বাড়িওয়ালার দুষ্টু মেয়ে । পর্ব - ০২
বেঞ্চের উপর চুপ করে বসে, সামনের দিকে তাকিয়ে আছি হটাৎ দেখলাম সেই লোকটা আবার আমার দিকে আসছে।
আমি অবাক হলাম.! কিছুটা খটকাও লাগলো।
লোকটা আবার এদিকে আসছে কেন.?
এই লোকটাই ছিনতাইকারী নয় তো আবার.?
কথাটা ভেবেই আমি ভয়ে একদম জমে গেলাম। কি করবো ভেবে পেলাম না।
শুধু এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।অচেনা, অজানা, সেই লোকটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো.!
.
কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার পাশে এসে বসলো। আমি লোকটার থেকে
একটু দূরে সরে বসলাম।
আমার প্রচন্ড ভয় হতে লাগলো। ভয়ে একেবারে কুঁচকে গেলাম। আমার হাত, পা, শরীর রীতিমত কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে।
শরীর হালকা ঘামতেও শুরু করেছে.!
খুব ভয় হচ্ছে, লোকটা আবার কিছু করবে না তো.?
আমি আমার ব্যাগ দু'টো হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে
ধরলাম... যাতে লোকটা নিয়ে পালাতে না পারে।
.
আমি আর অচেনা লোকটা, দু'জনেই চুপ করে বেঞ্চের উপর বসে আছি।
কেউ কোন কথা বলছি না।
কিছু সময় এভাবে চুপ থাকার পর আমি আড় চোখে লোকটার দিকে তাকালাম।
লোকটাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার তাকানো দেখে লোকটা মুচকি হাসলো।
তারপর নরম গলায় বলল,
.
-- ভয় পেয়েছো.?
.
লোকটার কথা শুনে ভ্যাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।
উত্তরে কি বলা উচিত ভেবে পেলাম না।
আমি যে সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছি, সেটা কি লোকটাকে বলে দিব.?
না, থাক বলার দরকার নেই। তাহলে লোকটা
আরও পেয়ে বসবে। আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে থাকলাম।
লোকটা আবার বলে উঠলো,
.
-- আচ্ছা, আমাকে দেখে কি তোমার ছিনতাইকারী মনে হয়.?
.
এবার লোকটার কথা শুনে আমি বড়সড় একটা ঢোক গিললাম.! লোকটা ঠিক
কি বলতে চাচ্ছে বা করতে চাচ্ছে বুঝতে পারছি না।
আমি বুকে সাহস নিয়ে বললাম,
.
-- না, না... তা কেন মনে হবে।
.
-- তাহলে ভয় পাচ্ছো কেন.?
.
-- কই ভয় পাচ্ছি.?
আমি তো একদম ঠিক আছি।
.
-- কিন্তু তোমার চোখ-মুখ যে বলছে তুমি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো।
.
লোকটার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলাম। উনি কি মুখ দেখেই সব বলে দিতে পারেন নাকি.?
আজব ব্যাপার.!
আমি কিছুক্ষণ লোকটার দিকে তাকিয়ে থেকে আমতা আমতা
করে বললাম,
.
-- সেরকম কিছু না। আসলে একা একা বসে আছি তো, তাই একটু
ভয় লাগছে। তাছাড়া কিছু না।
.
আমার কথা শুনে লোকটা হাসতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। উনার হাসির কারণ খুজে পেলাম না।
লোকটা কিছুক্ষণ শরীর দুলিয়ে হাসার
পর বললেন,
.
-- থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না।
আমি জানি তুমি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছো।
ভাবছো, আমি হয় তো কোনো ছিনতাইকারী তাই না.?তোমার ক্ষতি করবো.!
.
আমি কোন কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ালাম।
লোকটা আবার হাসতে লাগলো।
আমি অবাক হয়ে তার হাসি দেখতে লাগলাম।
মনে মনে ভাবলাম, "লোকটা পাগল নাকি.? বিনা কারণে শুধু হেসেই যাচ্ছে।"
লোকটা কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললেন,
.
-- দেখো বাবা, তুমি আমাকে যেমনটা ভাবছো, আমি তেমন মানুষ নই।
আমি মোটেও ছিনতাইকারী কিংবা খারাপ মানুষ না।
.
কথাগুলো বলে লোকটা থামলেন।
আমি উনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। উনার চেহেরায় একটা অজানা মায়া ফুটে উঠেছে।
খুব কম মানুষের চেহেরায় এমন মায়া ফুটে উঠে।
জানি না কেন আমার লোকটাকে খুব কাছের কেউ একজন বলে মনে হলো.!
মনে হলো লোকটা আমার খুব আপনজন.!
.
আমার চুপ করে থাকা দেখে লোকটা আবার বলা শুরু করলেন,
.
-- তুমি হয়তো ভাবছো আমি চলে গিয়ে আবার ফিরে এলাম কেন, তাই না.?
.
আমি জবাবে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলাম।
লোকটা বললেন,
.
-- আসলে আমি তোমাকে একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
.
আমি ভ্রু-কুঁচকে মনে সংশয় নিয়ে বললাম,
.
-- কি কথা.?
.
-- আমার বাড়িতে ছোট একটা রুম ফাঁকা আছে। একজন মানুষ খুব ভালোভাবে থাকতে পারবে।
তুমি যদি চাও তাহলে সেখানে থাকতে পারো।
তবে আমার একটা শর্ত আছে.!
.
লোকটার কথা শুনে আমি সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
কি বলছেন উনি.?
আমার তো উনার কথা বিশ্বাস-ই হচ্ছে না.!
আমি উচ্ছুসিত গলায় লোকটাকে বললাম,
.
-- কি বললেন, আবার বলেন তো.?
.
-- বললাম, আমার বাড়িতে ছোট একটা রুম ফাকা আছে।
তুমি চাইলে সেখানে থাকতে পারো.!
.
লোকটার কথা শুনে একটা সস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম।
যাক, অবশেষে তাহলে একটা থাকার জায়গার সন্ধান পেলাম।
আমি খুশিতে গদগদ হয়ে লোকটাকে বললাম,
.
-- সত্যি.? আপনি সত্যি বলছেন.?
আপনার বাড়িতে রুম ফাকা আছে.?
.
লোকটা সামান্য হেসে উত্তর দিলেন,
.
-- হ্যা, সত্যি।
.
-- তাহলে চলুন। এত রাতে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার মোটেও
ভালো লাগছে না। তাড়াতাড়ি চলুন, প্লিজ.!
.
-- উহু... আগে তোমার সার্টিফিকেট আর জাতীয় পরিচয় পত্র দেখাও।
.
-- জ্বি, দেখাচ্ছি।
.
আমি ব্যাগ থেকে সার্টিফিকেট আর জাতীয় পরিচয় পত্র বের করে লোকটাকে দেখালাম।
লোকটা সব দেখে বললেন,
.
-- ঠিক আছে, চলো এখন।
.
-- হুমম।
.
আমি একটা ব্যাগ কাঁধে আর অন্যটা হাতে নিয়ে লোকটার সাথে হাটতে লাগলাম। হাটতে হাটতে লোকটা বললেন,
.
-- শোনো বাবা, আমার নাম হচ্ছে হাসান আলী। তুমি আমাকে এখন থেকে আঙ্কেল বলে
ডাকবে, ঠিক আছে.?
.
-- আচ্ছা, ডাকবো।
.
-- হুমম।
.
আমরা দু'জন আবার হাটতে লাগলাম।
হটাৎ আমার মনে পড়লো, আরে আঙ্কেল তো উনার বাড়িতে থাকতে হলে একটা শর্ত দিয়েছেন, কিন্তু কি সেটা.? উনি তো বললেন না।
আমি হাটতে হাটতে আঙ্কেলের
দিকে তাকিয়ে বললাম,
.
-- আঙ্কেল, আপনি একটু আগে বললেন, আপনার বাড়িতে থাকতে হলে একটা শর্ত আছে।
কিন্তু শর্তটা কি সেটা তো বললেন না.!
.
আমার কথা শুনে আঙ্কেল হাটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমিও হাটা থামিয়ে
উনার সাথে দাঁড়ালাম। আঙ্কেল আমার দিকে চেয়ে
হাসিমুখে বললেন,
.
-- তেমন কোনো কঠিন শর্ত না, বাবা। সহজ-ই। তোমাকে আমার
মেয়েকে পড়াতে হবে.!
.
আঙ্কেলের কথা শুনে অবাক হলাম।
উনার মেয়েকে পড়াতে হবে মানে.?
আমি সংশয় নিয়ে আঙ্কেলকে বললাম,
.
-- আপনার মেয়েকে পড়াতে হবে মানে.?
ঠিক বুঝলাম না, আঙ্কেল।
.
-- না বোঝার কি আছে।
আমি বলেছি, আমার মেয়েকে
তোমার পড়াতে হবে।
মানে হলো, আমার বাড়িতে থাকবে আর
আমার মেয়েকে পড়াবে।
.
আমি আঙ্করলের কথা শুনে অবাক
গলায় বললাম,
.
-- এটা কেমন শর্ত, আঙ্কেল.!
আমি আপনার বাড়িতে টাকা দিয়ে ভাড়া থাকবো, তাহলে আপনার মেয়েকে পড়াতে হবে কেন.?
.
-- ওহ্... তাহলে তুমি আমার মেয়েকে পড়াবে না.?
.
কর্কশ গলায় বললেন আঙ্কেল।
আমি রাগ দেখিয়ে বললাম,
.
-- অবশ্যই না। আমি আপনার বাড়িতে ভাড়া থাকবো, কোনো লজিং
মাস্টার না যে আপনার মেয়েকে পড়াবো।
.
-- ঠিক আছে, তাহলে আমিও বাসা ভাড়া দিবো না।
যাও অন্য কোথাও বাড়ি খুজে নাও।
.
আঙ্কেলের কথ শুনে আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেল। আমি খানিকটা উদ্ধত
গলায় বললাম,
.
-- এটা তো অন্যায় আঙ্কেল.!
আপনি আমার সাথে চিটিং করছেন.!
বিপদে পড়েছি বলে আপনি আমার অসহয়ত্বের ফায়দা তুলছেন।
.
আমার কথা শুনে আঙ্কেল জোরে জোরে হাসতে লাগলেন।
হাসতে হাসতে বললেন,
.
-- তো কি হয়েছে.? তুমি আমার শর্তে রাজি কিনা সেটা বলো, নয়তো
এখান থেকে ফুটো.!
.
আঙ্কেলের কথা শুনে আমি মাথা চুলকাতে লাগলাম। ভাবতে লাগলাম, এখন কি করবো।
আমি তো ঢাকা শহরে কাজের জন্য এসেছি।
এখন যদি কাজ করা বাদ দিয়ে আঙ্কেলের মেয়েকে পড়াই তাহলে কাজ করবো কখন.?
টাকা পাবো কই.? হাত খরচা পাবো কই.? আমার নিজস্ব তো একটা খরচ আছে। আবার বাড়ি ভাড়া দিতে হবে, সেটা পাবো কই.?
.
তাছাড়া আমার নিজেরও তো পড়াশোনা আছে।
আমি সেসব ছেড়ে আঙ্কেলের মেয়েকে পড়াবো.?
উফফ.! কি যে করি.? আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।
এদিকে আবার আঙ্কেলের মেয়েকে না পড়ালে বাসা ভাড়া দিবে না।
এত রাতে আমার অন্য কোথাও যাওয়ারও জায়গা নেই।
তাছাড়া আগামীতে যে বাসা ভাড়া পাবো
তারও কোনো গ্যারান্টি নেই।
এমনিতেই ব্যাচেলরদের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না।
আমি এখন কি যে করি, ঠিক বুঝে
উঠতে পারছি না।
.
আরো কিছুক্ষণ ভাবার পর
সিদ্ধান্ত নিলাম, "আঙ্কেলের মেয়েকে পড়াবো।"
এছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি নিশ্চিত এই বাড়িটা ভাড়া না পেলে অন্য কোথাও বাড়ি খুজে পেতে প্রচুর সমস্যা হবে। আবার নাও পেতে পারি।
তাই ভালই ভালই আঙ্কেলের শর্তটা মেনে
নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এছাড়া আমার কিছু করার নেই।
বাকিটা পরে দেখা যাবে।
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুখ ভার
করে আঙ্কেলকে বললাম,
.
-- ঠিক আছে আঙ্কেল, আমি রাজি.!
আপনার মেয়েকে আমি পড়াবো।
.
আমার কথা শুনে আঙ্কেল খুব খুশি হলেন।
আমি উনার মুখ দেখে সেটা বেশ বুঝতে
পারলাম।
আঙ্কেল আমার কাঁধে হাত রেখে
বললেন,
.
-- এই তো গুড বয়.!
.
-- হুমম। তা আঙ্কেল আপনার
মেয়ে এবার কিসে পড়ে.?
.
-- ইন্টার ফাস্ট ইয়ার.!
.
আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম, আঙ্কেলের মেয়ে হয়তো ছোট।
খুব জোর ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়ে হয়তো। কিন্তু এখন তো দেখছি, আঙ্কেলের মেয়ে
প্রায় আমার সমবয়সি.! আমার থেকে মাত্র ২ বছরের ছোট.! আমি এতবড় একটা মেয়েকে পড়াবো.?
.
না, পড়ানো নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই।
আমি যে পড়াতে পারবো না সেরকমও কোনো বিষয় না।
কারণ এর আগেও আমি অনেক টিউশনি করিয়েছি। গ্রামে থাকাকালে আমি
টিউশনি করেই নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি।
তবে যাদেরকে পড়িয়েছি তারা প্রায় সবাই ছেলে আর কমবয়সি ছিল।
আমি ভুল করেও কোনো মেয়েকে পড়াতাম না। আর যদিও বা পড়াতাম তাহলে শুধু
ছোট ছোট মেয়েদের।
কারণ একটাই, আমি মেয়েদের প্রচন্ড রকমের ভয় পাই। সেই ছোটবেলা থেকে।
জানি না কেন.?
.
তবে আমার যতটুকু মনে পরে, স্কুলের ম্যাডাম থেকেই মেয়েদের প্রতি আমার ভয় লাগা শুরু.!
ছোটবেলায় স্কুলের ম্যাডামের কাছে একবার প্রচন্ড মাইর খেয়েছিলাম।
ম্যাডামের একমাত্র মেয়েকে প্রেম পত্র দেওয়ার কারণে ১০টা বেতের বারি
আমার ডান হাতে পরেছিল।
.
মাইর খেয়ে সেই রাতে আমার হার কাঁপানো জ্বর আসে। খবর পেয়ে ম্যাডাম
সকাল ভোরে ভোরে আমাদের বাড়িতে
এসে হাজির।
আমার মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে
ম্যাডাম সেদিন বলেছিলেন, "চিন্তা করিস না, তোকেই আমার জামাই করবো.! তুই প্লিজ তাড়াতাড়ি
সুস্থ হয়ে যা.!"
.
আশ্চর্যের বিষয় তার পরদিন-ই আমি সুস্থ হয়ে উঠি। কিন্তু ভুল করেও
আর ম্যাডাম কিংবা উনার মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখি নি।
আমি স্কুল ছেড়ে দেই। অন্য স্কুলে ভর্তি হই।
.
মূলত সেই ঘটনার পর থেকেই মেয়েদের প্রতি আমার ভয় লাগা শুরু। মেয়েদের
দেখলেই আমি সব গুলিয়ে ফেলি। তাদের সাথে ঠিক করে কথা বলতে পারি না। আমার হাঁটু কাঁপে।
যে কারণে মেয়েদেরকে আমি একটু কম সহ্য করতে পারি।
ভুল করেও তাদের ধারের কাছে যাই না। সবসময় দূরে দূরে থাকি।
.
কিন্তু এখানে এসে দেখছি, সেই মেয়ে মানুষকেই আমার পড়াতে হবে.!
যাদেরকে আমি এত ভয় পাই.!
সত্যি পোড়াে কপাল আমার.!
আমি হতাশ হয়ে আঙ্কেলকে বললাম,
.
-- আঙ্কেল, আপনার মেয়েকে না পড়ালে হয় না.?
আপনি অন্য যে কোনো শর্ত দেন, আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো, প্লিজ.!
.
আঙ্কেল ভ্রু-কুঁচকে বললেন,
.
-- কেন, কি সমস্যা.? তুমি না এইমাত্র বললে, আমার মেয়েকে পড়াবে
তাহলে... এখন কি হলো.?
.
আমি নিচু স্বরে বললাম,
.
-- আসলে আঙ্কেল, আপনার মেয়ে তো অনেক বড়.! প্রায় আমার সমবয়সি।
আমি তাকে কিভাবে পড়াবো.?
.
-- কে বলল সমবয়সি.? তুমি আমার মেয়ের থেকে ২ বছরের সিনিয়র.!
আর তাছাড়া তুমি লেখাপড়াতে অনেক ভালো.! আমি তোমার সার্টিফিকেটে
দেখলাম, অনেক ভালো রেজাল্ট
করেছো তুমি.!
তাহলে তোমার থেকে জুনিয়র একটা মেয়েকে পড়াতে সমস্যা কোথায়.?
আমি তো কোনো সমস্যা দেখছি না।
তাহলে এত সংকোচ কিসের.?
.
-- সেরকম কিছু না আঙ্কেল।
আসলে আমার...???
.
কথাটা বলে শেষ করার আগেই আঙ্কেল হাতের ইশারায় আমাকে থামিয়ে দিলেন।
বললেন,
.
-- বুঝতে পেরেছি, টাকা লাগবে তো.?
সমস্যা নেই, আমি বেতন দিবো।
তুমি শুধু আমার বাড়িতে থাকবে, খাবে আর আমার মেয়েকে ভালোভাবে পড়াবে।
তোমাকে বাড়ির কোনো কাজ করতে হবে না। বাড়ি ভাড়াও দিতে হবে না.!
উল্টো আমি তোমাকে মাসে মাসে বেতন দিব.!
.
আঙ্কেলের কথা শুনে খুশিতে আমার জ্ঞান হারাবার উপক্রম।
এ তো দেখি মেঘ না চাইতেই জল.!
এমন সুবর্ণ সুযোগ কেবল গাধারাই হাতছাড়া করবে। আর আমি নিঃসন্দেহে
কোনো গাধা নই যে, এমন প্রস্তাব ফিরিয়ে দিব।
আমি আহ্লাদে আটখানা হয়ে
আঙ্কেলকে বললাম,
.
-- ঠিক আছে আঙ্কেল, আমি আপনার মেয়েকে পড়াবো।
আর শুধু পড়াবো না, একেবারে নিজের
মেয়ে মনে করে, ওহ্ স্যরি নিজের বোন মনে করে পড়াবো। একদম ভালোভাবে।
.
আমার এসব কথা শুনে আঙ্কেল শান্ত গলায় বললেন,
.
-- তোমার কথা শুনে বড় খুশি হলাম, বাবা।
এখন চলো যাওয়া যাক।
এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গেছে।
.
-- হুমম, চলেন।
.
আমি আর আঙ্কেল আবার হাটা শুরু করলাম। হাটতে হাটতে ঘড়ির দিকে
তাকিয়ে দেখি, ১২:৪৫ বাজে.!
.
হটাৎ আমার মাথায় একটা প্রশ্ন উদয় হলো। আচ্ছা, আঙ্কেল উনার মেয়েকে
পড়ানোর জন্য আমাকে এত জোর-জবরদস্তি করছে কেন.? এত তেল দিচ্ছে কেন.?
বাড়িতে ফ্রি থাকতে দিবে.! ফ্রি খেতে দিবে.!
আবার মাস শেষে বেতনও দিবে.!
আমার কাজ শুধু পড়ানো.! ব্যস, এইটুকুই.?
এত সুযোগ-সুবিধা আমার জন্য.!
ব্যাপার-স্যাপার দেখে মনে হচ্ছে, আমি কোনো ভিআইপি টিচার.!
.
না, নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল আছে.!
অনেক বড়সড় গন্ডগোল.!
আর আঙ্কেলকে দেখে তো বেশ বিত্তবান মনে হচ্ছে.!
টাকা-পয়সার তো মনে হয় অভাব নেই।
তাহলে উনার মেয়ের জন্য আমার মতো টিচার কেন.?
উনি তো ইচ্ছা করলে অনেক বড় টিচার রাখতে পারেন.! যারা আমার চেয়ে হাজারগুনে ভালো.!
.
আবার আঙ্কেল বললেন, আমার রেজাল্ট নাকি খুব ভালো.!
সত্যি বলতে আমার রেজাল্ট অতটাও ভালো না।
জাস্ট চলার মতো কিন্তু আঙ্কেল আমার সম্পর্কে কত কিছুই না বাড়িয়ে বললেন।
আমার সুনাম করলেন অথচ আমি এসবের যোগ্য নই।
মানছি আমি ভালো ছাত্র কিন্তু তাই
বলে এতটাও নই।
.
তাছাড়া আঙ্কেল তো আমাকে ভালোভাবে
চিনেনও না। আজকেই উনার সাথে
আমার প্রথম দেখা.!
তাহলে প্রথম দেখায় কেউ কি করে, একজন অচেনা মানুষের কাছে তার একমাত্র মেয়েকে পড়ানোর জন্য অনুরোধ করে। আজব ব্যাপার.!
তা না, আঙ্কেল যদি আমাকে আগে থেকে চিনতেন আর উনার মেয়েকে পড়াতে বলতেন তাহলে মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু এখানে বিষয়টা অন্য.!
আমি তো আঙ্কেলকে চিনি-ই না আর আঙ্কেলও আমাকে চিনে না। আগে কখনো আমাদের দেখাও হয়নি তাহলে কেন উনি আমার উপর এত জোর খাটাচ্ছে.?
.
না, আর ভাবতে পারছি না। মাথার ভিতর প্রশ্নগুলো সব গিজ-গিজ করছে।
এসব প্রশ্নের উত্তর না পেলে মাথা ঠান্ড হবে না।
আমি হাটা থামিয়ে আঙ্কেলের দিকে
তাকিয়ে স্বাভাবিক গলায় বললাম,
.
-- আচ্ছা আঙ্কেল, আপনি আপনার মেয়েকে পড়ানোর জন্য আমাকেই কেন বলছেন.?
ঢাকা শহরে তো আমার চেয়েও অনেক ভালো ভালো টিচার আছে,
যারা আপনার মেয়েকে অনেক ভালো পড়াতে পারবে।
তাহলে আপনি তাদের কাছে গেলেন না কেন.?
.
-- আরে বাবা, বললাম তো তুমি অনেক ভালো ছাত্র.! তোমার রেজাল্টও মাশআল্লাহ্
অনেক ভালো.! ছেলে হিসেবেও তুমি খারাপ না। অনেক ভালো.! তাই তোমাকে আমার
মেয়েকে পড়াতে বলছি, যাতে তোমার কাছে পড়ে আমার মেয়েটাও ভালো রেজাল্ট করতে পারে।
.
-- আপনার সাথে তো আজকেই আমার
প্রথম দেখা, তাহলে বুঝলেন কি করে
আমি ভালো ছেলে.?
আমি খারাপও তো হতে পারি, তাই না.?
.
-- হুমম, হতে পারো তবে আমার মনে হয় না
তুমি খারাপ।
.
-- কেন.?
.
-- আমি মানুষের মুখ দেখে তার চরিত্র সম্পর্কে
কিছুটা আন্দাজ করতে পারি.!
তাই তোমাকে দেখে মনে হয় না তুমি খারাপ।
.
আঙ্কেলের এসব আজগুবি কথা আমার মোটেও বিশ্বাস হলো না। আমি উনার দিকে তাকালাম।
উনার মুখের সেই সহজ-সরল ভাবটা আর নেই। কেমন যেন পাল্টে গেছে। আমি জানি আঙ্কেল
মিথ্যে বলছেন। কিন্তু কেন.?
আমাকে জানতেই হবে। আমি কড়া গলায়
আঙ্কেলকে বললাম,
.
-- মিথ্যে কেন বলছেন, আঙ্কেল.?
আমাকে কি আপনার বোকা মনে হয়.?
সত্যি করে বলুন, আমার মতো অপরিচিত একটা ছেলেকে দিয়ে আপনার মেয়েকে কেন পড়াতে চাইছেন.?
আর আপনি যদি না বলেন তাহলে
আমি কিন্তু চলে যাবো বলে দিলাম.!
আপনার বাড়িতে থাকার আমার দরকার নেই।
.
আমার কথা শুনে আঙ্কেল কিছু বললেন না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে উল্টো দিকে ঘুরে চলে আসতে লাগলাম।
হটাৎ আঙ্কেল আমার হাত টেনে ধরলো।
করুণ স্বরে বলল,
.
-- যেও না বাবা, আমি বলছি।
.
তারপর আঙ্কেল যা বললেন তা শুনে আমার মাথা চক্রর দিল। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল.!
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com