জেলাসবতী বউ । পর্ব -০৩
আমার একটা বাবু চাই। ( তিথি )
- তাই?
তিথি মাথা নাড়াল। আমি তিথিকে আরেকটু আকড়ে ধরলাম। মুখ কানের কাছের নিয়ে গেলাম,
- আমি জানি তুমি এটা মিথ্যা বলছো। (আমি)
তিথি কোনো কথা বলল না। মাথা নিচু করে রইল।
- আম্মু, বলে দিয়েছে তাই না।
তিথি মাথা নাড়াল। আমি তিথিকে নিজের দিকে ঘুরালাম।
- কারো শিখিয়ে দেয়া কথায় নয়। যখন তুমি নিজ থেকে আমার কাছে কিছু চাইবে। তখনই আমি পূর্ণ করে দিবো তোমাকে। তার আগে নয়...
তিথি ছল ছল চোখে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। আমি তিথির কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালাম,
- তুমি নিজেইতো একটা বাচ্চা। আর একটা বাচ্চা অন্য একটা বাচ্চাকে লালন-পালন করবে কি করে?
তিথি কথা না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল। তিথির খুব ইচ্ছে করছে বলতে, আমি পারব। আমি বাচ্চাকে লালন পালন করতে পারব। আর আমি নিজ থেকেই আপনার কাছ থেকে চাই সেটা।
কিন্তু, তিথি সেটা মুখ ফুটে বলতে পারছে না।
- তোমার না অনেক স্বপ্ন। অনেক পড়াশোনা করার শখ। তাহলে এখন যদি বাচ্চা কন্সিভ করো তাহলে তোমার পড়ালেখার ক্ষতি হবে। আর তুমি এখনো পিচ্ছি তুমি কন্সিভ করার জন্য উপযুক্ত নও। বুঝলে...
- হুম।
মাথা দু-দিকে নাড়াল।
- অবশ্য, তুমি তো নিজ থেকে চাওনি। তাই, এসব ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য আমি তোমাকে চাপ দিবো না। আমার পিচ্ছি বউকে আমি আমার মন থেকেই ভালোবাসবো। যদি তুমি আমাকে ভালো না বাসো তাও....
তিথি আমাকে জরিয়ে ধরল। আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
- কি হলো তিথি?
তিথি কিছু না বলে কাঁদতে লাগল।
- তিথি, কি হলো তোমার?
- না, কিছু না।
আমাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে বলল।
- বলনা...
- না, কিছু না। আজ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন না।
তিথি কথা ঘুরিয়ে নিলো। যদিও তিথি বলতে চেয়েছিল যে, ওও ওর বুড়ো বরকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু, সেটা মুখ দিয়ে বেরই হচ্ছে না।
- তাই, ঘুরতে যাবে?
- হুম।
- ওক্কে, চলো তাহলে। আর একটা কথা বলি?
- বলুন।
- তোমাকে না শাড়িতে পরীর মতো লাগছে। পিচ্চি মার্মিডের মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে জরিয়ে ধরে একটা...
- কি?
- কিস করতে।
বলতেই দেখলাম তিথি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আমি গাল দুটো টেনে দিলাম। তিথিকে নিয়ে ঘুরতে গেলাম। অনেক ঘুরাঘুরি করে বাসায় ফিরলাম। রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর জন্য রুমে গেলাম।
মাঝে একটা বর্ডার হিসেবে কোলবালিশ রেখে শুয়ে পড়লাম। তিথিও এসে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর দেখলাম তিথি ছটফটানি শুরু করে দিলো,
- কি হলো তিথি? ঘুম আসছে না?
- নাআআ।
- ঘুমিয়ে পড়ো আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
তিথির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর তিথি বলে উঠল,
- আচ্ছা, মাঝের এই বালিশটা সরিয়ে ফেলি?
- কেনো?
- এমনি...
- আচ্ছা।
বলতেই তিথি বালিশ সরিয়ে দিলো। আমার কাছাকাছি সরে আসলো। হাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। খেয়াল করে দেখলাম তবুও ঘুমুচ্ছে না তিথি।
- তোমার খারাপ লাগছে তিথি?
কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর রয়ে গেছে কি না?
- না তো।
- তাহলে...
- আমার ঘুম আসছে না। আপনার বুকে শুতে ইচ্ছে করছে।
- কি?
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম। তিথিকে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। অবশ্য, আমি বুঝতে পারছি বিষয়টা। তিথি যে, আমাকে 'নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে সেটা আমি খুব ভাল করে বুঝতে পারছি।
তিথি কিছু না বলে আমার বুকে এসে শুয়ে পড়ল। জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি তাকিয়ে তাকলাম। ঘুমানো অবস্থায় তিথিকে ঘুমপরী মনে হচ্ছিলো। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
,
( সকালে...)
ঘুম থেকে উঠে দেখলাম তিথি আগেই উঠে পড়েছে। আজ ওর কলেজ তাই হয়তো আগেই উঠে পড়েছে। চা হাতে রুমে ডুকল তিথি,
- ঘুম ভাঙল আপনার? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
- তাই, ডাকলে না কেনো তাহলে?
- আপনি কি সুন্দর ঘুমাচ্ছিলেন তাই আর ডাকতে মন চাইল না। ঘুমানো অবস্থায় না আপনাকে খুব সুন্দর লাগে।
আমি হেসে দিলাম। তিথি ভ্রু কুচকালো।
তিথি ভাবছে, সত্যিইতো বললাম এখানে হাসার কি আছে? বদ লোক।
- তাই।
- হ্যা।
- কিছু করতে ইচ্ছে করে? (আমি)
- মানে!
- মানে, কিস করতে...
আমি বলতেই মুহুর্তের মধ্যে তিথি বুঝে গেলো আমি কেনো হাসছিলাম । লজ্জা পেলো তিথি। চা টা রেখে দৌড় দিবে তার আগে জরিয়ে ধরলাম বিছানায় থাকা আবস্থায়। তিথি আমার বুকে এসে পড়ল,
- ইশ! কি করছেন? ছাড়ুন না।
- ছাড়ার জন্য ধরলাম নাকি? বললে না তো, কিছু করতে ইচ্ছে করে?
- যাহ! ছাড়ুন না। আমার কলেজের লেট হয়ে যাচ্ছে। আপনি তাড়াতাড়ি উঠুন।
- আজ, কলেজে যেতে হবে না। (আমি)
- মানে, কেনো?
- আমি বলেছি তাই। আগে পুরোপুরিভাবে সুস্থ হোও তারপর যাবে।
- আমি পুরোপুরি সুস্থ আছি তো।
- যাবে না বললাম যাবে না।
- প্লিজ...
- স্বামীর কথা শুনবে না।
- আচ্ছা, ছাড়ুন।
তিথি মন খারাপ করে চলে গেলো। আমি ব্রেকফাস্ট করে। রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
,
তিথি মুখ গোমড়া করে জানালার পাশে বসে আছে। মিসেস সাবিনা (মা) রুমে ডুকে বুঝতে পারলেন তিথির মন খারাপ। তিথির মাথায় গিয়ে হাত বুলিয়ে দিলেন,
- কি হয়েছে আমার পিচ্চি আম্মুটার?
তিথি মিসেস সাবিনার কোমড় জরিয়ে ধরল।
- মন খারাপ? ( মিসেস সাবিনা)
তিথি মাথা নাড়াল।
- কেনো?
- উনিতো কলেজে যেতে দিলেন না। তার উপর উনিও অফিসে চলে গেলেন। ভালো লাগছে না।
মন খারাপ করে বলল।
- তাহলে আমার রুমে যেতিস। গল্প করতাম।
তিথি কোনো কথা বলল না।
- কাব্যকে মিস করছিস।
- হুম, উনাকে ছাড়াতো আমার ভালো লাগে না।
মিসেস সাবিনা হেসে দিলেন। মেয়েটা পিচ্ছিই রয়ে গেলো। এসব আবার কাউকে বলে নাকি?
- কথা বলতে ইচ্ছে করছে?
- হুম।
- তাহলে কল কর।
- উনি যদি কাজে থাকেন। বিরক্ত করাটা বোধ হয় ঠিক হবে না।
- আগে তো কল কর।
- সত্যি করব?
- হুম, কর। আর আমি রুমে গেলাম। ফোনে কথা বলার পর আমার রুমে চলে আসিস।
- আচ্ছা।
শাশু মা রুম থেকে বেরুতেই তিথি ফোন করল কাব্যকে। ফোন রিসিভ করতেই তিথি সালাম দিলো,
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, কে বলছেন? ( ওপাশ থেকে মেয়ে কন্ঠে)
- আপনি কে বলছেন? উনি কোথায়?
- স্যার তো মিটিংয়ে।
- ওও, মিটিং থেকে আসলে বলবেন তিথি কল করেছিলো।
- স্যার আপনার কি হোন?
- কেউ না।
ফোন কেটে দিলো তিথি। মন খারাপ হয়ে গেলো তিথির। দূর! উনার সাথে তো কথাই বলতে পারলাম না।
,
মিটিং থেকে এসে বসলাম কেবিনে। তখনই নক করে রুমে ডুকল রিয়া আমার পিএ। আমার ভার্সিটি ফ্রেন্ডও রিয়া।
- স্যার, এই নিন মোবাইল। আপনার ফোনও এসেছিল একটা।
- আরে রাখ তো স্যার। তোকে না বললাম ওসব স্যার টার না ডাকতে।
- ওকে ওকে সরিরে বাবা।
- আচ্ছা, এখন বল কে ফোন করেছিল?
- বলল, তিথি। জিজ্ঞেস করলাম কে হয় তোর? বলল কেউ না।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো কথাটা শুনে।
- আচ্ছা, তুই এখন যা।
মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম তিথিই ফোন করেছিলো। রাগে শরীর জ্বলছে।
আমি ওর কিছু হই না? আর ওও আমার কিছু হয় না। আজ দেখাচ্ছি মজা বাসায় ফিরে। বজ্জাত মেয়ে। আমি কি ওর কেউ হই না?
,
বাসায় ফিরলাম। কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলল তিথি। আজও শাড়ি পড়েছে। অবশ্যই আগের দিন থেকে আজ একটু বেশীই সুন্দর লাগছে। মনে হয় আম্মু শাএই পড়িয়ে দিয়েছে। আমি তাকালাম না। না তাকিয়ে ডুকলাম বাসায়।
তিথি অবাক হয়ে গেলো সাথে খারাপও লাগল। তিথি ভাবছে, কি ব্যাপার? আজ উনি আমার দিকে তাকালেন না কেনো? কথাও বললেন না।
- আপনার কি মন খারাপ? ( তিথি)
আমি কিছু না বলে উপরে উঠে গেলাম। রুমে এসে অফিস ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগলাম। রাগ এখনো রয়ে গেছে। কি ভাবে কি মেয়েটা? এতো সহজ সবকিছু। আমি ওর পিছু পিছু ঘুরবো আর ও আমাকে এভাবে পর ভাববে।
তিথির কান্না পাচ্ছে খুব। গাল বেয়ে টুপ করে পানি পড়ল।উনি আমার সাথে কথা বললেন না কেনো? আমি কি কোন দোষ করেছি? উনি আমার দিকে তাকিয়েও দেখলেন না।
তিথি রুমে আসল।
- আপনার কি হয়েছে? মন খারাপ কেনো আপনার? ( তিথি)
আমি কোনো কথা বললাম না। কাপড় পালটে টাওয়াল হাতে নিলাম শাওয়ার নেওয়ার জন্য।
- কি হলো কথা বলছেন না কেনো আপনি?
আমি কোনো কথা না বলে ওয়াসরুমে ডুকে পড়লাম।
তিথি খুব কষ্ট পেলো। হো হো কেঁদে উঠল। দৌড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে পড়ল। সোজা তার শাশু মার রুমে গেলো। মিসেস সাবিনা তখন বসে ছিলেন বিছানায়। তিথি গিয়ে কোলে শুয়ে পড়ল মাথা রেখে। কান্না করতে লাগল খুব। মিসেস সাবিনা অবাক হয়ে গেলেন তিথির কান্ড দেখে।
- কি হয়েছে তিথি?
তিথি কাঁদতে থাকল।
- তিথি, আম্মুকে বল কি হয়েছে?
- উনি আমার সাথে কথা বলছেন না আম্মু। এতো কষ্ট করে সাজলাম উনি আমার দিকে তাকালেনও না।
- কি বলছিস? কাব্য এসেব করেছে।
- হ্যা, আম্মু। আমি কথা বলার চেষ্টা করেছি উনি আমার এড়িয়ে চলছেন। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মু।
কাঁদতে কাঁদতে বলল তিথি। মিসেস সাবিনা তিথিকে কোল থেকে উঠালেন।
- এভাবে কাঁদতে নেই আম্মু। হয়তো কাব্য রেগে আছে।
- কিন্তু, আমি তো কিছু করিনি।
- নিশ্চয়ই কিছু করেছিস।
- সত্যি, আমি কিছু করিনি। তুমি না বলো আমি খুব লক্ষি মেয়ে।
- হ্যা, তুই তো আমার লক্ষি মেয়ে। তুই নিশ্চয়ই কাব্যকে রাগিয়ে দিয়েছিস। তাই কাব্য তোর উপর রুষ্ট।
- তাই বলে আমার সাথে কথা বলবেন না উনি। এড়িয়ে চলবেন আমাকে। উনি কি জানেন না উনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না। উনার অবহেলায় আমি কষ্ট পাই।
তিথি কাঁদতে লাগল।
- হয়েছে হয়েছে এখন আর কাঁদতে হবে না। এখন যা রুমে যা।
- কিন্তু, উনি তো আবার আমার সাথে কথা বলবেন না। আমিতো কষ্ট পাবো।
.
চলবে...
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com