে, কাব্য তোর কলেজে গিয়েছে?
বেশ কাহিনী খতম। আম্মু এখন পুরোপুরিভাবে বুঝে নিলো যে, আমি তিথিকে সাথে করে নিয়ে এসেছি। এই মেয়েটাও না । মুখে কিছু আঠকায় না।
- আম্মু, বিশ্বাস করো। উনি আমাকে ঐ রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দেন নি।
তিথি অসহায় ভঙিতে তাকাল আম্মুর দিকে।
- আমি কি সেটাও বলছি?
মুচকি হেসে বলল আম্মু। তিথি বুঝে নিলো কি বলে ফেলেছে? নিজের পায় নিজে কোড়ল মেরে ফেলেছে।
তিথির এমন ইনোসেন্ট কথায় আমিতো ফিদা। সামনের সোফায় বসে পড়লাম ঠাস করে। একে দিয়ে আর যাই হোক মিথ্যা কথা বলানো যাবে না। এতোটা ইনোসেন্ট বাচ্চা ও।
আম্মু মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। আমি লজ্জায় উঠে পড়লাম সেখান থেকে। রুমে চলে আসলাম। ঐ পিচ্ছিটাও না। মুখে কিচ্ছু আঠকায় না ধ্যাত..।তিথি লজ্জায় তার শাশুড়ি আম্মুর দিকে তাকাল না। সোজা উপরে উঠে পড়ল। নিজের রুমে যেতে চাইলে,
- উহু, এদিকে না ওদিকে।
মিসেস সাবিনা নিজেদের রুমটা দেখিয়ে বললেন। তিথি অসহায় ভঙিতে তাকাল উনার দিকে। ফিক করে হেসে দিলেন মিসেস সাবিনা। বেশ! ভালো লাগছে ছেলে মেয়েদের এসব কাহিনী দেখতে।
,
এক সপ্তাহ হয়ে গেলো। তিথি আম্মুর রুমেই থাকে। তবে আম্মুর অগোচরে আমরা স্বামী- স্ত্রী বেশ জমিয়ে রোমান্স করে থাকি।
রাতে আম্মু ঘুমিয়ে পড়লে তিথি আমার কাছে চলে আসে। না, আসলে রুমে গিয়ে চুড়ি করে নিজের বউকে নিজের রুমে নিয়ে আসি। কি করব বলুন? ঘুম আসে না তো পিচ্ছি বউটাকে ছাড়া। বেশ ভালো লাগছিল লুকুচুরি প্রেম প্রেম খেলা।
( সকালে )
তিথি আম্মুকে লুকিয়ে আমার রুমে এলো। তিথি আসতেই আমি তিথি জরিয়ে ধরলাম।
- আহা! ছাড়ুনতো। একটা কথা বলার ছিল।
- বলো।
চুলে মুখ ডুবিয়ে বললাম।
- আপনি আমাকে একটু সময় দিবেন?
- মানে!
- মানে, আজ একটু দেরীতে অফিস যাবেন। আসলে আমার বান্ধুবীরা আপনাকে দেখার আগ্রহ জানিয়েছে। ওদের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতাম।
- এই বুড়ো লোক তোমার বান্ধুবীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তোমার লজ্জা করবে না?
- মোটেও না।
- ওকে, আই গিভ ইউ টাইম।
- থ্যাঙ্কু উম্মাহ...
তিথি জরিয়ে ধরে আমার গালে চুমু দিয়ে দিলো দৌড়। আমি হেসে দিলাম। পিচ্ছিই রয়ে গেলো আমার বউটা।
তিথিকে নিয়ে কলেজে গেলাম। তিথি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবার সাথে হাই, হ্যালো বিনিময় হলো। কফি শপে গিয়ে বসলাম সবাই। পকেটে ফোনটা কেপে উঠল। ফোনে কথা বলতে বলতে আমি পাশে চলে এলাম।
তিথি তার বান্ধবীদের সাথে গল্প করছিল। হঠাৎ রিনা বলে উঠল,
- তোর বরটা কি হ্যান্ডসামরে?
- হ্যা, সত্যিই বলেছিস রে। একটু বয়স হলে কি হবে বডি দেখেছিস। কি হট?
- সালমান খানের মতো। হাসিটাও সেই..। আমার যদি এমন একটা বর থাকতো।
- আমারতো একেই চাই।
এরকম আরোও অনেক কথা। বান্ধবীদের এসব কথাবার্তায় ফুলছিল তিথি। কফির কাপটা গট করে রেখে দিলো। টেবিল থেকে উঠে গট গট করে চলে আসল সেখান থেকে। ওর বান্ধবীরা পিছন থেকে ডাকছিল। কিন্তু, তিথি সেটা কানেই নিলো না।
,
ফোন রেখে পিছু ফিরতেই তিথি এসে আমার হাত ধরল,
- চলুন।
- কোথায়? আমি অবাক হয়ে বললাম।
- আর এক মুহূর্তও থাকব না এখানে।
- মানে, কেনো?
- বলছি না চলুন।
রেগে গেলো তিথি। আমাকে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলো।
- গাড়ি স্টার্ট করুন। বাড়ি যাবো..
- বাড়ি যাবে মানে? কলেজে যাবে না তুমি। আর আমার অফিসও তো আছে।
- না আমি কলেজে যাবো, না আপনি অফিসে যাবে। নাও লেট'স মুভ।
- মানে, কি হয়েছে তোমার তিথি?
- মাথা গরম করাবেন না বলে দিচ্ছি। গাড়ি স্টার্ট করতে বলেছি স্টার্ট করুন।
আমি আর কোনো কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট করলাম। তিথির হাবভাব বুঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ কি হলো কিছুই বুঝতেছি না। বাসার সামনে আসতেই। তিথি আমার হাত আমাকে নিয়ে সোজা উপরে উঠল। রুমে নিয়ে গেলো।
- তিথি, কি হয়েছে তোমার বলবে প্লিজ?
- আপনি আর কখনো আমাকে নিয়ে কলেজে যাবেন না। না নিয়ে আসার জন্য যাবে।
রাগে ফুসতে ফুঁসতে বলল তিথি।
- মানে, কেনো?
- মানে, আপনি কলেজ থেকে দূরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। আমি সেখান থেকেই গাড়িতে উঠবো..
- মানে, কি হয়েছে তোমার? বলবে প্লিজ।
তিথি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,
- মেরে ফেলবো শাঁকচুন্নিদের।
- মানে! কাকে? কাদের মেরে ফেলবে তুমি।
- সবাইকে। আমার সব কয়টার শাকচুন্নি বান্ধবীদের।
- কেনো?
- ওরা, কি বলে জানেন? আপনি নাকি হিরোর মতো। আপনার বডি খুব হট। আপনার সাথে ওদের প্রেম করতে ইচ্ছে করে। আপনি হ্যান্ডসাম, হট যাই হোন তাতে ওদের কি? আপনিতো আমার বর। আর প্রেম ওরা করবে কেনো আমি করব আপনার সাথে। আমি আমার বরের সাথে করব।
রাগে ফুসতে ফুঁসতে বলল তিথি। আমি হেসে দিলাম। এজন্য তাহলে রেগে আছেন মাহরাণী। মহারাণীতো বেশ জেলাস হয়েছেন।
- আপনি আর কখনো ওদের সামনে যাবেন না। ওরা আপনার কাছে আসতে চাইলেও আপনি ইগ্নোর করবেন বুঝেছেন?
- হুম।
আমি মাথা নাড়ালাম।
তিথি রাগে গট গট করে হাঠতে লাগল। এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে হাঠতে লাগল। আর প্রতিবার একটা করে আমার গালে চুমু দিতে লাগল। আমি হাসব নাকি কাঁদবো? তিথির অবস্থা দেখে কি করব বুঝতে পারছি না। নিরব বসে আছি। আর তিথি বিড় বিড় করে ওর বান্ধবীর গালি দিচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পর পর আমার গালে চুমু একে দিচ্ছে।
- তিথি, তুমি ক্লান্ত হয়ে গেছো। বসো এখানে।
তিথি আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম,
- আরে বাবা আমি কি করলাম?
- বসবো না।
- আরে তুমিতো ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছো।
- আর তুই কি করেছিস বলছিস? সব দোষ তোর।
আমি অবাক বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখছি তিথিকে। এতোটা রাগ ওর। আর আমাকে তুই করে বলছে। বাব্বা আমার বউতো দেখি সব গুণের অধিকারী। রাগলেতো বেশ লাগে আমার পিচ্ছি বউকে।
তিথি পয়চারী করছেতো করছেই।
- আর তুই এই শার্ট পড়েছিস কেনো? আর কিছু পাসনি।
আমার কাছে এসে আমার কলারে ধরে বলল।
- আরে আমি কি করব? আমি কি জানি নাকি যে এটা খারাপ শার্ট আর তোমার ভালো লাগবে না।
- খারাপ শার্ট মানে। জানিস এই শার্টে তোকে কতো হট লাগে। ওরা কি এমনি এমনি বলেছে নাকি?
আমি ফিদা হয়ে বসে আছি।
তিথি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
- এক্ষুনি শার্টটা খুল। খুল বলছি।
তিথি আমার বুকের উপর উঠে বসল। তারপর কিল ঘুসি মারতে লাগল। টেনেটুনে শার্টটার নাজেহাল অবস্থা। অবশেষে খুলে ফেলতে হলো।
গেঞ্জিটাও ছিড়ে ফেলল টেনে। খালি গায়ে শুতে আছি।
তিথি আমার বুকে মাথা রাখল। কেঁদে দিলো...
- আরে কাঁদছ কেনো?
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম। তিথি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল,
- জানেন, আমার খুব ভয় করে।
কাঁদতে কাঁদতে বলল। আমার বুকে আকড়ে ধরল। নখ বসিয়ে দিয়েছে আমি বুঝতে দিলাম না। কোনো শব্দ করলাম না।
- কেনো?
- আপনাকে না হারিয়ে ফেলি।
হাউমাউ করে কেঁদে দিলো।
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com