Breaking News

ভালোবাসা দিন কতটা রঙিন । পর্ব - ০১

বিয়ের প্রথম রাতেই আমাকে ডিভোর্স পেপারসে্ সই করতে হয়েছে।

বাবা মায়ের কথায় বিয়েতে রাজি হয়েছি আবার তাদের কথায় ডিভোর্স পেপারসে্ সই করেছি।

বিয়ের প্রথম রাতেই ডিভোর্স হওয়া একটা মেয়ের পরিস্থিতি যেমন থাকে আমার ও ঠিক তেমনি ছিলো৷

আমার সব স্বপ্ন কল্পনা পানিতে ভেসে গেলো।

সেই মুহুর্থে আমি আর আমার মাঝে ছিলাম না৷

চেয়েছিলাম আত্মহত্যা করবো কিন্তু না এখানে তো আমার কোনো দোষ নেই।

চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।

দরজা বন্ধ করে দিয়ে সারারাত কেঁদেছি৷ আমার কি ভূল ছিলো? কেন আমার সাথে এমনটা হলো।

আমি তো বিয়েতে রাজি ছিলাম না তবুও কেন তারা আমার সাথে এটা করলো৷

আমি এই মুখ বাইরে কিভাবে দেখাবো৷ এই সমাজের কাছে এখন আমি একজন ডিভোর্সি নারী।

তারা আমাকে দেখলে অনেক কিছুই বলবে৷

আমি তো চাইনি আমার জীবনে এমন একটা দিন আসুক। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে কষ্ট।

প্রিয়ন্তি বাবা মায়ের আদরের ছোট মেয়ে। সবসময় দুষ্টুমি করে বেরাতো৷ অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে।
বাবার কাছে যখন যা চেয়েছি সব কিছুই পেয়েছে।
কখনো কোনো কিছুর আবদার অপূর্ণ রাখেনি। বড় বোন মিমি ভালো ঘরেই বিয়েটা হয়েছে৷
মিমির জামাই রাজ প্রিয়ন্তিকে নিজের ছোট বোনের মতোই ভালোবাসে।
প্রিয়ন্তির সকল আবদার এক কথায় পূরণ করে দিতো। খুব সুন্দর চলছিলো জীবনযাপন।
কিন্তু মাঝখান দিয়ে সুন্দর জীবনকে ভেঙ্গে দিলো টচনচ করে।
একদিন
প্রিয়ন্তি সন্ধ্যার পর পড়তে ছিলো ঘরে। প্রিয়ন্তির বাবা বাসায় এসে প্রিয়ন্তির মাকে বললো
- প্রিয়ন্তির জন্য ভালো একটা ছেলে পেয়েছি৷ ছেলেটা খুব ভালো। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে।
- কি করে ছেলেটা?
- বিদেশ থাকে৷ ভালো চাকরি করে।
-তুমি খোঁজ পেলে কিভাবে?
-তোমার চাচা এই বিয়ের সম্বন্ধ্য দিছে। তুমি ব্যস্ত যাও প্রিয়ন্তিকে রেডি করে বড় ভাই জানের ঘরে এসো। ওকে দেখতে আসছে।
- ঠিক আছে তুমি যাও আমি ওকে নিয়ে আসছি।
প্রিয়ন্তির বাবা চলে গেলো। প্রিয়ন্তির মা প্রিয়ন্তির পাশে যেয়ে
- মা রেডি হয়ে নে। তোকে দেখতে আসছে?
প্রিয়ন্তি অবাক হয়ে
- কারা মা?
- ছেলে পক্ষ।
- মা আমি এখন বিয়ে করবো না। আমি যেতে পারবো না।
প্রিয়ন্তির মা প্রিয়ন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে
- তুই শুধু তাদের সামনে যাবি। তোকে বিয়ে করতে হবে না। না গেলে তো তোর বাবার সম্মান থাকবে না।
প্রিয়ন্তি উঠে হাটা দিবে তখন মা বললো
- কই যাস রেডি হ।
- মা রেডি হওয়ার কি আছে। আমাকে পছন্দ করলে এই ভাবেই করুক। সাজতে পারবো না। আমি কি সেজেগুজে থাকবো নাকি।
- ঠিক আছে চল।
প্রিয়ন্তির মা প্রিয়ন্তি নিয়ে ঘরে ঢুকলো। প্রিয়ন্তি মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দেওয়া। প্রিয়ন্তিকে সোফায় বসালো। ছেলের বোন বললো
- বাহ্ ভারি সুন্দর তো।
প্রিয়ন্তি ভালো করে দেখে ছেলের বোন প্রিয়ন্তির কাছে এসে আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দিলো। এটার জন্য মোটে ও প্রস্তুত ছিলো না প্রিয়ন্তি। পুরো থ হয়ে গেলো।
প্রিয়ন্তিকে নিয়ে মা চলে গেলো। প্রিয়ন্তি ঘরে যেয়ে
- মা এটা কি হলো? আমি এখন বিয়ে করবো না।
- তোর বাবা আসুক তাকে বলিস।
প্রিয়ন্তির মা বেরিয়ে গেলো
প্রিয়ন্তির বাবার সাথে সবাই কথা বার্তা বললো। মেয়েকে তাদের পছন্দ হয়েছে। বাকীটা বাসায় যেয়ে বলবে৷ ছেলেপক্ষের সবাই চলে গেলো। প্রিয়ন্তির বড় চাচা বললো
-হুট করে মেয়ের বিয়ে ঠিক করলি খোঁজ খবর নিছিস।
- হ্যা ছেলে খুব ভালো। বিদেশ থাকে।
- বিদেশ থাকা ছেলের সাথে বিয়ে দিবি। আমার এই বিয়েতে মত নেই। ভালো কোনো শিক্ষিত ছেলে দেখে বিয়ে দে।
- না ভাইজান ছেলেকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। মেয়েকে ওখানেই দিবো।
- তোর মেয়ে তুই যা ভালো বুঝিস। পরে আফসোস করিস না।
প্রিয়ন্তির বাবা আর কিছু না বলে বেররিয়ে আসলো। প্রিয়ন্তির বাবা প্রিয়ন্তির মার কাছে যেয়ে
- ওরা তো মেয়েকে পছন্দ করছে।
- প্রিয়ন্তি তো এই বিয়ে করতে চাই না।
- কেন?
- ও আরো পরে বিয়ে করবে।
- ওর কি কম বয়স হয়েছে। আমি ওদের কথা দিছি মেয়ে ওদের বাড়ির বউ হয়ে যাবে।
- তুমি প্রিয়ন্তির সাথে কথা বলে নাও।
প্রিয়ন্তি খাটে বসে ভাবছে বিয়েটা যে করেই হোক আটকাতে হবে আমি এখন বিয়ে করবো না৷ আমার পড়াশোনা শেষ করতে হবে। বাবাকে ম্যানেজ করতে হবে। প্রিয়ন্তির বাবা পাশে বসে
- কি রে মা কি হয়েছে তোর?
- কই কিছু না তো।
- তুই বলে এখন বিয়েটা করবি না।
- হ্যা বাবা। আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই না।
- দেখ মা ছেলেটা অনেক ভালো এমন ছেলে আর পাওয়া যাবে না৷ এতো সুন্দর সম্বন্ধ হাত ছাড়া করতে চাই না।
- বাবা ভালো ছেলে আরো পাওয়া যাবে। এখন আমাকে বিয়ে দিয়ো না। আমি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করবো।
- বিয়ের পর ও পড়াশোনা করতে পারবি। ওরা তোকে পড়াশোনা করাবে।
- বাবা এমনটা সবাই বলে। সংসারের বোঝা কাঁধে বসিয়ে দিলে আর পড়াশোনা করা হয় না। প্লিজ বাবা আমি এখন বিয়েটা করবো না।
প্রিয়ন্তির বাবা উঠে দাঁড়িয়ে রাগি গলায়
- ওদের আমি কথা দিয়েছি। নাই আমার সম্মান থাকবে না। আশা করি তুমি আমার সম্মান রাখবে।
কথাটা বলে প্রিয়ন্তি বাবা চলে গেলো। প্রিয়ন্তি ফোনটা নিয়ে মিমিকে ফোন করলো। মিমি ফোন ধরতেই প্রিয়ন্তি বললো
- ভাইয়া কই আপু
মিমি বেশ অবাক হয়ে
- হঠাৎ ফোন দিয়ে ভাইয়াকে খুঁজছিস। কিছু হয়েছে।
- তুই আগে ভাইয়ার কাছে ফোনটা দে।
মিমি রাজের কাছে ফোনটা দিলো। প্রিয়ন্তি কান্না করে
- ভাইয়া আমি এখন বিয়ে করবো না। আপনি এসে বাবাকে বোঝান। ওরা আমাকে আংটি পড়িয়ে গেছে।
রাজ অবাক হয়ে
- কি বলছো ? আর কখন আমাকে তো কিছু বলেনি।
-আমি ও জানতাম না হুট করে এসে সব করলো। বাবাকে বলছি কিন্তু শুনছে না। আপনি কিছু একটা করেন।
- ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না। আমরা কাল সকালেই আসতাছি।
ফোনটা রাখতেই মিমি বললো
-কি হয়েছে?
- তোমার বাবা ওর বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলেরা আংটি পড়িয়ে গেছে। ও বিয়ে করবে না এখন।
- বাবা তো আমাকে তো কিছু বললো না।
- হুট করেই করছে। আর তুমি জানো হুট করে কোনো কিছু করা ভালো না। কাল সকালে চলো যেয়ে কিছু করতে পারি কি না?
- হ্যা তাই ভালো হবে।
রাত ১১ টার দিকে ছেলের বোন ফোন দিছে প্রিয়ন্তির বাবার কাছে । প্রিয়ন্তির বাবা ফোনটা ধরতেই
- বাসার সময় রাজি হয়েছে। প্রিয়ন্তিকে পছন্দ হয়েছে।
প্রিয়ন্তির বাবা হাসি মুখে
- আলহামদুলিল্লাহ।
- আমরা চাচ্ছিলাম বিয়েটা তাড়াতাড়ি ঠিক করতে। আগামি সপ্তাহের ভেতর। আপনারা যা খোজ খবর নেওয়ার নিতে পারেন।
- ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলো। প্রিয়ন্তির বাবা এসে
- ওরা আগামি সপ্তাহে মেয়েকে নিয়ে যাবে।
- তুমি ভালো করে খোঁজ খবর নিছো।
- হ্যা ছেলেটা খুব ভালো। কাল আরেকবার খোঁজ নিবো।
- ভালো করে খোজ নিয়ো।
-ঠিক আছে।
পরেরদিন সকাল বেলা
রাজ আর মিমি এসে হাজির হলো। প্রিয়ন্তির বাবার কথা শুনে রাজ থ হয়ে গেলো...........
.
চলবে...

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com