Breaking News

সে আমার আপন জন । পর্ব -০৩

কোনো ব্যাপার না, তবে আপনি ও কম জান না।

সবাই এবার থেকে খুব কেয়ারফুল থাকবে আপনার সম্পর্কে।" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "নাহ...! তারা এবার থেকে তক্কে তক্কে থাকবে আর সুযোগ পেলে'ই বদনাম করার চেষ্টা করবে আমাদের দু'জন কে।"
- "সে যাই হোক,,,,,,,, আপনি অনেক সাহসী। আমি সম্মান করি আপনাকে।" মিম মুচকি হেসে ইমান কে
পাঁচ টাকা দামের একটি চকলেট দিয়ে বললো,
- "ধন্যবাদ,,,, এবার মিষ্টিমুখ করুণ। আশাকরি,,,,,, আপনার এবং আমার সকল ধরনের তিক্ততা কমে যাবে?" ইমান তার কথা শুনে মুচকি হাসলো, আহান মিম কে বললো,
- "তোকে এই ড্রেস টায় খুব মানিয়েছে।" পূর্বা রেগে গিয়ে বললো,
- "কখনো,,,,, তুমি আমার প্রসংশা এভাবে করেছ? যখনি দেখি, তখনি ছোঁচা'র মতো তাকিয়ে থাকো ওর দিকে।" আহান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, মিম বলল,
- "এখানে যেন কোনো সিনক্রিয়েট না হয়। এই আমি বলে দিলাম, কথা টা যেন মাথায় থাকে।" মিমে'র কথা শুনে সকলেই বেশ চুপচাপ, রাএি বললো,
- "আমি নিউ মার্কেটে যাব...!
ওখানে আমার একটা থ্রি-পিস বানাতে দিয়েছিলাম মনির টেইলরর কাছে।" মিম বলল,
.
- "আমি ও যাবো,
ব্লাউজ বানাতে হবে। বাবা আমাকে রিসেন্টলি দু'টো নতুন শাড়ি কিনে দিয়েছে।"
ওর কথা শুনে পূর্বা মৃদু হেসে বললো,
- "তোর তো শাড়ির দোকান। ভাই মানুষ এরকম থান পেঁচিয়ে থাকে কিভাবে?"
মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "মারবো এক চটকানা? একদম ইনসাল্ট করবি না আমার শাড়িকে।
শাড়ি হলো বাংলার ঐতিহ্য। তাই ভাঁড়ামো করিস না বোন, ঠিক আছে?"
হঠাৎ করে'ই মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেমে গেলো৷
ইমান,,,,,,, মুখে মাস্ক পরতে পরতে ড্রাইভারে'র কাছে জিজ্ঞেস করলো,
- "আক্কাস, কি ব্যাপার কি? কি হ'য়েছে?" আক্কাস বললো,
- "গাড়ির চাকায় লোহা ঢুকে হাওয়া বের হ'য়ে গেছে স্যার। আমি রিকশা ডেকে দিচ্ছি?"
- "ঠিক আছে।"
রিকশা আসতে না আসতেই অর্ক আহান যে যার মতো পূর্বা রাত্রি কে নিয়ে রিকশায় উঠে পরলো, মিম রেগে গিয়ে বললো,
- "আমি কিভাবে যাবো???? তোদের মামার কোলে চেপে?" ইমান,,,,, হাসতে হাসতে মিমকে টেনে নিয়ে রিকশায় চেপে বসলো, তারপর শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো,
- "আমার সাথে বসলে কি হবে?" মিম ফোন চাপতে চাপতে বললো,
- "বাচ্চা মানুষ তো??? তাই সিনিয়র সিটিজেনদে'র পাশে বসতে খুব লজ্জা লাগে। আর তাছাড়া, আজ-
কাল সিনিয়র সিটিজেন হাত মারতে ওস্তাদ। আমি একদম নিরাপদ অনুভব করিনা তাদের সাথে।" সে কর্কস গলায় বলল,
- "আমি সিনিয়র সিটিজেন নই। তবে আপনি চাইলে কিন্তু,,,, পারতেন প্রেম করে নিজে'র জন্য একটা কামলা নিয়োগ দিতে।" মিম হাসতে হাসতে বলল,,,,
- "দেখুন, আমার কোনো কামলার প্রয়োজন নেই। কারণ আমি খুব সুখে আছি নিজের সিঙ্গেল লাইফে।
আর তাছাড়া,
আই ডোন্ট লাইক কামলা, আমি বিয়ে করতে চাই সে টা ও কোনো এক সু-পুরুষকে।" মিমে'র কথা শুনে হাসলো ইমান।। তার কাছে জানতে চাইলো,
- "দেশে কি সু-পুরুষের অভাব পরেছে?" মিম বলল,
- "হুমম,,,, আর অমানুষ গুলো ভালো ভালো মেয়ে গুলো কে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে। যাগগে,,,,,,, সেসব কথা আপনার আব্বু এখন কেমন আছে?"
সে হাসতে হাসতে বললো,
.
- "আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো,,,,,,,,,, সে বরাবরই ভালো থাকে আমাদের সকলকে টেনশনে রেখে।"তখন অর্ক
এসে বললো,
- "তোমরা কি রিকশা থেকে নামবে না? আমরা অল -রেডি চলে এসেছি নিউমার্কেটে।" মিম,,,,,,,,, ঝটপট রিকশা থেকে নেমে পরলো। ইমান, রিকশা'র ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলো খুচরো টাকা নেই তার পকেটে।
মিম তখন রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিলো, ইমান মৃদু
হেসে মাথা চুলকতে চুলকতে বললো,
- "দুঃখিত,,,,,, আমি বেশ অসুবিধায় ফেলে দিলাম আপনাকে।" মিম,,,,,, হঠাৎ করেই ইমানের নাক টেনে বললে,
- "কোনো ব্যাপার না, চলুন। আপনার কোনো কিছু কেনাকাটা করার আছে?" সে বললো,
- "না না, আপনি কিনুন। আপনার ব্লাউজ পিস না কি যেন কেনার আছে?" মিম বললো,
- "হুমম, তারপর সে মার্কেটে ঢুকে গেলো রাএি আর পূর্বার সাথে।" মিম, প্রথমে রেডিমেড ব্লাউজ দেখলো ইমান কি ভেবে বললো,
- "ভালো লাগবে না,,,,,,,,,, পিস কিনে ডিজাইন করে বানান আরো সুন্দর লাগবে দেখতে।" মিম বললো,
- "আমি ও তাই ভেবেছি,
কেমন যেন বেখাপ্পা বেখাপ্পা লাগছে?" ইমান বললো,
- "হুমম,,,,,,, ভেতরে চলুন। আরও অনেক দোকান আছে।" মিম বললো,
- "জ্বি,
জানি,,,,, আমি আজ নতুন আসিনি নিউমার্কেটে।"
ইমান তার কথায় মুচকি হাসলো,,,,,,, সে জোর করে চাইলো মিমের ব্লাউজের টাকা দিতে। কিন্তু,, মিম সে তো টাকা নিলো'ই না উল্টো বকুনি দিলো তাকে।
অতঃপর সে টেইলারে'র কাছে এলো। সে ডিজাইন শুনে মিম কে বললো,
- "এতো বড় গলা দিয়ে ব্লাউজ বানালে ভালো লাগবে না দেখতে।" মিম বলল,
- "সেটা আপনার দেখার বিষয় নয়,,,,,,,,,, গলা ডিপ করতে বলেছি ওটাই করবেন ঠিক?"
- "আপনাকে পরলে ভালো লাগবে না।"
- "দ্যাট'স নান অব ইওর বিজনেস ঠিক আছে? যে টুকু দিতে বলেছি, সেটুকু দেবেন তাতেই' হবে।" মিম কথা বলে বাহিরে চলে এলো, খেয়াল করে দেখলো ইমান সে অপজিটে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তখন পূর্বা আর রাএি ছুটতে ছুটতে ইমানে'র কাছে এলো,,, বললো,
- "সুপার হিরো,,,, আমরা কি সেলফি তুলতে পারি আপনার সাথে?" ইমান সানগ্লাস ঠিক করতে করতে বলল,
- "শিওর...! তখন পূর্বা মিম কে টানতে টানতে বলল,
- " আয় না,, চল সেলফি তুলি সকলে মিলে ওনার সাথে।" মিম বললো,
- "তোরা তোল, আমার ভালো লাগেনা।
তোরা ভালো করে'ই জানিস, যে আমি পছন্দ করি না শো-অফ করতে।
" তখন আহান এগিয়ে এসে মিম কে বললো,
.
- "দেখ, এখানে শো-অফ করা'র কোনো কথা হচ্ছে না। সকলে মিলে আজ একটা ছবি তুলি এক সাথে?"
মিম এসে চুপচাপ ইমানের পাশে দাঁড়িয়ে গেলো,,,,, অর্ক দেরি না করে কিছু সেলফি তুলে ফেললো সাথে সাথে।
অতঃপর,,,,,,,, রাএি এবং পূর্বা কে ওরা বাসায় ছেড়ে এলো। ইমান মিমকে নিজের সাথে করে নিয়ে এলো বাড়িতে। মিম তারপর, প্রথমে গিয়ে মানাফ সাহেবের সাথে কথা বললো, জিজ্ঞেস করলো,,,,,,,,, সে কেমন আছে? তিনি হাসি মুখে বললেন,
- "ভালো মা, তুমি কিছু দিন এসে থেকে যেতে পারো না আমাদের কাছে?" মিম মুচকি হেসে বললো,
- "সম্ভব হলে আসতাম, আসলে আমার মা-বাবা খুব কম ছেড়ে থেকেছেন আমাকে।
আমি ও তাদের ছেড়ে থাকতে একদম অভ্যস্ত নই। তবে,,,,,, আপনাদের বাসায় আজ বেড়াতে এসে আমার খুব ভালো লাগছে।" মিমের কথা শুনে খুশি হলেন তিনি, স্ত্রী অরুণিমা কে ডেকে বললেন,
- "কিছু খেতে দাও মেয়ে টা কে।" মিম কিছুক্ষণ তার সাথে গল্প করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। হঠাৎ করে'ই তার নজর গেলো পাশের ঘরের দিকে। সে কি ভেবে সেই ঘরে'র দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে উঁকি- ঝুঁকি মারতে লাগলো।
হঠাৎ,,,, সে সামনে তাকিয়ে ভালো করে খেয়াল করে দেখলো। যে বাথরুম থেকে পানি'র শব্দ আসছে, সে দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি মে'রে দেখলো।
ইমান শাওয়ারে'র নিচে দাঁড়িয়ে গোসল করছে। ও
সেই দৃশ্য দেখে লজ্জা পেলো ভীষণ,,,,,, তবুও মুচকি হেসে বললো,
- "হাউ হ্যান্ডসাম...!" কথাটা শুনেই,,, ইমান তাকিয়ে পরলো দরজার দিকে। মিম ততক্ষণে এক ছুটে ঘরের বাহিরে চলে এলো।
ইমান গায়ে বাথ টাওয়াল জড়াতে জড়াতে মৃদু হেসে জোর গলায় বললো,
- "ওখানে কে? কে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে?" মিম তত -ক্ষণে এলাকা ত্যাগ করলো, ইমান ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখলো, মিম চুপচাপ সোফায় বসে আছে।তখন অর্ক আহান এস হাজির, তারা মিমে'র সামনে ওর ব্যাগ প্যাক টা রেখে বললো,
- "আমরা দুঃখিত,,,,,,, যে আজ থেকে তিন-চার দিন তোকে আমাদের সাথে থাকবে হবে।" মিম তাদের চোখ পাকিয়ে বললো,
.
- "মানে টা কি? হঠাৎ করে বাবা মা আবার কোথায় যাচ্ছে?" অর্ক বলল,
- "তোর দাদীর শরীর ভালো নেই,,,,,,,,,,,, সে আঙ্কেল আর আন্টি কে দেখতে চেয়েছে।" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "ওই কূটনী বুড়ী কে চেনো তোরা? আমি নিশ্চিত,,,, সে আবারও নাটক করছে। আসলে কি জানস? ওই মহিলা আমার আধ বুইড়া বাপ কে আবারও নিজে'র পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে চাইছে।
কিন্তু কি বলতো?আমরা তো আর কেউ তাকে পাওা দিচ্ছি না,,,,, তাই সে পারছে না বাবার ঘাড়ে নিজের বিধবা বোনঝি কে ঝোলাতে। যেখানে,,, বিবাহে'র পনের বছর পর,
আমি বাবা-মায়ে'র অনেক ধৈর্যে'র ফল, বাবার কিছু সমস্যা থাকার কারণেই এমন অসুবিধে হ'য়েছে। সব
কিছু জানার পরে ও আমার দাদী মা যেন কিছু'ই জানেন না। সে এখনো নিজে'র কথা বাবাকে দিয়ে মানানোর জন্য স্বস্তার নাটক করে যাচ্ছে। যাগগে, সে সব কথা একটু পরে'ই তার কৃত-কর্মের আপডেট আমার কাছে চলে আসবে।
আমি অপেক্ষা করছি জোভান ভাইয়ার ফোনের, সে একটু পরে'ই আমাকে ফোন করবে।" মিমে'র কথা শেষ হতে না হতে'ই তার ফোন টা বেজে উঠলো। মিম ফোন টা লাউডস্পিকারে রেখে জিজ্ঞেস করলো,
- "বলো ব্রাদার কি হয়েছে?" সে হাসতে হাসতে বললো,
- "দাদী তো কাকুকে বিয়ে'ই দিয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু, কাকু আজ অদ্ভুত একটা মজার কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছে।তিনি এক ঘটক ডেকে পাঠিয়েছে।
যে কিনা আমাদের দাদু ভাইয়ের দ্বিতীয় বিয়ে'র জন্য সুন্দরী বয়স্ক পাএী'র ছবি নিয়ে এসেছে। আর তুই জানি'স আমাদের রুকমী বানুকে???? দাদী'র কান্না দেখে কে?
বেচারি নিজ ঘরে খিল এঁটে বসে আছে এদিকে বাবা, কাকু দাদুভাই তাকে নিয়ে খুব হাসাহাসি করছে আর রইলো সায়েমা ফুফির কথা। দাদুভাই বলেছেন,
- "তাকে তার বাপের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। কারণ তিনি তার সুখের সংসারে কোনো অশান্তি চান না আর কখনো এমন জ্বালাতন করলে তিনি তালাক দিবেন দাদীকে।
আর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে দাদা একমত দাদী না কি তাকে অযথা'ই কাকুর দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে খুব বিরক্ত করছে। তিনি প্রচণ্ড অতিষ্ঠ, মামা নানু ভাই কে ফোন করে তিনি বলেছেন,,,,,,,"তার বোন কে এসে নিয়ে যেতে।' রেডি থাক, একটু পরে'ই তোর কাছে রুমকী বানুর ফোন আসবে।" মিম হাসতে হাসতে বললো,
- "মা'র দিয়া কেল্লা,
দেখ না আমি কি করে টাইট দেই ওই বজ্জাত মহিলা কে। আহা.......! শখ কত? নিজে স্বামী'র পাশে অন্য কাওকে সহ্য করতে পারছেনা।
ওদিকে, আমার মায়ের সাজানো সুখের সংসার নষ্ট করতে চাইছে? দেখ না, এবার আমি কি করি? আর জীবনেও আমার বাবা'র দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়ার নাম তিনি আনবেন না ওই মুখে।" ও কথা গুলো বলে কল টা খট করে, সাথে সাথে তার ফোন টা বেজে উঠলো উচ্চ শব্দে।
মিম দশ মিনিট পর কল টা লাউড স্পিকারে রেখে রিসিভ করলো,,,,,, ফুরফুরে মেজাজে সে দাদী কে সালাম দিয়ে বললো,
.
- "বলো কি বলবে?" রুমকী একে একে সব নাতনির কাছে খুলে বললেন, মিম বললো,
- "ঠিক আছে না? একদম ঠিক আছে। চিন্তা করো না আমি আসছি আগামী সপ্তাহে দাদু ভাইয়ের বিয়ে খেতে।" নাতনীর কথা শুনে কেঁদে ফেললেন রুমকী, মিম কল টা কেটে দিলো সাথে সাথে।
তখন হঠাৎ ইমানের সাথে চোখাচোখি হ'য়ে গেলো মিমের, সে মুচকি হেসে বললো,
- "আপনার দাদী কিন্তু সত্যি খুব কষ্ট পাচ্ছে।" মিম বললো,
- "দুঃখিত, এই মুহূর্তে আমি আমার মা ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতে পারছিনা। কারণ আমার মায়ে'র জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।"
চলবে,,,

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com