Breaking News

ভালোবাসা দিন কতটা রঙিন । পর্ব - ০৪

রাজ দরজাটা ভেঙ্গে ফেললো। ভেতরে ঢুকতেই সবাই থ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।

অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে প্রিয়ন্তি। মিমি যেয়ে প্রিয়ন্তিকে তুললো। মিমি কান্না করে

- বোন কি করছিস তাকা একবার আমার দিকে?
রাজ বললো
- পানি নিয়ে আসুন
প্রিয়ন্তির মা পানি এনে দিলো। চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো। প্রিয়ন্তি চোখ খুললো।
মিমিকে জরিয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো। প্রিয়ন্তি বলছে
- আপু আমার কি দোষ ছিলো কেন এমনটা করলো সবাই আমার সাথে?
- তোর কোনো দোষ নেই সব দোষ তোর কপালের।
চিন্তা করিস না বোন এর থেকে ভালো জায়গায় তোর বিয়ে হবে।
- আমাকে কে বিয়ে করবে আপু? আমি এই সমাজে অপরাধী।
ডিভোর্সি একটা মেয়ে। আমার সংসার টিকলো না।
সবাই আমাকে দেখে ছিঃ ছিঃ করবে। কোন মুখ নিয়ে আমি বাইরে বের হবো।
আব্বু আমি কি অন্যায় করেছিলাম তুমি কি করলা আমার জীবনটাকে।
প্রিয়ন্তির বাবা ঘর থেকে বের হয়ে যায়। বাইরে বসে কান্না করে
-মা রে তোরে আমি কি ভাবে বুঝাবো ঐ ছেলে গোপনে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করে রেখে গেছে।
তোর বিয়ের পর সব সামনে আসলো। তোকে আমি ঐ ঘরে কিভাবে পাঠায়।
তুই আমাকে মাফ করে দিস মা রে।
আমি না জেনে ভূলটা করে ফেলছি। ঐ বাড়ির সবাই আমাকে ঠকায়ছে।
( রাত ৮ টায় প্রিয়ন্তির বাবাকে ছেলের বোন ফোন দিয়ে তাকে ডাকে তাদের বাসায়।
প্রিয়ন্তির বাবা ছেলের বাসায় যেয়ে অবাক হয়ে গেলো।
কনে সেজে একটা মেয়ে আছে৷ প্রিয়ন্তির বাবাকে দেখে ছেলের বোন বললো
- আঙ্কেল আমাদের একটা চরম ভূল হয়ে গেছে।
আমার ভাই এই মেয়েকে গোপনে বিয়ে করে চলে যায় বিদেশে
এই কথাটা শোনা মাত্রই প্রিয়ন্তির বাবার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। প্রিয়ন্তির বাবা বললো
- এটা তোমরা কি করলা? জেনে শুনে তোমরা আমার মেয়েটার জীবনটা নষ্ট করে দিলা।
- আঙ্কেল আমরা কেউ জানতাম না।
ভাই আমাদের কিছু বলেনি এই মেয়েটা কাবিন নিয়ে চলে আসছে আজ শুনে।
ওদের অনেক আগের সম্পর্ক ছিলো।
- তোমাদের আমি এতো বার জিঙ্গেস করছি তোমরা কেন এটা লোকালে।
আমি এখন কী জবাব দিবো৷
- আমাদের ভূল হয়ে গেছে। কি করবো এখন?
- বুঝেছি।
ছেলের বোনকে নিয়ে ডিভোর্স পেপারস্ নিয়ে বাসায় যায়।
তারপর প্রিয়ন্তিকে দিয়ে সই করানো হয়)
প্রিয়ন্তির মা পিছনে এসে
- কি গো ভেঙ্গে পড়লে হবে?
প্রিয়ন্তির মার হাত ধরে
- আমি কি করলাম এটা?
- মেয়ের কপালে কি এটাই ছিলো লেখা।
- মেয়েকে আমি মুখ দেখাবো কি করে?
**
রাজ প্রিয়ন্তিকে বোঝাতে লাগলো। অনেক বুঝালো সবাই মিলে।
পরেরদিন
প্রিয়ন্তি ঘর থেকে বড় চাচার বাসায় গেছিলো বড় চাচা ডাকছিলো বলে।
যাওয়ার টাইম একটা মহিলা প্রিয়ন্তিকে দেখে
- এতো সুন্দর একটা মেয়েকে বিয়ের দিনেই ডিভোর্সি হতে হলো।
কি অলক্ষুণে মেয়ে রে বাবা? আমি হলে তো মরেই যেতাম।
প্রিয়ন্তি কথাটা শুনে ও না শোনার ভান করে চলে গেলো। বড় চাচি প্রিয়ন্তিকে পাশে বসিয়ে
- মা রে যেটা হবার হয়ে গেছে৷ তুই ভেঙ্গে পড়িস না।
যে যায় বলুক কখনো হতাশ হয়ে ভূল সিদ্ধান্ত নিবি না।
প্রিয়ন্তি মাথা নারায়।
বড় চাচিকে একজন ডাকতে এসে প্রিয়ন্তিকে দেখে বললো
- ডিভোর্স হয়েছে না গতকাল। কি জন্য হলো? মেয়ের কি আগে কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো।
বড় চাচি উত্তরে বললো
- তোমাদের এসব স্বভাব কি কখনো যাবে না? আলতু ফালতু কথা বলো।
তুমি একজন মা হয়ে মেয়েকে এসব বললা কি ভাবে?
মহিলাটা কি বলবে বুঝতে না পেরে মুখ ভেংচি কেটে
- আমার মেয়ে হলে বিষ এগিয়ে দিতাম। এমন মেয়ে রাখতাম না।
মহিলাটা চলে গেলো। প্রিয়ন্তি কেঁদে দিলো।
( হায় রে মানুষ তোমরা এক জনের দোষ দেখো অপর জনের দোষটা খোঁজো না।
একটা মানুষ ঠিক যতটা স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে চায় সমাজ তাকে বাঁচতে দেয় না।
যখন কিছু করে বসে তখন সমাজের মানুষের মাথা থেকে ভূত নেমে যায়)
প্রিয়ন্তির চাচি বললো
- কান্না করিস না। আমাদের মেয়ের কি হয়েছে? আমাদের মেয়ে পরিপাটি৷ রাজকুমার দেখে বিয়ে দিবো।
প্রিয়ন্তির বাবা প্রিয়ন্তি সামনে যায় না। প্রিয়ন্তি কথা বলে না বাবার সাথে।
প্রিয়ন্তি বাইরে বের হলে অনেকে বাজে কথা বলে।
কেউ কেউ বলছে মেয়েটা অন্য ছেলের সাথে নষ্টি ফস্টি করছে তাই হয়তো ডিভোর্স দিয়ে দিছে।
অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। নানা মানুষ নানান ধরণের কথা বলতে লাগলো।
প্রিয়ন্তি এতো অপবাদ শুনে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে কিন্তু পারেনি।
তাই নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না।
১৫ দিন পর
রাজ আর মিমি বাসায় আসলো। রাজ শশুরের সাথে সেদিনের পর থেকে আর কথা বলে না।
প্রিয়ন্তি এক ঘরে বন্দী থাকে শুনে রাজ বললো
- আমাকে আগে বলেননি কেন?
- প্রিয়ন্তি বলতে দেয়নি।
মিমি বললো
- আমার সাথে তো ঠিক ভাবে কথা বলছে। কিন্তু ও নিজেকে ঘর বন্দী করলো কেন?
রাজ প্রিয়ন্তির রুমের দরজায় নক দিলো। প্রিয়ন্তি দরজা খুললো।
প্রিয়ন্তি অবস্থা দেখে রাজের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
যে মেয়েটা রাজ কে দেখে খুশিতে আত্মহারা হতো সেই মেয়েটার শুকিয়ে গেছে।
চোখের নিচে কালো দাগ। ঝুল গুলো উশখুশ। রাজ প্রিয়ন্তিকে বললো
- কেন এমনটা করলি বোন। নিজেকে এভাবে শেষ করছিস কেন?
- ভাইয়া কি করবো? সমাজের মানুষ আমাকে মেনে নেয়নি।
আমাকে অনেক বাজে কথা বলে। আলোচনা করে আমাকে নিয়ে।
তাই নিজেকে ঘরবন্দী করে রেখেছি।
- সমাজের মানুষের কথা দিয়ে তুই কি করবি? তোকে আমি কি বুঝায়ছি বল।
- আমার এখানের পরিবেশটা ভালো লাগে না।
- আমার সাথে চল যাবি।
- না ভাইয়া। আমি যাবো না।
- কেন?
- ওখানের মানুষে ও কথা শেনাবে৷
মিমি ঘরের ভেতর ঢুকে
- তোকে এখানে আর থাকতে হবে না। তুই শহরে চলে যাবি। আমি সব ব্যবস্হা করেছি।
ব্যাগ গুছিয়ে নিস সকালে যেতে হবে।
রাজ পুরে অবাক হয়ে
- ও কোথায় যাবে?
- ওর বাইরের জগত টা দেখার আছে। খোলা আকাশের নিচে ঘুরে নিজেকে হালকা করুক।
তুমি আর আমি ওকে এগিয়ে দিয়ে আসবো।
-ঠিক আছে।
পরেরদিন সকাল বেলা
প্রিয়ন্তি ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিলো। বড় চাচি এসে প্রিয়ন্তিকে আমের আচারের এক বোয়েম আচার দিলো।
আর বললো
- সাবধানে থাকিস নতুন জায়গায়। একদম উল্টাপাল্টা করবি না৷
প্রিয়ন্তির প্রিয়ন্তিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে
- নিজের যত্ন নিস খাওয়া দাওয়া করিস ঠিক মতো।
প্রিয়ন্তি কান্না করলো আর বললো
- তোমাদের খেয়াল খেলো।
প্রিয়ন্তিকে নিয়ে নতুন শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো...............
.
চলবে......

No comments

info.kroyhouse24@gmail.com