গল্প আপন । লিখা নিজ
খাবার টেবিলে বসে ভাইয়া কষে থাপ্পড় দিলো। প্লেটে মাত্র হাত দিয়েছি। ভাবি আমার পাশে দাঁড়ানো। ভাবি ভাইয়াকে থামিয়ে দিলেন।
আমি থাপ্পড় খাওয়ার পরেও খাবারে হাত দিয়ে খবার খেয়ে নিলাম।
কারন এই খাবারের উপরে রাগ দেখালে সারাদিন আর আমার পেটে খাবার জুটবে না।
ভাইয়ার ইনকামের উপরেই আমি চলি।
ভাইয়ার কষ্টের কারনেই কয়েকমাস ধরে দু বেলা খাবার খেতে পারছি।
এখন দুই একটা ব্যপার নিয়ে যদি না খাই তাহলে আমি খাব কোথায়?
বড় ভাই যেকোনো ব্যপার নিয়ে ছোট ভাইকে শাসন করতেই পারে,
ভাইয়া সারাদিন অফিসে কষ্ট করে, তার মাথায় কত ধরনের প্রেশার তাই একটু রাগ ঝাড়তেই পারে।
সব কিছুর পরেও ভাইয়া আমাকে ভালোবাসেন।
আমার এই বেকার অবস্থায়ও ভাইয়া আমাকে খাওয়াচ্ছেন এটাই অনেক বড় পাওয়া।
ভাইয়া আজ আমায় থাপ্পড় কেনো দিলেন আমি তা ভালো করেই বুঝতে পেরেছি।
অপরাধ করেছি বলেই ভাইয়া আমার শাসন করেছেন।
গতকাল রাতে ভাবির কাছে হাজার দুয়েক টাকা চেয়েছিলাম।
আমি জানি ভাবির কাছে টাকা আছে,সেই সুবাদেই টাকাটা চাওয়া।
ভাবি আমাকে ডিরেক্ট না করে দিয়েছেন যে সে টাকা দিতে পারবে না।
মাঝে মধ্যে ভাবির কাছ থেকে পঞ্চাশ বা একশো টাকা করে নেই।
তাও অনেকদিন পরপর।
যদিও আমার তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে।
বাজে আড্ডাবা চা সিগারেট কিছুই নাই আমার মাঝে।
তবে মাঝে মধ্যে কিছু টাকার প্রয়োজন তো হয়। একটু চলাফেরা তো করতে হয়।
আমি ভাইয়ার কাছে টাকা চাই না কখনো। যদি ভাইয়া নিজ থেকে দেয় তাহলে সেটা রেখে দেই।
প্রয়োজন পরলে ভাবির কাছেই টাকা চাই।
আসলে ভাবি পছন্দ করে না ভাইয়া আমাকে টাকা দিক।
ভাইয়া আমাকে টাকা দিলে ভাবি নানা ধরনের কথা বলে। এইতো সেদিন..
- এত বড় একটা দামড়া ভাই এখনো তোমার ঘাড়ে বসে খাচ্ছে,তুমি কিছু বলো না কেনো?
- থাক! ও তো পড়াশুনা করতেছে। পড়াশুনার ফাঁকে দুই একটা টিউশানি করায় তাতেই হচ্ছে।
পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা জব খুঁজে নিবে।
- হ্যা সবই তো হচ্ছে। তোমার টাকায় চলতেছে। তোমার খাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন।
- কি করবো বলো? ও তো আমারই ছোট ভাই।
আর ও এখানের কলেজে পড়াশোনা করছে। আমার কাছে থাকবে না তো কার কাছে থাকবে?
- তুমি ওকে হোস্টেলে থাকতে বলো। আমার এসব ভালো লাগে না।
মন চাইলে বাইরে গিয়ে খেতে পারি না। ঘুরতে পারি না।
বাসায় নিজ ইচ্ছা মত চলাফেরাও করতে পারি না।
তোমার ভাইকে রেখে তো আর বাইরে খেতে যেতে পারবো না,
তোমার মন খারাপ হয় আরো কত কিছু। আর তাছাড়া আমি একটা মহিলা মানুষ,
ইজিলি ভাবে চলা যায় না।
- কি বলো তুমি? আমার ভাই তো তোমারও ভাই। ওকে কোথায় রাখব বলো?
- কোথায় রাখবে তা তুমি জানো। আমি বলবো কেনো।
তবে তোমার ভাইকে এ বাসায় রাখা চলবে না।
আমি তাদের কথা গুকো দরজার অপরপাশ থেকে শুনছিলাম।
সবে মাত্র টিউশানি শেষ করে বাসায় ফিরলাম।
যেই কলিং বেল চাপ দিতে যাবো তখনই কথাগুলো শুনলাম।
মনে হচ্ছিলো আমার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
এত কথা শুনতে হবে আমার এই জীবনে?
এখান থেকে বাসায়ও যেতে পারছি না। মা কত আশা করে আমাকে ভাইয়ার কাছে পাঠিয়েছেন।
এখান থেকে হুট করে চলে গেলে বা ব্যপার গুলো মা জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে।
বাবা আর মা তারা দুজনে গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
ভাইয়া বিয়ে করার পরে তার শ্বশুরের সহযোগিতার সুবাদে ভালো একটা জব পেয়েছেন।
মাইনেটাও মোটা অংকের। ভাইয়া মাস শেষে মা এবং বাবার জন্য টাকা পাঠান।
তাতে আমাদের সংসারে কিছুটা স্বস্তি মিলে।
মায়ের কথায় আমি এই শহরের কলেজে ভর্তি হয়েছি।
ভর্তিটা অবশ্য ভাইয়া করিয়ে দিয়েছিলেন, মায়ের বলার কারনে।
কলিং বেল চাপ দেওয়ায় খুলে দেওয়ার পরে আমি শুনেও না শুনার ভান ধরে আমার বিছানায় চলে গেলাম।
ভাবি কিছুক্ষন পরে এসে আমাকে আর ভাইয়াকে খাবার দিলেন।
ভাবিও বসছে আমাদের সাথে খেতে।
ভাইয়ার প্লেট থেকে মাছের মাথাটা আমার প্লেট দিয়ে বললো...
- ছোটো পড়াশুনার কি অবস্থা?কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?
- না ভাইয়া। সমস্যা হবে কেনো, তোমরা যেখানে আছো সেখানে সমস্যা হওয়ার কথাই আসে না।
- শোন তুই কলেজের হোস্টেলে বসেই পড়াশোনা কর।
তোর তো দরকার আছে ভালো রেজাল্ট করার আর আম্মাও ভালোর জন্য পাঠালো।
এখানে থেকে রেজাল্ট খারাপ হোক তা আমিও চাই না।
- ভাইয়া আমিও ঠিক করেছি হোস্টেলে উঠবো,ওখানে তিনটা টিউশানিও পেয়েছি। ক দিন ধরে ভাবছি তোমাদের বলবো,কিন্তু তোমরা রাগ করো কিনা সে জন্য আর বলতে পারিনি।
- তাই নাকি? এটা তো ভালো। তাহলে আমি তোর কলেজে কথা বলে দিব।
কোনো ধরনের সমস্যা হলে তো আমি আছিই।
আমি বুঝতে পারলাম ভাবি অনেক খুশি হয়েছে।
আর ভাইয়াও বেঁচে যাবে ভাবির কথাগুলো শুনার থেকে।
আমারও কিছুটা ভালো লাগছে, অন্তত তাদের ঘাড়ের বোঝা থেকে তো মুক্তি দিতে পারবো।
খেয়ে থাকি না খেয়ে থাকি তা তো কেউ দেখবে না।
কিন্তু বিপত্তি ঘটলো। কোনো এক সমস্যার কারনে আমি কলেজ হোস্টেলে উঠতে পারলাম না।
আরো কিছুদিন থাকতে হবে এই বাসায়।
ভাবির কপাল যেনো কুঁচকে গেলো।
আমি না যাওয়াতে তার যেনো সমস্যা হয়ে গেলো।
সব কিছু বুঝি কিন্তু আমার মত ছেলেরা যে প্রকাশ করতে পারে না।
আমার মত ছেলেদের যে ভাইয়ের ঘাড়ের উপরে বসে খেতে হয়।
মধ্যবিত্ত ছেলেদের অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। চাইলেই সব কিছু চাওয়া যায় না।
চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না। সব কিছু নীরবে মানিয়ে নিতে হয়।
আমাদের মত ছেলেদের কাছে বাবা মায়েরা অনেক কিছু আশা করে, আমাদের নিয়ে ভাবে।
কিন্তু আমরা সামর্থ্যের কাছে হেরে যাই।
আমরা চাইলেই আঘাত দিয়ে কিছু বলতে পারি না।
কারন তারা আমাদের কাছে অনেক কিছুই চায়। চায় ভালো একটা মানুষ হই যেনো।
আমার ভাইয়া আটকে আছে ভাবির কাছে। ভাবি যেটা বলে সেটাই ভাইয়ার মানতে হবে। ভাবি যে আমার বাবা মাকে মাস শেষে কিছু টাকা পাঠায় এটাই অনেক। কিছু বলতে গেলে সেই টাকাটাও পাবে না বাবা মা।
অনেক কিছুই ভাবতে হয় আমাদের।
আর পাঁচদিন পরে হোস্টেলে উঠবো।
তাই চেয়েছিলাম বাবা মায়ের কাছে গিয়ে একটা রাত থাকতে।
গতকাল আমি ভাবির কাছে এ কারনেই দুই হাজার টাকা চেয়েছিলাম যে বাড়িতে যাবো।
অনেকদিন বাসায় যাওয়া হয় না।
আর হোস্টেলে উঠলে আরো অনেকদিন লেট হবে বাসায় যেতে।
আমি টিউশানি করে যে টাকাটা পেয়েছিলাম তা বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি।
তাই আমার হাত ফাঁকা। কিন্তু টাকা চাওয়ার জন্য যে থাপ্পড় খেতে হবে তা বুঝতে পারিনি।
আসলে দোষটা আমারই, ভাবী টাকা না দিতে চাওয়ায় আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গিয়েছিলো
যে ভাবীর ভাইকে হাজার হাজার টাকা দিতে পারলে আমায় কেন দুইটা হাজার টাকা দিতে পারবে না।
এটা বলাই ছিলো আমার অপরাধ।
ব্যাগ গুছিয়ে ভাইয়ার বাসা থেকে চলে আসলাম,হোস্টেলে এসে কেমন জানি ভালো লাগছে না।
কিন্তু পরক্ষণেই মনটা ভালো হয়ে গেলো।
কারন আমাদের মত ছেলেদের কিছু করতে হলে অনেক কিছুই সইতে হবে।
অনেক কিছুকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
সাময়িক বেদনা ক্ষতির কিছু না। বরং আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকে।
আপনাকে বুঝলেই ভালো থাকা যায়।
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com