জেলাসবতী বউ । পর্ব -০৬
মেঘ মানে! কে মেঘ? আর ওও তোমাকে জরিয়ে ধরবে কেনো?
- আরে এতো প্রশ্ন একসাথে করলে আমি কোন প্রশ্নের জবাব দিবো বলুন?
- যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলো। এই মেঘটা কে?
- কে আবার? আমার বন্ধু।
- ওও, তোমাকে জরিয়ে ধরবে কেনো?
- বন্ধু বন্ধুকে জরিয়ে ধরতে পারে না নাকি? আজব।
- না, জরিয়ে ধরতে পারবে না। ওও তোমাকে জরিয়ে ধরবে কেনো? তোমাকে জরিয়ে ধরার অধিকার শুধু আমার, শুধু আমার।
রেগে গিয়ে বললাম।
- আরে, আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো?
আমার দুগালে হাত রেখে বলল।
- রেগে যাবো না। আর তুমি ওকে মানা করতে পারো না? খুব ভালো লাগে তাই না। ঐ মেঘ তোমাকে জরিয়ে ধরলে।
- হুম, লাগে তো। লাগবে না কেনো? আমার বন্ধু আমাকে খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলে তো আমার ভালো লাগবেই।
তিথি হাসি মুখে বলল।
আমার রাগ তখন চরমে। অন্য একটা ছেলে ওকে জরিয়ে ধরে। আর ওও বলছে কিনা ওর ভালোও লাগে।
ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম তিথির গালে। ঘটনার দ্রুততায় তিথি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। টপ করে এক ফোটা পানি পড়ল।
আমি রাগে কি করব? খুঁজে পাচ্ছি না।
- আপনি আমাকে মারলেন?
তিথি গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল।
- হুম, মারলাম। অন্য একটা ছেলে তোমাকে জরিয়ে ধরবে। তুমি বলছ সেটা তোমার ভালো লাগে। আর সেটা আমি মেনে নিবো।
রেগে গিয়ে বললাম।
- ছেলে মানে! কোন ছেলে?
অবাক হয়ে বলল তিথি।
- কেনো? মেঘ।
- ও ছেলে হতে যাবে কেনো? ওতো আমার বান্ধুবি মেঘা।
- তাহলে মেঘটা কে?
- ঐ মেঘাকেইতো আমি মেঘ বলে ডাকি। আর ওতো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। মেঘা আমাকে জরিয়ে ধরতেই পারে। তার জন্য আপনি আমাকে চড় মারলেন।
ঠোঁট কামড়ে কাঁদতে লাগল। আমি কি বলব খুঁজে পাচ্ছি না? হাসব নাকি কাঁদব। মেঘ মেয়ে। এটা আগে বললে কি হতো? আমিতো ভেবেছিলাম ছেলে। ইশ! কি করলাম এটা? আমার পিচ্ছি বউটাকে চড় মারলাম। ধ্যাৎ, বিষয়টা আগে জানা উচিত ছিল। এভাবে চড় মারাটা ঠিক হয়নি। কতো জোরে মেরেছি?
,
তিথি ভাবতেই পারছে না এটা। উনি আমাকে চড় মারলেন। এই সামান্য একটা বিষয়ের জন্য এতো জোরে চড় মারলেন। আমি বেশ বুঝতে পারছি। উনি যে আগে আমার উপর রেগে ছিলেন সেটাই প্রয়োগ করেছেন। আমি তো পিচ্ছি। একটা ভুলই না হয় করে ফেলেছিলাম। তার জন্য উনি আমাকে কষ্ট দিবেন। আমিতো ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছিলাম। তারপরও চড় মারলেন।
তিথি যেনো এটা মেনে নিতে পারছে না। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কি করলাম এটা? এতোটা গাধার মতো কাজ করতে পারলাম কি করে?
- তিথি, আই এম সরি। আমি বুঝতে পারিনি যে, মেঘ একটা মেয়ে। আমি ভেবেছিলাম...
আমি তিথির গালে হাত দিতেই। তিথি ঝটকা মেরে আমার হাত সরিয়ে দিলো। তারপর বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল।
আমার খুব খারাপ লাগল। খুব রাগ হচ্ছে নিজের উপর।
আমি তিথিকে জরিয়ে ধরলাম।
- প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমায়। সত্যি আমি ভুল করে ফেলেছি।
কিন্তু, তিথি কেঁদেই চলছে।
- তিথি, প্লিজ তাকাও আমার দিকে।
তিথি আমাকে জোর করে ঠেলে ছাড়িয়ে নিলো। বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলো।
আমি পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম,
- প্লিজ, তিথি আমার কথাটাতো শুনো। তোমার বুড়ো বরকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
তিথি মুখ ফুলিয়ে কাঁদতেই থাকল।
- প্লিজ, তিথি কান্না করো না। আচ্ছা তোমার যতো ইচ্ছে আমাকে মারো। তবুও ক্ষমা করে দাও প্লিজ।
তিথিকে ছাড়তেই তিথি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি পিছন পিছন বেরিয়ে পড়লাম।
- তিথি, শুনো। তিথি..
তিথি আম্মুর রুমের দিকে গেলো। দরজা খুলাই ছিল গিয়ে ডুকে পড়ল। আমি ডাকতে ডাকতে আম্মুর রুমের সামনে গেলাম।
- কিরে তিথি কাঁদছিস কেনো? ( আম্মু)
তিথি কোনো কথা না বলে কেঁদেই চলছে।
- তিথি, কি হয়েছে? তো। কাঁদছিস কেনো? আর তোর গালে এটা কিসের দাগ? কেউ মেরেছে তোকে।
তিথি কোনো কথা বলল না। ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগল। আম্মু দরজার দিকে তাকাতেই দেখল আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি।
- তিথি, কাঁদছে কেনো কাব্য? ( আম্মু)
আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
আমি কি বলব? বুঝতে পারছি না।
- আসলে আম্মু..
আমতাআমতা করতে দেখে আম্মু বিষয়টা টের পেয়ে গেলো কিছুটা।
- কে চড় মেরেছে তিথিকে?
আমি কোন কথা না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
- তুই?
- হুম।
আম্মু দরজার সামনে এলো।
- মানে! কেনো মেরেছিস? কি করেছে তিথি?
- আসলে, আম্মু। আমি প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলাম। তিথিকে ভুল বুঝে..
আম্মু ঠাস করে আমার গালে একটা চড় মেরে দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম,
- আম্মু, আমি..
- আর একটা কথাও বলবি না। পিচ্ছি মেয়ে ভুল করতেই পারে। তার জন্য চড় মেরে দিবি।
- আম্মু, আমি সত্যি বুঝতে...
আমাকে আঠকিয়ে দিলো আম্মু।
- তোর কোন কথা শুনতে চাইনি আমি। কি করেছিস এটা? তুই। এরকম করে কেউ মারে। দাগ বসিয়ে দিয়েছিস।
- আম্মু, আমি সত্যি মারতে চাইনি। রেগে গিয়েছিলাম।
- চুপ কর! তিথিকে তোর কাছে রাখাটাই ভুল হয়েছে।
- মা, কি বলছো এসব?
- হ্যা, ও তোর কাছে সেফ না। এরকম পিচ্ছি মেয়েকে কেউ মারে। ভুলতো স্বাভাবিক করতেই পারে।
- কিন্তু, আম্মু।
- তুই এখন রুমে যা।
আমি একবার তিথির দিকে তাকালাম। মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে কাঁদতে কাঁদতে। ফর্শা গালে চড়ের দাগ বসে গেছে। ইশ! এতোটা খারাপ আমি। ঘুরলাম রুমে যাওয়ার জন্য। আবার আম্মুর দিকে তাকালাম।
- আম্মু, তিথি।
অসহায়ের মতো তাকালাম আম্মুর দিকে।
- যেতে বলছি না তোকে। তিথি আজ থেকে আমার কাছেই থাকবে।
আমি নিরীহ প্রাণীর মতো পোষ মেনে নিলাম। রুমে চলে এলাম। দূর! ভালো লাগছে না কিছু। খুব খারাপ লাগছে। কি করে মারতে পারলাম তিথিকে? হাতটা ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ইশ! ঘুমও আসছে না। বারবার পিচ্ছি বউটার মুখ ভেসে আসছে সামনে। কি যে করি? ফোনটাওতো রেখে গেছে এখানে। না হয় ফোন দিয়ে আমার কাছে আসতে বলতাম।
উফফ! ছটফটানি করতে লাগলাম। ঘুম আসছে না মোটেই বারবার তিথির কান্না করার কথা মনে পড়ছে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমারও কান্না পাচ্ছে খুব।
,
মিসেস সাবিনা অনেক কিছু করছেন তিথির কান্না থামানোর জন্য। কিছুতেই হচ্ছে না। গল্প বলছেন, মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছেন, আদর করছেন।
তিথি কান্না করার মাঝেও হঠাৎ ফিক করে হেসে দিলো। মিসেস সাবিনা তিথির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
- কিরে হাসছিস কেনো?
- আপনি এতো বড় ছেলেকেও মারেন? হিহি।
তিথি হাসতে লাগল। মিসেস সাবিনাও হেসে দিলাম।
- পাগলী মেয়ে! একদিকে কাঁদছে আবার হাসছেও।
- ইশ! উনি চড় খাওয়ার পর কি দৃশ্যটাই না ফুটে উঠেছিল। কি ইনোসেন্ট ভাবে দাঁড়িয়ে থেকেছিলেন। হিহি।
- মারব না। আমার মেয়েকে মেরেছে। কতো সাহস?
- বেশ করেছেন।
কিন্তু, তিথির খারাপও লাগছে। কতো জোরে চড় খেলেন উনি। ইশ! মনে হয় দাগ বসে গেছে।
- কিরে কি হলো?
- নাহ, কিছু না।
- কাব্য, আরো অনেকবার আমার হাতের মার খেয়েছে। শুনবি..
- হুম, বলুন। বলুন..
তিথি নড়েচড়ে শুলো। মিসেস সাবিনা তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গল্প বলতে শুরু করলেন। যাক, শেষ পর্যন্ত মেয়েটার মুখ হাসি ফুটল।
- আম্মু, আমার না উনার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।
- কি বললি? থাপ্পড় খাবি। কাব্য তোকে চড় মেরেছে। তারপরও ওর কাছে যাবি...
- উনাকেও তো মেরেছেন।
- বেশ করেছি।
- কিন্তু, আমার তো উনার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। ইশ! কতো জোরে চড় খেয়েছেন।
- চুপ করবি? চুপচাপ ঘুমা। একদম যাবি না ওর কাছে বুঝলি। তোকে কষ্ট দিয়েছে ও। এখন বুঝুক মজা..
- কিন্তু..
- কোনো কিন্তু না।
- আচ্ছা।
বেশ তো। কষ্ট পাক উনি। কতো জোরে মেরেছেন আমাকে। উনি একটুও ভালো না। খারাপ লোক। খারাপ বুড়ো। খারাপ স্বামী উনি।
,
(সকালে)
রাতে একটুও ঘুমুতে পারিনি। বারবার তিথির কথা মনে পড়ছিল। রুমটা খালি খালি লাগছিল।
তিথি নাস্তার টেবিলে এসে বসল। ঠিক আমার অপজিটে।
তিথি একবারও আমার দিকে তাকালো না। খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ওকে।
- কিরে না খেয়ে তাকিয়ে আছিস কেনো?
আম্মুর কথায় ঘোর কাটল।
- খাচ্ছি তো।
মিসেস সাবিনা বেশ বুঝতে পারছেন উনার ছেলে মেয়েদের মনের অবস্থা। হাসি আঠকে রেখেছেন কোনোমতে। ভাবছেন কাব্যর আব্বু থাকলেতো বেশ হতো। উনি সব ঘটনায় গণ্ডগোল পাকিয়ে দিতেন। হো হো করে হেসে দিতেন।
মিঃ রাকিব। বিজনেস ডিলের জন্য বাইরে গেছেন কয়েদিনের জন্য।
তিথি ভাবছে, ইশ! কি অবস্থা হয়েছে উনার? মনে হয় রাতে ঘুমাননি। উনার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু, আম্মুতো বকা দিবেন। মারবেন বলেছেন। না থাক বাবা যাওয়ার দরকার নেই।
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে গেলাম। আম্মু তিথিকে বাসার গাড়ি দিয়ে কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মন খারাপ হয়ে গেলো। ভাবছিলাম কলেজে নিয়ে যাওয়ার সময় সরি বলে দিবো তিথিকে। কিন্তু, সেটা আর হলো না।
,
অফিস শেষ গাড়ি নিয়ে সোজা তিথিদের কলেজে গেলাম। গিয়ে যা দেখলাম রাগে আমার মাথা গরম হয়ে গেলো। কয়েকটা ছেলে দাঁড়িয়ে তিথিকে ডিস্টার্ব করছে। একটা ছেলে হাতও ধরে আছে তিথির।
- ভাইজান, শুনুন। ভুল জায়গায় হাত দিচ্ছেন।
ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললাম। তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলো।
- কেরে তুই?
- তোর যম।
- মানে!
- মানে, ওর হাত ছেড়ে দে। ( আমি)
- না, ছাড়লে। কি করবি তুই?
- জানি না।
রাগে ফুসতে ফুসতে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম।
- তা, মালটা তোর কি হয়রে। তুই এতে নাক গলাচ্ছিস কেনো?
- বউ হয় ওও আমার। নাক গলানোর তো কথাই তাই না।
বলেই পাঞ্চ করলাম ছেলেটার মুখ বরাবর।
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com