কালো ছেলে । পর্ব - ১২
পরিক্ষার পর আমি আর রিহা কোচিং এ ভর্তি হই। রিহা ভর্তি হয় অন্য কোচিং।
তবুও ছুটির দিন আমরা দেখা করি।
দেখতে দেখতে আমাদের রেজাল্টের দিন ঘনিয়ে এলো৷
রেজালটের দিন আমি মেসে শুয়ে আছি।
খুব টেনশন হচ্ছে।
এমন সময় আমার রুমমেট এসে বলল......
== সানি নিচে একটা মেয়ে তোকে ডাকছে। তুই
রেজাল্ট পাইছস?
== না। আমার কাছে তো মোবাইল নাই।
== নিচে গিয়ে দেখ কে?
,
আমি নিচে এসে দেখি রিহা। বোরকা পরে দাঁড়িয়ে আছে।
,
== তোমার রেজাল কি?
== ভালই হইছে। তোমার?
== এখনো পাই নি।
== আচ্ছা রোল বল।
== ৬৭.....
,
কিছুক্ষন পর.....
== এটা কি করছ তুমি?এতো খারাপ রেজাল কেও করে?
== কেন কি হইছে?
== ২টা তে ফেল।
,
রিহার কথা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।
মনের অজান্তেই দুই ফোটা পানি গরিয়ে পরল।
,
== আরে পাগল তুমি অনেক ভালো রেজাল করেছ।
,
কথাটা শুনে আমি রিহাকে জড়িয়ে ধরলাম।
রিহাকে আজ খুব আপন মনে হচ্ছে।
,
== আরে পাগল ছাড়ো । লোকজন দেখছে।
,
আমি রিহাকে ছেড়ে দিলাম।
,
==চল আজকে তোমাকে নিয়ে ঘুরব।
== কই যাব?
== চল। দেখি কই যাওয়া যায়?
== আচ্ছা চল।
,
বলে আমি আর রিহা বেড়িয়ে পরলাম।
কিছুক্ষন ঘোরাফেরা করে মেসে চলে এলাম।
এর কিছুদিন পর ভর্তি পরিক্ষা শুরু হয়।
রিহা একটা ভার্সিটিতে চান্স পায়। আর আমার চান্স হয় মেডিকেলে।
চাচার এই উপকারের কথা আমি কোনো দিনও ভুলতে
পারব না। চাচার জন্যই আজ আমি ডাক্তারি তে চান্স পেয়েছি।
এরপরই আস্তে আস্তে আমার সাথে রিহার দুরত্ব বাড়তে থাকে।
কোচিং করা অবস্থায় তবুও দেখা হইতো। কিন্তু এখন আর দেখাও হয় না।
এ
ইদানিং রিহার কথা খুব মনে পরছে।
তাই বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে দেখি মা রান্না করছে।
,
== আরে সানি তুই হঠাৎ।
== হুম। মা কেমনে আছো।
== আমি তো ভালাই। তোর কি খবর।
== হুম মা ভালই। রিহা আইছিল?
== না তো রিহা তুই যাওয়ার পর আর আইয়েই না?
== আইচ্ছা। খাবার দেও। খুব খিদা লাগছে।
,
আমি খাওয়া করে বিকেল বেলা বের হলাম এলাকায়
রাস্তায় দেখি শাকিল আর কয়েক জন বসে আছে।
আমি তাদের কাছে গেলাম।
,
== আরে ডাক্তার তুই কবে আসলি?
== আরে ডাক্তার হতে পারলাম কই। এখনও তো শেষ হয় নাই।
== আসলি কবে?
== এইতো কিছুক্ষন আগে। বলতে পারিস রিহা কই?
,
রিহার কথা শুনে শাকিল চুপ করে গেল।
,
== কি রে বল?
== জানি না রে। কিছুদিন আগে শুনেছি ওর আব্বুর নাকি
বদলি হয়ে গেছে। তাই এখানে আর থাকে না। ওর
ভার্সিটিতে গিয়ে খোজ নিছিলি?
== ওই তো চট্রগ্রাম ভার্সিটিতে আছে। আর আমি
ময়মন্সিংহ মেডি তে। তো কিভাবে খোজ টা পাই বল। আচ্ছা বাদ দে। হিয়ার খবর কি?
== হুম। চলছে। তোর খবর কি সেটা বল?কি করছিস এখন?
== এখানেই লেখা পড়া করছি। চল হিয়ার সাথে দেখা করাই।
== হুম চল। তার আগে গেরেজে গিয়ে চাচার সাথে দেখা করে আসি।
== আচ্ছআ চল।
,
এরপর আমি আর শাকিল ফেরেজে আসলাম।
এসে দেখি চাচা সেই আগের চেয়ারটাতেই বসে আছে।
,
== চাচা কেমন আছেন?
== আরে সানি, তুই কবে আসলি? এতো দিনে আমার কথা মনে পরল।
== চাচা। মনে তো পরেই৷ কিন্তু চাইলেও তো আর আসতে পারিনা।
== তো আর কতদিন আছে?
== আর দুই বছর লাগবে।
== হুম ভালো করে পরিস। দোয়া করি অনেক বড় হ।
== চাচা সব কিছুই আপনার জন্যি সম্ভব হয়েছে। আপনি
না থাকলে আমি কখনই এতো দূর আসতে পারতাম। না।
== আরে বাছা মেধা তর টাকা আমার। টাকা তো অনেক
কামিয়েছি। কোনো ছেলে মেয়ে নাই খাবে কে?
== আচ্ছা চাচা। এখন যাই। পরশুদিন চলে যাব আবার।
,
এরপর আমি আর শাকিল চললাম হিয়ার সাথে দেখা করার
জন্য। হিয়ার বাবা খুব ধনী।
শাকিল সরাসরি হিয়ার বাসায় ঢুকল।
আমিও ওর পিছু পিছু গেলাম।
ভিতরে গিয়ে দেখি হিয়ার মা আর হিয়আ বসে আছে।
অবশ্য হিয়ার মা আমায় চিনে না।
আমি হিয়ার মাকে সালাম দিলাম।
আর হিয়া হা করে তাকিয়ে আছে।
,
== কি রে হা করে আছেন কেন? ( আমি)
== দেখছি। সুর্য আজ কোন দিকে উঠল। তো
ডাক্তার সাহেব আপনি এতোদিন পর?
== হুম। পড়া লেখায় অনেক বিজি। তাই বাসায় তেমন একটা আসা হয় না।
== আর কতদিন লাগবে শেষ হতে?
== আর ২ বছর। আপনি কি করতেছেন?
== কি আর করবো হাসবেন্ট ওয়াইফ একই সাথে।
অনার্স করছি।
== হাসবেন্ড ওয়াইফ মানে?
== আপনি চলে যাওয়ার পর বাবাকে আমাদের বিষয়টা
বলি। কিন্তু বাবা রাজি হয় নি প্রথমে। পরে রিহা এসে
আব্বুকে বুঝায়। এর কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে
হয়।
== তারমানে আমি দাওয়াত হতে বঞ্চিত?
== আপনার তো কোনো খবরই পাইনি আমরা। আচ্ছা
আপনি কোন বিষয়ে ডাক্তারি করছেন?
== কার্ডিওলজিস্ট।
== ওয়াও। তার মানে হৃদয়ের ডাক্তার।
,
বলেই হিয়া আর শাকিল হাসতে লাগল।
,
== আচ্চা হিয়া রিহার কোনো খবর বলতে পারবেন?
,
আমার কথা শুনে হিয়া চুপ হয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
,
== কি হলো প্লিস কথা বলুন।
,
কিন্তু কোনো কথা বলছে না। মনে হচ্ছে কান্না করে দিছে।
তারপর চোখ মুছে বলল......
== শাকিল তুমি সানি ভাইয়াকে নিয়ে ছাদে যাও। আমি আসছি।
,
বলে অন্য রুমে চলে গেল।
আমি শাকিলের পিছু পিছু ছাদে আসলাম।
,
== শাকিল কি হইছে প্লিস বল।
== একটু অপেক্ষা কর। জানতে পারবি।
,
কিছুক্ষন পর হিয়া আসল।
হাতে একটা কাগজ।
== এই নেন। রিহা এই চিঠিটা আপনাকে দিতে বলেছে।
,
আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে পরতে শুরু করলাম।
চিঠিটা পড়ার পর মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা কেও
টেনে ছিড়ে ফেলছে। এ হতে পারে না। রিহা
আমার সাথে এমন করতে পারে না। রিহা যে আমায়
কথা দিছে আমায় ছেড়ে কখনও যাবে না। তাহলে
আজ কেন চলে যেতে চাচ্ছে?.....
.
চলবে....
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com