জেলাসবতী বউ । পর্ব -০৪
কিন্তু, উনি তো আবার আমার সাথে কথা বলবেন না। আমিতো কষ্ট পাবো। (তিথি)
- তাই বলে পিছু ছেড়ে দিবি। যা জানার চেষ্টা কর কাব্য রেগে আছে কেনো? একদম পিছু ছাড়বি না জানার আগ পর্যন্ত বুঝলি...
- আচ্ছা।
তিথি রুমে এলো। তিথিকে রুমে আসতে দেখে আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। শরীর মুছতে লাগলাম। তিথির দিকে তাকিয়ে দেখলাম চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
- সমস্যা কি? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
ভ্রু কুঁচকে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললাম।
আমার রাগ করে বলা কথাটা অনেক কষ্টে হজম করল তিথি। তিথির সত্যি খুব কান্না পাচ্ছে।
উনি এতোটা রাগ করেছেন আমার উপর? আমি তো কিছুই করিনি তাহলে...। খুব খারাপ উনি? জানেন না আমি উনাকে ছাড়া থাকতে পারি না। আর আজতো জ্বরের কারনে কলেজে যেতে দিলেন না। অফিস থেকে এসে একবারওতো আমার শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করলেন না।
- কি হলো? বোবা হয়ে গেছো নাকি?
তিথি কিছু বলে চোখ সরিয়ে নিলো।
তিথি ভাবছে, আমার কি দোষ? এমনিতেই তো উনাকে আমি ভালোবাসি। তার উপর উনার লোমশ লোভনীয় বুক দেখেতো আমার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কি যে ভালো লাগে বলে বুঝাতে পারব না।
- আচ্ছা,আমাকে কেমন লাগছে? ( তিথি )
কিছু খুঁজে পাচ্ছিলো না। তাই এটা দিয়েই শুরু করল।
- কেমন লাগছে মানে? প্রতিদিন যেমন লাগে তেমনই লাগছে।
বিরক্ত হয়ে বলল।
তিথির মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে যে, কাব্য ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। কঠিন করে কথা বলছে। তিথি এসবে অভ্যস্ত না। তাই কেঁদেই দিলো।
- আপনি এরকম করছেন কেনো আমার সাথে?
কাঁদতে লাগল।
- কেমন করছি? ( অবাক হয়ে বললাম)
- অফিস থেকে আসার পর থেকে আমার সাথে কথা বলছেন না। আগে তো এসেই আমাকে জরিয়ে ধরতেন। আমাকে শাড়িতে কেমন লাগছে সেটা কি সুন্দর করে বর্ণনা দিতেন।
- তো, এখন কি করতে হবে? তোমাকে জরিয়ে ধরতে হবে, তোমার গুণগান করতে হবে।
রাগ দেখিয়ে বললাম।
- আপনার কি হয়েছে? এমন করছেন কেনো?
তিথি আমার পাশে এসে দাঁড়াল।
- আমার কিছুই হয়নি।
- তাহলে, এমন করছেন কেনো?
- দেখো, আমার লেট হচ্ছে আমি বাইরে যাবো। এসব আজাইরা কথা বলে টাইম ওয়েস্ট করে লাভ নেই আমার।
শার্ট পড়তে পড়তে বললাম।
তিথি ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। কোনো কথা বলছে না। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিথি মুখ ফুলিয়ে কাঁদছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তিথির।
আমার খুব খারাপ লাগছে কিন্তু গলে গেলে চলবে না। এই মেয়েকে শিক্ষা দিতেই হবে।
আমি হাতের ওয়াচটা পড়ে চুল ঠিক করে নিলাম। তিথির সামনে দিয়ে বেরুতে যাবো তখনই জরিয়ে ধরল তিথি আমাকে। হো হো করে কেঁদে উঠল। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু, তিথি ছাড়ছেই না। জোর করে জরিয়ে ধরে ভ্যে ভ্যে করে কাঁদছে।
- আরে কি হলো তোমার?
- আপনি এমন করছেন কেনো আমার সাথে? আপনার এমন ব্যবহারে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আপনি কি জানেন না যে, আমি আপনার অবহেলায় নয় ভালোবাসায় অভ্যস্ত। আপনি আমাকে অবহেলা করবেন না প্লিজ আমার খুব কষ্ট হয়।
( তিথি)
তিথির কথা শুনে আমারও খারাপ লাগল। খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে।
- বলুন না আর কষ্ট দিবেন না আমাকে। আমার সাথে কথা বলুন প্লিজ...
- তাহলে, আমাকে কষ্ট দাও কেনো? আমাকে কষ্ট দেয়ার সময় মনে থাকে না এসব।
,
তিথি বুক থেকে মুখ তুলে তাকাল আমার দিকে,
- আমি কখন কষ্ট দিলাম আপনাকে?
- কেনো? মনে নেই।
- না,তো। আমার তো মনে পড়ছে না। আমি কেনো কষ্ট দিতে যাবো আপনাকে?
- তাহলে, ফোনে আমার পি,এ কে বললে কেনো যে, তুমি আমার কিছু হও না।
তিথির মনে পড়ল বিকেলের কথা। তাহলে এজন্যই রেগে আছে উনি। এই এটুকু কথার জন্য এতো কষ্ট পেয়েছেন উনি?
- সরি, আমি বুঝতে পারিনি আপনি কষ্ট পাবেন।
জরিয়ে ধরে বলল তিথি।
- এখন বল, তুমি আমার কি হও?
- বউ।
- আর আমি?
- আপনি আমার বুড়ো স্বামী।
- তাহল, তখন বললে কেনো যে, তুমি আমার কেউ হও না।
- আমি তো বুঝিনি আপনি কষ্ট পাবেন। আমিতো ভেবেছিলাম, ঐ মেয়েটার সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক আছে। যদি বলি আমি তোমার বউ তাহলে আপনাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে।
- ওয়াট ডু ইউ মি?
- সরি, সরি। আপনি রেগে যাবেন না প্লিজ। আমিতো এমনিই ভেবে ফেলেছিলাম।
আমতাআমতা করে বলল তিথি।
- এই বিশ্বাস করো আমাকে। আর তোমার স্বামী সাথে যদি অন্য কোনো মেয়ের সম্পর্ক থাকে তুমি সেটা মেনে নিবে। তুমি জেলাস হবে না?
অবাক হয়ে বললাম।
- মোটেও না। আমিতো ঐ মেয়েকে কুচি কুচি করে কেটে ফেলব। আপনি শুধু আমার স্বামী, আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসবেন।
আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল।
- তাহলে..
- আসল, আমি ভেবেছিলাম অফিসের কাউকে আপনার বিয়ের কথা জানান নি। আমি যদি বলি আমি আপনার বউ তাহলে সমস্যা হবে। তাই বলিনি।
- মানে! সমস্যা হবে মানে?
- আচ্ছা, বাদ দিন না। প্লিজ ক্ষমা করে দিন আমাকে।
ছল ছল চোখে তাকাল আমার দিকে।
- হুম, ক্ষমা করা যায়। তবে শাস্তি স্বরুপ কিছু দিতে হবে আমাকে।
- কি?
- পাপ্পি..
- ওক্কে... উম্মাহ
পা উচু করে আমার গলা নামিয়ে গালে চুমু দিলো।
- এখন হয়েছে?
- না।
- আর কি করতে হবে?
মন খারাপ করে বলল তিথি।
- এখন তোমাকে বলতে হবে যে, তুমি আমার স্ত্রী।
- কাকে?
- আমার পি,এ কে।
- আচ্ছা, ফোন দিন। নাম্বার বের করে দিন।
আমি রিয়ার নাম্বার বের করে তিথির হাত মোবাইল দিলাম। তিথি কল করল রিয়াকে। রিয়ে কল রিসিভ করতেই তিথি বলতে শুরু করল,
- আসসালামু আলাইকুম, আমাকে চিনতে পেরেছেন? অফিস টাইমে ফোন দিয়ে যে আপনার স্যারের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।
- হ্যা, চিনতে পেরেছি। ( রিয়া)
- আমি উনার স্ত্রী হই বুঝেছেন। আমাকে ম্যাডাম বলে ডাকবেন।
- মানে!
অবাক হয়ে বলল রিয়া।
- মানে, আমি কাব্যর বউ। আপনার স্যারের বউ।
- কাব্য, বিবাহিত?
- হ্যা, কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না। ওকে ওয়েট এ মিনিট। কল কেটে দিলো তিথি।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- আপনি একটু নিচু হোন তো।
- কেনো?
- আরে হোন না।
- আমি নিচু হতেই।
- উম্মাহ...
আমার গলা জরিয়ে ধরে গালে পাপ্পি দিয়ে সেটা ক্যামেরা বন্ধী করল তিথি। তারপর ফোনে কিসব করতে লাগল।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তিথির দিকে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম তিথি ফটোটা রিয়াকে সেন্ড করেছে।
- কি করলে এটা? (আমি)
- কেনো? ঐ শাঁকচুন্নি তো বিশ্বাস করছিল না তো যে, আমি আপনার বউ। এখন পিকটা সেন্ড করলাম এখন নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবে যে, আমি আপনার বউ।
আমি হাসবো না কাঁদবো। হো হো করে হেসে দিলাম। সাথে তিথিও হেসে দিলো।
- আচ্ছা, এখন শার্টটা খুলুন।
তিথি কথাটা বলতেই আমি লাফিয়ে উঠলাম,
- মানে!
- মানে কি আবার? খুলতে বলেছি খুলবেন।
- শার্ট খুলব কেনো?
- আমার খুব ইচ্ছে করছে...
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com