সিনিয়র লেডি ডন বউ। পর্ব - ০৩
পরেরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরলাম।।
প্রায় কিছুক্ষণ হাটার পর ভার্সিটি এসে পৌছলাম।।
কিন্তু ভার্সিটিতে এসে এমন কিছু হবে তা আমি কখনোই আশা করি নি।।
আজ মিম আপু একটা শাড়ি পরেছেন।।
শাড়িতে অনেক মানিয়েছে উনাকে একেবারে পরীর মতো লাগছে।।
আর হাতে একটা গোলাপ ফুল নিয়ে বসে আছেন আর গল্প করছেন।।
বুঝলাম না আজ হঠাৎ মিম আপু শাড়ি পরলেন কেন..?
যে মেয়ে সবসময় ছেলেদের মতো শার্ট পেন্ট পরে থাকতো সে কি না
আজ শাড়ি পরেছে ভাবতেই অবাক হচ্ছি।।
দুরর আমার তু আবার উনার সাথে করতে হবে তাহলে এইখানে দাড়িয়ে কি করছি।।
যাই মিম আপুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি আমায় কেন দেখা করতে বলেছিলেন।।
আমিঃ আপু গতকাল আমায় আপনার সাথে কিসের জন্য দেখা করতে বলেছিলেন..?
(ওদের পাশে গিয়ে বললাম কথাটা)
মিমঃ ওহ তুই এসেছিস, আসলে তোকে আজ একটা কথা বলার জন্য এইখানে ডেকেছি।।
আমিঃ জি বলুন কি কথা বলবেন..?
মিমঃ এরপর মিম আপু বসা থেকে উঠে এসে আমার সামনে দাড়ালেন।। আর বলতে লাগলেন,,
দেখ কথাটা তুই কীভাবে নিবি তা আমি জানি না।।
ভেবেছিলাম কথাটা তোকে আরও পরে বলব,
কিন্তু কথাটা না বলে আমি আর থাকতে পারছি না তাই আজ তোকে এতো তারাতাড়ি আসতে বলেছি।।
আমিঃ জি বলুন কি কথা..? (একটু আগ্রহ নিয়ে)
.
মিমঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি।।
শুধু তাই নয় ভার্সিটির প্রথম দিন তোমাকে দেখার পর থেকেই তোমায় ভালো লাগতে শুরু করে।।
তারপর আস্তে আস্তে সেই ভালো লাগা থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।।
আমি সত্যি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।।
I Love U So Much (হাটু গেড়ে আমার সামনে ফুলটা ধরে কথাগুলো বললেন মিম আপু)।।
আমিঃ উনার কথা শুনে তু আমি অবাক,
এইসব কি বলছেন মিম আপু, আমাকে নাকি উনি ভালোবাসেন।।
আর আমি কি না তা নিজেও জানি না।। এখন আমি উনাকে কি বলব..?
মিমঃ কি হলো চুপ কেন কিছু বল..?
আমিঃ দেখেন প্রথমেই বলে দেই আপনি আমার ২ বছরের বড়।।
আর আমি এইসব প্রেম ভালোবাসা একদমই পছন্দ করি না।।
আরেকটা কথা আমি মেয়েদের সাথে একটু কম কথাই বলি।।
তাই আমার পক্ষে এইসব সম্ভব না।।
মিমঃ তোমার এই স্বভাবটাই আমায় মুগ্ধ করে তুলেছে।।
আর বড় হয়েছি তু কি হয়েছে এইখানে সমস্যা কিসের..?
.
আমিঃ অনেক সমস্যা সেটা আপনি বুঝবেন না।।
আমার আর ভালো লাগছে না আমি ক্লাসে গেলাম থাকেন আপনি (বলে চলে আসতে যাব
তখনই পিছন থেকে মিম আপু আমার কলার চেপে ধরলেন)।।
মিমঃ ওই তোর সমস্যা কি হে, তোর সাথে ভালোভাবে কথা বলছি বলে তোর ভাব বেড়ে যাচ্ছে তাইনা..?
আমিঃ ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম মিম আপুর গালে।।
কারণ কেউ আমার কলার ধরলে আমার রাগ চরম পর্যায়ে উঠে যায়,
নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারি না।।
কি পেয়েছেন আপনি হে আমি রাজি হচ্ছি না বলে আমায় জোর করে রাজি করাবেন..?
শুনেন সবকিছু জোর করে হলেও ভালোবাসাটা জোর করে হয়না।।
আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না আমায় মাফ করবেন।।
মিম আপুকে চড় মেরে হয়তো অনেক বড় ভুল করেছি।। কারণ আমার কথা শেষ হওয়ার পর উনার সব বন্ধুরা মিলে আমায় ঘিরে ধরল।। আর ওদের মধ্যে একজন মিম আপুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
মিম তুই শুধু একবার বল এই ছেলেটার সব হাড্ডি ভেঙে ফেলব এখনই।। কতো বড় সাহস ওর তোর ঘায়ে হাত তুলেছে।।
মিমঃ নাহ তোরা ওকে কিছু করবি না, যা করার আমিই করব।।
ওর সাহস দেখছি অনেক বেড়ে গেছে এক তু আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে দিয়েছে।।
আরেক তু আমায় সবার সামনে চড় মারা।।
এইসব কিছুর শোধ আমি নিবই ওর থেকে।।
এই শুন (আমাকে উদ্দেশ্য করে) এখন চুপচাপ ক্লাসে যা।।
আর তোর ব্যাবস্থা আমি আজকেই করব দাড়া।।
আমিঃ আপু আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি চড়টা রাগের মাথায় মেরে দিয়েছি প্লিজ আমায় মাফ করে দেন।।
মিমঃ তোকে ক্লাসে যেতে বলেছি চুপচাপ ক্লাসে যা (ধমক দিয়ে)।।
আমিঃ ভয়ে সাথে সাথে দৌড়ে ক্লাসে চলে আসলাম।।
ক্লাসে এসে ভাবতে লাগলাম না জানি এখন আমার কি হয়।।
এই মেয়ে যে রাগি আর গুন্ডি টাইপের মনে হয়না আমায় এমনি এমনি ছেড়ে দিবে।।
দুরর কেন যে উনাকে চড় মারতে গেলাম।।
এখন তু আমার উপরেই বিপদ চলে আসলো।। আল্লাহ এইবারের মতো বাচিয়ে দাউ আর কখনো কোনো মেয়েকে চড় মারব না।।
দেখতে দেখতে অনেকটা সময় কেটে গেল।।
কিছুক্ষণ পর ক্লাসে স্যারও চলে আসলেন, কিন্তু হারামি গুলা আজ একটাও আসার নাম নিচ্ছে না।।
ক্লাসে আসার পর থেকে সব ছাত্র-ছাত্রীরা এতক্ষণ আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিল।।
তাকবে না কেন যাকে এই ভার্সিটির সব ছেলে মেয়ে ভয় পায় তাকেই কি না আমি সবার সামনে চড় মারলাম।।
স্যার এসে আসার পর ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে মনোযোগ দিল।।
যাক এতো সময়ে বাচা গেল তাহলে।।
সব স্যারেরা এক এক করে এসে তাদের ক্লাস করিয়ে চলে গেলেন।।
দেখতে দেখতে সব ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি ছুটি হয়েগেল।।
এখন সমস্যা হলো আমি একা একা বের হব কি করে।।
আর মিম আপু তু আমায় বলেছেন আজ আমার একটা ব্যাবস্থা করে ছাড়বেন।। না জানি কপালে কি দুঃখ আছে।। আল্লাহ বাচিয়ে দিও এইবারের মতোন।।
তারপর আমিও সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে পরলাম।।
বাহিরে এসে চারপাশে তাকিয়ে দেখি মিম আপু আর উনার বন্ধুদের কোথাউ দেখা যাচ্ছে না।।
যাক ভালোই হলো এখন শান্তিতে বাসায় যেতে পারব।।
এরপর ভার্সিটি থেকে বের হয়ে হাটা ধরলাম বাসার দিকে।।
প্রায় অর্ধেক পথ আসার পরেই হঠাৎ একটা কালো মাইক্রোবাস এসে আমার সামনে দাড়ালো।।
গাড়ি থামিয়ে কিছু লোক গাড়ি থেকে বের হয়েই আমায় ধরে জোরে করে গাড়িতে উঠিয়ে নিল।।
গাড়িতে উঠে ভিতরে যাকে দেখলাম তাকে দেখার পর আমার কলিজা কেপে উঠলো।।
কারণ গাড়িতে যে বসে আছে সে আর কেউ না মিম আপু।।
এদিকে মিম আপুর হাতে একটা কি যেন ছিল, সেটা আমার মুখে লাগিয়ে দিল।।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি অজ্ঞান হয়ে পরলাম।।
যখন জ্ঞান ফিরল তখন আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমাকে একটা অন্ধকার রুমে একটা চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে।।
তু এই ছিল ফ্লেশব্যাক, আশা করি এখন আপনারা বুঝে গেছেন আমাকে এইখানে আনার কারণটা কি।। এখন গল্পতে আসি।।
চেয়ারে বসে বসে শুধু ভাবছি কীভাবে এইখান থেকে পালানো যায়।।
মিম আপু যেমন মেয়ে বলা যায়না কখন কি করে বসে।।
এইরকম নানান কথা ভাবছি ঠিক তখনই রুমের দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।।
সামনে তাকিয়ে দেখি মিম আপু একটা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন।।
জানি এগুলা আমার জন্যই এনেছেন কারণ আজ সকাল থেকে আমার কিছুই খাওয়া হয়নি।। মিম আপু হেটে হেটে আমার পাশে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলেন।।
মিমঃ সরি সোনা খাবার বানাতে একটু দেড়ি হয়েগেছিল তাই তারাতাড়ি নিয়ে আসতে পারি নি।।
আমিঃ আপনাকে খাবার বানাতে কে বলেছে..?
মিমঃ কেউ বলে নাই আমি নিজ ইচ্ছাতেই বানিয়েছি তাও শুধু তোমার জন্য।।
আমিঃ কিছু বললাম না শুধু মনে মনে বলছি, ঢং কতো আসছে আমার জন্য খাবার বানাতে।।
মিমঃ এই নাউ হা কর আজ আমি তোমার জন্য বিরিয়ানি বানিয়ে এনেছি।। খেয়ে দেখ তু কেমন হয়েছে (মুখের সামনে কিছু খাবার এনে)।।
আমিঃ আমার হাতের বাধন খুলে দেন আমি নিজের হাতেই খেতে পারব।।
মিমঃ না বাবু তা তু হবে না।। আমি তোমায় নিজের হাতেই খাওয়াব।।
আমিঃ আমি আপনার হাতে খেতে পারব না।।
মিমঃ চুপ আর একটা কথাও নয়।। এতক্ষণ ভালো করে কথা বলছি বলে কি ভেবেছিস আমি কিছু বলব না।। চুপচাপ হা কর নাহলে খুব খারাপ হবে।।
আমিঃ ভয়ে হা করে ফেললাম কারণ মিম আপুর রাগ উঠলে না জানি পরে কি করে।।
মিম আপু আমায় খাওয়াতে শুরু করলেন।।
আমিও চুপচাপ খেয়ে যেতে লাগলাম।।
ভয়ে কোনো কথা বলছি না কারণ উনার চেহারায় এখনও রাগের চাপ রয়ে গেছে।।
প্রায় অর্ধেক খাওয়া শেষ হলে বাকি টুকু মিম আপু খেতে শুরু করলেন।।
এইটা দেখে আমি এতো অবাক হইনি কারণ প্রথম থেকেই মিম আপু আমার প্লেটের খাবার থেকে অর্ধেক নিজে খেতেন।। এই বিষয়ে উনাকে কিছু বললে উনি বলেন এটা নাকি ভালোবাসা।।
একে অপরের প্লেটের খাবার খেলে নাকি ভালোবাসা বাড়ে।।
খাওয়া শেষ হলে মিম আপু আমায় পানি খাইয়ে দিয়ে চলে যেতে ছিলেন, তখনই আমি উনাকে ডাক দেই।।
মিমঃ কি হলো কিছু বলবা..?
আমিঃ আমাকে ছেড়ে দেন না প্লিজ আমি বাসায় যাব।।
আম্মু আব্বুও হয়তো আমার জন্য চিন্তা করছে প্লিজ আমায় ছেড়ে দেন।।
মিমঃ সরি সোনা তোমাকে ছাড়ার জন্য তু এইখানে নিয়ে আসি নাই।।
আমিঃ আপনি কিন্তু খুব খারাপ কাজ করছেন আমার সাথে।।
আমি যদি একবার এইখান থেকে পালাতে পারি তাহলে পুলিশের কাছে গিয়ে আপনার নামে কেস করব বলে দিলাম (একটু সাহস করে বললাম কথাটা দেখি ভয় পায় কি না)।।
মিমঃ কথাটা শুনে সাথে সাথে আমার মুখ চেপে ধরল আর বলল,,
কিহহ তোর এতো সাহস তুই আমাকে হুমকি দিচ্ছিস।।
আজ পর্যন্ত কেউ আমার সাথে ঠিকমতো কথাও বলে নি শুধু বলেছিস তুই।।
শুন আমি তোকে ভালোবাসি বলে তুই এখনও এইখানে ঠিকমতো আছিস।।
নাহলে কবেই তোর কাহিনি শেষ করে ফেলতাম।।
আমিঃ আহহ আপু লাগতে ছালুন (মুখ চেপে ধরায় ঠিকমতো কথা বলতে পারছি না)।।
মিমঃ ওই একদম আপু বলে ডাকবি না নাহলে খুন করে ফেলব (মুখ ছেড়ে গলা চেপে ধরল)।।
আমিঃ আপনি আমার বড় আপনাকে আপু বলব না তু কি বলব..?
মিমঃ কেন আমার নাম নেই..? নাম ধরে ডাকবি।।
আমিঃ আমি পারব না।।
মিমঃ কি বললি..?
আমিঃ না মানে ববলব।।
মিমঃ এইতু গুড বয় আর হে এইসব পালানোর কথা যেন আর ভুলেও মুখে না আসে।।
এই বাড়ির চারপাশেই আমার বডিগার্ডরা আছে সো এইখান থেকে পালানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।।
আমিঃ চুপ করে রইলাম কারণ কিছু বলার মতো খুজে পাচ্ছি না।।
মিমঃ আচ্ছা আমি তাহলে এখন এই প্লেটগুলো রেখে আসি তুমি থাক।।
এরপর মিম আপু চলে গেলেন আর আমি চেয়ারেই হাত-পা বাধা অবস্থায় বসে রইলাম।।
এ কোন মেয়ের পাল্লায় পরলাম রে ভাই, কিছু বললেই রেগে যায়।।
না জানি এইখানে আর কতদিন থাকতে হবে।।
আম্মু আব্বুও হয়তো আমার জন্য চিন্তা করছেন।।
নাহ এইভাবে চলবে না এইখান থেকে পালানোর একটা উপায় বের করতেই হবে।।
অনেক্ষণ ধরে ভাবছি কিন্তু কিছুই মাথায় আসছে না।।
হঠাৎ চারপাশে তাকাতেই চোখ পরল মাটিতে একটা ব্লেট রাখা।।
এই তু পেয়ে গেছি হে এটাই দরকার এইখান থেকে পালানোর জন্য।।
কিন্তু ওই ব্লেটের কাছে আমি যাব কি করে..? আমার তু হাত-পা দুইটাই বাধা।।
অনেক্ষণ ধরে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়।।
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম কুড়িয়ে কুড়িয়ে যাওয়া যায় কি না দেখি।।
যেই ভাবা সেই কাজ, শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেয়ারসহ সামনে এগুতে লাগলাম।।
প্রায় ৫ মিনিট পর কোনো রকমে ব্লেটের কাছে এসে পৌছলাম।।
কিন্তু এখন ব্লেটটা মাটি থেকে তুলব কি করে..?
অনেক সময় ধরে ব্লেটটা তুলার চিন্তা করছি কিন্তু কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।।
এমন সময় হঠাৎ বাহির থেকে রুমের দরজা খুলার আওয়াজ এলো।।
সামনে তাকিয়ে দেখি মিম আপু দরজার কাছে দাড়িয়ে আছেন।।
আল্লাহ আমি শেষ এখন যদি মিম আপু জিজ্ঞেস করে আমি এইখানে কেন আর কীভাবে আসলাম তাহলে আমি কি বলব।।
মিমঃ আরে তুমি এইখান থেকে ওইখানে গেলা কীভাবে..? কি করতে চাচ্ছিলা সত্যি করে বল তু..?
আমিঃ
.
চলবে.......
No comments
info.kroyhouse24@gmail.com