বাড়িওয়ালার দুষ্টু মেয়ে । পর্ব - ০৫
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুমে এসে বিশ্রাম
নিচ্ছি তখন দেখলাম, রিমি আমার রুমে আসলো।
আমি বসা থেকে তাড়াহুরো করে উঠে দাঁড়ালাম।
রিমি আমার সামনে এসে বলল,
.
-- তাড়াতাড়ি রেডি হোন।
.
-- কেন.?
.
-- কেন আবার, কলেজে যাবেন না.?
.
-- হ্যা, যাবো।
.
-- তাহলে তাড়াতাড়ি রেডি হয় নিচে আসুন।
একসাথে কলেজে যেতে হবে।
বাবা, আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
.
-- ঠিক আছে, তুমি যাও... আমি রেডি হয়ে আসছি।
.
-- তাড়াতাড়ি আসবেন। মেয়েদের মতো আবার সাঁজতে বসিয়েন না।
এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
.
-- আচ্ছা।
.
রিমি আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমিও আর সময় নষ্ট না
করে তাড়াতাড়ি রেডি হতে লাগলাম।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে গেলাম।
নিচে গিয়ে দেখি আন্টি আর রিমি বসে আছে।
রিমি আমাকে দেখেই নাক কুঁচকে বলল,
.
-- এতক্ষণ সময় লাগলো রেডি হতে.!
.
-- কোথায় সময় লাগলো.?
আমি তো তাড়াতাড়ি-ই রেডি হলাম।
.
-- থাক, আর বলতে হবে না।
চলেন এখন।
.
-- দাঁড়াও, একটু।
.
কথাটা বলে আমি আন্টির কাছে গেলাম।
আন্টি সোফার উপর বসে আছে।
আমি আন্টির পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাবো, সাথে সাথে আন্টি আমাকে
থামিয়ে দিলেন। বললেন,
.
-- আরে, আরে... কি করছো বাবা.!
সালাম কেন করছো.?
.
-- এমনি, আন্টি। আমার জন্য দোআ করবেন।
.
-- বোকা ছেলে.! তোমাদের জন্য দোআ করবো না তো কাদের জন্য করবো.?
দোআ করি অনেক বড় হও.!
.
কথাটা বলে আন্টি আমার মাথায় হাত রাখলেন। মমতা ভরা চোখে আমার দিকে তাকালেন।
আমি আন্টির হাতের ছোঁয়া পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
মনে হলো আমার মা পরম যত্নে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমার মনটা শীতল হয়ে গেল।
নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু'ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরলো।
আন্টি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে রাগী গলায় বললেন,
.
-- এই বোকা ছেলে, মেয়েদের মত কাঁদতেছ কেন.?
.
-- মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে, আন্টি।
.
-- তাই বলে কাঁদতে হবে.? কেঁদো না।
কাঁদলে তোমার মায়ের আত্মা কষ্ট পাবে।
তাছাড়া আমি তো আছি।
আমিও তো তোমার আরেকটা মা.!
.
-- হুমম, আন্টি।
.
-- তাহলে কাঁদতেছ কেন, চুপ করো এখন।
.
-- হুমম।
.
আমি কোনোমত কাঁন্না থামালাম।
আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
.
-- এই তো গুড বয়। যাও এখন কলেজে যাও।
তোমার আঙ্কেল তোমার ভর্তির সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
.
-- ঠিক আছে, আন্টি।
.
-- হুমম। সাবধানে কলেজ যেও আর তাড়াতাড়ি কলেজ শেষ করে বাড়ি ফিরবে।
কোথাও দেরি করবে না, ঠিক আছে.?
.
-- আচ্ছা, আন্টি।
.
-- ভালো। আর রিমি, এদিকে একটু শোন তো.!
.
রিমি আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।
আন্টির ডাক শুনে উনার সামনে এসে দাঁড়ালো।
.
-- হুমম, বলো।
.
-- তোর স্যারের সাথে কোনো দুষ্টুমি করবি না। ভদ্র মেয়ের মত থাকবি।
.
-- কি যে বলো না তুমি.!
স্যারের সাথে কেন দুষ্টুমি করবো.?
আমাকে কি তোমার অমন মেয়ে মনে হয়.?
.
-- তুই যে কেমন মেয়ে, তা আমার ভালো করেই জানা আছে।
একদম কোনো শয়তানি করবি না বলে দিলাম।
না হলে মেরে পিঠের চামড়া তুলে নিব.!
.
আন্টির কথায় রিমি ভয় পাওয়ার বদলে বিরক্তির স্বরে বলল,
.
-- ধুররউ.! তোমার এসব আলতু-ফালতু কথা শোনার টাইম নেই আমার।
আমি গেলাম।
স্যার চলেন, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
.
-- হুমম চলো। আন্টি আমরা গেলাম।
.
-- সাবধানে যেও, বাবা।
.
-- আচ্ছা, আন্টি।
.
আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, আল্লহ্'র নাম নিতে নিতে, রিমির সাথে কলেজের
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
.
রিমি আমার আগে আগে হাটছে আর আমি ওর পিছে পিছে।
কিছুদূর যেয়েই হটাৎ করে রিমি দাঁড়িয়ে পড়লো।
ওর সাথে আমিও দাঁড়ালাম।
.
রিমি দাঁড়া হয়ে পিছনে ফিরে আমার দিকে একবার তাকালো।
তারপর ধীরে ধীরে আমার সামনে এগিয়ে আসলো।
একদম আমার কাছাকাছি.!
তারপর মিষ্টি হেসে বলল,
.
-- তা জনাব, তখন যেন আমাকে কি বলেছিলেন.?
.
-- কখন.? (অবাক হয়ে)
.
-- সকালে। ওই যে ছাদে যেই কথাটা বললেন, সেটা.!
.
রিমির কথায় আমার গলা শুকিয়ে গেল।
রিমিকে যে তখন কাজের মেয়ে বলে অপমান করেছি, রিমি কি এখন
সেটার বদলা নিবে নাকি.?
এই মেয়েটা যে দুষ্টু.! কি করতে কি করে বসে তা শুধু আল্লাহ্ তা'আলাই জানে।
.
মনে মনে ভাবলাম, "রিমিকে স্যরি বলে ব্যাপারটাকে এখানেই শেষ করে দেই।
না হলে এই ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে অনেক বড় কিছু হয়ে যেতে পারে.!"
.
আমি রিমিকে স্যরি বলতে যাবো, তার আগেই রিমি হেটে হেটে
রাস্তার বিপরীত সাইডে চলে গেল।
আমি রিমির এমন আচরণে বেশ অবাক হলাম। কোনো মানে খুজে পেলাম না।
.
আমি রিমির দিকে তাকিয়ে দেখি, রিমি রাস্তার বিপরীত সাইডে গিয়ে
একটা বাইকের পাশে দাঁড়াল।
বাইকটা ওখানে স্ট্যান্ড করা আছে।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম, কোনো লোকজন আছে কিনা।
না, আশেপাশে তেমন কোনো লোকজন দেখতে পেলাম না।
আমি আবার রিমির দিকে তাকালাম।
ও ঠিক কি করতে চাইছে আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
রিমির কাজ-কারবার বোঝার জন্য ওর দিকে মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে রইলাম।
.
রিমি একবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখে নিলো আশেপাশে কোনো
লোকজন আছে কিনা।
তারপর বাইকটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
বাইকটা পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস আর হেড লাইট'টা ভেঙে গেল।
.
রিমির এমন কর্ম-কান্ড দেখে আমার চোখ ফুটবলের আকার ধারণ করলো।
কি শয়তান মেয়ে রে বাবা.!
বাইকটা এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো কেন.? এতে রিমির কি লাভ.?
কি দরকার ছিল বাইকটাকে এভাবে ফেলে দেওয়ার.?
আজব তো.! মেয়েটার মাথায় সমস্যা আছে নাকি.?
.
রিমি বাইক'টাকে ফেলে দিয়ে আস্তে আস্তে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
তারপর মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
.
-- স্যার, এখন বলেন।
.
-- কি বলবো.? (অবাক হয়ে)
.
-- ওই যে, সকালবেলা ছাদে আমাকে কি যেন বলেছিলেন সেটা।
.
-- রিমি, বাদ দাও ওসব কথা। (বিরক্তির স্বরে)
.
-- কেন বাদ দিব, স্যার.?
বলেন না, প্লিজ.!
কি যেন বলেছিলেন আমাকে.?
ও হ্যা, মনে পড়েছে.! আমাকে কাজের মেয়ে বলেছিলেন, তাই না.?
.
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম,
.
-- স্যরি.! আমি তখন তোমার সাথে একটু মজা করেছিলাম।
তাছাড়া কিছু না।
.
-- কেন.? মজা করবেন কেন.?
আমি আপনার শালি না ইয়ার যে মজা করবেন.!
.
-- সেসব কিছুই না।
.
-- তাহলে যে.?
.
-- আরে, বললাম তো মজা করছিলাম।
তাছাড়া আমি বুঝতে পারি নি, তুমি কথাটা এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নিবে।
আর এখন তো আমি স্যরি বললাম নাকি.!
তারপরও কেন, তিল কে তাল বানাচ্ছো.?
বাদ দাও না, এসব।
.
-- ওকে, বাদ দিলাম। আপনি আমার স্যার বলে বেঁচে গেলেন।
যদিও আপনাকে আমার স্যার বলে মনে হয় না তারপরও আমি মেনে নিলাম।
আপনার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো না, তাহলে এতক্ষণে তাকে
মেরে গাছে ঝুলিয়ে রাখতাম।
.
রিমির কথা শুনে লম্বা একটা ঢোক গিললাম। কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে.!
আস্ত একটা ডাইনি.!
আমি রিমির দিকে চেয়ে আমতা আমতা করে বললাম,
.
-- জ্বি, ধন্যবাদ।
.
-- ঠিক আছে, চলেন এবার।
.
-- হুমম।
.
আমি আর রিমি আবার হাটতে লাগলাম। রিমি একটু আগে আর আমি ওর পিছে।
হাটতে হাটতে রিমিকে বললাম,
.
-- রিমি, একটা কথা বলবো.?
.
-- জ্বি, বলেন... (আমার দিকে তাকিয়ে)
.
-- বাইকটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে কেন.?
.
-- সেটা জেনে আপনি কি করবেন.?
.
-- কিছু না। জানার ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
.
-- বাইকের মালিকটা খুব খারাপ।
একদিন ওর কাছে লিফ্ট চেয়েছিলাম কিন্তু বজ্জাতটা দেয় নি।
তাই আজকে ওর বাইকের বারোটা বাজালাম। কত্ত বড় সাহস, আমাকে
লিফ্ট দেয় না.! এখন বুঝুক ঠ্যালা.!
ভাঙা বাইক নিয়ে সারা শহর ঘুরে বেরাক।
.
রিমির কথা শুনে বিরবির করে বললাম, "লোকটা আর কি বজ্জাত, ওর থেকে তুমি বেশি বজ্জাত.!
একেবারে শয়তানের হাড্ডি.!"
.
-- বিরবির করে কি
বলছেন, স্যার.?
.
রিমির কথায় ওর দিকে তাকালাম।
সামান্য হেসে বললাম,
.
-- তেমন কিছু না। বললাম, লোকটা যদি তোমাকে কিছু বলে।
.
-- কি বলবে.? লোকটা তো জানেই না আমি ওর বাইকের এমন হাল করেছি।
আর জানলেও কিছু করতে পারবে না।
.
আমি ভ্রু-কুঁচকে অবাক
হয়ে বললাম,
.
-- জানলে কিছু বলবে না কেন.?
তুমি তো তার ক্ষতি করেছো আর লোকটা কিছু বলবে না.?
.
-- না।
.
-- কেন.?
.
-- তাহলে লোকটার-ই বেশি ক্ষতি হবে।
আমাকে যদি কিছু বলতে আসে বা আমার মায়ের কাছে বিচার দেয় তাহলে
লোকটার বউকে গিয়ে বলবো, আপনার স্বামীর অন্য একটা মেয়ের সাথে এফ-এ-আর চলছে.!
তখন তো লোকটা আরো ফেসে যাবে.!
.
রিমির কথা শুনে না হেসে পারলাম না।
কি ক্রিমিনাল বুদ্ধি রে, বাবা.!
আমি হাসতে হাসতে রিমিকে বললাম,
.
-- তোমার মাথায় তো
হেব্বি বুদ্ধি.! এত বুদ্ধি পাও কোথায়.?
.
আমার কথা শুনে রিমি ভাব নিয়ে বলল,
.
-- কি বলবো, স্যার... এটা গড গিফ্ট.!
খুব কম মানুষকেই আল্লাহ্ তা'আলা আমার মত বুদ্ধি দান করেছে।
.
রিমি কথা শুনে সামান্য হেসে বিরবির করে বললাম, "তোমার মত শয়তান মেয়েকে তো আল্লাহ্ বুদ্ধি দিবেই.!
তুমি যে ইবলিশ শয়তানের ছোট বোন.!"
.
-- বিরবির করে এত কি
বলছেন, স্যার.?
.
আচমকা রিমির কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
.
-- তেমন কিছু না। বললাম, যা করেছো একদম ঠিক করেছো।
.
-- আমি তো সবসময় ঠিক কাজ-ই করি, স্যার.!
.
-- হুমম, সেটা তো নিজের চোখেই দেখলাম।
তোমার প্রসংশা না করে পারছি না।
তবে আমার মতে, বাইকটাকে ফেলে না দিয়ে বোম মেরে উড়িয়ে
দিলে আরো বেশি ভালো হতো.!
.
-- উমম.... এই কথাটা তো আমার মাথায় আগে আসে নি।
হুমম, এর পরের বার আপনার আইডিয়া'টা কাজে লাগাতে হবে।
দারুণ একটা আইডিয়া, স্যার.!
.
রিমির কথা শুনে অবাক হলাম।
মনে মনে বললাম, "এই মেয়েটা পাগল নাকি.?
কি সব উল্টা-পাল্টা কথা বলছে।"
আমি তো মজা করে কথাটা বললাম আর রিমি সেটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে.!
এই মেয়ের সাথে কথা বলা তো অনেক কঠিন ব্যাপার দেখছি। বুঝে-শুনে কথা বলা লাগবে।
আমি আর রিমির সাথে কথা বাড়ালাম না।
ওর সাথে বেশি কথা বললে, আমি পাগল হয়ে যাবো।
রিমিকে ছোট করে বললাম,
.
-- চলো, এখন।
দেরি হয়ে যাচ্ছে।
.
-- হুমম, চলেন।
.
একটুপর আমরা একটা কলেজের সামনে এসে পৌছালাম।
রিমি বলল,
.
-- স্যার, এটাই আমাদের কলেজ.!
.
-- খুব সুন্দর।
.
-- হুমম। ভিতরে চলেন।
.
-- চলো।
.
আমি আর রিমি কলেজের ভিতরে প্রবেশ করলাম। রিমি বলল,
.
-- স্যার, আপনি.... ?????
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com